ঠাকুরগাঁওয়ে আম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

  • রবিউল এহ্সান রিপন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঠাকুরগাঁও
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ঠাকুরগাঁওয়ে আম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

ঠাকুরগাঁওয়ে আম উৎপাদনে লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাওয়ার আশা

রাস্তার ধারে, বাড়ির আঙিনায়, মাঠ ঘাটে ও আনাচে কানাচে গাছের ডালে থোকায় থোকায় সাদা হলুদ ও সোনালী বর্ণে শোভা পেয়েছে আমের মুকুল। মুকুলের মিষ্টি ঘ্রাণে যেন মাতোয়ারা চারপাশ। এসব মুকুলে মধু সংগ্রহে আকুল মৌ-মাছিরা। গাছে গাছে মুকুলের মনমাতানো এমন মনোমুগ্ধকর দৃশ্য আকৃষ্ট করছে যে কাউকে।

অন্যান্য বছরের তুলনায় এবছর ঠাকুরগাঁও জেলার আম গাছ গুলোতে ব্যাপক মুকুল আসায় গত বারের তুলনায় এবার বেশি আম হতে পারে। গত বছর আমের মৌসুমে তিন করে শীলাবৃষ্টির কবলে পড়ে আমের ক্ষতি হলেও এবার আবহাওয়া ভালো থাকলে ব্যাপক আম উৎপাদন হবে বলে আশা করছেন বাগান মালিকরা।

বিজ্ঞাপন

জেলার বিভিন্ন উপজেলা ঘুরে দেখা যায়, আম্রপালি, সূর্যপূরী, বান্দিগড়সহ বিদেশি কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপার্লমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছের মুকুল ও ফল ধরে রাখতে এবং গাছের পরিচর্যা ও পোকা দমনে বিভিন্ন ধরণের কীটনাশক স্প্রে করতে ব্যস্ত সময় পার করছেন আম চাষি ও বাগানে কর্মরত শ্রমিকরা।

পাচঁ উপজেলায় মোট ১ হাজার ৮৪৪টি আম বাগানেই ধরেছে মুকুল। যার আয়তন প্রায় ৩ হাজার ২৩৬ হেক্টর জমি। এছাড়াও বসত বাড়িরসহ মোট ৫ হাজার ৮২ হেক্টর জমির আম গাছে মুকুল হয়েছে। এসব গাছ থেকে এবার জেলায় মোট ৪৯ হাজার ১৮৫ টন আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হলেও আবহাওয়া অনুকূলে থাকলে লক্ষ্যমাত্রার থেকেও বেশি আম উৎপাদন হতে পারে বলে জানান জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক।

গতবার আবহাওয়ার কারণে আম চাষে কিছুটা ক্ষতি হলেও এবার গাছে ব্যাপক মুকুল আসায় খুশি বাগান মালিকরা। ঝড়বৃষ্টি না হলে ক্ষতি পুষিয়ে নেওয়ার আশা তাদের। এছাড়াও সরকারিভাবে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করলে আরও বেশি লাভবান হবেন বলে জানান আম চাষিরা।

পীরগঞ্জ উপজেলার আম চাষি মো. আহসান হাবিব ২০ একর জমিতে আম্রপালি, সূর্যপূরী, বান্দিগড়িসহ বিদেশি কিং চাকাপাত, নাম দোকমাই, চিয়াংমাই, আলফান শো, রেডপালমারসহ বিভিন্ন জাতের আম গাছের বাগান করেছেন। তার বাগানে প্রতিদিন প্রায় ৮-১০ জন শ্রমিক কাজ করে আয় করছেন।


বাগানের প্রতিটি গাছেই মুকুল এসেছে। তিনি বলেন, ‘গত বছর তিন দফায় শীলাবৃষ্টি হওয়ায় আমার আম বাগানে প্রায় ৯ লক্ষ টাকা ক্ষতি হয়েছে। আল্লাহর রহমতে গত বছরের থেকেও এবার গাছ গুলোতে ভালো ও বেশি মুকুল এসেছে। আশা করি তেমন ঝড়বৃষ্টি না হলে ভালো আম হবে ও আগের বার যা ক্ষতি হয়েছিল তা পুষিয়ে নিতে পারবো।,

তিনি আরও বলেন, ‘আমাদের এদিকে আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা না থাকায় চাষিরা আম উৎপাদন করে তেমন লাভবান হতে পারিনা। সরকার যদি আমাদের এসব উৎপাদিত আম বিদেশে রফতানি ও এলাকায় আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিত তাহলে আমরা আরও লাভবান হতে পারতাম এবং আম চাষে কৃষকরা আরও বেশি আগ্রহী হতো। কারণ আগের তুলনায় এখন এইদিকে ব্যাপক আম চাষ হচ্ছে কিন্তু সবার বাগান বা গাছের আম প্রায় একই সময় পরিপক্ক হয়। ফলে সকল গাছের আম একসাথে বাজারে উঠে। যার কারণে একসাথে এতো আমের ক্রেতা পাওয়া যায় না। তাই যদি সরকার আম সংরক্ষণের ব্যবস্থা করে দিতো তাহলে সেগুলো আমরা সংরক্ষণ করে রাখতে পারতাম ও ভালো মূল্যে বিক্রিও করতে পারতাম।’

এবার যে হারে আমের মুকুল এসেছে সেগুলো ধরে রাখতে পারলে জেলায় আম উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করেন জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ পরিচালক মো. সিরাজুল ইসলাম। তিনি বলেন, কৃষি বিভাগ থেকে গাছে সেচ, আমের মুকুল ও গুটি ঝড়া রোধে কীটনাশক স্প্রেসহ আমের ফলন সম্প্রসারণে সকল প্রকার পরামর্শ আমরা আম চাষিদের দিয়ে যাচ্ছি। এছাড়াও রফতানি যোগ্য আম উৎপাদন প্রকল্পের আওতার মাধ্যমে জেলায় আম সংরক্ষণের জন্য শিল্প প্রতিষ্ঠান গড়ে তোলার কথা বিভিন্ন মিটিং ও সেমিনারে আমাদের ঊর্ধ্বতনদের জানিয়েছি। আশা করি ঠাকুরগাঁওয়েও একসময় আম সংরক্ষণে আমভিত্তিক শিল্প প্রতিষ্ঠান স্থাপন করা হবে।