আশুলিয়ায় বন্যাদুর্গত এলাকায় বাড়ছে পানিবাহিত রোগ



মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
নোরাং দূষিত পানিতে দিন কাটছে এসব মানুষের/ছবি: বার্তা২৪.কম

নোরাং দূষিত পানিতে দিন কাটছে এসব মানুষের/ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

সাভারের আশুলিয়ায় বন্যার পানি কমতে শুরু করলেও পানিবাহিত রোগে কাতর এখানকার পানিবন্দি হাজার হাজার মানুষ। এদের অনেকেই আক্রান্ত হয়েছে ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ নানা রোগে। জীবন যুদ্ধে বেঁচে থাকার আশায় এ অঞ্চলে পাড়ি জমানো অনেকেই রোগে আক্রান্ত হয়ে দিন পার করছে নিদারুণ কষ্টে। গভীর নলকূপ পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় একদিকে যেমন বিশুদ্ধ পানি ও খাদ্য সামগ্রীর অভাব অন্যদিকে ডায়রিয়ার প্রকোপ, এ যেন মরার ওপর খরার ঘাঁ।

কর্মের তাগিদে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে আসা মানুষগুলোর সামান্য আয়ে পার করতে হয় দিন। আয় ব্যায়ের হিসাব কষে খরচ কমাতেই তারা কম ভাড়ায় বসবাস করেন এসব নিম্নাঞ্চলে। কিন্তু চলমান করোনাভাইরাসের প্রাদুর্ভাবে এমনিতেই স্বাভাবিক আয় থেকে কমেছে প্রায় অর্ধেক। করোনার দাপটে ভঙ্গুর যখন তাদের সংসার, তখনই নতুন করে বন্যার দূষিত কালো পানি বিষিয়ে তুলেছে তাদের স্বাভাবিক জীবন। দূষিত কালো পানিতে বন্দি এসব পরিবারের সদস্যরা ডায়রিয়া, জন্ডিসসহ বিভিন্ন পানিবাহিত রোগে হারিয়ে ফেলেছে সাহস। শিশু সন্তান নিয়ে যাপন করছেন নির্ঘুম রাত।

পানিবন্দি কয়েকহাজার মানুষ

মঙ্গলবার (১১ আগস্ট) আশুলিয়ার বাইপাইল, কাইচাবাড়ি, ও শিমুলিয়া ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা যায়, প্রায় কয়েক হাজার পরিবার দূষিত পানিতে বন্দি হয়ে মানবেতর জীবন যাপন করছে। খাদ্য সংকটসহ চিকিৎসা সংকটে কাটছে তাদের দিন। ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীরা পড়েছে সবচেয়ে বেশি বিপাকে। তাদের বাসা পানিতে তলিয়ে যাওয়ায় অন্যের বাসায় সাহায্য নিতে হয় বার বার। তাদের এখনো কোনো সহযোগিতা কিংবা পাশে এসে দাঁড়ায় নি কেউ। এমন অভিযোগ করে কেঁদে ফেলেছেন এসব বানভাসির অনেকেই। ভুগছেন খাদ্য ও প্রয়োজনীয় ওষুধের সংকটে।

প্রায় মাস খানেক হলো পানিবন্দি হয়ে অসহায় দিন যাপন করছেন বৃদ্ধ মাসহ বাইপাইলের সাকিল খাঁনের পরিবার। কখনো অন্যের বাসায় খালি মেঝেতে, কখনো দুর্গন্ধযুক্ত কালো হাঁটু পানির মধ্যে চৌকিতে বসে করেছেন রাত পোহাবার অপেক্ষা। তার সাথে কথা হলে তিনি বলেন, দীর্ঘ দিন ধরে রাতে ভাল ঘুমাতে পারি না। ঠিক মতো বিশুদ্ধ পানি ও খাবারের কষ্ট নিয়ে দিন পার করেছি। পাশে দাঁড়ানোর মতো কোনো লোক এখনও খুঁজে পাই নি। আমি আমার মাকে নিয়ে অনেক অসহায় অবস্থার মাঝে আছি। চারপাশে ডায়রিয়া ও জন্ডিসের রোগী। আমিও এখন ভয়ে আছি।

