সমতার ভিত্তিতে সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন নজরুল

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিপীড়িত মানুষের বঞ্চনার অবসান ঘটিয়ে ধর্মমত নির্বিশেষে সব বাঙালি মিলেমিশে সমতার ভিত্তিতে একটি নতুন সমাজ বিনির্মাণের স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সাম্যবাদের কবি কাজী নজরুল। সেটাই ছিল জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের স্বপ্নের সোনার বাংলাদেশের ভিত্তি। আমরা জাতির পিতার আদর্শকে ধারণ করে দেশের উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছি।

শুক্রবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাকায় দুই দিনব্যাপী নজরুল সংগীত উৎসবের আয়োজন করছে বাংলাদেশ নজরুলসংগীত সংস্থা, গুলশান সোসাইটি ও আইজিসিসি। গুলশান সোসাইটি লেক পার্কে এ আয়োজনের উদ্বোধন করবেন সংস্কৃতি প্রতিমন্ত্রী কে এম খালিদ। এ উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।

বিজ্ঞাপন

প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমি জেনে অত্যন্ত খুশি হয়েছি যে নজরুল উৎসবের মাধ্যমে উদ্যোক্তারা জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামের সামগ্রিক শিল্পসৃষ্টি শুদ্ধ রূপে ধারণ, রক্ষণ ও পরবর্তী প্রজন্মকে এই অমূল্য সাংস্কৃতিক উত্তরাধিকার হিসেবে সচেতন করার উদ্যোগ নিয়েছেন। আমি তাদের এই মহৎ প্রচেষ্টাকে সাধুবাদ জানাই। আমি নিশ্চিত যে আমাদের জাতীয় কবির গভীর মানবিকতা, অসাম্প্রদায়িক চেতনা, শোষণবিরোধী সোচ্চার কণ্ঠস্বর আমাদের আত্মমর্যাদাশীল ও উন্নত-সমৃদ্ধ সোনার বাংলাদেশ বাস্তবায়নে অনুপ্রেরণা যোগাবে।

তিনি বলেন, একটি স্বতন্ত্র জাতিসত্তা হিসেবে বাঙালির আত্মপরিচয় বিনির্মাণের ক্ষেত্রে কাজী নজরুল ইসলামের অবদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ব্রিটিশবিরোধী আন্দোলন থেকে শুরু করে পাকিস্তানি দখলদারদের থেকে মুক্তির সংগ্রামে কাজী নজরুল ইসলামের তেজোদীপ্ত কবিতা, গান ও সাহিত্য আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে একটি স্বাধীন জাতি হিসেবে আত্মপ্রকাশ করার পথ নির্দেশ করেছে। তার কালজয়ী সাহিত্য সম্ভার নবীন প্রজন্মকেও দেশপ্রেমের গভীর মন্ত্রে দীক্ষিত করে যাচ্ছে।

তিনি আরও বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বাঙালি জাগরণের কবি নজরুল ইসলামের দর্শন দ্বারা ভীষণভাবে প্রভাবিত হয়েছিলেন। জাতির পিতার অবিসংবাদিত নেতৃত্বে বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পর তার নিজস্ব উদ্যোগে বিদ্রোহী কবি কাজী নজরুল ইসলামকে জাতীয় কবির মর্যাদা প্রদান করা হয়। শুধু তাই নয়, তিনি কবি রচিত ‘চল্ চল চল, ঊর্ধ্ব গগণে বাজে মাদল’ গানটিকে বাংলাদেশ সশস্ত্র বাহিনীর রণসঙ্গীত হিসেবে নির্ধারণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, কূটনৈতিক প্রচেষ্টার মাধ্যমে ১৯৭২ সালের ২৫ মে কবির ৭৩তম জন্মদিন পালনের উদ্দেশ্যে ২৪ মে তাকে রাষ্ট্রীয় অতিথি হিসেবে সপরিবারে ঢাকায় নিয়ে এসে নাগরিকত্ব প্রদান করেন। ১৯৭৫ সালের জুলাই মাসে কবির স্বাস্থ্যের অবনতি হলে, রাষ্ট্রপতি শেখ মুজিবুর রহমান তাকে তৎকালীন পিজি হাসপাতালে উন্নত চিকিৎসার ব্যবস্থা করেন। এরই মধ্যে স্বাধীনতাবিরোধী খুনিচক্র '৭৫-এর ১৫ আগস্ট জাতির পিতাকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে। কবিও হাসপাতাল থেকে আর বাড়ি ফিরতে পারেননি। ১৯৭৬ সালের আগস্ট মাসেই তিনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন।

বঙ্গবন্ধুকন্যা বলেন, ২০০৯ সালে সরকার গঠনের পর আমরা কুমিল্লায় একটি নজরুল ইনস্টিটিউট কেন্দ্র প্রতিষ্ঠা করেছি। আমাদের সরকার বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবের বরাদ্দকৃত কবি ভবনে প্রতিষ্ঠিত কবি নজরুল ইনস্টিটিউটের জন্য দুটি বেজমেন্টসহ ৯তলা নতুন ভবন নির্মাণ প্রকল্প গ্রহণ করেছে। আমরা যে ‘জয় বাংলা’কে জাতীয় শ্লোগান হিসেবে গ্রহণ করেছি, তাও প্রথম উঠে এসেছিল আমাদের জাতীয় কবির প্রবন্ধে ও কবিতায়।

সরকারপ্রধান বলেন, আজ জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম কিংবা জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান কেউই আমাদের মাঝে নেই। রয়ে গেছে তাদের আকাঙ্ক্ষা ও স্বপ্ন। আমরা সেটাকে বাস্তবে পরিণত করার পবিত্র ব্রত গ্রহণ করলেই তাদের প্রতি যথার্থ সম্মান দেখানো হবে। তিনি ‘নজরুল উৎসব’ আয়োজনের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সবাইকে অভিনন্দন জানান এবং এর সর্বাঙ্গীণ সাফল্য কামনা করেন।