৮ই ডিসেম্বর পটুয়াখালী মুক্ত দিবস
আজ ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী পাক-হানাদারমুক্ত দিবস। দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস যেমন সংরক্ষন করা হয়নি তেমনি জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থান ও গণকবর গুলো সংস্কার করা হয়নি।
দীর্ঘ ৯ মাসের লড়াই শেষে একাত্তরের ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালী জেলা পাক-হানাদার মুক্ত হয়। সেই দিন পটুয়াখালী শহরে জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে প্রথম এবং পরবর্তীতে শহীদ আলাউদ্দিন শিশু পার্কে জাতীয় পতাকা উত্তোলন করা হয়। তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস যেমন সংরক্ষন করা হয়নি তেমনি জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থান ও গণকবর গুলো সংস্কার করা হয়নি। এদিকে স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী উপলক্ষে জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে আজ বিকেল ৩টায় লাউকাঠি নদীতে বর্ণাঢ্য নৌকা বাইচ অনুষ্ঠিত হবে বলে জানান জেলা প্রশাসন।
জানা যায়, একাত্তরের ২৬ এপ্রিল শহরে গণহত্যা চালিয়ে পটুয়াখালী জেলা সদর কে দখল করে নেয় পাক-হানাদার বাহিনী। এসময় পাকসেনারা শহরের কালিকাপুর মাদবার বাড়িতে হত্যা করে ১৯ জনকে। পাকসেনাদের প্রতিরোধ করতে গিয়ে জেলা প্রশাসকের বাসভবনের দক্ষিণ দিকের সরকারী কোয়াটারের সামনে নিহত হন সাত আনসার সদস্য। যুদ্ধকালীন সময়ে পাক হানাদার বাহিনী শহরের জেলা কারাগারকে তাদের নির্যাতন কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করতো। সে সময়ে কয়েক শত নিরীহ মানুষকে হত্যা করে অভ্যান্তরে মাটি চাপা দেয়া হয়। বর্তমানে কারাগারটি ব্যবহৃত হচ্ছে আনসার ব্যাটালিয়নের ক্যাম্প হিসেবে। আর জেলার বৃহৎ এই গনকবরটি এখনও অনেকটা অবহেলার মধ্যে পরে আছে।
বীর মুক্তিযোদ্ধা সরদার আব্দুর রশিদ বলেন-আমরা তিন ভাইবোন যুদ্ধে অংশগ্রহণ করি, দিনের পর দিন যুদ্ধ করে এই পটুয়াখালী জেলা কে হানাদারমুক্ত করি। আমার দুটি বোন আনু ও মনু ওরাও যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। আমাদের তিন ভাইবোনকে ধরিয়ে দিতে পারলে সেই যুদ্ধকালীন সময়ে পুরস্কার ঘোষণা করেছিল পাকিস্তানি বাহিনীরা। আমার মাকে ধরে নিয়ে গেছে জেলখানায়। তারপরও আমরা থেমে থাকিনি প্রশিক্ষণ নিয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছি এই বাংলাদেশকে স্বাধীন করেছি।
মূলত: ১৮ নভেম্বর জেলার গলাচিপা উপজেলার পানপট্টিতে পানহানাদার বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিযোদ্ধাদের সম্মুখ যুদ্ধ হয়। এ যুদ্ধে মুক্তিযোদ্ধাদের নেতৃত্ব দেন কে.এম নুরুল হুদা ও হাবিবুর রহমান শওকত এবং পাক-হানাদার বাহিনীর নেতৃত্ব দেয় মেজর ইয়ামিন। একটানা ১২ ঘন্টা সম্মুখযুদ্ধের একপর্যায়ে মেজর ইয়ামিনের নেতৃত্বাধীন পাক-সেনারা পিছু হটে যায় এবং রাতের আঁধারে পানপট্টি থেকে পালিয়ে যায়। মুক্তিযুদ্ধের এ বিজয়ের মধ্য দিয়ে তাদের শক্তি সাহস বেড়ে যায় এবং ৮ ডিসেম্বর পটুয়াখালীকে মুক্ত করে মুক্তিযোদ্ধারা। ৭ নভেম্বর রাতের আঁধারে পাকসেনারা পটুয়াখালী শহর থেকে পালিয়ে গেলে ৮ ডিসেম্বর ভোরে পটুয়াখালীর মুক্ত আকাশে উড়তে থাকে স্বাধীন বাংলার লাল-সবুজের পতাকা এবং জয় বাংলা শ্লোগানে মুখরিত হয়ে ওঠে গোটা শহর।
মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক মন্ত্রণালয় এর ওয়েবসাইটের সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী পটুয়াখালী জেলায় মোট ২৩৯ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে। এর মধ্যে পটুয়াখালী সদরে ১৮ জন, দুমকীতে ৮৬ জন, বাউফলে ৬১ জন, দশমিনায় ৬ জন, গলাচিপায় ১৩ জন, কলাপাড়ায় ৩৪ জন, মির্জাগঞ্জে ১৮ জন ও রাঙ্গাবালীতে ৩ জন মুক্তিযোদ্ধা রয়েছে।
তবে স্বাধীনতার দীর্ঘ ৫০ বছরেও জেলার মুক্তিযুদ্ধের এলাকা ভিত্তিক ইতিহাস যেমন সংরক্ষন করা হয়নি তেমনি জেলার মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরিত স্থান ও গণকবর গুলো সংস্কার করা হয়নি। নতুন প্রজন্মকে মুক্তিযুদ্ধের সঠিক ইতিহাস জানাতে ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়নে মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজরীত স্থান সমূহ সংরক্ষনের দাবী মুক্তিযোদ্ধাদের।
পটুয়াখালী জেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি বীর মুক্তিযোদ্ধা কাজী আলমগীর বলেন,‘ ১৯৭১ সালে ৮ ডিসেম্বর একটি কাঠের দোতলা লঞ্চে করে পাক হানাদার বাহিনী পটুয়াখালী ত্যাগ করে এরপরই মুক্তিযোদ্ধারা ও মুক্তিকামী মানুষ পটুয়াখালী কে চতুর্দিক থেকে ঘিরে রাখে এরপরই বিকেলে তারা বিজয় উল্লাস করে। পটুয়াখালী জেলা শহরে যে গনকবর গুলো রয়েছে তা সংরক্ষণ এর অভাবে অরক্ষিত পড়ে আছে । আমরা মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর কাছে দাবি বলবো আগামী তরুণ প্রজন্মের কাছে এই ৮ ডিসেম্বর কে তুলে ধরার জন্য হলেও এই গণকবরগুলো সংস্কার করে যুগোপযোগী করার জন্য বলে মনে করি।