কালো দূষিত পানিতে বাড়ছে পানিবাহিত রোগ

অপর পানিবন্দি সালেহা বলেন, বন্যার এই দূষিত পানির কারণে আমার ডায়রিয়া হয়েছে দুই দিন ধরে। বাসায় হাঁটু পানি। আমি মেয়ে মানুষ, মানুষের বাসার বাইরে যেতে পারছি না। ওষুধ পত্রও পর্যাপ্ত নেই। খাবার স্যালাইন দোকান থেকে কিনে খাচ্ছি। এখন একটু সুস্থের দিকে। তবে স্থানীয় কোনো জনপ্রতিনিধি এখন পর্যন্ত আমাদের পাশে এসে দাঁড়ায় নি। আমরা খুব কষ্ট ও অসহায় বোধ করছি। জীবন যুদ্ধে মনে হয় আমরা পরাজিত।

পানিবন্দি শ্রমিক লিটন বলেন, আমাদের কারখানা খোলা। বন্যার পানি উঠে ঘর ভরে গেছে। রান্নার কোনো স্থান কিংবা ব্যবস্থা নেই। সকালে রুটি ও কলা খেয়ে অফিস যাই, দুপুরেও খাবার ব্যবস্থা হয় না। রাতে এসে হোটেলে কিংবা চিড়া কিনে খেয়ে দিন পার করছি। লজ্জায় কাউকে কিছু বলতেও পারছি না, আর খিদের জ্বালা সইতেও পারছিনা। হোটেলে তিন বেলা খাবার খেলে কমপক্ষে ২৫০ টাকা লেগে যায়। প্রথম কয়েক দিন খেয়ে টাকা শেষ হয়ে গেছে। ঈদের ভাংতি মাসের বেতন পেয়ে দোকানের বাকি পরিশোধ করতেই টাকা ফুরিয়ে গেছে। আবারও পড়েছি একই অবস্থায়।

পানিবন্দিরা ভুগছে খাদ্য সংকটেও

বন্যার পানিতে ডুবে গেছে রিয়াজ উদ্দিনের চায়ের দোকান। হাসান বার্তা২৪.কমকে বলেন, প্রায় ২৫ দিন হলো দোকান বন্ধ। কোনো ইনকাম নাই, বাচ্চারা এক বেলা না খেয়ে থাকলে খুব কষ্ট হয়। ঠিকমতো বাজার করতে পারছি না। আমরা কোনো সময় না খেয়ে থেকে বাচ্চাদের খাওয়াচ্ছি। এ অবস্থার মধ্যে এক সন্তান ডায়রিয়ায় ভুগছি। সন্তানের রোগ মুক্ত না হতেই আবার আমার স্ত্রীরও হয়েছে ডায়রিয়া। দু মুঠো খেতে পারছি না, ভাল চিকিৎসা করাবো কিভাবে। বন্যার পানি কমতে শুরু করেছে। হয়তো কয়েক দিনের মধ্যেই দোকান খুলতে পারবো। কিন্তু খোলার সাথে সাথেই তেমন বিক্রি হবে না। সব মিলিয়ে হতাশায় ভুগছি।

সাভার উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা.সায়েমুল হুদা জানান, বন্যার্তদের স্বাস্থ্যসেবা দেওয়ার জন্য আমরা মেডিকেল টিম গঠন করেছি। আমাদের পর্যাপ্ত খাবার স্যালাইন, পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও প্রয়োজনীয় ওষুধ মজুদ আছে। স্থানীয় কমিউনিটি ক্লিনিকে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় সেবা নেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ২৪ ঘণ্টা খোলা রয়েছে, উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে আসলে যেকোনো পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত সেবা প্রদান করা হবে। এছাড়াও আমাদের মেডিকেল টিম প্রস্তুত রয়েছে খবর পাওয়া মাত্র রোগীদের পাশে গিয়ে স্বাস্থ্য সেবা নিশ্চিত করবে।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা বেগম শামিম আরা নিপা জানান, সংশ্লিষ্ট জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় গণ্যমান্য ব্যাক্তির মাধ্যমে পাওয়া তথ্যমতে উপজেলার ৮টি ইউনিয়ন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এসব ইউনিয়নের প্রায় সাড়ে তিন হাজার পরিবার পানিবন্দি হয়েছে। আমরা সরকারি সহায়তা হিসেবে চাল, গো-খাদ্য ও শুকনো খাবার পেয়েছি, বন্যার্তদের ক্ষতির পরিমাণ অনুযায়ী পানিবন্দিদের মধ্যে বিতরণ করা হচ্ছে। পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও খাবার স্যালাইন বিতরণের কাজটি স্বাস্থ্য বিভাগ করছেন।

