শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী

শুভ জন্মদিন, বাঙালির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু

  • নিউজ ডেস্ক বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/ছবি: সংগৃহীত

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান/ছবি: সংগৃহীত

আজ বুধবার ১৭ মার্চ বাঙালির মহানায়ক জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ১০১ তম জন্মবার্ষিকী। ১৯২০ সালের এই দিনে গোপালগঞ্জের টুঙ্গিপাড়ায় জন্মগ্রহণ করেন সর্বকালের সর্বশ্রেষ্ঠ বাঙালি। শেখ মুজিব শুধু একটি নাম নয়, একটি ইতিহাস, একটি স্বাধীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রামী চেতনা। শেখ মুজিবুর রহমানের জীবন ও রাজনীতি, একটি ভৌগোলিক সীমারেখায় স্বাধীন-সার্বভৌম বাংলাদেশ রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা, ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব স্বকীয় নেতৃত্বের আভাস পাওয়ার যায় কিশোর বয়স থেকেই। তিনি কিশোর বয়সে খ্যাতিমান রাজনৈতিক নেতা শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হক ও হোসেন শহীদ সোহরাওয়ার্দীর কাছে গোপালগঞ্জে নির্ভীক কণ্ঠে তাঁদের গ্রামের স্কুলের দাবি তুলে ধরেছিলেন। আঠারো বছর বয়সে স্কুলে পড়ার সময় এক ঘটনায় প্রতিবাদী ভূমিকা গ্রহণের জন্য তরুণ শেখ মুজিব গ্রেপ্তার হন। সে সময় সপ্তাহখানেক জেলহাজতে থাকতে হয় তাকে। সেটা ছিলো তাঁর জীবনের প্রথম কারাবরণ। এরপর বাঙালি জাতির অধিকার, স্বাধীনতার জন্য অসংখ্যবার কারাবরণ করে এই মহান নেতা

বিজ্ঞাপন

এই প্রতিবাদী মুজিবের জন্ম গোপালগঞ্জ জেলায় শেখ লুৎফর রহমান এবং সায়েরা খাতুন ঘরে। টুঙ্গীপাড়ার অজপাড়া গ্রামে জন্মগ্রহণ করা ‘খোকা’ নামের সেই শিশুটি পরবর্তীতে হয়ে উঠেন নির্যাতিত-নিপীড়িত বাঙালি জাতির মুক্তির দিশারী। গভীর রাজনৈতিক প্রজ্ঞা, আত্মত্যাগ ও জনগণের প্রতি অসাধারণ মমত্ববোধের কারণেই পরিণত বয়সে হয়ে ওঠেন বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা বঙ্গবন্ধু।

কিশোর বয়সেই তিনি সক্রিয় রাজনীতিতে জড়িয়ে পড়েন। গোপালগঞ্জের মিশন স্কুলে অষ্টম শ্রেণীতে অধ্যায়নকালে তৎকালীন ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে যোগদানের কারণে শেখ মুজিবুর রহমান প্রথমবারের মতো গ্রেফতার হয়ে কারাবরণ করেন। এরপর থেকে শুরু হয় বঙ্গবন্ধুর আজীবন সংগ্রামী জীবনের অভিযাত্রা। তিনি বঙ্গবন্ধু তাঁর সহকর্মীদের নিয়ে ১৯৪৮ সালে ছাত্রলীগ এবং পরবর্তীতে ১৯৪৯ সালে আওয়ামী লীগ গঠন করেন।

পাকিস্তান প্রতিষ্ঠার পর দীর্ঘ ২৩ বছর পাকিস্তানি শাসকশ্রেণির বৈষম্য-নীতি, শোষণ ও অগণতান্ত্রিক কার্যক্রমের বিরুদ্ধে শেখ মুজিবুর রহমানের সংগ্রামের কথাই বারবার ঘুরে-ফিরে আসে।

’৪৭-এ দেশবিভাগ ও স্বাধীনতা আন্দোলন, ’৫২-এর ভাষা আন্দোলন, ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে ২১-দফার ভিত্তিতে যুক্তফ্রন্টের কাছে মুসলিম লীগের শোচনীয় পরাজয় ছিল তাদের রাজনৈতিক ধ্যান-ধারণার বিপর্যয়। তেমনি বাঙালি জাতীয় সত্তা সংরক্ষণের দৃঢ় প্রতিজ্ঞা প্রকাশ পায় প্রথম বাংলা ভাষা আন্দোলনে, পরে ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে মুসলিম লীগের পরাজয়ে।

এরপর ৬২-এর শিক্ষা আন্দোলন, ’৬৬-এর ছয় দফা আন্দোলন, ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান পেরিয়ে ’৭০ সালের ঐতিহাসিক নির্বাচনে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাতির অবিসংবাদিত নেতা হিসেবে পরিণত হন।

বাংলাদেশের মুক্তি সংগ্রামের প্রতিটি অধ্যায়ে বঙ্গবন্ধুর নাম চির ভাস্বর হয়ে আছে। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান তৎকালীন রেসর্কোর্স ময়দানে তাঁর ঐতিহাসিক ভাষণে স্বাধীনতার কথা ঘোষণা করেন- ‘এবারের সংগ্রাম আমাদের মুক্তির সংগ্রাম/এবারের সংগ্রাম স্বাধীনতার সংগ্রাম।’

১৯৭১ সালের ২৬ মার্চের প্রথম প্রহরে পাকিস্তানি হানাদার বাহিনীর হাতে গ্রেফতার হওয়ার পূর্বে তিনি আনুষ্ঠানিকভাবে বাংলাদেশের স্বাধীনতা ঘোষণা করেন। দেশের স্বাধীন হওয়ার মাত্র ৪ বছরের মাথায় ১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টের কালরাত্রিতে বিশ্বাসঘাতকদের তপ্ত বুলেটে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান সপরিবারে নিহত হন।

কিন্তু বাংলাদেশ ও বঙ্গবন্ধু এক অবিচ্ছেদ্য নাম এবং বাংলাদেশ, বঙ্গবন্ধু ও বাঙালি জাতির অবিভাজ্য সম্পর্কের কোন পরিসমাপ্তি নেই। পৃথিবীর মানচিত্রে বাংলাদেশের অবস্থান এবং বঙ্গবন্ধুর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বিশ্বসভায় বাঙালি জাতির সগর্ব উপস্থিতি স্মরণ করিয়ে দেয় বঙ্গবন্ধুকে।