এই সময়ে চা কিংবা কফিতে চুমুক না দিলে যে খুব ক্ষতি হবে, তা নয়। কিন্তু কোনও মতেই নেশা ছাড়তে পারছেন না। কিন্তু পুষ্টিবিদেরা বলছেন, সকালে ঘুম থেকে উঠে বা সারা দিনে কাজের মাঝে অগুণতি বার কফি পান করলে এই গরমে শারীরিক সমস্যা বেড়ে যেতে পারে।
বিভিন্ন গবেষণায় দেখা গিয়েছে, খালি পেটে কফি পান করলে কর্টিজলের ক্ষরণ অনেক বেড়ে যায়। মানসিক চাপ বা ‘স্ট্রেস’-এর অত্যতম কারণ এই হরমোনটি। তাই যদি চা-কফি পানে লাগাম টানতে চান, তিন পন্থা অবলম্বন করে দেখতেই পারেন।
বিজ্ঞাপন
শরীরচর্চায় মন দিন
বিভিন্ন সমীক্ষায় দেখা গিয়েছে, শরীরচর্চা করতে শুরু করলে অনেক সময় চা বা কফির নেশা কমতে শুরু করে। কারণ, প্রশিক্ষক বা পুষ্টিবিদদের দেওয়া খাবার তালিকায় ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়ের মাত্রায় হ্রাস টানতে বলা থাকে।
বিজ্ঞাপন
এমন মানুষদের সঙ্গে মিশুন যারা চা বা কফি পান করেন না
কথায় বলে সৎসঙ্গে স্বর্গবাস। সত্যিই যদি ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়ের নেশা থেকে মুক্তি পেতে চান, তা হলে এমন মানুষদের সঙ্গ নিন, যারা কথায় কথায় চা, কফি পান করেন না।
চা, কফির বদলে স্বাস্থ্যকর পানীয়র অভ্যাস করুন
যখনই চা বা কফি পান করতে ইচ্ছে করবে তখন এমন কোনও পানীয় খেতে চেষ্টা করুন, যা স্বাস্থ্যকর। অনেকেই গরম থেকে মুক্তি পেতে ঠান্ডা চা বা কফি পান করে থাকেন। তার বদলে ফলের রস, স্বাস্থ্যকর শরবত খেতে পারেন।
সার্বিকভাবে সুস্থ থাকতে শরীরের সঠিক ওজন ধরে রাখা অত্যন্ত জরুরি। শরীরে চর্বি জমা ভালো লক্ষণ নয়। বিশেষ করে পেটের চর্বি নানারকম অসুবিধা ও রোগ সৃষ্টির কারণ হতে পারে। পেটে যখন চর্বি জমে তখন লিভার ও অন্ত্রের মতো গুরুত্বপূর্ণ শরীরের অভ্যন্তরীণ অঙ্গগুলোকে ঘিরে ফেলে। এতে এসব অঙ্গের স্বাভাবিক কার্যক্রম ব্যাহত হয়। এতে নানারকম রোগে আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়।
রিজিওনাল অ্যানেস্থেসিয়া এবং পেইন মেডিসিনে পেটের চর্বির ক্ষতিকর দিক নিয়ে একটি গবেষণা প্রকাশ করা হয়েছে। বিশেষজ্ঞদের সেই প্রতিবেদন অনুযায়ী, পেটের চর্বি কমিয়ে আনার সিদ্ধান্ত জীবনধারাকে সুন্দর করে তুলতে পারে। কারণ পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে গেলে তাতে স্বাস্থ্যঝুঁকি বেড়ে যায়। বিশেষ করে নারীরা এই ক্ষেত্রে বেশি ঝুঁকিতে থাকেন।
গবেষণায় দেখা গেছে, যে নারীদের পেটে অতিরিক্ত চর্বি জমে যায় তাদের দীর্ঘমেয়াদী পেশি এবং জয়েন্ট ব্যথা হয়। এই সমস্যা পুরুষদের তুলনায় নারীদের মধ্যে বেশি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। মূলত শারীরিক গঠন, হরমোনের প্রভাব এসব কারণে এই তারমতম্য দেখা যায়। পেটের চর্বি শুধু লিভার আর অন্ত্রকে ঘিরে রাখে তাই নয়! সাইটোকাইন নামের এক রাসায়নিক পদার্থও তৈরি করে। এই প্রদাহ বিভিন্ন হাড়ের জয়েন্ট এবং পেশিতে প্রদাহ সৃষ্টি হওয়ার কারণ। এই গবেষণায় ৩২ হাজার ব্যক্তির উপর পরীক্ষা চালিয়ে এই তথ্য প্রকাশ করা হয়েছে। তাদের মধ্যে অধিকাংশ ছিলেন গড়ে ৫৫ বছর বয়সের নারীরা। সেই গবেষণায় পেটের চরি্ব কমানোর কিছু উপায়ও প্রকাশ করা হয়েছিল:
