ভুয়া দোকান নম্বর দেখিয়ে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নিয়েছেন ডিএসসিসির জামাল
মো. জামাল হোসেন। চাকরি করেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অঞ্চল-২ এর বৈদ্যুৎ শাখায় বৈদ্যুতিক সাহায্যকারী পদে। চাকরির পাশাপাশি জাল জালিয়াতিতে সিদ্ধহস্ত এই জামাল। সাবেক মেয়র মোহাম্মদ সাঈদ খোকনের শাসনামলে একাই বাগিয়ে নিয়েছেন দুইটি দোকানের ভুয়া টোকেন নম্বর।
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মালিকানাধীন গুলিস্থান ট্রেড সেন্টারে দোকান বরাদ্দের সময় কৌশলে মেয়র কোটায় দু’টি দোকানের ভুয়া নম্বর সংগ্রহ করে বিক্রি করে দেন অন্যজনের কাছে। দোকান হওয়ার আগেই দোকানের নম্বর দেখিয়ে ১৬ লাখ টাকা হাতিয়ে নেন এক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে।
দোকান নম্বর ভুয়া হলেও প্রতিশ্রুতিশীল সাহসিকতার কমতি নেই। টাকা লেনদেনের আগে স্ট্যাম্পে স্বাক্ষর করে অঙ্গীকার করেন জামাল হোসেন। সেখানে তিনি উল্লেখ করেন যদি দোকান বুঝিয়ে দিতে না পারি তাহলে টাকা প্রদানকারী তার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবেন।
সাবেক মেয়র থাকতে সবকিছু ঠিকঠাক চলছিল। জামালের কপালে চিন্তার ভাঁজ পড়ে নতুন মেয়র ব্যারিস্টার শেখ ফজলে নূর তাপস আসার পর। নতুন মেয়র গুলিস্থান ট্রেড সেন্টারে থাকা সকল অবৈধ দোকান যখন উচ্ছেদের ঘোষণা দেন তখন থেকেই গা ঢাকা দেন জামাল হোসেন। তার ব্যবহৃত মোবাইল নম্বরও পরিবর্তন করেন।
ডিএসসিসি’র বৈদ্যুতিক সাহায্যকারী মো. জামাল হোসেন দোকান বিক্রির চুক্তি করেন ব্যবসায়ী মো. আবু তৈয়ব বাবুল ও সোহেলী ইয়াসমিনের সাথে। চুক্তিনামায় উল্লেখ করা আছে- “এই মর্মে অঙ্গীকার করিতেছি যে আমি মো. জামাল হোসেন উক্ত গুলিস্থান ট্রেড সেন্টার মার্কেটের নীচ তলার দোকান নং-১২২ এবং নীচ তলার দোকান নং-৮৬ন মো. আবু তৈয়ব (বাবুল) এবং সোহেলী ইয়াসমিনকে বুঝিয়া দিতে ব্যর্থ হই, তাহা হইলে গ্রহণকৃত ১৬ লাখ টাকা আমি জামাল হোসেন, মো আবু তৈয়ব ও সোহেলী ইয়াসমিনকে ফেরত প্রদানে করিতে বাধ্য থাকব।”
চুক্তিপত্রে জামাল হোসেন আরো উল্লেখ করেন- ‘উক্ত দুইটি দোকান অর্থাৎ নীচ তলার দোকান নং ১২২এবং ৮৬ নং ন আবু তৈয়ব (বাবুল) এবং সোহেলী ইয়াসমিনকে বুঝাইয়া না দেই তাহা হইলে আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারবে।’
ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের লোগা সম্বলিত একটি ভিজিটিং কার্ডে মো. জামাল হোসেন এর ক্রমিক নং উল্লেখ করা আছে-০০২-০৪১। বর্তমানে অঞ্চল-২ এ কর্মরত জামাল হোসেন এর সঙ্গে তার ব্যবহৃত মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি বার্তা২৪.কম-কে বলেন, তখন দোকান নিয়েছি, বিক্রিও করেছি। সেই মার্কেটে তো অনেকেই দোকান বুঝিয়ে পায় নাই এখন আমার কি করার আছে? আর যার কাছ দোকান বিক্রি করেছি সে তো পে অর্ডারও দিয়েছিলেন সিটি করপোরেশনকে।
ভুক্তভোগী ব্যবসায়ী মো. আবু তৈয়ব বাবুল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘আমি সিটি করপোরেশনের লোক দেখে বিশ্বাস করে জামাল হোসেনের কাছ থেকে দুটি দোকান কিনেছিলাম। ২০১৮ সালে টাকা দেয়ার পর এখনো দোকান বুঝে দেন নাই। পরে সিটি করপোরেশনে খোঁজ নিয়ে দেখি যে নম্বরের দোকানের জন্য বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে সেই দোকান ওখানে নেই। আমাকে নিচ তলায় দুটি দোকান দেবার কথা। এখন পর্যন্ত দোকান বুঝিয়ে দেয় নাই টাকাও ফেরত দিচ্ছে না। তার সঙ্গে আমার স্ট্যাম্পে লিখিত চুক্তি হয়েছে। সে এখন সে আর কোন কথাই বলছে না। দেখা করতে চাইলেও দেখা দেন না। একবার বিষয়টি মিমাংশার প্রতিশ্রুতি দিলেও সে তার প্রতিশ্রুতি ভঙ্গ করেছে।
প্রতারণার শিকার হওয়ার পর আবু তৈয়ব বাবুল ও জামাল হোসেনের মধ্যে লেনদেন নিয়ে যে কথা হয় তার একটি অডিও রেকর্ড বার্তা২৪.কম এর কাছে রয়েছে। ওই কথোপকথনে জামাল হোসেন বলেন, দোকান আপনি পাবেন হান্ড্রেটে হান্ড্রেড। আপনাকে নিচ তলাতেই দোকান দেব, সময় লাগবে, হয়তো একদিন আগে পরে। আমি স্ট্যাম্প করে দিচ্ছি। এক পর্যায়ে বলেন আমি পাইছি ১৬ লাখ। আর বাকি চার লাখ আপনি (আবু তৈয়ব বাবুল) পে অর্ডারের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনকে দিয়েছেন, ওটা আপনার। এপাশ থেকে আবু তৈয়ব ২০ লাখ টাকা ফেরত চাওয়াতে উত্তেজিত হয়ে যান জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ‘দোকান কি বাপের ঘর থেকে আইনা দেব। দোকান রেডি না হলে কিভাবে দেব?’
এবিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ফরিদ আহাম্মদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, “আমি দায়িত্ব গ্রহণের পর এখন পর্যন্ত এধরনের কোন অভিযোগ পাইনি। লিখিত কোন অভিযোগ পেলে অবশ্যই খতিয়ে দেখা হবে। আর কেউ অপরাধ করে থাকলে আইন অনুযায়ী শাস্তি হবে।”