গানের আসর নেই, উপার্জনও বন্ধ

  • রাকিবুল ইসলাম রাকিব, উপজেলা করেসপন্ডেন্ট,  গৌরীপুর (ময়মনসিংহ)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

বাউল শিল্পী বোলাসামা রফিক

বাউল শিল্পী বোলাসামা রফিক

গান গেয়ে আসর মাতাতেন তিনি। তাঁর গান শোনে শ্রোতারা কখন হাসতো, কখনো কাঁদত, কখনো বা হত আবেগাপ্লুত। করোনায় গানের আসর বন্ধ হলে পরিবার নিয়ে কষ্টে পড়েন এই শিল্পী। এখন দিন গুণছেন কবে শেষ হবে করোনাকাল।

যার সম্পর্কে কথাগুলো বলা হচ্ছে তিনি হলেন বাউল শিল্পী বোলাসামা রফিক (৩৮)। বাড়ি ময়মনসিংহের গৌরীপুর পৌর শহরে। দাম্পত্য জীবনে তার স্ত্রী, এক ছেলে ও  এক মেয়ে রয়েছে।

বিজ্ঞাপন

বার্তা২৪.কমকে বোলসামা রফিক বলেন, করোনাকালে গানের আসর ও রেকর্ডিং বন্ধ হলেও বাউলদের সহযোগিতা করেনি কেউ। গত বছর করোনায় বেহালা বিক্রি করে দলের এক সদস্যের বাড়িতে খাবার পাঠিয়েছি। চলতি বছরের শুরুতে পরিস্থিতি স্বাভাবিক হলে লকডাউনে উপার্জন বন্ধ। কিন্ত বাউল শিল্পীদের কেউ খোঁজ রাখেনি।

রফিকের বাবা প্রয়াত হাসান আলী পাগল একজন বাউল শিল্পী। ছোটবেলায় বাবার কাছ থেকে বাউল গান ও বাদ্যযন্ত্রে হাতেখড়ি হয় তার। ২০০২ সালে রফিকের বিডিআরএ চাকরি হলেও গানের টানে চাকরি ছেড়ে দেন। পরে ওই বছরই পূর্বধলায় একটি আসরে বাউল গান গেয়ে গানের জগতে পথচলা শুরু তার।

বিজ্ঞাপন

জীবনে প্রথম গানের আসরে গান গেয়ে ২৫০ টাকা সম্মানী পেয়েছিল রফিক। এখন পেয়ে সম্মানী পান ৪ থেকে ৫ হাজার টাকা। দল নিয়ে গেলে সম্মানী আরো বেশি। বাউল গান গাওয়ার পাশাপাশি রফিক নিজে গান লিখে সুর করেন। এ পর্যন্ত ১৭টি অ্যালবাম ও ইউটিউবে অর্ধশতাধিক গান বের হয়েছে তার। বাউল গানের চর্চা ধরে রাখতে প্রতিষ্ঠা করেছেন ‘হাসান রফিক বাউলে শিল্পী গোষ্ঠী’। সেখানে শিক্ষার্থীদের গান ও বাদ্যযন্ত্র শেখানো হয়।

বোলসামা রফিক বলেন, গান গাইলেই বাউল হওয়া যায়না। আমি নিজেও বাউল হতে পারিনি। বাউল হতে হলে গান ছাড়াও বাউলধর্মের অপরাপর বিষয় সম্পর্কে চর্চা করতে হয়। লোভ-লালসার ঊর্ধ্বে থাকতে হয়। আমি সেই চর্চাটা করে যাচ্ছি। কিন্ত সাম্প্রতিক সময়ে যাত্রাগানের কিছু শিল্পী বাউল পরিচয়ে মঞ্চে গান গাইছে। এদের মধ্যে বাউলিয়ানার কোন চর্চা নেই। এরা বাউল সংস্কৃতির জন্য হুমকি।

করোনাকাল শেষ হলে ফের গানে ফিরতে চান রফিক। গান গেয়ে মাতাতে চান আসর। তাই বাড়িতে বসে দল নিয়ে গান চর্চা করেন নিয়মিত। কিন্ত অভাবের তাড়নায় রফিকের স্ত্রী তাকে চাপ দিচ্ছেন গান ছেড়ে অন্য কাজ করে উপার্জন করার। এই অবস্থায় কি করবেন ভেবে পাচ্ছেন না।

বোলসামা রফিক বলেন বাউল গান ভালবেসে আজ পথে বসার উপক্রম। দুই সন্তানের পড়াশোনা ও ভবিষ্যত নিয়ে চিন্তায় আছি। ঈদ ঘনিয়ে আসলেও পরিবারে আনন্দ নেই। অর্থকষ্টে থাকলেও হাত পাততে পারছিনা। হাত পাতা বাউলদের সাথে যায় না।

বাংলা মঞ্চের আহ্বায়ক এইচএম খায়রুল বাসার বলেন বাউল গান লোকসংস্কৃতির শ্রেষ্ঠ সম্পদ। নানা প্রতিবন্ধকতার মধ্যেও বাউল শিল্পীরা এই সম্পদ টিকিয়ে রেখেছে।  তাদের দুর্দিনে সবার পাশে দাঁড়ানো উচিত।