এছাড়া জনস্বাস্থ্য প্রকৌশলকে নির্দেশনা দেওয়া আছে, পানিবন্দি যে কোন এলাকায় যদি বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি থাকে তাহলে তারা দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন। আমাদের পর্যাপ্ত পানি বিশুদ্ধকরণ ট্যাবলেট ও ম্যান পাওয়ার আছে। রিপোর্ট পেলেই ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অন্তত বিশুদ্ধ পানির ঘাটতি হবে। অনেক সময় খবর আমাদের কাছে আসে না। তবে খবর পাওয়া মাত্র আমরা ব্যবস্থা নেবো। এ ধরনের সমস্যায় সরাসরি যোগাযোগ করার জন্য আহ্বান জানান এই কর্মকর্তা।

   

বন বিভাগের গেটের দেওয়ালে চাপা পড়ে শিশুর মৃত্যু



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ায় বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে জুরাইন আহমেদ (৪) নামে শিশুর মৃত্যু হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) বিকেলে খোকসা উপজেলা বন বিভাগের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে এ ঘটনা ঘটে।

জুরাইন আহমেদ খোকসা পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের মাঠপাড়া গ্রামের ব্যবসায়ী উজ্জলের ছেলে।

নিহত শিশুর চাচা আজিজুল ইসলাম জানান, শিশুরা খেলছিলো আবার কেউ ঘুড়ি ওড়াচ্ছিলো। এসময় অসাবধানতাবশত গেটের গেটের দেওয়াল ভেঙে চাপা পড়ে নিহত হয়।

বন কর্মকর্তার অফিসটি সব সময় অরক্ষিত থাকে। কর্মকর্তাদের খামখেয়ালিপনায় জুবায়েরের মৃত্যু হয়েছে বলে দাবি তাঁর।

উপজেলা বন কর্মকর্তা নজরুল ইসলাম জানান, এক বছর আগে কুষ্টিয়ার এক ঠিকাদার গেট নির্মাণ করেছে।

খোকসা উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) ইরুফা সুলতানা বলেন, এটি একটি দুর্ঘটনা। গেট নির্মাণে ত্রুটি থাকতে পারে। ঠিকাদার গেটের পিলার এমনভাবে তৈরি করেছেন, মনে হচ্ছে পিলার দুটি মাটির ওপরে বসিয়ে রাখা হয়েছে। নাড়া দিলেই নড়ছে। বন কর্মকর্তার গাফিলতি পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

বাঘা শরীফের চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পেছনে দুই গুরুর ত্যাগ!



তাসনীম হাসান, স্পেশাল করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম ব্যুরো
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

বাবা-মায়ের দেওয়া নাম মোহাম্মদ শরীফ। কিন্তু বলীখেলার রিংয়ে দোর্দণ্ড প্রতাপের কারণে সেই আসল নামটিই এখন বলতে গেলে হাওয়া। সবার মুখে মুখে রটে তাঁর নামটাই হয়ে গেছে ‘বাঘা শরীফ’। কুমিল্লার হোমনার এই ডানপিটে হৃষ্টপুষ্ট শরীরের তরুণ এবার প্রথমবার অংশ নিয়েছিলেন ঐতিহাসিক আবদুল জব্বারের বলীখেলায়। পরেরটাতো ইতিহাস। একে একে চ্যালেঞ্জ রাউন্ড, সেমিফাইনাল এবং ফাইনাল জিতে ইতিহাসের পাতায় যেন নিজের নামটা খুঁদাই করে গেলেন কুমিল্লার মানুষের ‘প্রিয় বলী’ বাঘা শরীফ। গল্পটা যেন সেই পুরনো প্রবাদের মতো-আসিলাম, দেখিলাম, জয় করিলাম!

