কফি পানে লিভার ডিজিজের ৪৯ শতাংশ মৃত্যুঝুঁকি কমায়
কফি পান করা নিয়ে অনেকের অনীহা। কেউ কেউ বলে থাকেন অতিরিক্ত কফি পান স্বাস্থ্যের জন্য ক্ষতিকর। তবে সেই তথ্য উড়িয়ে দিয়ে কফি পানে জটিল রোগের নিরাময় ও মৃত্যুঝুঁকি হ্রাসের সুখবর জানিয়েছেন গবেষকরা।
বিএমসি পাবলিক হেলথ জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্যানুযায়ী—দিনে ৩-৪ কাপ পর্যন্ত ক্যাফিনেটেড বা ডিক্যাফিনেটেড কফি পান করা লিভারের রোগীদের জন্য খুবই উপকারী। এতে দীর্ঘদিন লিভারের রোগে আক্রান্তদের মৃত্যুঝুঁকি কমিয়ে দেয়। পাশাপাশি রোগ থেকে সুস্থ হয়ে ওঠার সম্ভাবনার কথা জানিয়েছেন গবেষকরা। খবর সিএনএন।
মার্কিন গণমাধ্যম সিএনএন সোমবার (২২ জুন) ওই জার্নালে প্রকাশিত গবেষণার তথ্য-উপাত্ত বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
গবেষকদের বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে বলা হয়, নিয়মিত কফি পানকারীদের দীর্ঘস্থায়ী লিভার রোগ থেকে সেরে ওঠার সম্ভাবনা ২১ শতাংশ বেশি এবং ক্রনিক বা ফ্যাটি লিভার ডিজিজ হওয়ার সম্ভাবনাও ২০ শতাংশ কম। আর দীর্ঘস্থায়ী লিভারের জটিলতায় মৃত্যুঝুঁকিও ৪৯ শতাংশ কম।
যুক্তরাজ্যের সাউদাম্পটন বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিকেল অনুষদের লেখক ও গবেষক ড. অলিভার কেনেডির মতে, ‘কফি সহজগম্য পানীয়। আমরা গবেষণার তথ্য থেকে যেটা পেয়েছি, তা হলো—এটি দীর্ঘস্থায়ী লিভারের রোগের সম্ভাব্য প্রতিরোধমূলক চিকিৎসা দিতে পারে।’
এ গবেষণায় যুক্তরাজ্যের গবেষণা সংস্থা ৪ লাখ ৯৪ হাজার ৫৮৫ জন অংশগ্রহণকারীর মধ্যে কফি পানের বিষয়টি নিয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ শুরু করেন। এরপরে প্রায় এক যুগ ধরে তাদের অনুসরণ করা হয়।
যারা ক্যাফিনেটেড বা ডিক্যাফিনেটেড কফি পান করেছিলেন, তাদের গ্রুপে সর্বাধিক উপকার দেখা গেছে। তাৎক্ষণিক কফি পানকারীরাও কিছু সুবিধা দেখেছিলেন। গ্রাউন্ড কফিতে উচ্চমাত্রার কাহেওয়েল এবং ক্যাফেস্টল রয়েছে। কফি বিনে দু’টি অ্যান্টি-অক্সিড্যান্টস পাওয়া গেছে, যা অ্যান্টি-ইনফ্লেমেটরি বৈশিষ্ট্যযুক্ত।
কফি থেকে স্বাস্থ্যে সুবিধা খুঁজে পাওয়া এটি প্রথম সমীক্ষা নয়। গেল ফেব্রুয়ারিতে প্রকাশিত একটি গবেষণায় দেখা গেছে, দিনে এক বা একাধিক কাপ ব্ল্যাক কফি, ক্যাফিনেটেড কফি পান করা হার্টের দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকি হ্রাস করে।