জীবনধারা: সুস্থ থাকতে শরীর সক্রিয় রাখার বিকল্প হয় না। ঘন ঘন শারীরিক কার্যক্রম করার ফলে অতিরিক্ত ক্যালরি এবং চর্বি দূর করা সম্ভব। এরজন্য আলঅদা করে ব্যায়াম করতে হবে, তেমনও নয়। হাঁটা, সাঁতার কাটা, সাইকেল চালানোর মতো দৈনন্দিন জীবনের কাজের মাধ্যমেও শরীর সক্রিয় রাখা সম্ভব।
খাবার: শরীরে তথা পেটে চর্বি জমার সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত হলো খাদ্যাভ্যাস। সাধারণত শরীরের অন্যান্য জায়গার তুলনায় পেটে আগে চর্বি জমতে শুরু করে। এই সমস্যা এড়াতে যথাসম্ভব আস্ত খাবার খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে। যেমন আস্ত ফল, সবজি, শস্যজাত খাবার ইত্যাদি। এছাড়া চর্বিযুক্ত মাংস, চিনিযুক্ত মিষ্টি খাবার, প্যাকেটজাত খাবার এসব খাবার খাওয়া কমিয়ে ফেলতে হবে।
মানসিক স্থিতি: পেটে চর্বি জমার পেছনের হরমোনের ভূমিকা রয়েছে। কর্টিসল নামক হরমোন এরজন্য দায়ী। মূলত মানসিক চাপে থাকলে এই হরমোনের প্রবাহ বেড়ে যায়। সেইজন্য মনস্থিতি শান্ত করার চর্চা করা প্রয়োজন। যোগাসন বা ধ্যানের মা্যেমে মনকে শান্ত করার চর্চা করতে হবে।
ঘুম: প্রতিদিন ৭ থেকে ৯ ঘণ্টার শান্তির ঘুমের মাধ্যমে মেটাবলিজম নিয়ন্ত্রণ করা সম্ভব। পর্যাপ্ত ঘুমের অভাবে স্বাভাবিকের তুলনায় পেটে বেশি চর্বি জমতে শুরু করে।
পানি: শরীর ভালো রাখতে, যেকোনো ধরনের রোগ থেকে মুক্ত থাকার পূর্বশর্ত হলো পানি। আমাদের শরীরের শতকরা ৭০ ভাগ পানি, তাই পানি আমাদের বিভিন্ন রোগ থেকে সুরক্ষিত রাখতে সাহায্য করে। হজম থেকে শুর করে চর্বি কমানো সব ক্ষেত্রেই পানি পান করার অভ্যাস প্রভাবশীল।
মোবাইল, টিভি, কম্পিউটার, ল্যাপটপ, ট্যাবলেট এসব আমাদের নিত্যসঙ্গী। বিনোদন হোক বা প্রয়োজন, এসব ইলেকট্রনিক ডিভাইস ছাড়া একদিনও কাটানো প্রায় অসম্ভব। ছোট থেকে বড় সব মানুষই দিনের বেশ কয়েক ঘণ্টা এসব ডিভাইসের স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে কাটায়।
মূলত যখন পরিবারের বড়রা কাজে বা অলস সময় কাটাতে মোবাইল ও টিভি ব্যবহার করে, তখন ছোট শিশুরাও তাদের দেখাদেখি এই অভ্যাস গড়ে তোলে। তবে শিশুদের জন্য বেশিক্ষণ স্ক্রিনের এই নীল আলোর দিকে তাকিয়ে থাকা অত্যন্ত ক্ষতিকর।
শিশুরা বেশিক্ষণ ইলেকট্রনিক ডিভাইসের দিকে তাকিয়ে থাকলে তাদের চোখের ক্ষতি হয়। এছাড়াও শিশুদের বিকাশের ক্ষেত্রেও এই অভ্যাস অনেক বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারে। বিশেষজ্ঞদের মতে, স্ক্রিনের দিকে তাকিয়ে অতিরিক্ত সময় কাটানোর অভ্যাস শিশুদের ভাষাগত বৃদ্ধিতে কঠোরভাবে বাধা প্রদান করতে পারে।
শিশুদের মস্তিষ্কের কগনিটিক অর্থাৎ, জ্ঞানীয় কার্যক্রমে বাঁধা প্রদান করে। এই কারণে শিশুরা যখন প্রাথমিকভাবে ভাষা শেখা শুরু করে তখন সেই শিক্ষাক্রমে বাঁধা তৈরি হয়। এস্তোনিয়ার বিশেষজ্ঞদের একটি দলের প্রতিবেদনের মাধ্যমে জানা যায়, স্ক্রিনে বেশি সময় ব্যয় করার এই অভ্যাস শিশুরা তাদের পিতা-মাতার অনুসরণেই পেয়ে থাকে।
তারতু বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান লেখক ডাক্তার টিয়া তুলভিস্তে নবজাতকদের ভাষার দক্ষতা অর্জনের প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে বলেছেন। তিনি বলেন, ছোটবেলায় যখন শিশুদের বিকাশ ঘটতে শুরু করে, তখন বাবা-মাসহ পরিবারের অন্যরা শিশুর সাথে খেলার ছলে নানান কথোপকথন করে। সেই অনুযায়ী প্রতিদিন বড়দের মাধ্যমে শিশুদের ভাষাগত বিকাশ হতে থাকে।
