গরমে নাকাল হৃদরোগীরা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

মাথার ওপর বৈদ্যুতিক পাখা ঘুরছে। তাও মোজাম্মেল হকের শরীর ভিজে যাচ্ছে ঘামে। হৃদরোগের এই রোগী হাসপাতালের বিছানায় শুয়ে নিজেই হাতপাখা ঘোরাচ্ছেন। গত রোববার রাত সাড়ে ৯টার দিকে রাজশাহী মেডিকেল কলেজ (রামেক) হাসপাতালের হৃদরোগ বিভাগের ২০৬ নাম্বার কক্ষে এমন দৃশ্যই দেখা গেছে। এই কক্ষটিতে দুটি পাঁচ টনের এসি আছে। এরমধ্যে একটি চলছিলো, কিন্তু ঠাণ্ডা বাতাসের বদলে বের হচ্ছিল গরম বাতাস।

নাটোরের মাদনগর দাখিল মাদরাসার সহকারী প্রধান শিক্ষক মোজাম্মেল হক বললেন, ‘এসি চলছে, কিন্তু ঘর ঠাণ্ডা হচ্ছে না। ফ্যানও চলছে কিন্তু বাতাস লাগছে না। তাই গরমে থাকতে পারছি না। হাতপাখায় ভরসা।’

বিজ্ঞাপন

হৃদরোগ বিভাগে দেখা গেছে, বেশিরভাগ রোগীর মাথার কাছে ছোট ছোট টেবিল ফ্যান। রোগীর কোনো কোনো স্বজন এসব ফ্যান বাড়ি থেকে এনেছেন। কেউ কেউ বাধ্য হয়ে হাসপাতালের পাশ থেকেই কিনেছেন। কিন্তু এই ফ্যানের বাতাসও গরম থেকে স্বস্তি দিতে পারছে না রোগীদের।

রামেক হাসপাতালের ৩২ নাম্বার ওয়ার্ডটিতে রাখা হয় হৃদরোগীদের। এরমধ্যে সবচেয়ে জটিল রোগীদের রাখা হয় ওয়ার্ডের করোনারি কেয়ার ইউনিট (সিসিইউ)-১ ও ২ নাম্বার কক্ষে। তুলনামূলক কম জটিল রোগীদের রাখা হয় পোস্ট করোনারি কেয়ার ইউনিট (পিসিসিইউ)- ১, ২, ৬ ও ৭ নাম্বার কক্ষে। প্রতিটি কক্ষেই আছে পাঁচ টনের দুটি করে এসি। এই ১২টি এসির মধ্যে চলে মাত্র তিনটি।

বিজ্ঞাপন

ওয়ার্ড সংশ্লিষ্টদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, সিসিইউ-১ এর ২০২ নাম্বার কক্ষে একটি, পিসিসিইউ-১ এর ২০৪ নাম্বার কক্ষে একটি এবং পিসিসিইউ-৭ এর ২০৭ নাম্বার কক্ষে একটি করে এসি স্বাভাবিকভাবে চলে। এসব কক্ষে থাকা আরও একটি করে এসি নষ্ট। পিসিসিইউ-১ এর ২০৬ নাম্বার কক্ষে একটি এসি চললেও বের হয় গরম বাতাস, অন্যটি চলেই না। জটিল হৃদরোগীদের সিসিইউ-২ এর ২০৫ নাম্বার কক্ষে থাকা দুটি এসির একটিও চলে না। অথচ সিসিইউ ইউনিট হৃদরোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) বলে বিবেচিত হয়।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের মে মাসে নতুন তিনতলা ভবনের দ্বিতীয় তলায় হৃদরোগীদের জন্য কার্ডিয়াক ইউনিট চালু করা হয়। সিসিইউতে আটটি করে ১৬টিসহ মোট প্রায় ৭০টি শয্যা আছে এই ইউনিটে। তবে রোগী ভর্তি থাকেন শতাধিক। কক্ষের ভেতরে মেঝে এবং বাইরে বারান্দাতেও রোগী থাকেন। আর প্রত্যেক রোগীর সঙ্গে থাকেন একাধিক স্বজন। ফলে ইউনিটটি সব সময় মানুষে গিজ গিজ করে। বৈদ্যুতিক পাখাগুলো বেশ উঁচুতে থাকা, এসি বন্ধ থাকা এবং মানুষের চাপের কারণে সেখানে সব সময় তীব্র গরম অনুভূত হয়।

হৃদরোগ বিভাগের একজন চিকিৎসক নাম প্রকাশ না করার অনুরোধ জানিয়ে বলেন, ‘এই হাসপাতালে এখন হৃদরোগীদের উন্নত চিকিৎসা সেবা দেওয়া সম্ভব হয়। হার্টের এনজিওগ্রাম, পেস মেকার প্রতিস্থাপন ও রিং পরানোসহ যাবতীয় চিকিৎসা হচ্ছে। কিন্তু রোগী থাকার পরিবেশটাই ভাল নয়। ওয়ার্ডটিতে একটা গুমোট পরিবেশ। বাইরের বাতাস আসে না, ফ্যানের বাতাস গায়ে লাগে না। এসিগুলোও নষ্ট। ওয়ার্ডটির দিকে নজর দেওয়া প্রয়োজন।’

তিনি বলেন, ‘হৃদরোগীদের জীবন খুবই ঝুঁকিপূর্ণ। তাই তাঁদের অনুকূল পরিবেশ দরকার।’

হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল শামীম ইয়াজদানীও এটি মনে করেন। তিনি বলেন, ‘শুধু হৃদরোগ বিভাগ নয়, ওটিতে পর্যন্ত এসি নষ্ট। বিভাগীয় শহরের একটা হাসপাতালে এমন অবস্থা ভাবতেই পারি না। ২০১৪ সালে লাগানো এসব এসি এখন কাজ করে না। মাত্র সাত বছরেই এসি নষ্ট! এগুলো দ্রুত মেরামত করা প্রয়োজন। রোগীদের কষ্ট হয়।’

পরিচালক জানান, মেরামতের কোন কাজ হাসপাতালের পক্ষ থেকে করার সুযোগ নেই। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের বরাদ্দ করা অর্থে কাজটি করে থাকে গণপূর্ত অধিদপ্তর। সম্প্রতি দুইবার গণপূর্ত অধিদপ্তর হৃদরোগ বিভাগের এসিগুলো খুলে নিয়ে গিয়ে ‘মেরামত’ করেছে। কিন্তু লাগানোর পর দেখা গেছে, ঠাণ্ডা বাতাসের বদলে বের হচ্ছে গরম বাতাস। এ ধরনের এসিগুলোকে বন্ধ রাখা হয়। এ ব্যাপারে দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য আবারও গণপূর্তকে জানানো হয়েছে।

জানতে চাইলে গণপূর্ত বিভাগ-২, রাজশাহীর নির্বাহী প্রকৌশলী মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, ‘রামেক হাসপাতালে সবমিলিয়ে ৫০০ এসি আছে। দু’একটা নাও চলতে পারে। সেটা মেরামত করা হবে।’

দু’দফা মেরামত করার পরও এসি কাজ না করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘মানুষের শরীরও তো মাঝে মাঝে ঠিকঠাকমতো কাজ করে না। আর এটা তো যন্ত্র। আমি দেখছি, লোক পাঠাচ্ছি।’