লং কোভিড, ব্যথা ও প্রতিবন্ধী ২ কোটি মানুষের ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা অধিকার

  • ডা. দলিলুর রহমান
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

কোভিড আক্রান্ত পরবর্তী শারীরিক সমস্যা এবং করোনাকালীন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রা ব্যহত হওয়ায় অধিক সংখ্যক মানুষ নানাবিধ কারণে ব্যথা, প্যারালাইসিসজনিত কারণে প্রতিবন্ধিতার শিকার হচ্ছে  কিংবা কর্মক্ষমতা লোপ পাচ্ছে।  দেশকে উন্নত রাষ্ট্র তৈরির পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং উন্নয়ন কার্যক্রম চল্মান রাখতে প্রয়োজন সুস্থ সবল কর্মক্ষম জনগোষ্ঠী । কিন্তু লং কোভিড, ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত দেশের প্রায় ২ কোটি রোগী উন্নয়ন কার্যক্রম বজায় রাখতে বিরাট অন্তরায় । অথচ সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের মাধ্যমে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসায় সুস্থ কর্মক্ষম করে তোলা সম্ভব ।

“লং কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা, পুনর্বাসন ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরিয়ে আনতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকের ভূমিকা অপরিসীম“ প্রতিপাদ্য নিয়ে পালিত হচ্ছে এবারের বিশ্ব ফিজিওথেরাপি দিবস। কীভাবে একজন কোভিডে আক্রান্ত ব্যক্তি আরোগ্য লাভ করে নিরাপদে স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে পারেন , সে সম্পর্কে বিশেষজ্ঞ হিসেবে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের দিকনির্দেশনা খুব গুরুত্বপূর্ণ । করোনা আক্রান্তদের বিরাট অংশ লং কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক দুর্বলতা, শ্বাস কষ্ট, ব্যথার কারণে তাদের প্রাত্যহিক কাজকর্ম ব্যহত হচ্ছে, এমনকি হাটা চলাফেরাও ভীষণ কস্টকর হয়ে যাচ্ছে । তাদের স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ফিজিওথেরাপি অন্যতম প্রধান চিকিৎসা।

বিজ্ঞাপন

ব্যথা, প্রবীণ জনগোষ্ঠীর বার্ধক্যজনিত সমস্যা, স্ট্রোক, প্যারালাইসিস, সেরিব্রাল পালসি, অটিজম, মেরুদণ্ডে আঘাত, সড়ক দুর্ঘটনা, ক্যানসার, অবেসিটি, হৃদরোগ, ডায়াবেটিসসহ নানাবিধ অসংক্রামক রোগের কারণে বাংলাদেশে মোট জনগোষ্ঠীর মধ্যে অনেক বড় একটি অংশ আংশিক বা পুরোপুরি প্রতিবন্ধিতায় ভুগছে - আর এই ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতার প্রধান চিকিৎসা ব্যবস্থা ফিজিওথেরাপি।

Caption

 

বিজ্ঞাপন

লং কোভিড, ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্তদের জন্য ফিজিওথেরাপি কেন প্রয়োজন:

