‘বাল্যবিয়ে নিরসনে চাই সমন্বিত উদ্যোগ’

  • নিউজ ডেস্ক, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

গোলটেবিল বৈঠক

গোলটেবিল বৈঠক

বাল্য বিয়ে হ্রাস এবং এ বিষয়ে সচেতনতা বাড়াতে নানা পদক্ষেপ গ্রহণের দাবি জানিয়ে এক গোল টেবিল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়েছে।

বুধবার (৩১ মে ) প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাশে (পিআইবি)র সম্মেলন কক্ষে ‘বাল্যবিবাহ প্রতিরোধ: আমরা কী করছি, সমাজ ও রাষ্ট্র কী ভাবছে?’ শীর্ষক গোল টেবিল বৈঠকটি যৌথভাবে আয়োজন করে বেসরকারি সংস্থা ওয়ার্ল্ড ভিশন ও দৈনিক সংবাদ।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্যে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি সাবেক প্রতিমন্ত্রী মেহের আফরোজ চুমকি এমপি বলেন, অনেক সময় বাস্তবতার কারণে অভিভাবকরা সন্তানদের শিশু বয়সে বিয়ে দিয়ে দেন বা দিতে বাধ্য হন। বাল্য বিয়ে নিয়ে আইন আছে আইনে আবার কিছুটা শিথিল করা আছে, হয়তো সামনে এই শিথিলতা থাকবে না। তবে সবার সচেতনতা বাড়াতে হবে। সরকারি, বেসরকারি সংস্থা, প্রভাবশালী ব্যক্তির সমন্বয়ে সামাজিক আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। তবেই এ ধরনের সামাজিক ব্যধি থেকে মুক্ত হওয়া সম্ভব।

বিভিন্ন সামাজিক বাস্তবতায় বাল্যবিয়ে নিরসনে আজো কাঙ্খিত লক্ষ্য অর্জন করা যাচ্ছে না। সারাদেশে বেড়েছে বাল্যবিয়ের হার। বাল্যবিয়ের কারণে শিক্ষাজীবনের শেষ হয়েছে অনেক শিক্ষার্থীর। স্কুল থেকে ঝড়ে গেছে বহু ছাত্র ছাত্রী।

করোনাভাইরাস মহামারির সময়ে দেশে বাল্যবিবাহ বৃদ্ধি পায়। মারাত্মক এই ভাইরাস শুধু জীবনকেই নয় বরং সমাজ এবং অর্থনীতিকেও ব্যাপকভাবে প্রভাবিত করেছে। শিক্ষা প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন বন্ধ থাকায়, অনেক মধ্যবিত্ত, দরিদ্র পরিবারই মেয়ে শিশুর বাল্যবিবাহের দিকে ঠেলে দিয়েছে।

বাল্যবিবাহ সবসময়ই বাংলাদেশের উন্নয়নে একটি বড় বাধা, যদিও এটি মোকাবিলায় বিভিন্ন পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে কিন্তু করোনাভাইরাস মহামারি সকল প্রচেষ্টার উপরই নেতিবাচিক প্রভাব ফেলছে বলে গোল টেবিল বৈঠকে বলেন বক্তারা।

বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ফওজিয়া মোসলেম বলেন, প্রতিটা অগ্রগতির মধ্যে সংকট থাকে। সেই সংকট কাটিয়ে উঠাই অগ্রগতি। বাল্যবিয়ে যে একটা সংকট এটাই আমরা আগে জানতাম না। এটা এখন আমরা জানি। এটাও আমাদের এগিয়ে যাওয়া।

বিশেষ অতিথি হিসেবে সুপ্রিম কোর্টের সিনিয়র আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেন, বাল্যবিয়ে নিয়ে যেমন আইন আছে তেমন ফাঁকও আছে। এই ফাঁক যদি বন্ধ করা যায় তবেই বাল্য বিয়ে প্রতিরোধ করা সম্ভব। তিনি বলেন, প্রতিটা স্কুল কলেজে তথা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে জুডো, কারাতে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা দরকার শুধু বাল্যবিয়ে ঠেকাতে নয়, আত্মবিশ্বাস বাড়াতে। আত্মবিশ্বাস বাড়লে এ ধরনের কর্মকাণ্ড কমে যাবে। তখন ছেলে মেয়েরা নিজেরাই নিজেরে রক্ষা করতে পারবে।

বিশেষ অতিথি মনোরগ বিশেষজ্ঞ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (মাউশি) ড. সেলিম চৌধুরী বলেন, সন্তানের মনের খবর জানতে হবে। তাদের মনকে আগে বোঝাতে হবে এজন্য অভিভাবকদের গুরুত্ব অপরিসীম। বাল্যবিয়ে শুধু শারীরিক ক্ষতিই সাধন করে না, মানসিক ক্ষতিও করে। তাই শিশু কিশোরদের মনোজগত পরিচর্যা করতে হবে অভিভাবকদেরই।

বিশেষ অতিথি একুশে পদক প্রাপ্ত স্ত্রীরোগ বিশষজ্ঞ ডা, সায়েবা আক্তার বলেন, কিশোরী বয়সে শরীর মন কোনোটাই যখন তৈরি হয় না তখনই আমরা আমাদের বাচ্চাদের বিয়ে দিয়ে দেই বিশেষ করে শিশুদের। যাদের বয়স ১৮র নীচে। এ কারণে মাতৃমৃত্যু, শিশু মৃত্যু দুটোই বাড়ছে।

বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্ম সচিব (রাজেট ও অডিট শাখা) মোসা. ফেরদৌসী বেগম বলেন, ২০৩০ সালের মধ্যে বাল্যবিয়ে নামক সামাজিক ব্যাধি নির্মূল করা সম্ভব হবে। এ নিয়ে প্রচুর কাজ করছে সরকার। প্রচুর কর্মসূচিও হাতে নিয়েছে। বাল্যবিয়ে আর থাকবে না।

বিশেষ অতিথি মহিলা ও শিশু বিষয়ক অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক (পরিকল্পণা ও মূল্যায়ন) আয়শা সিদ্দিকী বলেন, বর্তমানে বাল্য বিয়ে অনেক কমেছে। কোভিডকালীন সময়ে কিছুটা বাড়লেও এখন এ বিষয়ে মানুষ সচেতন হয়ে গেছে। এখন যা হচ্ছে তা আগের তুলনায় কম।

বৈঠকে আরও উপস্থিত ছিলেন মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রাণালয়ের নারী নির্যাতন প্রতিরোধকল্পে মাল্টি সেক্টরাল প্রোগ্রাম অফিসার হালিমা বেগম, ওয়ার্ল্ড ভিশনের পক্ষে রনেট লিও গোমেজ ও মানস বিশ্বাস টেকনিক্যাল কো-অর্ডিনেটর আরবান প্রোগ্রাম, মীর রেজাউল করিম এডভোকেসি কো-অর্ডিনেটর আরবান প্রোগ্রাম; এডভোকেট শিপ্রা গোস্বামী সমন্বয়কারী, ব্লাস্ট, ফরিদপুর ইউনিট; বাল্যবিয়ের শিকার ভূক্তভোগী আফরোজা সরকার ও বিভিন্ন শিশু সংগঠনের প্রতিনিধি ও সাংবাদিকবৃন্দ।