অথচ বাঘা শরীফের এই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়ার কথাও ছিল না। বলীখেলায় অংশ নিতে কুমিল্লা থেকে চট্টগ্রামে এলেও চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে তাঁকে রাখেনি আয়োজক কমিটি। তাতে মন খারাপ হয়ে যায় শরীফের। সেটি দেখে বাঘা শরীফকে সুযোগ দিতে দুইবারের চ্যাম্পিয়ন জীবন বলী নিজের নামও প্রত্যাহার করে নেন। কিন্তু তাতেও আয়োজকদের মন গলেনি। শেষ পর্যন্ত গত আসরের চ্যাম্পিয়ন শাহজালাল বলীও বাঘা শরীফকে সুযোগ করে দেওয়ার জন্য প্রত্যাহার করে নেন নিজের নাম। অবশেষে এক প্রকার বাধ্য হয়ে শাহজালালের অনুরোধ রাখে আয়োজক কমিটি। আর এতেই ভাগ্য খুলে যায় বাঘা শরীফের। চ্যালেঞ্জ রাউন্ডে খেলতে নেমেই কক্সবাজারের নুর মোহাম্মদ বলীকে হারিয়ে বাঘা শরীফ উঠে যান সেমিফাইনালে। আর সেমিফাইনালে একইভাবে হারান সীতাকুণ্ডের রাসেল বলীকে।

ফাইনাল শুরু হতেই রিংয়ের পাশে দাঁড়িয়ে বাঘা শরীফকে নানা দিক নির্দেশনা দিতে থাকেন শাহজালাল বলী। অদূরে দাঁড়িয়ে জীবন বলীও সমর্থন জানান শরীফকে। আর এতেই কিনা দ্বিগুণ উৎসাহে রাশেদকে চাপে রাখেন শরীফ। অবশ্য রাশেদও কয়েকবার চেষ্টা করেন ‘মরণকামড়’ দেওয়ার। কিন্তু শরীফের বলের কাছে পরাস্থ হন বারবার। এভাবে ১১ মিনিট ধরে চলতে থাকে ‘কেহ কারে নাহি ছাড়ে সমানে সমান’। কিন্তু থামতে যে হবেই! শেষ পর্যন্ত রাশেদ পারলেন না আর, মেনে নেন হার। এর মধ্যে দিয়ে ঐতিহাসিক এই বলীখেলা পেল নতুন চ্যাম্পিয়ন।

শরীফ বলী জিততেই আনন্দে ফেটে পড়েন শাহজালাল ও জীবন বলী। জানতে চাইলে জীবন বলী বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘বাড়ি থেকে আসার আগে শরীফ আমাকে ফোন করেছিলেন। তার খেলার খুব আগ্রহ ছিল, সেটি জানিয়ে সহযোগিতা চেয়েছিল। আর সে খুব ভালো বলীও। কুমিল্লায় তাঁকে এক নামে চেনেন সবাই। কিন্তু তাঁকে সুযোগ দিচ্ছিল না আয়োজক কমিটি। মূলত তাঁকে সুযোগ করে দিতে আমি নিজের নাম প্রত্যাহার করি নিই। কিন্তু এরপরও সুযোগ না দেওয়ায় শাহজালাল বলীও তাঁর জন্য নাম প্রত্যাহার করে নেন। শেষ পর্যন্ত আমাদের মুখ উজ্জ্বল করল শরীফ। আর আয়োজক কমিটিকেও দেখিয়ে দিল সে কত বড় বলী।’

ছবি: জীবন বলী ও শাহজালাল বলী

প্রায় একই কথা বললেন শাহাজালাল বলীও। তিনি বলেন, ‘বাঘা শরীফ আমার ছোট ভাইয়ের মতো। সে খুব আশা নিয়ে খেলতে এসেছিল। কিন্তু আয়োজক কমিটি সুযোগ দিচ্ছিল না। সেজন্য আমি নিজে না খেলে তাঁকে খেলাতে অনুরোধ জানাই। ভাগ্যিস কমিটি সেই অনুরোধ মেনে নিয়েছিল।’

দুই সিনিয়র বলীর কাছে শ্রদ্ধায় যেন নুইয়ে পড়লেন বাঘা শরীফ। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘শাহজালাল ভাই আমার কাছে বড় ভাইয়ের মতো। বলীখেলায় তিনি আমার গুরুতুল্য। জীবন ভাইও তেমন। তাঁদের দুইজনের কাছে কৃতজ্ঞতার শেষ নেই।’

বলীখেলায় চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় বাঘা শরীফ ট্রফির সঙ্গে পেয়েছেন ৩০ হাজার টাকার সম্মানীও। এই টাকায় কি করবেন এমন প্রশ্নে বাঘা শরীফ বললেন, ‘স্মৃতি হিসেবে রেখে দেবে বেশিরভাগ টাকা। আর কিছু টাকায় আমার দুই বছরের মেয়ে মিমের জন্য কাপড় কিনে নিয়ে যাব। মেয়েকে বলে এসেছিলাম চ্যাম্পিয়ন হয়েই ফিরব। সে বুঝতে না পারলেও হেসেছিল। এখন নিশ্চয় আরও বেশি খুশি হবে।’

