ভোট অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও অঞ্চলভিত্তিক স্ট্রাটেজি

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • আশরাফুল ইসলাম, পরিকল্পনা সম্পাদক, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভোট অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও অঞ্চলভিত্তিক স্ট্রাটেজি

ভোট অনুষ্ঠানে নিরাপত্তা উদ্বেগ ও অঞ্চলভিত্তিক স্ট্রাটেজি

 

আগামীকাল শনিবার বাদে পরশু দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনের ভোটগ্রহণ। নির্বাচন অনুষ্ঠানকে শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও সুষ্ঠু করতে ইতিমধ্যেই আইনশৃঙ্খলাসহ ভোট সংশ্লিষ্ট কাজের সামগ্রিক প্রস্তুতি ইতিমধ্যেই সম্পন্ন হয়েছে। গণমাধ্যমের খবরে প্রকাশ, নির্বাচন অনুষ্ঠান নির্বিঘ্ন করতে সারা দেশে ৮৩৮ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট, ১১৫১ প্লাটুন বিজিবি সদস্য, ৫ লাখ আনসার সদস্যসহ সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা ইতিমধ্যেই সারাদেশে মোতায়েন হয়েছে। এছাড়া জনপ্রশাসন ও পুলিশ বাহিনীর নিয়মিত সদস্যরা তো থাকবেনই। নির্বাচন কমিশন ও সরকারের পক্ষ থেকে নির্বাচন অনুষ্ঠানকে ঘিরে যে কোন ধরণের নাশকতারোধে দৃঢ় প্রত্যয়ের কথা বলা হচ্ছিল প্রস্তুতির শুরু থেকেই।

বিজ্ঞাপন

কিন্তু আমরা উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করলাম গত ২৮ অক্টোবর (২০২৩) রাজধানীতে বিএনপি’র সমাবেশ পণ্ড হয়ে যাওয়ার পর সৃষ্ট অস্থিরতার পর থেকে চিরচেনা নাশকতার যে চিত্র দেখা গেল, অধ্যাবধি এটি থামার কোন লক্ষণ দেখছি না। গেল দু’মাসেরও বেশি সময়ে রাজধানীসহ সারাদেশে ব্যাপক নাশকতা দেখেছে দেশ।

সড়ক-মহাসড়কে যানবাহনে ভাঙচুর-অগ্নিসংযোগ থেকে শুরু করে নিরাপদ যাত্রার বাহন ট্রেনেও আক্রমণ হয়েছে। উদ্ভূত পরিস্থিতিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে বার বার নিরাপত্তা স্ট্রাটেজি বদল করতে হয়েছে। এসবের মধ্য দিয়েই আমরা নির্বাচন অনুষ্ঠানের দ্বারপ্রান্তে চলে এলাম। কিন্তু এতে করেও উদ্বেগের মাত্রা সামান্যও কমলো না। বরং নির্বাচন অনুষ্ঠানের ২ দিন আগে আজ ছুটির দিন শুক্রবারেও সারাদেশে ব্যাপক নাশকতার খবর এসেছে।

বিজ্ঞাপন

গণমাধ্যমে প্রকাশিত খবর অনুযায়ী, উত্তরাঞ্চলের অনেকগুলো জেলা, বৃহত্তর নোয়াখালী, চট্টগ্রামসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ভোটকেন্দ্রে অগ্নিসংযোগ, হামলা; এমনকি বিএনপি ও সমমনা দলগুলোর নেতাকর্মীদের সঙ্গে ধাওয়া-পাল্টাধাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে। এরই মাঝে আগামীকাল শনিবার সকাল থেকে বিএনপি আহুত ২দিনের হরতালের কর্মসূচি শুরু হচ্ছে। এবং হরতাল পালনে জনগণকে বাধ্য করতে অগ্নিসংযোগ-ভাঙচুরসহ অন্যান্য নাশকতার শঙ্কাও বাদ দেওয়া যাচ্ছে না।

নির্বাচনে আড়াই শ’র মতো বিদেশি ও ২০ হাজার দেশিয় পর্যবেক্ষণ দায়িত্ব পালন করবেন বলে খবরে প্রকাশ। বিশেষ করে বিদেশি পর্যবেক্ষক ও বহির্বিশ্বের কাছে নির্বাচনকে গ্রহণযোগ্য দেখানোর যে চ্যালেঞ্জ নির্বাচন কমিশন ও সরকারের রয়েছে, সেই জায়গা থেকে আইনশৃঙ্খলার এমন ক্রমাবনতি মোটেই গ্রহণযোগ্য নয়। আমরা শুক্রবার পুলিশ প্রধান (আইজিপি) চৌধুরী আব্দুল্লাহ আল মামুন গণমাধ্যমকর্মীদের মুখোমুখি হয়ে বলেছেন, ‘নির্বাচন ঘিরে বিএনপি’র পরিকল্পনা জেনে গেছে পুলিশ’। খুবই ভালো কথা-তাহলে চলমান এসব নাশকতা আমরা কেন ঠেকাতে পারছি না?

