পানিবন্দি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান
বন্যা ও বৃষ্টির পানিতে দেশের বিভিন্ন জেলায় অনেক শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান তলিয়ে আছে। অনেক প্রতিষ্ঠান থেকে পানি নেমে গেলেও সেগুলো এখনো পাঠদানের উপযোগী হয়নি। এ ছাড়া বেশ কয়েকটি বিদ্যালয় নদীগর্ভে বিলীন হয়ে গেছে। পানিবন্দি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মধ্যে সিরাজগঞ্জের শাহজাদপুরে ৩৮টি, রাজবাড়ীর ৩০টি বিদ্যালয়, নেত্রকোনার মদনে ১২ প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং মানিকগঞ্জের দৌলতপুর ও টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে শতাধিক স্কুল-কলেজ রয়েছে। জামালপুরের ১৯০টি বিদ্যালয়ে চেয়ার-টেবিল, বেঞ্চসহ বিভিন্ন আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। যমুনা বেষ্টিত চরাঞ্চলে এখনো অনেক বিদ্যালয়ে পানি রয়েছে। এ অবস্থায় নির্ধারিত দিনে ক্লাস শুরু নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে।
সিরাজগঞ্জ: শাহজাদপুর উপজেলার ১৩টি ইউনিয়নে মোট ১১১টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৩৮টির শ্রেণিকক্ষে পানি রয়েছে। আর ৮৮টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে মাঠ ডুবে রয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, বন্যায় ডুবে যাওয়া বিদ্যালয় ছাড়া অন্যগুলো সরকারের নিয়ম মেনে খোলার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। এসব বিদ্যালয়ের পাকা ভবনে বেসিন স্থাপন করে তোয়ালে, হ্যান্ড স্যানিটাইজার, টিস্যু পেপার ও সাবানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। শিক্ষার্থীদের দূরত্ব বজায় রেখে বসানোর ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। খোলা মাঠের টিনশেড বিদ্যালয়গুলোতে ড্রাম পদ্ধতিতে অস্থায়ী বেসিনের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বন্যার পানি নেমে গেলে জীবাণুমুক্ত করে পাঠদানের ব্যবস্থা করা হবে বলে জানান তিনি।
জামালপুর: যমুনার পানিতে ইসলামপুর উপজেলার ডেবরাইপ্যাচ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের একটি পাকা ভবন তলিয়ে গেছে। একই উপজেলার দেলিরপাড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ভেতর পানির স্রোত। পূর্ব বামনা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের আসবাবপত্রও পানিতে তলিয়ে গেছে। জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, ১৯০টি বিদ্যালয় বন্যাকবলিত হলেও রোববার থেকে পানি নামতে শুরু করেছে। তবে চরাঞ্চলের অনেক বিদ্যালয়ে এখনো পানি রয়েছে। চূড়ান্ত ক্ষয়ক্ষতি এখনো নির্ধারণ করা হয়নি।
নেত্রকোনা: মদন উপজেলার হাওরাঞ্চলে বিশেষ করে ১২ প্রাথমিক বিদ্যালয় খোলা নিয়ে অনিশ্চয়তা দেখা দিয়েছে। বর্ষাকালে এসব বিদ্যালয় পানিবন্দি থাকে। উপজেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলায় ৯৪টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে হাওরাঞ্চলের ১২টি বিদ্যালয়ের চারপাশে পানি রয়েছে। পানিবন্দি বিদ্যালয়গুলো হলো- ধান কুনিয়া আবুল হাসেম সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মনিকা পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, নওধার সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, বারঘরিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, পদ্মশ্রী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, রামদাসখিলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ছত্রমপুর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ঘাটুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, গোবিন্দশ্রী বড্ডা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, মান্দারুয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, খালাসিপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ত্রিপন সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, জঙ্গলডেমারগাতী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এসব বিদ্যালয়ে অন্তত দুই হাজার শিক্ষার্থী পড়ে।
