‘পিটুনি খেয়ে’ পালিয়েছে সাভারের ওই মাদরাসার শতাধিক শিক্ষার্থী
যেখানে দ্বীনের আলোয় আলোকিত করে, প্রকৃত মানুষ হিসেবে শিক্ষার্থীদের গড়ে তোলার কথা, সেখানেই দিনের পর দিন অমানবিক নির্যাতনের শিকার হয়ে শিক্ষা প্রতিষ্ঠান ছেড়ে যেতে বাধ্য হয়েছে শতাধিক শিক্ষার্থী। এমন শিক্ষকের বর্বরতার শিকার হয়েছে আশুলিয়ার শ্রীপুরের নতুননগর মথনেরটেক এলাকার জাবালে নুর মাদরাসার শিক্ষার্থীরা।
আশুলিয়ার ওই মাদরাসাটিতে আবাসিক ব্যবস্থা থাকায় কর্মজীবী অভিভাবকরা তাদের সন্তানদের সুশিক্ষার জন্য ভর্তি করেছিলেন। কিন্তু সন্তানদের ওপর অমানবিক নির্যাতনের বর্ণনা শুনে অনেকেই মাদরাসাটি থেকে সন্তানদের সরিয়ে নিতে বাধ্য হন।
প্রতিষ্ঠানটির পরিচালক কুমিল্লা জেলার বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। তার ৬ তলা ভবনের ৪ তলায় মাদরাসাটি অবস্থিত। মাদরাসায় শিক্ষক হিসেবে দু’জন হাফেজকে নিয়োগ দেন তিনি। তাদের একজন কুমিল্লার হোমনা থানার দুর্গাপুর গ্রামের আতাউর রহমানের ছেলে ইব্রাহিম (৪৮), অন্যজন আবদুল্লাহ।
শুরুতে মাদরাসায় শিক্ষার্থীর সংখ্যা ছিল ২৪৫ জন। তুচ্ছ থেকে তুচ্ছ কারণে পিটুনি ও নির্যাতনের শিকারসহ বিভিন্ন কারণে মাদরাসা ধীরে ধীরে মাদরাসা ছেড়ে চলে যায় ২৩১ শিক্ষার্থী। অবশিষ্ট ছিলো মাত্র ১৪ জন।
এই ১৪ জনের দু’জনকে ১১ সেপ্টেম্বর অমানবিকভাবে পেটায়। একজনকে পেটানোর আগে হাত-পা বেঁধে নেয়। বর্তমানে মাদরাসাটি তালাবদ্ধ। শিক্ষার্থীরা ভয়ে বাড়ি চলে গেছে।
মঙ্গলবার (১৫ সেপ্টেম্বর) বিকেলে এসব তথ্য নিশ্চিত করেছেন আশুলিয়ার স্ব-নির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের ৫ নং ওয়ার্ডের সদস্য লিমা।
লিমা বলেন, প্রায়ই এই মাদরাসায় শিক্ষার্থী নির্যাতনের খবর পাওয়া যেতো। কিন্তু এমন অমানবিক নির্যাতন করা হতো, তা জানা ছিলো না। এমন শিক্ষকের বিচার অনেক আগেই হওয়া উচিত ছিলো বলেও মত দেন লিমা।
শিক্ষার্থীরা জানায়, পেটানোর সময় দু’জনই অনেক অনুনয়-বিনয় করে শিক্ষকের মার থেকে বাঁচার চেষ্টা করেন। তবুও তার মনে দয়া হয়নি, উল্টো তাতে বিরক্ত হয়ে আরও বেশি মারধর করেন।
পিটুনির শিকার শিক্ষার্থী রাকিবের চাচা কিরন সরকার বলেন, একজন শিশুকে এভাবে নির্যাতন করা অন্যায়, আমি এই অন্যায়ের সুষ্ঠু বিচার চাই।
এলাকাবাসী হারুন জানান, মাদরাসা থেকে কয়েক দিন পরপরই অভিভাকরা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যেতো। কিন্তু তারা কখনও মুখ খোলেননি। শুধু তারা এসে তাদের সন্তানদের নিয়ে যেতেন।
নির্যাতনের বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমরা ১৪ সেপ্টেম্বর সিসি টিভির ফুটেজ দেখে, নির্যাতনের ভয়াবহতা সম্পর্কে জানতে পারি। এক পর্যায়ে মানুষ উত্তেজিত হয়ে সোমবার সন্ধ্যায় ওই শিক্ষককে ধরে গণপিটুনি দেয়। পরে পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে আটক করে নিয়ে যায়।
নির্যাতনের শিকার রাকিবের বাবা ইমাদুল ইসলাম বাদী হয়ে ওই শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলা করেছেন। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, গণধোলাইয়ের শিকার ওই শিক্ষক আশুলিয়ার গণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে চিকিৎসাধীন রয়েছেন।
এ ব্যাপারে আশুলিয়ার স্ব-নির্ভর ধামসোনা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান সাইফুল ইসলাম বলেন, ঘটনা জানাজানি হওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই অভিুক্তকে আটক করেছে পুলিশ। ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা যেন না ঘটে সেদিকে নজর রাখা হবে।
আশুলিয়া থানার পুলিশ পরিদর্শক (তদন্ত) জিয়াউল ইসলাম জানান, এ ঘটনায় ভুক্তভোগীর বাবা মামলা দাযের করেছে। আসামীকে পুলিশ হেফাজতে নিয়ে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। একটু সুস্থ হলে তাকে এই মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আদালতে পাঠানো হবে।
ভুক্তভোগীদের পরিবারের সঙ্গে কথা হয়েছে। তাদের অভিযোগের প্রেক্ষিতে বিষয়টি তদন্ত করে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়া হবে। এ ঘটনায় অভিযুক্ত শিক্ষককে আটক করা হয়েছে।
নির্যাতনের শিকার রাকিব ঘটনার পর থেকে গ্রামের বাড়ি টাঙ্গাইলের একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
প্রসঙ্গত, সোমবার (১৪ সেপ্টেম্বর) সকালে ওই এলাকার জাবালে নুর মাদরাসার দুই শিক্ষার্থীকে পেটানোর ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে ভাইরাল হয়। তন্মধ্যে এক শিক্ষার্থীকে পেটানোর আগে হাত-পা বেঁধে নেয়। ওই অবস্থায় বেত দিয়ে পেটানোর পাশাপাশি বেশ কয়েকবার লাথিও মারে। অন্যজনকে স্বাভাবিকভাবে পেটায়। এভাবে দু’জনকে পিটিয়ে একজনকে গুরুতর আহত করে। পিটুনির শিকার ও আহত শিক্ষার্থীসহ অন্যদের ভয়-ভীতি দেখিয়ে চুপ থাকতে বাধ্য করে। ঘটনা জানাজানি হলে, ওই শিক্ষককে গণপিটুনি দিয়ে পুলিশের কাছে সোপর্দ করে এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন: হাত-পা বেঁধে মাদরাসার ‘ছাত্র পেটানো’ সেই শিক্ষক আটক