টাইপ-২ ডায়বেটিস, পার্কিনসন ডিজিজ, প্রোস্টেট ক্যান্সার, আলঝেইমারস, স্কলেরোসিস, মেলানোমা, অন্যান্য ত্বকের ক্যান্সারের ঝুঁকি এবং করোনারি আর্টারি ক্যালসিয়ামের মাত্রা কমায় কফি। কেনেডি দ্বারা পূর্বের একটি গবেষণায় দেখা গেছে যে, কফি পান করলে লিভারের ক্যান্সারের সবচেয়ে সাধারণ রূপ হেপাটোসেলুলার ক্যান্সারের ঝুঁকি হ্রাস করে।
বাড়ছে লিভার ক্যান্সার
কয়েক দশক ধরে বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সার বাড়ছে। ২০১৮ সালে করা একটি সমীক্ষায় বলা হয়, ১৯৯০ থেকে ২০১৫ সাল পর্যন্ত বিশ্বব্যাপী লিভার ক্যান্সার ৭৫ শতাংশ বেড়েছে।
আমেরিকান ক্যান্সার সোসাইটির মতে, লিভার ক্যান্সারের হার ১৯৮০ সাল থেকে এখন পর্যন্ত তিনগুণ বেড়েছে। মৃত্যুর হার দ্বিগুণেরও বেশি হয়েছে।
বিশ্ব ক্যান্সার গবেষণা তহবিলের তথ্যানুযায়ী, লিভার ক্যান্সার বিশ্বব্যাপী ষষ্ঠ সাধারণ ক্যান্সার। কম উন্নত দেশগুলোতে, বিশেষত এশিয়া ও আফ্রিকায় প্রায় ৮৩ শতাংশ মানুষ এ ক্যান্সারে আক্রান্ত হন। এ ক্যান্সারে মৃত্যুহার বেশি। কারণ এর কোনো প্রাথমিক লক্ষণ ধরা পড়ে না।
লিভারের রোগের ঝুঁকিপূর্ণ কারণগুলোর মধ্যে রয়েছে— মদপান, স্থুলতা, ডায়াবেটিস, ধূমপান, হেপাটাইটিস বি এবং সি সংক্রমণ। যা লিভারের কোষগুলোতে অতিরিক্ত ফ্যাট তৈরি করে।
আমেরিকান লিভার ফাউন্ডেশনের তথ্যানুসারে, নন অ্যালকোহলযুক্ত ফ্যাটি লিভার ডিজিজের কারণ—অতিরিক্ত ওজন, ডায়াবেটিস, উচ্চ কোলেস্টেরল বা উচ্চ ট্রাইগ্লিসারাইড।
কফি পানে সাবধানতা
বেশিরভাগ গবেষণা ব্ল্যাক কফি পান করার ওপর করা হয়। তবে অনেকে দুধ, চিনি, নন-ড্রেইরি ক্রিমযুক্ত কফি পান করেন, যা বেশি ক্যালরি, চিনি এবং ফ্যাট যুক্ত। আমেরিকান হার্ট অ্যাসোসিয়েশন সতর্ক করে দিয়েছে, দুধ-চিনির আধিক্য থাকা কফি হার্টের সমস্যার ঝুঁকি বাড়ায়।
গবেষণায় দেখা গেছে, নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীর অতিরিক্ত মাত্রায় ক্যাফিন গ্রহণ বিপজ্জনক হতে পারে। ২০১৭ সালের একটি গবেষণায় দেখা গেছে, গর্ভাবস্থায় ৪ কাপের বেশি কফি পান করলে, অল্প ওজনের বাচ্চা, অকাল প্রসব এবং স্থায়ী জন্মগত ত্রুটি দেখা যায়।
বিগত গবেষণাগুলোতে বলা হয়েছে, ঘুমের সমস্যা বা অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসে আক্রান্ত ব্যক্তিদের ডায়েটে ক্যাফিন যুক্ত করার আগে ডাক্তারের সাথে পরামর্শ করা উচিত।
কফি পানের এই সুবিধাগুলো বাচ্চাদের ক্ষেত্রে প্রযোজ্য নয়। আমেরিকান অ্যাকাডেমি অব পেডিয়াট্রিক্স অনুসারে শিশু এবং কিশোর-কিশোরীদের ক্যাফিনসহ কোলা, কফি, এনার্জি ড্রিংকস বা অন্যান্য পানীয় পান করা উচিত নয়।
তথ্যসূত্র: সিএনএন