তাক লাগানো তোকমা দানা
স্যালভিয়া হিসপ্যানিকা (Salvia Hispanica) নামক এক প্রজাতির উদ্ভিদ থেকে পাওয়া যায় তোকমা দানা। জেনে অবাক হবেন, অ্যাজটেক ও মায়ান সভ্যতার সময়ে এখনকার তোকমা দানাকে বেশ সমাদর ও প্রয়োজনীয় উপাদান হিসেবে দেখা হতো। যার মূল কারণ, সামান্য তোকমা দানা থেকেই পর্যাপ্ত পরিমাণ ও দীর্ঘমেয়াদী শারীরিক শক্তি পাওয়া যায়। এমনকি তোকমা দানার ইংলিশ শব্দ চিয়া (Chia) শব্দটি এসেছে মায়ান ভাষা থেকে। যার অর্থ ‘শারীরিক শক্তি’।
ভীষণ উপকারি এই খাদ্য উপাদানটি বর্তমানের আধুনিক সময়ের অনেকেই চেনেন না এবং গ্রহণ করেন না। অথচ এই তোকমার উপকারিতা বিবেচনায় সকলের প্রতিদিন দুই টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমা দানা গ্রহণ করা উচিৎ। কেন এমনটা বলা হচ্ছে? জানতে পড়ে নিন আজকের ফিচারটি।
অল্প ক্যালোরিতে অনেক পুষ্টি
ভীষণ পুষ্টিকর তোকমা ভর্তি পুষ্টি থাকলেও, ক্যালোরি নিয়ে মোটেও চিন্তা করতে হবে না। মাত্র এক আউন্স (২৮ গ্রাম) তথা দুই টেবিল চামচ পরিমাণ তোকমা থেকে পাওয়া যাবে- ১১ গ্রাম আঁশ, ৪ গ্রাম প্রোটিন, ৯ গ্রাম ফ্যাট, ১৮ শতাংশ ক্যালসিয়াম, ৩০ শতাংশ ম্যাগনেসিয়াম ও ম্যাংগানিজ ও ২৭ শতাংশ ফসফরাস। পাশাপাশি এতে আরও রয়েছে জিংক, ভিটামিন-বি৩, পটাশিয়াম, ভিটামিন-বি১ ও বি২। স্বল্প পরিমাণ এই তোকমায় রয়েছে ১০১ ক্যালোরি, যার মাঝে মাত্র এক গ্রাম হলো দ্রবণীয় আঁশ। ফলে এই ক্যালোরিগুলো শরীরে জমে না থেকে বের হয়ে যায়। কিন্তু শরীর তার প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুলো ঠিকই পেয়ে যায়।
অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পূর্ণ তোকমা
সাধারণত প্রাকৃতিক ফল ও সবজি থেকে অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া গেলেও, তোকমা এমন চমৎকার একটি উপাদান, যা থেকে শরীরের জন্য প্রয়োজনীয় বেশিরভাগ অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট পাওয়া সম্ভব হয়। এই অ্যান্টি-অক্সিডেন্ট সমূহ ফ্রি রেডিক্যাল ড্যামেজ, ড্যামেজ সেল মলিকিউল ও বয়স বৃদ্ধি পাওয়ার ফলে শরীরের রোগ দেখা দেওয়ার হাত থেকে রক্ষা করে।
প্রোটিন পাওয়া যাবে তোকমা থেকে
খুবই সাধারণ এই উপাদানটি থেকেই পাওয়া যাবে শরীরের জন্য উপকারি ও প্রয়োজনীয় পুষ্টিগুণ প্রোটিন। ওজনের দিকে দিয়ে এতে রয়েছে ১৪ শতাংশ প্রোটিন যা অন্যান্য খাদ্য উপাদানের চাইতে অনেক বেশি। এছাড়া এতে থাকা এসেনশিয়াল অ্যামিনো অ্যাসিড সমূহ শরীরে প্রোটিনের শোষণকে কার্যকর করে তুলতে সাহায্য করে।
ওজন কমাতে কাজ করে তোকমা
উপরের পয়েন্টেই উল্লেখ করা হয়েছে যে, তোকমা থেকে বেশ উচ্চমাত্রার প্রোটিন পাওয়া যায়। এই প্রোটিনই মূলত ওজনকে নিয়ন্ত্রণে রাখতে কাজ করে। উচ্চ মাত্রার প্রোটিন গ্রহণ বারংবার ক্ষুধাভাব দেখা দেওয়ার প্রবণতাকে কমিয়ে আনে প্রায় ৬০ শতাংশ পর্যন্ত। যা স্বাভাবিকভাবেও ওজন কমাতে সাহায্য করে।
অন্যদিকে তোকমার দ্রবণীয় আঁশ প্রচুর পরিমাণ পানি শোষণ করে। যা পরবর্তিতে পাকস্থলীতে ফুলে ওঠে। এতে করে তোমকা গ্রহণে দীর্ঘ সময় পর্যন্ত পেট ভরা থাকে ও খাবার গ্রহণের চাহিদা থাকে না।
হৃদরোগের সম্ভবনা কমায় তোকমা
আঁশ, প্রোটিন ও ওমেগা-৩ সমৃদ্ধ তোকমা দানা ওজন কমানোর পাশাপাশি হৃদরোগ দেখা দেবার সম্ভবনাকেও কমিয়ে ফেলে। ইঁদুরের উপর করা গবেষণা থেকে দেখা গেছে, ট্রাইগ্লিসারাইডস্, ইনফ্ল্যামেশন, ইনস্যুলিন ও তলপেটের মেদ জমতে বাঁধাদান করে। এমনকি শরীরে ভালো কোলেস্টেরল (HDL) এর মাত্রা বৃদ্ধিতেও অবদান রাখে তোকমা।
আরও পড়ুন: অসাধারণ অ্যালোভেরা!
আরও পড়ুন: সুঘ্রাণে সুস্বাস্থ্যে মেথি