  • "কোভিড একটা জঘন্য রোগ, যা শরীরের সবকিছু গ্রাস করে ফেলতে পারে" ( আইসিইউ ইউনিটের বিশেষজ্ঞ নার্স কেট ট্যানটাম, ইউকে) । যদিও লং কোভিড নির্ণয়ের কোন পরীক্ষা এখনো নেই। কিন্তু কেউ করোনা ভাইরাসে সংক্রমিত হওয়ার ১২ সপ্তাহ পরও কোন সুনির্দিষ্ট কারন ছাড়াই যদি রোগী ক্লান্তি/ দুর্বলতা, শরীর ব্যথা, শ্বাস কষ্ট, কাশি, ক্ষুধামান্দ্য,  অনিদ্রা ইত্যাদি  লক্ষণগুলো পরিলক্ষিত হয়, তাহলে ধরে নিতে হবে তিনি লং কোভিডে ভুগছেন । ( ইউকে হেলথ গাইডলাইন) । যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও ইতালিতে লং কোভিডে ১০-১১ শতাংশ মানুষ আক্রান্ত হচ্ছেন। বাংলাদেশের বিরাট সংখক মানুষ লং  কোভিডে আক্রান্ত হয়ে শারীরিক দুর্বলতা, বিভিন্ন ধরনের ব্যথা, শ্বাসকষ্টসহ বিভিন্ন উপসর্গে ভুগছেন ।
  • লং কোভিডের চিকিৎসার জন্য এখনো কোন প্রমাণিত ওষুধ নেই। বিভিন্ন দেশে ‘লং কোভিড ’ উপসর্গ নিশ্চিত হলে বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়ার পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে এবং পুনর্বাসন চিকিৎসা নিশ্চিত করার সুপারিশও করছেন বিশেষজ্ঞরা। এতে ফিজিশিয়ান, ফিজিওথেরাপিস্ট, অকুপেশনাল থেরাপিস্ট, স্পিচ থেরাপিস্ট, সাইকোলজিস্টসহ মাল্টি-ডিসিপ্লিনারি টিম কাজ করেন। আন্তর্জাতিক বিভিন্ন নির্দেশিকায় লং কোভিড সময়ে ব্যায়াম, পর্যাপ্ত পানি পান, ইতিবাচক চিন্তা ও পর্যাপ্ত ঘুম, মাইন্ডফুলনেস’ চর্চা করার পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
  • কোভিড পরবর্তী শারীরিক সক্ষমতা, কর্মক্ষমতা এবং স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার গুরুত্ব অপরিসীম (বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা) । শারীরিক দুর্বলতা, ব্যথাজনিত উপসর্গ ও শ্বাসকষ্ট নিরাময় করে সুস্থ স্বাভাবিক জীবনে ফিরতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রটোকলে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের ভূমিকা এবং তাদের প্রেসক্রাইভড  ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা খুব কার্যকরী ভুমিকা রাখছে ।

কিন্তু সারাদেশের সরকারি - বেসরকারি সব হাসপাতালের জন্য কোভিডের দীর্ঘ মেয়াদী প্রভাব কাটানোর চিকিৎসার কোন প্রটোকল এখনো নেই। (সুত্র-বিবিসি) ।

লং কোভিডে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা যেমন কার্যকরী তেমনি ব্যথা ও প্রতিবন্ধী সমস্যায় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসাই উত্তম সমাধান ও প্রমাণিত পদ্ধতি । মেডিকেল সায়েন্সের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একটি শাখা হিসেবে ফিজিওথেরাপি এখন ইউরোপ, আমেরিকা, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ উন্নত দেশগুলোতে প্রতিষ্ঠিত চিকিৎসাবিদ্যা হিসেবে অনেক জনপ্রিয়। চিকিত্সাবিজ্ঞান বলছে, হূদরোগ হাসপাতালে নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) প্রত্যেক রোগীর জন্য একজন করে সার্বক্ষণিক ফিজিওথেরাপিস্ট থাকতে হয়। মাঠে কিংবা মাঠের বাইরে স্পোর্টস ইনজুরি সারানোর জন্য ফিজিওথেরাপিস্টের বিকল্প নেই। শরীরে বিকলাঙ্গ সচল, ভাঙা হাত-পা অস্ত্রোপচারের পর আগের অবস্থায় ফিরিয়ে নেওয়া, প্যারালাইসিস, বাতের ব্যথা, হাড়, জোড়া ও মাংসপেশির ব্যথা, ব্যাক পেইন, স্ট্রোক কিংবা মুভমেন্টজনিত রোগীর জন্যও ফিজিওথেরাপি একমাত্র বৈজ্ঞানিক চিকিৎসা ব্যবস্থা এবং ফিজিওথেরাপির মাধ্যমে সুস্থ ও সচল জীবনযাপন সম্ভব । আর এ ক্ষেত্রে প্রধান ভূমিকা রাখতে পারেন একজন ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক।


বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি পেশার পথ পরিক্রমা ও অপ্রতিরোধ্য সীমাহীন বাঁধা

খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০ বর্ষের দিকে প্রথমে হিপোক্রেটিস (খ্রিষ্টপূর্ব ৪৬০–৩৭০) ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার সূচনা করেন। সুইডেনের ন্যাশনাল বোর্ড অব হেলথ অ্যান্ড ওয়েলফেয়ার ১৮৮৭ সালে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের অফিশিয়াল রেজিস্ট্রেশন শুরু করে। গ্রেট ব্রিটেনে ১৮৯৪ সালে চার্টার্ড সোসাইটি অব ফিজিক্যাল থেরাপি গঠিত হয়। ১৯১৩ সালে নিউজিল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অব ওটাগোতে দ্য স্কুল অব ফিজিওথেরাপি চালু করা হয়। ১৯১৪ সালে রিট কলেজ আমেরিকাতে ফিজিওথেরাপি শিক্ষা কার্যক্রম চালু করা হয়। বিশ্ব উন্নয়নের ধারাবাহিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে এবং ১৯৮০-এর দশকে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির উন্নয়নের সঙ্গে সঙ্গে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ও গবেষণার অনেক উন্নয়ন সাধিত হয় এবং ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকেরা ফাস্ট কন্টাক্ট প্রাক্টিশনার হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয় । বর্তমানে বিশ্বমানের সকল বিশ্ববিদ্যালয় ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ডক্টরেট, পি এইচ ডি, মাস্টার্স, ব্যাচেলর ডিগ্রী প্রদান করছে, যার মাধ্যমে লক্ষ লক্ষ ফিজিওথেরাপি চিকিৎসক বিশ্বব্যাপী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা প্রদান করে আসছে । সমগ্র বিশ্বের পাশাপাশি বাংলাদেশে ফিজিওথেরাপি পেশার সাথে জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ও পুনর্বাসন এর এক গৌরবজ্জল ইতিহাস থাকা সত্ত্বেও স্বাধীনতার ৫০ বছরে ফিজিওথেরাপির জন্য একটি জাতীয় প্রতিষ্ঠান আজও হয় নাই ।  কিন্তু জনমানুষের চিকিৎসা অধিকারের স্বার্থে দেশে  ফিজিওথেরাপির ব্যাপক প্রসার খুব জরুরি।


স্বাধীনতা-উত্তর মহান মুক্তিযুদ্ধে যুদ্ধাহত বীর মুক্তিযোদ্ধাদের চিকিৎসা ওপুনর্বাসন এবং ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত জনমানুষের সুস্বাস্থ্য ঢাকার পঙ্গু হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা ব্যাপকভাবে শুরু হয়। তারই ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিসিন ফ্যাকাল্টিতে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে শুরু হওয়া স্নাতক ডিগ্রি কোর্সটি  নিটোরসহ আরও কয়েকটি প্রতিষ্ঠানে এখনো চলমান । উল্লেখ্য, ১৯৬০ সালে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ফিজিওথেরাপি বিভাগ প্রতিষ্ঠা করা হলেও তার নাম-নিশানা মুছে ফেলেছে। একটি মহলের বাধায় অর্ধশতাব্দী পার হলেও ফিজিওথেরাপি কলেজ, কাউন্সিল ও পদ সৃষ্টি হয়নি। তাই দেশের মানুষ বিশ্বব্যাপী জনপ্রিয় ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে।

