পলিটেকনিক ছাত্রের হাতের আঙুল কেটে দিল কে?
বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের এক ছাত্রের ডান হাতের দুই আঙুল কেটে ফেলার ঘটনায় ধোঁয়াশার সৃষ্টি হয়েছে। ঘটনার প্রায় এক সপ্তাহ পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ পায়। এরপর তথ্যানুসন্ধানে গিয়ে সৃষ্টি হয় ধোঁয়াশা। ঘটনার দিন প্রথমে ওই ছাত্র দাবি করে দোকানে ওষুধ কিনতে গেলে কয়েকজন তার মোবাইল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে আঙুল কেটে যায়।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে নেওয়ার পথে সে দাবি করে মেসের সামনেই তার ওপরে হামলা হয়। পরে হাসপাতালে ভর্তির পর পুলিশকে জানায় মেসের ভেতরে বাথরুমে ঢুকে সে নিজেই নিজের আঙুল কেটেছে। আর হাসপাতাল থেকে ছাড়া পেয়ে বাড়ি গিয়ে দাবি করেছে তারই কলেজের ওপরের ক্লাসের দুই ছাত্র তার কাছে দাবি করা টাকা না পেয়ে তার মুখে কাপড় গুজে দিয়ে হাতের দুই আঙুল কেটে দিয়েছে।
ঘটনার শিকার আনোয়ারুল ইসলাম (২২) বগুড়া পলিটেকনিক ইন্সটিটিউটের ৫ম সেমিস্টারের ছাত্র এবং নওগাঁর ধামইরহাট উপজেলার চকউমর পাটারী পাড়ার দিনমজুর নজরুল ইসলামের ছেলে। সে বগুড়া শহরের চক ফরিদ এলাকায় ইঞ্জিনিয়ার ছাত্রাবাসে থাকতো। তিনতলা ভবনের ওই ছাত্রাবাসে বাসার মালিক, তার মেয়ে ও এক ছেলেও পরিবার নিয়ে থাকেন। ওই ভবনের ১ম ও ২য় তলায় ছাত্রাবাস হিসেবে ভাড়া নিয়ে পরিচালনা করছেন গাইবান্ধার টেকনিক্যাল স্কুল এন্ড কলেজের শিক্ষক আনোয়ারুল ইসলাম বাচ্চু।
মেসের পরিচালক আনোয়ারুল ইসলাম বাচ্চু জানান, গত ২৪ সেপ্টেম্বর সকালে আনোয়ারুল হাতের আঙুল কাটা অবস্থায় হাসপাতালে যাওয়ার সময় স্থানীয়রা তার রক্তাক্ত হাত দেখে চিৎকার শুরু করে। পরে মেসের অন্যান্য ছাত্র ও বাসার মালিক বের হন। সে সময় আনোয়ারুল জানায়, সামনের দোকানে ওষুধ কিনতে গেলে কয়েকজন যুবক তার মোবাইল ছিনিয়ে নিতে গিয়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে আঘাত করলে আঙুল কেটে যায়। তাকে হাসপাতালে পাঠিয়ে দিয়ে ওষুধের দোকান ও আশপাশে খোঁজ নিতে গেলে দেখা যায় তেমন কোন ঘটনার বিষয় কেউ জানে না, এমনকি রাস্তায় কোন রক্তও নেই। বিষয়টি জানার পর হাসপাতালের পথে তার সাথে থাকা অন্য ছাত্রদের বিষয়টি জানালে তাকে পুনরায় ওই ছাত্ররা জিজ্ঞাসা করে, তখন সে জানায় মেসের গেটে তার ওপরে হামলা হয়েছে। কিন্তু মেসের গেটেও রক্তের কোন দাগ ছিলো না। পরে বিষয়টি বনানী পুলিশ ফাঁড়িকে অবহিত করা হয়। তখন পুলিশ হাসপাতালে গিয়ে তার কাছে ঘটনা জানতে চাইলে সে পুলিশকে জানায়, বাড়ি থেকে কয়েক দফা স্মার্ট ফোন কিনতে চেয়েও তা না পাওয়ায় সে হতাশা থেকে নিজেই মেসের ওয়াশ রুমে ঢুকে নিজের আঙুল কেটে ফেলেছে।
এরপর চিকিৎসা নিয়ে গত ২৮ সেপ্টেম্বর গ্রামের বাড়ি ফিরে যায় আনোয়ারুল। সেখানে গিয়ে স্থানীয় সাংবাদিকদের আনোয়ারুল জানান, তার কাছে একই কলেজের ওপরের ক্লাসের দুই বড় ভাই টাকা দাবি করেছিলো। সে টাকা দিতে অস্বীকার করায় ঘটনার দিন মেসের ভেতরে গিয়ে তাকে ওয়াশ রুমে ঢুকিয়ে মুখে কাপড় গুজে দিয়ে ডান হাতের দুই আঙুল কেটে দেয়।
বিষয়টি সম্পর্কে তার নম্বরে যোগাযোগ করা হলে তার মা সাহারা খাতুন জানান, সেখানে ভয়ে সে হামলাকারীদের বিষয়ে কোন কথা বলেনি। বাড়ি ফিরে সে সত্য বিষয়টি জানিয়েছে।
এবিষয়ে বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সেলিম রেজা জানান, ওই ঘটনার পরপরই পুলিশ তার সঙ্গে যোগাযোগ করে। তখন সে যে বক্তব্য দেয় তার ভিডিও রেকর্ড আছে। এরপর সে বাড়ি ফিরে হামলার দাবি করায় বিষয়টি গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করা হচ্ছে। ইতিমধ্যেই ওই ছাত্রাবাসে লাগানো সিসি টিভির ফুটেজ সংগ্রহ করা হয়েছে। ওই ছাত্রের পরিবার এবিষয়ে অভিযোগ করলে পরবর্তী আইনগত ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।