বয়সের সঙ্গে তাদের উচ্চারণ এবং ব্যাকরণগত শিক্ষার ভিত্তি মজবুত হতে থাকে চর্চার মাধ্যমে। সেই বয়সে এর বদলে যদি তাদের মোবাইল বা ল্যাপটপের প্রতি ঝোঁক বাড়ে তাহলে তাদের স্বাভাবিক বড় হওয়ার প্রক্রিয়ায় বাধা পড়ে। শিশুদের এই অভ্যাস তৈরির পেছনে অবশ্য প্রতিপালকদের দায় থাকে। শিশুদের সাথে প্রতিদিন পর্যাপ্ত পরিমাণে কথোপকথন করতে হবে।
গবেষকেরা কিছু শিশুদের উপর পরীক্ষাজনক ভাবে নজর রাখেন। এই শিশু এবং এদের বাবা মায়েরা বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসে সময় কাটান। সময়ের দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে শিশুদের তিনটি ভাগে পর্যবেক্ষণ করা হয়।
প্রথমভাগে সেসব শিশুরা অনেক বেশি ডিভাইসে সময় কাটায় তাদের ভাষাগত দক্ষতা যাচাই করা হয়। এই শিশুদের কথায় পরিপক্কতার অভাব লক্ষ্য করা যায়। দ্বিতীয়ভাগে একই বয়সের তুলনামূলক কম ডিভাইসে আসক্ত শিশুদের ভাষাগত দক্ষতা প্রথম ভাগের তুলনায় উন্নত ছিল। সবশেষে যেসব শিশুদের একদম ডিভাইস থেকে দূরে রাখা হয় তারা ব্যাকরণ এবং উচ্চারণে সবচেয়ে বেশি দক্ষতার পরিচয় দেয়।
শিশুদের বেড়ে ওঠার সময় অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ। তাদের সমগ্র জীবনের ভিত্তি শৈশবেই তৈরি হয়। শিশুদের প্রথম ৫ বছর চঞ্চলতা অনেক বেশি থাকে। এইসময়কালে বই পড়া আর শিক্ষামূলক খেলাধুলার মাধ্যমে তাদের মানসিক ও বুদ্ধিমত্তার বিকাশ ঘটে। তাই এইসময়ে শিশুদের অনেক বেশি সময় দেওয়া প্রয়োজন। খেলা, বই পড়া, শিশুদের সাথে কথোপকথনের পাশাপাশি বিভিন্ন ইলেকট্রনিক ডিভাইসের থেকে তাদের দূরত্ব রক্ষা করাও নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিশুর পরিপূর্ণ বিকাশ হবে এবং সুন্দর শৈশব উপহার পাবে।
শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প হয় না। ছোট থেকেই তাই শিশুদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খেলাধুলা ও ব্যায়ামে উৎসাহী করে তোলা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর সাথে জীবনযাত্রার ধরনেও পরিবর্তন আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ থাকার জন্য জিম করেন। কারো কারো মধ্যে কঠোর ব্যায়ামের প্রতি ঝোঁকও দেখা যায়।
তবে কথায় বলে, ‘অতি ভালো, ভালো নয়।’ যার মানে, কোনো ভালো জিনিসও অতিরিক্ত ভালো নয়। কঠোর ব্যায়ামও সুস্থতার বদলে নিয়ে আসতে পারে কোনো ভয়াবহ পরিণতি। বর্তমানে কঠোর ব্যায়ামকারীদের মধ্যে অল্পবয়সেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিভুধ প্রতাপ সিংহের একটি প্রতিবেদনে এই নিয়ে বিস্তর বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কঠোর ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের নানা অসঙ্গতিপূর্ণ অভ্যাসের কারণে যুব সমাজে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।’ ডা. বিভুধের মতে এর কারণসমূহ হলো:
১. অনেকেই উপকার হবে ভেবে শুধু একটানা ব্যায়াম করে যান। তবে ব্যায়ামের আগে করণীয়, খাদ্যতালিকার পরিবর্তন, কতটা ব্যায়াম শরীরের জন্য সহনীয় হবে –এইসব ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া, উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে যারা ভুগছেন বা শরীরের প্রতি যথাযথ যত্ন নেন না, নানারকম বদ অভ্যাসে ডুবে থাকেন তাদের জন্যও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. স্টেরয়েডের ব্যবহারও হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বিশেষ কারণ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যুব ব্যক্তিদের মধ্যে এইসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তি থাকে।
৩. শরীরচর্চার সময় হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পরে। ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপায়ী বা যাদের বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে এমন ব্যক্তিদের জন্য হৃদপিণ্ডের প্রতি বেশি চাপ পড়া ভালো নয়। তাই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে এইসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কঠোর ব্যায়ামের কারণে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪. শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্য যেমন ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একই্ ভাবে কোষক্ষয় এড়াতে বিশ্রামও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ বছরের উপরে যাদের বয়সের ঊর্ধ্বে যারা তাদের জন্য বিশ্রামহীন কঠোর ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এর ফলে তাদের মাথা ঘোরা, চরম ক্লান্তি, বুকে ব্যথা এমনকি হৃদস্পন্দন ওঠা-নামা করার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৫. যেকোনো বয়সেই স্বাস্থ্যের উপর জীবনযাপনের ধরনের একটি বিশেষ প্রভাব থাকেই। সঠিক সময়ে ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অশান্তিতে ভোগা যুব সমাজের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ এসব অভ্যাসের কারণে হাইপার টেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, প্রদাহের মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এসবের পরে কঠোর পরিশ্রম হৃদপিণ্ডের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়, ফলস্বরূপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
ক্যান্সার খুব জটিল এক অসুখ। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে সূত্রপাতের কারণ অজানা হওয়ার কারণে এটি একটি দুরারোগ্য ব্যাধি। ক্যান্সারের কোনো ঔষধ এখনো আবিষ্কৃত হয়নি। তাই ক্যান্সারকে পুরোপুরি নির্মূল করা সম্ভব নয়। অনেক সময় জীবনধারার কিছু অভ্যাসের কারণে মানুষ অজান্তেই ক্যান্সারের বীজ বপন করে বসে। তবে সেই সংখ্যা খুবই সামান্য। বিশ্বে যত ক্যান্সার রোগী আছে; বিশেষ করে শিশুরা, তাদের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ক্যান্সার সৃষ্টির কারণ অজানা।
