শঙ্কা-আশঙ্কার দ্বাদশ নির্বাচন: ১৯৬৯ প্রার্থীর ভোট যুদ্ধ
ভোট এলো, এলো ভোটরাজনৈতিক নানান অনিশ্চতা পাশ কাটিয়ে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের ভোট গ্রহণের বাকি আর মাত্র কয়েক ঘন্টা। রাত পোহালেই ভোট। নির্বাচন কমিশনের তফশিল ঘোষণা অনুযায়ী সব কর্মযজ্ঞ শেষে দেশের ২৯৯ আসনে ২৮ রাজনৈতিক দল ও স্বতন্ত্র মিলে ১৯৬৯ প্রার্থীর নির্বাচনে ভোট গ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে রোববার (৭ জানুয়ারি)। সকাল ৮ থেকে শুরু হয়ে বিকেল চারটা পর্যন্ত চলবে ভোটগ্রহণ।
দেশের বিভিন্ন জেলায় সংঘাত-সহিংসতা, আচরণবিধি লঙ্ঘন ও প্রাণহানির মধ্য দিয়ে একদিন আগেই শেষ হয়েছে প্রার্থীদের নির্বাচনী প্রচার। নিরুত্তাপ নির্বাচনে প্রার্থীদের প্রচারণায় ক্ষমতাসীন দলের আধিপত্যই বেশী দেখা গিয়েছে। নৌকার প্রার্থীদের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগ ও ইসির তলবের মাধ্য সেই চিত্র উঠে এসেছে। বিপরীত চিত্র ছিলো না আওয়ামীলীগের পদে থাকা স্বতন্ত্র প্রার্থীদের বেলায়ও। আচরণবিধি লঙ্ঘন করে প্রচার ও প্রতিপক্ষকে হুমকি আর সহিংসতায় জড়িয়েছেন তারা।
এদিকে ভোটের মাঠে প্রার্থীদের আচরণবিধি মানাতে প্রচারণার শুরু থেকে শেষ পর্যন্ত প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়ালের নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন দেশ ব্যাপি প্রার্থীদের সাথে মতবিনিময় সভা করেন। এরপরেও সারাদেশে দেড় শতাধিক সহিংসতা ঘটে। এর মধ্য আহত হয় দুই শতাধিক। নিহত হয় তিন জন। এর মধ্যে মুন্সিগঞ্জে একজন ও পিরোজপুরে সংঘাতে দুজনের মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়।
নির্বাচন বিশেষজ্ঞদের মতে, রাজনীতির মাঠে প্রধান বিরোধীদল গুলোর অনুপস্থিতির এমন নির্বাচনে ক্ষমতাশীন দলের প্রার্থীরা তাদের ক্ষমতার প্রভাব দেখিয়েছেন। এমন নিরুত্তাপ নির্বাচনে যে সংঘাত হয়েছে তা থামানো ও প্রার্থীদের আচরণবিধি মানতে বাধ্য করার ক্ষেত্রে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন রয়েছে। গুরুতর আচরণবিধি লঙ্ঘনের ঘটনায়ও নির্বাচন কমিশন প্রার্থীদের বিরুদ্ধে কঠিন কোন ব্যবস্থা নিতে পারেনি। বিশেষ করে কুমিল্লা-৬ আসনের নৌকার প্রার্থীকে চারবার শোকজ শেষে অর্থদন্ড, বরগুনা-২ আসনের নৌকার প্রার্থীকে চারবার শোকজ শেষে একই রূপ অর্থদণ্ড ও ঝিনাইদহ-২ আসনের নৌকার প্রার্থী ও সমর্থকের বিরুদ্ধে আচরণবিধি লঙ্ঘনের অভিযোগে চারটি মামলা করে দায় সেরেছে নির্বাচন কমিশন। এইসব প্রার্থীর বিরুদ্ধে গুরুতর অভিযোগ প্রমাণ পাওয়ার পরেও শক্ত ব্যবস্থা না নেওয়ায় ইসির কঠোর অবস্থান নিয়ে প্রশ্ন তোলেন তারা।
এদিকে, এবারের নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল যে টানা চতুর্থবারের মত সরকার গঠন করবে তা প্রায় সুনিশ্চিত। শুধু বিরোধীদল কে হবে জাতীয় পার্টি নাকি স্বতন্ত্র জোট এমন নানামুখী আলোচনার উত্তর পাওয়া যাবে রোববার রাতের মধ্যেই।
দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উৎসবমুখর ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশে হবে বলে বিভিন্ন সময় আশা প্রকাশ করেছেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার (সিইসি) কাজী হাবিবুল আওয়াল। তিনি বলেন, উৎসবমুখর ভোট হবে, এটাই আশা। তিনি ভোটারদের নির্ভয়ে ভোটকেন্দ্রে এসে তাঁদের ভোটাধিকার প্রয়োগের আহ্বান জানান। পাশাপাশি এবারের নির্বাচনে অবাধ ও সুষ্ঠু হওয়া নিয়ে বিভিন্ন সময় আশংকা প্রকাশ করেন।
