আনারসের উপকারিতা
সারা দেশে তাপমাত্রা বাড়ছে। এই সময়ে সুস্থ থাকতে নিয়ম করে পানি আর ফল খাওয়ার কথা বলে থাকেন পুষ্টিবিদরা। কিন্তু ফল খেলেই হল না। কোন ফলটি শরীরের জন্য উপকারী, সেটাও জানা প্রয়োজন। গরমে আম, লিচু তো আছেই, তবে এই ফলগুলোকে স্বাস্থ্যগুণ এবং স্বাদে পাল্লা দিতে পারে আনারস।
আনারসে রয়েছে রোগ প্রতিরোধী অ্যান্টি-অক্সিড্যান্ট। যা অক্সি়ডেটিভ স্ট্রেস কমাতে সাহায্য করে। রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে আনারসের জুড়ি মেলা ভার। আনারসে ক্যালোরির পরিমাণও নেই বললেই চলে। বিশেষ করে ওজন কমাতে চাইছেন যারা, রোজের পাতে রাখতে পারেন আনারস।
আনারসে উপকারী গুণ কম নেই। আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ফাইবারও। তাই পেটের সমস্যা নিয়ন্ত্রণে রাখতে আনারস বেশ উপকারী। ভিটামিন সি, পটাশিয়ামে ভরপুর এই ফল হৃদ্যন্ত্রের সুরক্ষায় বিশেষ উপকারী। প্রচুর পরিমাণে ফোলেট, পটাশিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম-সমৃদ্ধ এই ফল হজমশক্তি উন্নত করতেও সহায়তা করে। আনারসে ‘ডাইজেসটিভ এনজাইম’ বা পাচক উৎসেচক থাকে। এগুলোকে বলা হয় ‘ব্রোমলেইন’। ফেনলিক অ্যাসিড বা ফ্ল্যাভোনয়েড থাকায় এই ফল পুষ্টিগুণে ভরপুর। এছাড়া, বর্ষাকালে হজমের একটি সমস্যা দেখা যায়। আনারসে থাকা ব্রোমেলেইনে উৎসেচক প্রোটিনের অণুগুলোকে ভেঙে দেয়।
প্রতি ১০০ গ্রামে আনারসে পাওয়া যায় ৫০ কিলোক্যালরি শক্তি। এতে ভিটামিন-এ, বি, সি, ক্যালসিয়াম ও অন্যান্য পুষ্টি উপাদান রয়েছে। ১০০ গ্রাম আনারসে ০.৬ ভাগ প্রোটিন, ০.১২ গ্রাম সহজপাচ্য ফ্যাট, ০.৫ গ্রাম খনিজ পদার্থ, ১৩.১২ গ্রাম শর্করা, ০.১১ গ্রাম ভিটামিন বি-১, ০.০৪ মি. গ্রাম ভিটামিন-২, ভিটামিন- সি ৪৭.৮ মিলিগ্রাম, ক্যালসিয়াম ১৮ মিলিগ্রাম, ফসফরাস ০.০২ গ্রাম, আঁশ ১.৪ গ্রাম এবং ১.২ মিলি গ্রাম লৌহ রয়েছে।
আনারস জ্বর ও জন্ডিস রোগের জন্য বেশ উপকারী। এতে রয়েছে প্রচুর ক্যালরি, যা আমাদের শক্তি জোগায়। গবেষণায় দেখা গেছে, আনারস গলা ব্যথা, সাইনোসাইটিসজাতীয় অসুখগুলোর বিরুদ্ধে লড়াই করে। হজমে সাহায্য করে। সঙ্গে শরীরের অন্য অঙ্গগুলোকেও ভালো রাখে।
দীর্ঘদিনের কোষ্ঠকাঠিন্য দূর করতে সহায়তা করে আনারস। আবার আনারস ক্ষুধাবর্ধক হিসেবে কাজ করে। যে কোনো অসুস্থতার পরে মুখে রুচির জন্য আনারস খাওয়া যেতে পারে।
আনারস খেলে ভালো থাকবে আপনার দাঁতের মাড়ি আর দাঁত দুটোই। আর ভুলে যাবেন না এতে আছে ক্যালসিয়াম। ক্যালসিয়াম দাঁতের জন্য উপকারী।
আনারস রক্ত পরিষ্কার করে হৃৎপিণ্ডকে কাজ করতে সাহায্য করে। হৃৎপিণ্ড আমাদের শরীরে অক্সিজেনযুক্ত রক্ত সরবরাহ করে। এছাড়াও হৃৎপিণ্ডের নানা রকম অসুখে থেকে আনারস দেয় সুরক্ষা।
আনারসে রয়েছে প্রচুর পরিমাণে ভিটামিন-সি। ত্বকের অসুখ, জিহ্বা, তালু, দাঁত, মাড়ির যে কোনো অসুখের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করে আনারস। দেহের তৈলাক্ত ত্বক, ব্রণসহ সব রূপলাবণ্যে আনারসের যথেষ্ট কদর রয়েছে। এছাড়াও আনারসের প্রোটিন ত্বকের মৃত কোষ দূর করে, ত্বককে কুঁচকে যাওয়া থেকে বাঁচায়
দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে বাধা দেয় এই ফল। ফলে শিরা-ধমনির দেয়ালে রক্ত না জমার জন্য সারা শরীরে সঠিকভাবে রক্ত প্রবাহিত হতে পারে। ফলে রক্ত শোধনে এই ফলের ভূমিকা রাখে।
আনারস কৃমিনাশক। কৃমি দূর করার জন্য সকালে খালি পেটে আনারস খাওয়া উচিত। তবে অবশ্যই অ্যাসিডিটি থাকলে খালি পেটে আনারস ক্ষতি করতে পারে।
প্রচুর পরিমাণ ম্যাঙ্গানিজ রয়েছে আনারসে। যা হাড় ও কানেক্টিভ টিস্যুকে করে শক্তিশালী। এক কাপ আনারসের জুস আমাদের দৈনিক প্রয়োজনীয় ম্যাঙ্গানিজের ৭৩ ভাগ পূরণ করতে সক্ষম।