কাটছে সংকট, ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিতে ঘুরে দাঁড়াচ্ছে দেশ

  করোনা টিকা
  • শাহজাহান মোল্লা, সিনিয়র করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

প্রাণঘাতী করোনাভাইরাস মোকাবিলায় একমাত্র উপায় যতদ্রুত সম্ভব বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার অনুমোদতি ভ্যাকসিন গ্রহণ করা এবং স্বাস্থ্যবিধি মেনে চলা। বাংলাদেশ সরকার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার একান্ত প্রচেষ্টা এবং পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের দক্ষতায় ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিতে আশার আলো দেখছে বাংলাদেশ। দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনার জন্য প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ঘোষণা দিয়েছেন। যে দেশ যত টাকা লাগুক ভ্যাকসিন ক্রয় করে দেশের মানুষকে বিনামূল্যে ভ্যাকসিন প্রদানের অঙ্গীকার করেছেন প্রধানমন্ত্রী।

বাংলাদেশ এখন পর্যন্ত যেসকল উৎস থেকে ভ্যাকসিন পাচ্ছে বা প্রতিশ্রুতি পেয়েছে তার মধ্যে অন্যতম চীনের সিনোফার্ম, মর্ডানা, কোভ্যাক্স, ফাইজার এবং ভারতের সেরাম ইনস্টিটিউটে উৎপাদিত কোভিডশিল্ড ভ্যাকসিন। ভারতে কনোরা পরিস্থিতি বেড়ে যাওয়ায় কোভিডশিল্ড ভ্যাকসিন সরবরাহ বন্ধ থাকায় ভ্যাকসিন প্রাপ্তি নিয়ে যে জটিলতা ছিল সেটা অনেকটাই কাটিয়ে ওঠার পথে বাংলাদেশ।

বিজ্ঞাপন

বিশ্বের উন্নত দেশগুলোর মাধ্যমে বিভিন্ন মাধ্যমে প্রতিশ্রুতি ও ভ্যাকসিন প্রদান অব্যাহত রয়েছে বলে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে সংশ্লিষ্ট সংসদীয় স্থায়ী কমিটিকে। মন্ত্রণালয় আশা করছে বর্তমানে যেভাবে আলাপ আলোচনা চলছে তাতে প্রায় ১৬-১৭ কোটি ভ্যাকসিন পাইপ লাইনে। এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন উৎস থেকে কেনা এবং উপহার হিসেবে পাওয়া মোট ভ্যাকসিনের সংখ্যা প্রায় ৩ কোটি।

পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়রে সংসদীয় কমিটিতে ভ্যাকসিন নিয়ে সার্বিক চিত্র তুলে ধরে একটি প্রেজেনটেশন দেওয়া হয়েছে। সেখান থেকে কমিটির সদস্যরা আশান্বিত যে ভ্যাকসিন নিয়ে যে জটিলতা ছিল সেটি অচিরেই কেটে যাবে। সরকারি হিসাবে দেশের ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিন দিতে হলে প্রায় ২৫-২৬ কোটি ভ্যাকসিন দরকার। তবে যেভাবে আলোচনা চলছে প্রতিশ্রুতি দেওয়া দেশগুলো তাদের প্রতিশ্রুতি ঠিক রাখলে সেই লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করতে পারবে বলে মনে করছেন সংসদীয় কমিটির সদস্যগণ।

বিজ্ঞাপন

কমিটিতে পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন বলেন, ভারত থেকে চাহিদা অনুযায়ী করোনা টিকা না পাওয়ায় টিকা কার্যক্রম ব্যাহত হয়েছিল। কিন্ত বর্তমানে সিনোফার্ম, মর্ডানা কোভ্যাক্স এবং ফাইজার থেকে মোট ৪ দশমিক ৫ মিলিয়ন টিকা প্রাপ্তিতে সংকট অনেকাংশে কেটে গেছে। তাছাড়া চলতি মাসে ইউরোপিয় ইউনিয়ন থেকে কোভ্যাক্সের অধীনে আরও ১ মিলিয়ন, জাপান থেকে ২ দশমিক ৫ মিলিয়ন মোট ৮ মিলিয়ন টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ইতোমধ্যে স্বাস্থ্য পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় ৫ মিলিয়ন টিকার জন্য সিনোর্ফামের সাথে আলাদা একটি চুক্তি করেছে এবং আগস্ট মাসে কোভ্যাক্স থেকে আরও ৬ দশমিক ২ মিলিয়ন টিকা পাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। ফলে নিরবিচ্ছিন্নভাবে টিকা কার্যক্রম পরিচালনার ক্ষেত্রে কোন সমস্যা হবে না বলে আশা করেন মন্ত্রী।

তবে সন্তোষ্ট নন সংসদীয় কমিটির সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। তিনি কমিটিতে বলেন, টিকা প্রাপ্তির বর্তমান যে গতি তাতে সন্তুষ্ট হওয়ার কিছু নেই। কমিটি ইতোপূর্বের বৈঠকগুলোতে টিকা প্রাপ্তির সম্ভাব্য সংকট নিয়ে আশংকা প্রকাশ করা হয়েছিল। প্রতি মাসে গড়ে ৫০ লাখের মতো টিকা আসতে পারে। সে হিসেবে ২৬ কোটি ডোজ টিকা পেতে ২০২৪ সাল পর্যন্ত লেগে যাবে। তাই টিকা প্রাপ্তির বিষয়ে আরও জোরালো চেষ্টা অব্যাহত রাখার অনুরোধ করেন তিনি।

