কঠোর ব্যায়ামে কম বয়সেও বাড়তে পারে হৃদরোগ ঝুঁকি
শরীর সুস্থ রাখতে ব্যায়ামের বিকল্প হয় না। ছোট থেকেই তাই শিশুদের পারিবারিক এবং প্রাতিষ্ঠানিকভাবে খেলাধুলা ও ব্যায়ামে উৎসাহী করে তোলা হয়। তবে সময়ের সাথে সাথে সবকিছুর সাথে জীবনযাত্রার ধরনেও পরিবর্তন আসে। প্রাপ্তবয়স্কদের মধ্যে অনেকেই সুস্থ থাকার জন্য জিম করেন। কারো কারো মধ্যে কঠোর ব্যায়ামের প্রতি ঝোঁকও দেখা যায়।
তবে কথায় বলে, ‘অতি ভালো, ভালো নয়।’ যার মানে, কোনো ভালো জিনিসও অতিরিক্ত ভালো নয়। কঠোর ব্যায়ামও সুস্থতার বদলে নিয়ে আসতে পারে কোনো ভয়াবহ পরিণতি। বর্তমানে কঠোর ব্যায়ামকারীদের মধ্যে অল্পবয়সেই হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তে দেখা যাচ্ছে।
ভারতীয় হৃদরোগ বিশেষজ্ঞ বিভুধ প্রতাপ সিংহের একটি প্রতিবেদনে এই নিয়ে বিস্তর বর্ণনা করা হয়েছে। তিনি বলেন, ‘কঠোর ব্যায়াম এবং জীবনযাপনের নানা অসঙ্গতিপূর্ণ অভ্যাসের কারণে যুব সমাজে হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যাচ্ছে।’ ডা. বিভুধের মতে এর কারণসমূহ হলো:
১. অনেকেই উপকার হবে ভেবে শুধু একটানা ব্যায়াম করে যান। তবে ব্যায়ামের আগে করণীয়, খাদ্যতালিকার পরিবর্তন, কতটা ব্যায়াম শরীরের জন্য সহনীয় হবে –এইসব ব্যাপারগুলোকে গুরুত্ব দেয় না। এছাড়া, উচ্চমাত্রায় মানসিক চাপে যারা ভুগছেন বা শরীরের প্রতি যথাযথ যত্ন নেন না, নানারকম বদ অভ্যাসে ডুবে থাকেন তাদের জন্যও হৃদরোগের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
২. স্টেরয়েডের ব্যবহারও হৃদরোগ ঝুঁকি বাড়ানোর একটি বিশেষ কারণ। উন্নত বিশ্বের দেশগুলোর তুলনায় দক্ষিণ এশিয়ার দেশগুলোর যুব ব্যক্তিদের মধ্যে এইসব কারণে হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়তি থাকে।
৩. শরীরচর্চার সময় হৃদপিণ্ডের উপর চাপ পরে। ডায়বেটিস, উচ্চরক্তচাপ, ধূমপায়ী বা যাদের বংশানুক্রমে জীন স্থানান্তরের মাধ্যমে হৃদরোগের ঝুঁকি থাকে এমন ব্যক্তিদের জন্য হৃদপিণ্ডের প্রতি বেশি চাপ পড়া ভালো নয়। তাই ব্যায়াম করার ক্ষেত্রে এইসব রোগে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সাবধানতা অবলম্বন করা উচিত। কঠোর ব্যায়ামের কারণে হিতে বিপরীত হতে পারে।
৪. শরীরের অতিরিক্ত ক্যালরি বার্ন করার জন্য যেমন ব্যায়াম অনেক গুরুত্বপূর্ণ একই্ ভাবে কোষক্ষয় এড়াতে বিশ্রামও সমানভাবে গুরুত্বপূর্ণ। ৪৫ বছরের উপরে যাদের বয়সের ঊর্ধ্বে যারা তাদের জন্য বিশ্রামহীন কঠোর ব্যায়াম করা একেবারেই উচিত নয়। কারণ এর ফলে তাদের মাথা ঘোরা, চরম ক্লান্তি, বুকে ব্যথা এমনকি হৃদস্পন্দন ওঠা-নামা করার মতো সমস্যা দেখা যেতে পারে।
৫. যেকোনো বয়সেই স্বাস্থ্যের উপর জীবনযাপনের ধরনের একটি বিশেষ প্রভাব থাকেই। সঠিক সময়ে ঘুম, সুষম খাদ্য গ্রহণ, অতিরিক্ত মানসিক চাপ ও অশান্তিতে ভোগা যুব সমাজের মধ্যেও হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। কারণ এসব অভ্যাসের কারণে হাইপার টেনশন, উচ্চ কোলেস্টেরল, প্রদাহের মতো সমস্যা বেড়ে যায়। এসবের পরে কঠোর পরিশ্রম হৃদপিণ্ডের উপর চাপ আরও বাড়িয়ে দেয়, ফলস্বরূপ হৃদরোগের ঝুঁকি বাড়ে।
তথ্যসূত্র: ফার্স্টপোস্ট