এবারের বলীখেলাটি হয়তো স্মরণীয় হয়ে থাকবে দুই বলীর ‘ত্যাগের’ জন্যও। খেলায় অংশ নিলে শাহজালাল আর জীবন বলীর মধ্যেই হয়তো হতো ফাইনালের লড়াই, যেটা হয়ে আসছে বহু বছর ধরে। কিন্তু একজন জুনিয়রকে সুযোগ করে দিতে দুজন যেভাবে নিজেদের নাম প্রত্যাহার করে নিলেন, সেটি ছুঁয়ে গেছে সবাইকে। দর্শকেরা তাই বললেন, এমন ত্যাগও হয়!

আর বাঘা শরীফ তো বলেই দিলেন, ‘এই ট্রফি, এই সম্মানি আমার একার নয়, এই অর্জনের পেছনে পুরো কৃতীত্ব শাহাজালাল ভাই আর জীবন ভাই। তাদের ত্যাগই আমাকে এনে দিল চ্যাম্পিয়নের সম্মান।’

নাম প্রত্যাহার করে শুধু বাঘা শরীফকে চ্যাম্পিয়ন হওয়ার সুযোগটাই করে দিলেন না জীবন আর শাহজালাল। জানিয়ে গেলেন-লড়াই না করেও জেতা যায়!

;

গরমে জানটা শ্যাষ হয়া গেইল!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, লালমনিরহাট
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার টংভাঙ্গা ইউনিয়নের সাহেব আলী। এই অইদের (রোদ) ঠ্যালায় জানটা ব্যার হয়া যাবার নাগছে বাহে! গরীম মানুষ বাঁচে কেমন করি। জারের (শীত) সমায় (সময়) কনকনা ঠান্ডা আর গরমের সমায় গরম। হামরা ঘর থাকি ব্যার হওয়া যায় না। জানটা শ্যাষ (শেষ) হয়া গেইল।

জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রবাহে সৃষ্ট দাবদাহে অতিষ্ট লালমনিরহাটের জনজীবন। বিশেষ করে খেটে খাওয়া মানুষ ক্রমশ কর্মহীন হয়ে পড়েছে। আগুন ঝরা বাতাসে নারী-শিশুসহ কর্মজীবী মানুষ দিন দিন অসুস্থ্য হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হচ্ছেন।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুরে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কে যানবাহন ও যাত্রীর সংখ্যা কম, জরুরি কাজ ছাড়া কেউ বাহিরে বের হচ্ছেন না।

বৃহস্পতিবার দুপুরে কথা হয় হাতীবান্ধা উপজেলার ভ্যানচালক নুরআলম সাথে, তিনি বলেন, বৈশাখের চনচনা অইদোত রোদে মাল নিয়া ভ্যান চালাইতে কষ্ট হয়। গরমের ঠ্যালায় কইলজা ফাটি যায়। ওই জন্যে ঠান্ডাত (গাছের ছায়া) একনা দম নিবার নাগছি।

তিনি আরো বলেন, কোথাও ঠান্ডার আভাস নাই। এভাবে চলতে থাকলে আমরা কর্মহীন হয়ে পড়বো। পরিবার পরিজনের মুখে দু’মুঠো ভাত তুলে দেয়া দুরুহ ব্যাপার হয়ে পড়বে। রিকশাচালক হামিদুল ইসলাম বলেন, ‘গত চার-পাঁচ দিন ধরে আয় রোজগার কমে গেছে। বেলা সাড়ে ১০-১১টার পর রাস্তায় আর কোনো যাত্রী থাকে না।

বাসচালক আকবর আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, গরমের কারণে লালমনিরহাট বুড়িমারী মহাসড়কের বিভিন্ন জায়গায় পিচ (বিটুমিন) উঠে গাড়ির চাকার সাথে লেগে যায়। এতে খুব সতর্ক অবস্থায় গাড়ী চালাতে হয়েছে।