রাজবাড়ী: জেলার ২১টি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে বন্যার পানি এখনও নামেনি। আর ৯টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে খোলা হয়েছে আশ্রয়কেন্দ্র। যে কারণে জেলার ৩০টি বিদ্যালয়ে ক্লাস শুরু হওয়া নিয়ে সংশয় থেকেই যাচ্ছে। যদিও বিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ এবং শিক্ষা কর্মকর্তারা ক্লাস শুরু করতে সব রকমের প্রস্তুতির কথাই জানিয়েছেন। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় মোট প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৪১৯টি। এর মধ্যে ২১টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠেছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলায় চারটি, পাংশায় তিনটি, কালুখালীতে পাঁচটি এবং গোয়ালন্দে নয়টি বিদ্যালয়ে বন্যার পানি উঠেছে। মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, জেলায় ১৫০টি মাধ্যমিক বিদ্যালয়, ৭৩টি মাদ্রাসা ও ১০টি কারিগরি বিদ্যালয় রয়েছে। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানেই বন্যার পানি ওঠেনি। তবে আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কারণে জেলার ৯টি স্কুলে পাঠদান নিয়ে সংশয় রয়েছে। এর মধ্যে গোয়ালন্দে ছয়টি, রাজবাড়ী সদর, কালুখালী ও পাংশায় একটি করে।
টাঙ্গাইল: বন্যার কারণে মির্জাপুর উপজেলার শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খোলার বিষয়টি অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। প্রায় তিন সপ্তাহ ধরে চলা টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে এরই মধ্যে উপজেলার বেশির ভাগ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে পানি উঠেছে। উপজেলা শিক্ষা অফিস ও মাধ্যমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, এ উপজেলার ১৪টি ইউনিয়ন ও একটি পৌরসভায় ১৭০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়, ৫৫টি মাধ্যমিক, আটটি কলেজ, ১৪টি মাদ্রাসা এবং তিনটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে উপজেলার পাঁচটি পাহাড়ি ইউনিয়ন আজচগানা, লতিফপুর, তরফপুর, বাঁশতৈল ও গোড়াই বাদে নিম্নাঞ্চলের অধিকাংশ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বন্যার পানি ঢুকেছে। কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের মাঠে আবার কোনো কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভেতরেও পানি ঢোকার উপক্রম হয়ে পড়েছে। প্রতিদিনই পানি বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরই মধ্যে শতাধিক সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠে পানি প্রবেশ করেছে।
গাইবান্ধা: বন্যা পরিস্থিতির উন্নতি হলেও জেলার চারটি উপজেলার ৬২টি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ৬০টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় এবং ২টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় রয়েছে। ফলে বিদ্যালয়ের বেঞ্চসহ আসবাবের ক্ষতি হয়েছে। তবে জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রের দাবি, বেশির ভাগ বিদ্যালয় থেকে পানি নেমে গেছে।
নীলফামারী: জেলাতে বন্যায় ১৩টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এর মধ্যে ডিমলার টেপাখড়িবাড়ী ইউনিয়নে ৭টি, খালিশাচাপানী ইউনিয়নে ২টি, ঝুনাগাছ চাপনী ইউনিয়নে ৪টি বিদ্যালয় রয়েছে। তবে জেলার প্রাথমিক শিক্ষা কার্যালয় জানিয়েছে, ক্ষতিগ্রস্ত বিদ্যালয়ের সংখ্যা ৫টি। বন্যায় লালমনিরহাটের হাতীবান্ধা উপজেলার পাটিকাপাড়া ইউনিয়নের চর ডিজাইনের দুটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় তিস্তা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে।
বগুড়া: যমুনার পানি বাড়ায় বগুড়ার সারিয়াকান্দি ও সোনাতলা উপজেলার ২৮টি প্রাথমিক এবং দুটি মাধ্যমিক বিদ্যালয় ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা গেছে, উপজেলার ২৬টি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এ ছাড়া দুর্গম চরে মানিকদাইড় সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও ভাঙ্গুরগাছা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ভবন যমুনার ভাঙনে নদীগর্ভে বিলীন হয়েছে।
পাবনা: চাটমোহরের ২২০টি প্রাথমিক এবং ৮৭টি মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পানি উঠেছে। ১২ সেপ্টেম্বরের মধ্যে পানি না কমলে এসব প্রতিষ্ঠানে পাঠদান শুরু করা সম্ভব হবে না।
শরীয়তপুর: পদ্মার পানিতে শরীয়তপুরের জাজিরা ও নড়িয়ার ১৫টি গ্রামের পাশাপাশি ৪৯টি প্রাথমিক ও ৬টি মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্লাবিত হয়েছে। এতে সরকারের নির্দেশনা মোতাবেক আগামী ১২ সেপ্টেম্বর এসব বিদ্যালয় খোলা যাবে কি না, তা নিয়ে শঙ্কা জেগেছে। জেলা প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্র জানা গেছে, দুই উপজেলার কোনো বিদ্যালয়ের মাঠ ও রাস্তা বন্যার পানিতে তলিয়েছে। আবার কোনো বিদ্যালয়ের শ্রেণিকক্ষে পানি ঢুকেছে। বন্যার পানি নেমে না গেলে এসব বিদ্যালয় আপাতত বন্ধ রাখা হবে।