‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড’ পেলেন সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম
সাহসী সাংবাদিকতার জন্য আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি পেলেন দৈনিক প্রথম আলোর জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক রোজিনা ইসলাম। তিনি বাংলাদেশে করোনাকালে স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম তুলে ধরতে গিয়ে নিগ্রহ, নির্যাতন ও মামলার শিকার হয়েছেন। নেদারল্যান্ডসের আমস্টারডামভিত্তিক সংস্থা ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড তাকে এ বছরের ‘ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড-২০২১’ দিয়েছে। তিনি পুরস্কারটি পেয়েছেন সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট শ্রেণিতে।
মুক্ত সাংবাদিকতার জন্য লড়াই করা সাংবাদিকদের এই পুরস্কার দেওয়া হয়। গত বছর একই পুরস্কার পেয়েছিলেন এ বছর শান্তিতে নোবেল পাওয়া ফিলিপাইনের সাংবাদিক মারিয়া রেসা।
সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা ও সাংবাদিকতার উৎকর্ষের জন্য বিশ্বের ৪০টির বেশি দেশে কাজ করে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড। বিশ্বব্যাপী ৯০টির বেশি সংবাদমাধ্যমের সঙ্গে সম্পৃক্ততা রয়েছে তাদের। সংস্থাটিকে সহায়তা করে নেদারল্যান্ডসের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়।
নেদারল্যান্ডসের হেগ শহরের সিটি হলে মঙ্গলবার সন্ধ্যায় (বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত সোয়া ১২টা) আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে পাকিস্তানের খ্যাতিমান সাংবাদিক হামিদ মীরের হাত থেকে রোজিনা ইসলামের পক্ষে পুরস্কারটি গ্রহণ করেন তার স্বামী মো. মনিরুল ইসলাম। রোজিনা ইসলামের পাসপোর্ট জব্দ থাকায় তিনি পুরস্কারটি নিতে নেদারল্যান্ডস যেতে পারেননি।
তবে ভার্চ্যুয়াল মাধ্যমে অনুষ্ঠানে যুক্ত হয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এই পুরস্কার দেশের সেসব সাংবাদিককে উৎসর্গ করছি, যারা প্রতিকূলতার মধ্যেও সেরা সাংবাদিকতা করে যাচ্ছেন। কারাগার থেকে বেরিয়ে আমি বলেছিলাম, সাংবাদিকতা চালিয়ে যাব। এই পুরস্কার পাওয়ার পর আমি আবারও বলছি, আমার লড়াই চলবে।’
ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড দুটি শ্রেণিতে ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড দিয়ে থাকে-সেরা অদম্য সাংবাদিক বা মোস্ট রেজিলিয়েন্ট জার্নালিস্ট এবং বছরের সেরা নবাগত সাংবাদিক বা ‘নিউ কামার অব দ্য ইয়ার’। সাংবাদিক রোজিনা পুরস্কারটি পান সবচেয়ে অদম্য সাংবাদিক শ্রেণিতে। বছরের সেরা নবাগত শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছেন ভারতের তরুণ সাংবাদিক ভাট বুরহান।
সাংবাদিকতায় রোজিনা ইসলামের সাহসিকতা ও নিরলস প্রচেষ্টার জন্য তাকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে জানিয়ে ফ্রি প্রেস আনলিমিটেড বলেছে, বাংলাদেশের সর্ববৃহৎ দৈনিক সংবাদপত্র প্রথম আলোতে অনুসন্ধানী প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করেন রোজিনা ইসলাম। তিনি করোনাকালে দেশের স্বাস্থ্য খাতের অনিয়ম প্রকাশ্যে এনেছেন। এখন নিজের দেশে তাকে বিচারের মুখোমুখি হতে হচ্ছে, যেতে হচ্ছে হয়রানির মধ্য দিয়ে।
বিচারকমণ্ডলীতে ছিলেন নেদারল্যান্ডসের প্রখ্যাত টিভি সাংবাদিক ও তথ্যচিত্র নির্মাতা হেন্নাহ দ্রাইবার, পাকিস্তানে মুক্ত গণমাধ্যম প্রতিষ্ঠায় সোচ্চার ওয়াইস ইসলাম আলী এবং নেদারল্যান্ডসের অনুসন্ধানী সাংবাদিকদের সংগঠন ডাচ–ফ্লেমিস অ্যাসোসিয়েশন অব ইনভেস্টিগেটিভ জার্নালিস্টসের সাবেক পরিচালক তানজা ফন বেরগেন।
তারা বলেন, ‘মহামারির এই সংকটময় সময়ে অনিয়ম বের করে আনতে সাংবাদিকের লড়াইয়ের সঙ্গে আমরা সংহতি প্রকাশ করছি। বাংলাদেশ সরকারের প্রতি রোজিনা ইসলামকে হয়রানি বন্ধ করার আহ্বান জানাচ্ছি।’
প্রসঙ্গত, সাংবাদিক রোজিনা ইসলাম গত ১৭ মে পেশাগত দায়িত্ব পালন করতে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ে গিয়ে হেনস্তার শিকার হন। তাকে প্রায় ছয় ঘণ্টা আটকে রাখা হয়। পরে তাকে শতবছরের পুরোনো ‘অফিশিয়াল সিক্রেটস অ্যাক্টে’ গ্রেপ্তার দেখানো হয়।
ফ্রি প্রেস অ্যাওয়ার্ড পাওয়ার আগেও রোজিনা ইসলাম সাংবাদিকতায় অনেক পুরস্কার পেয়েছেন। এ বছর ঢাকা রিপোর্টার্স ইউনিটির (ডিআরইউ) স্বাস্থ্য খাতে সেরা প্রতিবেদনের পুরস্কার পান তিনি। এই প্রতিবেদন ছিল স্বাস্থ্য খাতে নিয়োগে দুর্নীতিসংক্রান্ত। ২০১১, ২০১৪ ও ২০১৭ সালেও ডিআরইউ পুরস্কার পেয়েছেন তিনি।
রোজিনা ইসলাম ইউনেসকো অ্যাওয়ার্ড (২০১১), ইউনেসকো ক্লাব জার্নালিস্টস অ্যাওয়ার্ড (২০০৬), কানাডিয়ান অ্যাওয়ার্ডস ফর এক্সিলেন্স ইন বাংলাদেশি জার্নালিজম (২০১১), প্রথম আলো সেরা প্রতিবেদক পুরস্কার (২০১৩ ও ২০১৪) ও ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) সেরা অনুসন্ধানী সাংবাদিকতা পুরস্কারসহ (২০১৫) বিভিন্ন পুরস্কার পেয়েছেন।