লালমনিরহাট জেলা হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডাঃ রমজান আলী বার্তা২৪.কমকে জানান, প্রচন্ড গরমে শিশু ও বয়স্করা ডায়রিয়াসহ নানা রোগে আক্রান্ত হয়েছে। হাসপাতালের জরুরি বিভাগে দৈনিক শতাধিক রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। জেলার প্রতিটি হাসপাতালে শিশু রোগী ব্যাপক হারে বৃদ্ধি পেয়েছে। এই সময়ে তরল জাতীয় খাবার গ্রহণ, যথাসম্ভব বাহিরে বের না হওয়া, সাথে খাবার পানি রাখা, ছাতা ব্যবহারের পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞ ডাক্তার।

কুড়িগ্রাম আবহাওয়া পর্যবেক্ষনাগারের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সুবল চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, দুপুর ১২টায় লালমনিরহাটে তাপমাত্রা ৩৮.৮ ডিগ্রী সেলসিয়াস রেকর্ড করা হয়।

লালমনিরহাট জেলা তথ্য অফিসার শাহজাহান আলী (অতিরিক্ত দায়ত্বি) বার্তা২৪.কমকে জানান, লালমনিরহাট জেলা প্রশাসক মহোদয়ের নির্দেশে জেলার সর্বত্র সচেতনতামূলক প্রচার-প্রচারণা অব্যাহত রয়েছে।

;

কুয়াকাটায় জেলের জালে ২৬ কেজির কোরাল



উপজেলা করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, (কলাপাড়া-পটুয়াখালী)
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

পটুয়াখালির কুয়াকাটায় বঙ্গোপসাগরে রাসেল মাঝি (৩৫) নামের এক জেলের জালে ধরা পড়েছে ২৬ কেজি ওজনের একটি কোরাল মাছ।

বৃহস্পতিবার (২৫ এপ্রিল) দুপুর ১.৩০ মিনিটে কুয়াকাটা মেয়র মৎস্য মার্কেটের মনি ফিস আড়তে মাছটি নিয়ে আসা হয়। এসময় মাছটি এক নজর দেখতে ভিড় জমায় উৎসুক জনতা। পরে কলাপাড়া উপজেলার নীলগঞ্জ ইউনিয়নের পাইকারি মাছ ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র নিলামের মাধ্যমে ৩০ হাজার টাকায় মাছটি কিনে নেন।

এর আগে গত মঙ্গলবার (২৩ এপ্রিল) বঙ্গোপসাগরের বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় মাছটি ধরা পড়ে।

মাছ পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে রাসেল মাঝি বলেন, প্রতিদিনের মত গত সোমবার (২২ এপ্রিল) ধুলাস্বার ইউনিয়নের বাবলাতলা বাজার থেকে (মায়ের দোয়া) নামের ট্রলার নিয়ে গভীর সাগরে যাই। পরে বলেশ্বর নদীর সাগর মোহনায় জাল ফেলার পর অন্যান্য মাছের সঙ্গে এ কোরাল মাছটি ধরা পড়ে। মাছটির ওজন বেশি হওয়ায় আমাদের ট্রলারে তুলতে অনেক বেগ পেতে হয়েছে।

তিনি আরো বলেন, এর আগেও আমার জালে ১০ থেকে ১৫ কেজি ওজনের কোরাল মাছ ধরা পড়েছিলো। তবে আমার জালে ধরা এটিই সবচেয়ে বেশি ওজনের কোরাল। মাছটি খুব ভাল দামে বিক্রি করেছি। এত বড় মাছ পেয়ে আমার ট্রলারে থাকা জেলেসহ আমি আল্লাহর কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।

মাছটি ক্রয় করা ব্যবসায়ী বিক্রম চন্দ্র বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি দীর্ঘদিন ধরে মাছের ব্যবসা করি, এত বড় কোরাল আসলে সব সময় পাওয়া যায় না। মাছটি দেখেই আমার পছন্দ হয়েছে। তাই নিলামে আমিই বেশি দাম হেঁকে এ মাছটি ক্রয় করেছি। মাছটি বিক্রির জন্য আজই ঢাকায় পাঠাবো। আশা করছি আমি ভালো মানের লাভ করতে পারব।

কলাপাড়া সিনিয়র উপজেলা মৎস্য কর্মকর্তা অপু সাহা বলেন, কোরাল মাছ খুবই সুস্বাদু। শিশুদের মানসিক বিকাশে কোরাল মাছ গুরুত্বপূর্ণ। আশা করছি বৃষ্টি হলে জেলেদের জালে ইলিশের পাশাপাশি আরও বড় বড় মাছ ধরা পড়বে।

;