পাশ করা সনদপ্রাপ্ত ফিজিওথেরাপির চিকিৎসকদের জন্য একদিকে সরকারি কোন চাকুরির সুযোগ নাই অন্য দিকে ফিজিওথেরাপি পেশা সম্পর্কে মানুষের মধ্যে সচেতনতার অভাবে পেশাগত যোগ্য চিকিৎসকেরা কাজের সুযোগ বা অনুশীলনের সুযোগ না পেয়ে অনেকে পেশা পরিবর্তন করেছেন, অনেকে পেশা চর্চা বন্ধ রেখেছেন, অনেকেই বিদেশে পাড়ি জমিয়েছেন । পেশাগত অনুশীলন করতে তারা নানাবিধ বাঁধার সন্মুখিন হচ্ছেন ।  যেমন   স্নাতক ডিগ্রি নেওয়ার পর  ফিজিওথেরাপিস্টদের পেশা চর্চার কোনো সনদ দেওয়া হয় না। যদিও  ২০০৫ সালে স্বাস্থ্য অধিদফতর প্রথম কিছু ফিজিওথেরাপিস্টকে সাময়িক সনদ দিতে শুরু করলেও পরে তৎকালীন স্বাস্থ্য মহাপরিচালক  তা বন্ধ দেন । যদিও আইনে উল্লেখ আছে, ফিজিওথেরাপিস্ট হতে হলে সরকার স্বীকৃত বিশ্ববিদ্যালয় হতে ফিজিওথেরাপি বিষয়ে ন্যূনতম স্নাতক ডিগ্রীধারি হতে হবে। উল্লেখ্য ২০১৮ সালে ‘বাংলাদেশ রিহ্যাবিলিটেশন কাউন্সিল আইন’ মহান জাতীয় সংসদে পাশ হয়েছে এবং ফিজিওথেরাপি পেশাজীবীর নিবন্ধন ও সেবার মান নির্ধারণ ও নিশ্চিত করণের বিষয় উল্লেখ থাকলেও আজ অবধি এর কোন দৃশ্যমান কার্যক্রম দেখা যায় নাই । ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার বৈধতার ক্ষেত্রে মহামান্য হাইকোর্ট ফিজিওথেরাপি কাউন্সিল না হওয়া পর্যন্ত পেশা চর্চা করার জন্য ফিজিওথেরাপি চিকিৎসকদের পক্ষে ২০১২ সালে একটি স্টে অর্ডার প্রদান করে, যা এখনও কার্যকরী আছে। কিন্তু এই সুযোগে দেশ জুড়ে আনাচে কানাচে  হাতুড়ে ফিজিওথেরাপিস্টদের সংখ্যা বেড়েই চলেছে এবং রুগীদের সাথে প্রতারণা অব্যাহত আছে। এতে পেশার স্বকীয়তা হুমকির মুখে পড়েছে এবং ফিজিওথেরাপির শিক্ষার মানও আগের চেয়ে নিচে নেমে গেছে  ।

কয়েক যুগ আগে থেকেই  ফিজিওথেরাপিস্টদের জন্য দুটি সরকারি হাসপাতালে পদ  রয়েছে  মাত্র ১৯টি। এর মধ্যে পঙ্গু হাসপাতালে ১৪টি, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে দুটি, জাতীয় ক্যান্সার হাসপাতালে ১টি, ময়মনসিংহ মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে ১টি । বহু যুগ ধরে প্রায় সব পদই শূন্য। যদিও ২০১০ সালের ডিসেম্বরে সরকার উক্ত  শূন্য পদে  ফিজিওথেরাপিস্টদের অ্যাডহক ভিত্তিতে নিয়োগের বিজ্ঞপ্তি দিলেও এখনও সে নিয়োগ হয়নি।  নতুন পদ তৈরির লক্ষ্যে বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি এসোসিয়েশন(বিপিএ) এর চেস্টায় ২০১২ সালে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের উদ্যোগ দেশব্যাপী সাড়ে চার শতাধিক পদের প্রস্তাবনা ২০১৪ সালে চুড়ান্ত পর্যায়ে সংস্থাপন মন্ত্রণালয়ে লিখিত অভিযোগে আটকে দেয় বাংলাদেশ মেডিক্যাল এসোসিয়েশন এবং ফিজিক্যাল মেডিসিন সোসাইটি অব বাংলাদেশ । তারপর বহু বহু মিটিং সিটিং, আলোচনা, দেন  দরবার সবই হয়েছে কিন্তু সেই প্রস্তাবনা আজও ঝুলেই আছে  ।  এমনকি করনাকালিন সময়েও মাসের পর মাস চেষ্টা তদবির করেও ফিজিওথেরাপি পদ তৈরি বিষয়ে কোন সুরাহা হয় নাই।