আমরা সাম্প্রতিক দশকে নির্বাচনকে ঘিরে লাগাতার নাশকতার প্রবণতা যেসব এলাকায় বেশি মাত্রায় হতে দেখেছি আজকের দিনেও সেসব এলাকাতেই তার পুনরাবৃত্তি ঘটেছে। খবরে প্রকাশ, ভোটের একদিন আগে রাজশাহীর তিনটি ও ফেনীর একটি নির্বাচনী ভোটকেন্দ্রে আগুন অগ্নিসংযোগের ঘটনা ঘটেছে।

বৃহত্তর রাজশাহী ও নোয়াখালী অঞ্চলে এই ধরণের নাশকতার পেছনে অতীতে যে সব কারণ জানা গেছে, তার মধ্যে প্রধান কারণ হচ্ছে, এই এলাকাগুলো জামায়াত-শিবিরের শক্তিশালী ঘাঁটি। অপরাধ সংঘটিত করে অনায়াসে দুর্বৃত্তরা গা ঢাকা দিতে পারে এই এলাকাগুলোয়। ইতিপূর্বে বিভিন্ন সময়ে ঘটে যাওয়া এ ধরণের অপরাধ বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, স্থানীয়দের একটি অংশ জামায়াত-শিবিরের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়ার ফলে সংঘটিত অপরাধে তথ্যপ্রমাণ বা সাক্ষীর অভাবে অধিকাংশ ঘটনারই বিচার হয়নি।

আমরা লক্ষ্য করলাম, জাতীয় ভোটের দু’দিন পূর্বে শুক্রবারে অপরাধীরা একই ধরণের অপরাধ সংঘটনে ওই এলাকাগুলোকেই বেছে নিয়েছে। কিন্তু নিরাপত্তা নিশ্চিতে এসব অঞ্চলভিত্তিক ফ্যাক্টরগুলো বিবেচনায় নিয়ে অনেক পূর্বেই যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া গেলে হয়তো এমন নাশকতা ঠেকানো যেতো। ভোট অনুষ্ঠানকে নির্বিঘ্ন করতে এখনও যে সময় হাতে রয়েছে তাতে অঞ্চলভিত্তিক পৃথক নিরাপত্তা স্ট্রাটেজি অত্যন্ত জরুরি। কেননা জনগণের জানমালের নিরাপত্তা বিধান করা না গেলে একটি গ্রহণযোগ্য নির্বাচনের মানদণ্ড সৃষ্টি হয় না। দেশের নিরাপত্তা বাহিনীসহ সব ধরণের সামর্থ্য সদ্ব্যবহার করার পরেও ভোটের মাঠে নাশকতার ঘটনা নির্বাচন কমিশন ও সরকারকে বিব্রতই করবে।

অন্যদিকে, নির্বাচনের মাঠে আরেকটি বড় উত্তাপের জায়গা হচ্ছে দলীয় ও স্বতন্ত্র প্রার্থী এবং তাদের সমর্থকদের চরম পরম্পরবিরোধী অবস্থান। নির্বাচনকে প্রতিদ্বন্ধিতামূলক করার অভিপ্রায়ে আওয়ামীলীগের দলীয় মনোনয়নবঞ্চিত যে কেউ নির্বাচনে দাঁড়াতে পারবে, দলের এই অবস্থান, চলমান উত্তেজনাকে আরও উসকে দেওয়ার ফলে সাম্প্রতিক সপ্তাহগুলিতেতে দেশজুড়ে হানাহানি আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতিকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে এসব দলীয় হিংসা থামাতে কম বেগ পেতে হয়নি। এই সংকট নির্বাচন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়েও যে গড়াবে তা স্পষ্টতই দেখা যাচ্ছে। নিরাপত্তার ক্ষেত্রে এই বাড়তি চাপ অন্য নাশকতাকারীদের বাড়তি সুবিধা দিচ্ছে কিনা তাও ভেবে দেখার সময় এসেছে। তবে সার্বিকভাবে নিরাপত্তার জন্য সবধরণের সম্ভাব্য ঝুঁকি সক্রিয় বিবেচনায় নিয়ে নিয়মিত পদক্ষেপের সঙ্গে অঞ্চলভিত্তিক পৃথক নিরাপত্তা স্ট্রাটেজি নেওয়া অত্যন্ত জরুরি বলেই প্রতীয়মান হচ্ছে।