এদিকে ভারতের টিকা প্রাপ্তি নিয়ে সৃষ্ট জটিলতায় আশার আলো দেখিয়েছেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। তিনি কমিটিতে বলেছেন, চুক্তি থাকার পরেও ভারতে কোভিড পরিস্থিতি মারাত্মক আকার ধারণ করায় তাদের দেশে টিকার চাহিদা বৃদ্ধি পেয়েছে বিধায় করোনার টিকা রফতানি আপাতত বন্ধ করে দিয়েছে। তবে আগামী নভেম্বর-ডিসেম্বরের মধ্যে ভারত বাংলাদেশকে টিকা দিতে পারবে বলে কমিটিকে অবহিত করেন সচিব।

এদিকে বৈঠকে উপস্থিত একজন সংসদ সদস্য বার্তা২৪.কম-কে মোবাইল ফোনে বলেন, ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসিতে বাংলাদেশ খুবই ভালো অবস্থানে আছে। আজকের বৈঠকে যে পাওয়ার পয়েন্ট প্রেজেনটেশন দেখানো হয়েছে তাতে বলা হয়েছে আগামী সেপ্টম্বর-অক্টোবরের মধ্যেই ভারত থেকে ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে।

বৈঠকে উপস্থিত কমিটির সদস্য মো. হাবিবে মিল্লাত বার্তা২৪.কমকে বলেন,  এ পর্যন্ত প্রায় ৩ কোটির মতো  ভ্যাকসিন দেশে আছে। আরো প্রায় ১৬-১৭ কোটি ভ্যাকসিন পাইপলাইনে আছে। ভ্যাকসিন ডিপ্লোমেসি বেশ ভালো অবস্থায় আছে। এই আলোচনা অব্যাহত থাকলে ইনশাল্লাহ বাংলাদেশ ভ্যাকসিন পাবে। আগামী ১৪ আগস্ট পর্যন্ত ৩ কোটি ১৫ লাখ ৭১ হাজার এর মতো ভ্যাকসিন দেশে থাকবে। আশার কথা হচ্ছে উন্নত দেশগুলো এতোদিন ভ্যাকসিনের চাহিদা বেশি থাকায় আমাদের প্রাপ্তিতে ভাটা পড়েছিল এখন তাদের চাহিদা কমছে আমরাও আশাবাদি ভ্যাকসিন সংকট কেটে যাবে।

তবে ডিম্বরের মধ্যে ৮০ শতাংশ মানুষকে ভ্যাকসিনের আওতায় আনতে যে সংখ্যাক ডোজ টিকা দরকার সেটি এই সময়ের মধ্যে সম্ভব কি না তা নিয়েও প্রশ্ন রয়েছে। অনেক দেশই প্রতিশ্রুতি দিয়েছে তারমধ্যে চীনের ভ্যাকসিন কনফর্ম, ভারতেরটাও সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে চলে আসবে বলে মনে করছে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। যে সকল ভ্যাকসিন পাওয়া যাবে তারমধ্যে চীনের প্রায় ৬ কোটিরও বেশি, ভারতের ২ কোটির বেশি ভ্যাকসিন বাংলাদেশ পাবে। তাছাড়া বুলগেরিয়া থেকেও ১ লাখ ডোজ ভ্যাকসিন পাচ্ছে বাংলাদেশ।

বৃহস্পতিবার (১২ আগস্ট) সংসদ ভবনে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির ২২তম সভা অনুষ্ঠিত হয়। বৈঠকে সভাপতিত্ব করেন কমিটি সভাপতি মুহাম্মদ ফারুক খান। এছাড়া বৈঠকে অংশ গ্রহণ করেন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির সদস্য পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ. কে. আব্দুল মোমেন, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী মো. শাহরিয়ার আলম, নুরুল ইসলাম নাহিদ, গোলাম ফারুক খন্দঃ প্রিন্স, মো. আব্দুল মজিদ খান এবং মো. হাবিবে মিল্লাত।

এদিকে সংসদ সচিবালয় থেকে পাঠানো প্রেসবিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে দশ বছর বয়স পর্যন্ত বিদেশে অধ্যয়নরত বাংলাদেশি ছাত্রছাত্রীদের টিকার আওতায় আনার জন্য পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। এছাড়া পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রমগুলো ই-মেইলের মাধ্যমে কমিটির সদস্যদের নিয়মিত অবহিত করার পরামর্শ প্রদান করা হয়।

অন্যদিকে বিশ্বব্যাংকসহ যে সকল দাতা সংস্থা ও দেশ রোহিঙ্গা ইস্যুতে অর্থ ও মানবিক সহায়তা প্রদানের পাশাপাশি প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশে রাখার ব্যাপারে কথা বলছে তাদের প্রত্যেককে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের ব্যাপারে মায়ানমারের উপর চাপ সৃষ্টির জন্য অনুরোধ জানানোর পরামর্শ প্রদান করা হয়।

যাত্রীদের টিকেটিং ও গ্রাউন্ড হ্যান্ডলিং এর ক্ষেত্রে বাংলাদেশ বিমানের দুর্নীতিবাজ কর্মকর্তাদের চিহ্নিত করে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন মন্ত্রণালয়কে অনুরোধ জানানোর পরামর্শ প্রদান করা হয়। জাতিসংঘের আসন্ন সাধারণ অধিবেশনে সংসদীয় কমিটির সদস্যদের অংশগ্রহণের বিষয়টি বিবেচনার সুপারিশ করা হয়।

বৈঠকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ এবং জাতীয় সংসদ সচিবালয়ের সংশ্লিষ্ট ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাবৃন্দ উপস্থিত ছিলেন।