শিশুদের ক্যান্সারে আক্রান্ত হওয়া খুবই অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা। কোন কারণে আদরের শিশুটির জীবনে ক্যান্সারের মতো রোগের কালো ছায়া ঘনিয়ে আসবে, তা বলা মুশকিল। তবে নিজের শিশুকে সুরক্ষিত রাখতে ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা দূর করার কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা যেতে পারে।
ভারতীয় গণমাধ্যম হিন্দুস্তান টাইমসের এক প্রতিবেদনে চিকিৎসক উষ্মা সিং এই ব্যাপারে আলোচনা করেন। শিশুর সুস্থ এবং সুন্দর ভবিষ্যত নিশ্চতকরণে বাবা-মায়েরা এইসব সতর্কতা অবলম্বন করতে পারেন:
১.ভালো অভ্যাস: শিশুদের খুব ছোট থেকেই স্বাস্থ্যকর অভ্যাস করলে অন্যান্য রোগের মতো ক্যান্সারেরও ঝুঁকি কমানো সম্ভব। শিশু শরীরে সরাসরি ক্যান্সারকোষ সৃষ্টি হওয়া থামিয়ে দেওয়া সম্ভব নয়, তবে প্রাপ্তবয়সে শরীরে ম্যালিগন্যান্সি তৈরি হওয়া রোধ করা যেতে পারে।
যেমন ধূমপান করার ফলে যা যা ক্ষতি হতে পারে, তা শিশুদের জানাতে হবে। রোদে যাওয়ার আগে সানস্ক্রিন মাখার প্রয়োজনীয়তা বোঝাতে হবে। এছাড়া ফল, সবজি, শস্যজাতীয় খাদ্যাভ্যাস যেভাবে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়াতে পারে, আবার চিনি ও বাইরের খাবার যেভাবে স্বাস্থ্যের ক্ষতি করতে পারে সেসব শিশুদের ছোট থেকেই জানাতে হবে।
নবজাতক শিশুদের অবশ্যই মাতৃদুগ্ধ পান করাতে হবে। এর বাইরে চিকিৎসকের পরামর্শ ব্যতিত কোনো খাবার খাওয়ানো যাবে না। প্লাস্টিক ও অ্যালুমিনিয়াম ফয়েলে রান্না করা বা খাবার খাওয়ার অভ্যাস বাদ দিতে হবে। অনেক সময় এসব পাত্র তৈরিতে ক্ষতিকর উপাদান ব্যবহৃত হয়।
ছোট থেকেই প্রতিদিন শরীরচর্চা বা যোগাসন আর ধ্যান করার অভ্যাস করতে হবে। এসব অভ্যাস রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এবং মানসিক চাপ কমাতে সাহায্য করে, এতে ক্যান্সারের ঝুঁকিও কমে।
২.প্রতিকার ও চিকিৎসা: যেসব শিশুরা এইচআইভি, ম্যালেরিয়া, এপসটাইন-বারের মতো রোগ আছে তাদের ক্যান্সারেও আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেড়ে যায়। এই ধরনের ক্রোনিক রোগের চিকিৎসা ও টিকাদান সঠিক ও পরিচ্ছন্নভাবে করতে হবে, যেন প্রতিরোধ ক্ষমতা কার্যকর হয়। ‘হেপাটাইটিস বি’, ‘এইচপিভি’র মতো রোগের টিকা আগে থেকেই নিয়ে রাখতে হবে। এতে ভবিষ্যতে লিভার, সার্ভিকাল ও ওরাল ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই কমে। শিশুদের ক্ষেত্রে সিটিস্ক্যান, এক্স-রে জাতীয় চিকিৎসা পদ্ধতি যথাসম্ভব এড়িয়ে চলার চেষ্টা করতে হবে। এছাড়া রাসায়নিক পদার্থসম্পন্ন পণ্য ব্যবহার একেবারেই না করার চেষ্টা করতে হবে।
৩.পরিবেশগত সাবধানতা: ক্যান্সারকোষ সৃষ্টিরোধে গুরুত্বপূর্ণ হলো কার্সিনোজেনের সংস্পর্শ এড়িয়ে চলা। অপ্রয়োজনীয় ক্ষতিকর এক্স-রে রশ্মি, সেকেন্ডহ্যান্ড ধোঁয়া, সীসা, অ্যাসবেস্টসের মতো ক্ষতিকর পদার্থ থেকে বাচ্চাদের দূরে রাখতে হবে। অবশ্যই ঘর-বাড়ি পর্যাপ্ত পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখার চেষ্টা করতে হবে।
৪. জীন ও রোগ সনাক্তকরণ: শতকরা ১০ ভাগ শিশু রোগীদের ক্ষেত্রে দেখা যায় তাদের রোগসৃষ্টিতে বংশগত জীনের প্রভাব ছিল। পারিবারিকভাবে যাদের ক্যান্সারের ঘটনা দেখা যায়, তাদের শিশুদের নিয়মিত পরীক্ষার মাধ্যমে সুস্থতা নিশ্চিত করতে হবে। কোনো উপসর্গ সন্দেহজনক মনে হলেই চিকিৎসকদের শরণাপন্ন হতে হবে।