স্বাচ্ছন্দ্যে বাড়িতে বসে অফিস করার সঙ্গে থাকুক কর্মদক্ষতাও
করোনাভাইরাস পরিস্থিতি ও লকডাউনের জন্য শুরুর দিকে যখন হোম অফিস বা বাসায় থেকে কাজ করা শুরু হয়, অনেকেই হয়তো ভেবেছেন সে কয়েকদিন বা এক-দুই সপ্তাহের ভেতরেই আবার সব ঠিক হয়ে যাবে। পুনরায় অফিসে ফিরে কাজ করা যাবে। এ কারণে তাৎক্ষণিকভাবে হাতের কাজে একান্তই জরুরি কাজের জন্য প্রয়োজনীয় কিছু জিনিস নিয়েই শুরু করে দিতে হয়েছিল বাড়িতে বসে অফিসে কাজ।
কিন্তু হোম অফিস করার এক মাস পার হয়ে যাওয়ার পর ও দেশের করোনাভাইরাস পরিস্থিতি বিবেচনা করে অনেকেই বুঝতে পারছেন, এই অবস্থা চলমান থাকবে আরও বেশ কিছুদিন। কিন্তু অফিসে কাজ করার মত পরিবেশ বাড়িতে থাকে না বিধায়, অল্প কাজ সামলাতেই হিমশিম খেতে হয়। এতে করে সময় নষ্ট হয়, এনার্জি ক্ষয় হয় কিন্তু কর্মদক্ষতা পাওয়া যায় না অনুরূপ পরিমাণ।
বাসায় থেকে স্বাচ্ছন্দ্যে কীভাবে কাজ করা এবং কর্মদক্ষতা বৃদ্ধি করা যাবে সেটাই তুলে আনা হয়েছে আজকের ফিচারে
বাসাকেই নিজের অফিসের মত ভাবুন
বাসার আরামদায়ক পরিবেশ ও অনুষঙ্গ কোনভাবেই কাজের জন্য উপযোগী নয়। সেখানে প্রতিদিন অন্তত ৮-৯ ঘন্টা অফিসে কঠিন কাজ বাসাতে বসে সামলানো বেশ ঝক্কির বিষয়। এছাড়া অফিসের পরিবেশ ও কম্পিউটারসহ অন্যান্য জিনিসপত্রের সেটিং কাজ ও মনোযোগের জন্য উপযোগী হিসেবে ঠিক করা হয়। ফলে বাসায় বসে কাজের ক্ষেত্রে কর্মদক্ষতাও কমে যায়। এক্ষেত্রে পুরো বাসাকে নিজের অফিসের মত করে গুছিয়ে নেওয়া ও মনে করা সম্ভব না হলেও, নির্দিষ্ট একটি ঘরকে অফিসে মত অফিসিয়ালভাবে গুছিয়ে নিন। কাজের জন্য প্রয়োজনীয় সকল জিনিস হাতের কাছে রাখুন, ল্যাপটপ কিংবা কম্পিউটার এমনভাবে সেট করুন যেন সম্পূর্ণ সময় কাজে মনোযোগ থাকে। সেই সাথে মিটিং এর জন্য ইয়ারফোন, ক্যাম রেডি রাখুন। নিজের মাঝে ও চারপাশে অফিসিয়াল আবহ তৈরি করতে পারলে কাজ সহজ হবে এবং কর্মদক্ষতাও বেড়ে যাবে।
বেছে নিন সঠিক অঙ্গভঙ্গি
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অন্যতম বৃহৎ অ্যাকাডেমিক মেডিক্যাল সোসাইটি মায়ো ক্লিনিকের গবেষক এবং হিউম্যান ফ্যাক্টরস অ্যান্ড এরগোনমিক্স সোসাইটির প্রেসিডেন্ট ডঃ সুজান হলব্যাক, পিএইচডি বলছেন, ‘শারীরিক ব্যথা নিয়ে কখনই কর্মক্ষম হওয়া সম্ভব নয়।’ যার অর্থ দাঁড়াচ্ছে, শারীরিক অসস্তি কর্মক্ষমতা ও দক্ষতাকে কমিয়ে দেয়। বাসায় থেকে অফিস করার ফলে ইচ্ছামত যেখানে সেখানে বসা হয়। বিশেষত যারা ল্যাপটপ ব্যবহার করেন, তারা খুবই অদ্ভুত ভঙ্গীতে আধশোয়া বা আধবসা অবস্থায় ল্যাপটপে কাজ করেন। এতে করে ঘাড়, পিঠ, কনুই ও হাতের বিভিন্ন অংশে ব্যথার প্রাদুর্ভাব দেখা দেয়।
খাবার টেবিলে বসে দুই একটি কাজ অল্প সময়ের জন্য করা যেতে পারে। কিন্তু লম্বা সময়ের জন্য নির্দিষ্ট টেবিল-চেয়ারে সঠিক ভঙ্গীতে বসে কাজ করতে হবে। কাঠের চেয়ার হলে পেছনে ছোট কুশন দিয়ে দিতে হবে যেন পিঠ সোজা থাকে। হাতের কনুই আর্মরেস্টে রাখতে হবে একদম ৯০ ডিগ্রিতে। চোখের সোজাসুজি হতে হবে কম্পিউটার স্ক্রিন। এভাবে বসে কাজ করতে আরাম পাওয়া যাবে এবং কাজ করতে সুবিধা হবে বলে জানান হলব্যাক।
হাঁটাচলা করতে ভোলা যাবে না
কাজের মাঝে ডুবে থাকলে টেবিল থেকে ওঠার কথা ভুলে যান অনেকেই। এমনকি কাজের টেবিলে বসেই দুপুরের খাবার বিকালের নাশতা সেরে নেন। এই কাজটি একেবারেই করা যাবে না যদি কর্মদক্ষতাকে সঠিক মাত্রায় রাখতে চান। প্রতি ঘন্টা কিছুক্ষণের জন্য টেবিল-চেয়ার ছেড়ে উঠে হাঁটাহাটি করতে হবে। ওয়াশরুমে যাওয়ার সময় পুরো বাড়িতে একবার এ মাথা থেকে ও মাথা হেঁটে আসতে হবে। হাত-পা ঝাড়া দিতে হবে। এতে করে শরীরে রক্ত চলাচল বৃদ্ধি পাবে, নিজেকে ফুরফুরে লাগবে। এছাড়া শরীরের সাথে চোখকেও বিশ্রাম দিতে হবে ও চোখের এক্সারসাইজ করতে হবে। কারণ একটানা লম্বা সময় কাজ করার ফলে সহজেই চোখে ক্লান্তি চলে আসে।