ফিজিওথেরাপি স্নাতক কোর্সটি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রথম চালু হয় ১৯৭৩ সালে এবং পুনরায়  ১৯৯৩ সালে স্নাতক কোর্সটি চালু হয়। ২০০৮ সালে প্রথম ফিজিওথেরাপির জন্য একটি স্বতন্ত্র কলেজ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে  বাংলাদেশ কলেজ অব ফিজিওথেরাপি এর ভবন নির্মাণ এর জন্য  মহাখালীতে ৫.২৮ একর জমি বরাদ্ধ, টাকা বরাদ্ধ এবং তৎকালীন স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক  আ ফ ম রুহুল হক ভিত্তি প্রস্তর স্থাপন করলেও আজ পর্যন্ত আর একটি ইটও গাঁথা হয়নি । বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি অ্যাসোসিয়েশন (বিপিএ) এর ব্যানারে  যুগের পর যুগ সরকারের সবমহলে সবরকম চেষ্টা ও তদবির করেও এর কোনো কূলকিনারা হচ্ছে না,  এমনকি ফিজিওথেরাপি কলেজের  বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে মহামান্য রাষ্ট্রপতির নির্দেশনাও ঝুলে আছে কয়েক বছর ধরে। মহামান্য হাইকোর্টও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরসহ সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিদের ফিজিওথেরাপি কলেজ ভবন নির্মাণে ব্যবস্থা নিতে নির্দেশ দেন।  কিন্তু কাজের কাজ কিছুই হচ্ছেনা ।  সব মিলিয়ে চরম অবহেলার মধ্য দিয়েই চলছে দেশের ফিজিওথেরাপি শিক্ষা ও চিকিৎসা ব্যবস্থা।

বাংলাদেশে লং কোভিড,  ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত লাখ লাখ রোগী থাকলেও এদের সংখ্যা ও চিকিৎসা বিষয়ে সঠিক কোনো পরিসংখ্যান নেই। লং কোভিড,  ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় ফিজিওথেরাপি প্রধান চিকিৎসা হলেও বাংলাদেশে এই আধুনিক ও যুগোপযোগী ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা পদ্ধতিকে অর্ধশতাব্দী ধরে প্রতিষ্ঠিত হতে না দেওয়ার কারণে এ দেশে রোগীরা একদিকে যেমন কষ্ট পাচ্ছেন, অন্যদিকে অক্ষম বা কম কর্মক্ষম জীবনযাপনে বাধ্য হচ্ছেন। ফলে তারা নিজের কাছে, পরিবারের কাছে, সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে বড় বোঝা হয়ে অবহেলিত হচ্ছে। দেশে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে সুস্থ ও কর্মক্ষম করা না গেলে টেকসই উন্নয়ন (এসডিজি) অর্জনে বিশাল বাধা হয়ে দাঁড়াবে। অথচ বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গবেষণা ও পরিসংখ্যানের মতে, ব্যথা ও প্রতিবন্ধিতায় আক্রান্ত লোকজনকে যথাসময়ে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসার মাধ্যমে পুরোপুরি কিংবা আংশিক সুস্থ ও কর্মক্ষম করার মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নে বিশাল ভূমিকা রাখছে।

জনমানুষের সুস্বাস্থ্যের জন্য, দেশের উন্নয়ন এবং দেশকে উন্নত রাষ্ট্রে পরিনত করতে এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে সঠিক ফিজিওথেরাপি চিকিৎসা নিশ্চিত করতে প্রধানমন্ত্রীর সুদৃষ্টি ও সরাসরি হস্তক্ষেপ জরুরি।

লেখক: ডা. দলিলুর রহমান, সভাপতি, বাংলাদেশ ফিজিক্যাল থেরাপি এসোসিয়েশন (বিপিএ)।