ভোট সুষ্ঠু করার জন্য এবার এবার দূর্গম ৭২ উপজেলা ছাড়া সারাদেশে ভোটের দিন সকালে ব্যালট পেপারসহ নির্বাচনী সরঞ্জাম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছেন নির্বাচন কমিশন ইসি। ভোট কেন্দ্রের তথ্য ও ভোটের দিন কেন্দ্রে ভোটের হার জানাতে এবারই প্রথম ‘স্মার্ট ইলেকশন ম্যানেজমেন্ট বিডি’ নামের ২১ কোটি টাকা ব্যায়ে একটি অ্যাপ চালু করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। এছাড়াও প্রিসাইডিং কর্মকর্তার কাছে তথ্য নিয়ে দুই ঘণ্টা পরপর আসনভিত্তিক ভোট পড়ার হার ও প্রার্থীর ছবিসহ তথ্যও পাওয়া যাবে অ্যাপ অ্যাপে এই ।
ভোটের দিন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি তদারকি করতে কেন্দ্রীয়ভাবে সব বাহিনীর সম্বনয়ে করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা মনিটরিং সেল। ভোটের দিন গুজর রোধে থাকবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম মনিটরিং টিমও। আর ভোটের দিন কেন্দ্রেগুলোতে ভোটার সংখ্যা বাড়াতে গণমাধ্যমে চলছে ইসির নানান প্রচার।
নির্বাচনে নিবন্ধিত ২৮ দলের অংশগ্রহণ
এবারের নির্বাচনে ইসির নিবন্ধনধিত ৪৪ রাজনৈতিক দলের মধ্য নির্বাচনে অংশ নিয়েছে ২৮ টি দল। বিএনপিসহ সমমনা ১৬ রাজনৈতিক দল এবারের নির্বাচন বয়কট করে বর্জনের ঘোষণা দেয়। এসময় দলগুলো ভোট প্রতিহতের ঘোষণা দিয়ে ভোটের দিন ৪৮ ঘন্টার হরতালের ডাক দেয়। সংসদ নির্বাচনে ২৯৯ সংসদীয় আসনে ভোটের মাঠে লড়ছেন ১ হাজার ৯৭১ জন প্রার্থী। তারমধ্যে ২৮টি রাজনৈতিক দলের ১ হাজার ৫৩৪ জন প্রার্থী লড়াই করছেন। স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে লড়ছেন ৪৩৭ জন। নওগাঁ-২ আসনের স্বতন্ত্র প্রার্থী আমিনুল ইসলামের মৃত্যুর কারণে ওই আসনে নির্বাচন স্থগিত করে ইসি। রাজনৈতিক দলগুলো মধ্য প্রার্থী তালিকায় দেখা যায়, বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের প্রার্থী ২৬৬ জন, জাতীয় পার্টি প্রার্থী ২৬৫, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী ১৩৫ জন, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির প্রার্থী ১২২ জন, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী ৯৬ জন, ইসলামী ফ্রন্ট বাংলাদেশের ৩৯ জন, ইসলামী ঐক্যজোট ৪২ জন, কৃষক শ্রমিক জনতালীগের ৩০ জন, গণফোরাম ৯ জন, গণফ্রন্ট ২১জন, জাকের পার্টি ২১ জন, জাতীয় পার্টি জেপি ১৩ জন, জাতীয় সমাজ তান্ত্রিক দল (জাসদ) ৬৬ জন, বিকল্পধারার বাংলাদেশ ১০ জন, বাংলাদেশ ইসলামী ফ্রন্ট ৩৫জন, বাংলাদেশ কল্যাণ পার্টি ১৬জন, বাংলাদেশ খেলাপত আন্দোলন ১১জন, বাংলাদেশ জাতীয় পার্টি ৫ জন, বাংলাদেশ জাতীয়তাবাদী আন্দোলন ৫৬ জন, বাংলাদেশ তরীকত ফেডারেশন ৩৮ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনাল আওয়ামী পার্টি-ন্যাপ ৫ জন, বাংলাদেশ ন্যাশনালিস্ট ফ্রন্ট বিএনএফ ৪৫ জন, বাংলাদেশ মুসলিমলীগ ৪ জন, বাংলাদেশ সুপ্রিম পার্টি ৭৯ জন, বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোট ৬৩ জন, বাংলাদেশ ওয়াকার্স পার্টি ২৬ জন, বাংলাদেশ সাম্যবাদী দল-এমএল ৪ জন, গণতন্ত্রী পার্টি ১০ জন।
নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসির যত ব্যবস্থা
নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি: বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে ৩০০ ‘নির্বাচনী অনুসন্ধান কমিটি’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন (ইসি)। নির্বাচনী আসনভিত্তিক এসব কমিটিতে আছেন যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ, জ্যেষ্ঠ সহকারী জজ ও সহকারী জজরা। ‘নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম’ সংক্রান্ত বিষয়গুলো অনুসন্ধান করবে এই কমিটি। এসব কমিটি দায়িত্ব পালনকালে নির্বাচনপূর্ব অনিয়ম সংঘটিত হলে, তা অনুসন্ধান করে প্রতিবেদন পাঠাবে সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তার কাছে। এরপর সংশ্লিষ্ট জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা ওই অনুসন্ধান প্রতিবেদন নির্বাচন কমিশন সচিবালয়ের সচিবের কাছে পাঠাবেন। অনুসন্ধান কমিটি দায়িত্ব পালনকালে একজন বেঞ্চ সহকারী বা স্টেনোগ্রাফার বা অফিস সহকারীকে সঙ্গে নিতে পারবে। এই কমিটি তফশিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত প্রায় ৭৪৬ কে শোকজ করেছে। এই তালিকায় রয়েছে নির্বাচনে অংশ নেওয়া বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের প্রার্থীরা, তাদের সমর্থক, স্বতন্ত্র প্রার্থী, সরকারি কর্মকর্তা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধি , আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা রয়েছেন। নির্বাচন অনুসন্ধ্যান কমিটির তদন্ত প্রতিবেদন দেওয়ার পর নির্বাচন কমিশন ইসি সরকার দলীয় দুই প্রার্থীকে জরিমানা, প্রার্থীসহ ৭০ এর অধিকের বিরুদ্ধে মামলা নির্দেশ দেওয়া হয়। স্বতন্ত্র একজনের প্রার্থিতাও বাতিল করা হয়। শেষে উচ্চ আদালত থেকে রায়ের মাধ্যমে প্রার্থীতা ফিরে পায়।
তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্নের ৬৫৩ বিচারিক হাকিম: বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন অনুসন্ধ্যান কমিটির পাশাপাশি তাৎক্ষণিক বিচারকাজ সম্পন্ন করতে মাঠে নেমেছেন ৬৫৩ বিচারিক হাকিম। ভোটের আগে-পরে পাঁচ দিন তারা নির্বাচনী এলাকায় দায়িত্ব পালন করবেন। এই হাকিমরা গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী অপরাধ আমলে নিয়ে ব্যালট পেপার ছিনতাই, ব্যালট পেপার ধ্বংস করা, ব্যালট বাক্স ছিনতাই, ভোটদানে বাধা দেয়া বা বাধ্য করা, ভোটকেন্দ্রের পরিবেশ ভোটের উপযোগী না রাখা–এসব অপরাধের তাৎক্ষণিকভাবে বিচার করে ৩-৭ বছরের দণ্ড দিতে পারবেন।
নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট ১৬৪০: নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণের পাশাপাশি নির্বাচনী এলাকার সার্বিক আইন শৃঙ্খলা রক্ষা, অপরাধ প্রতিরোধ এবং মোবাইল কোর্ট ও স্ট্রাইকিং ফোর্স বিশেষ করে বিজিব, কোস্টগার্ড ও সশস্ত্র বাহিনীর টিমকে দিক-নির্দেশনা দেওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিস (প্রশাসন) ক্যাডারের ১৬৪০ কর্মকর্তাকে এক্সিকিউটিভ ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দেওয়া হয় । এই নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটরা ৫ জানুয়ারি থেকে ৯ জানুয়ারি পর্যন্ত মোবাইল কোর্ট আইন অনুযায়ী তফসিলভুক্ত আইনে মোবাইল কোর্ট পরিচালনার ক্ষমতা দেওয়া হয়েছ।
ভোটের মাঠে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্য সাড়ে ৭ লাখ: নির্বাচনে আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় মাঠে থাকছেন বিভিন্ন বাহিনীর ৭ লাখ ৪৭ হাজার ৩২২ জন সদস্য। এর মধ্যে রয়েছেন পুলিশ, র্যাব, বিজিবি, কোস্টগার্ড ও আনসার সদস্যরা। ইসি জানায়, ভোটের মাঠে আনসার ৫ লাখ ১৬ হাজার, পুলিশ (র্যাবসহ) ১ লাখ ৮২ হাজার ৯১ জন, কোস্টগার্ড ২ হাজার ৩৫৫ জন, বিজিবির সদস্য থাকবেন ৪৬ হাজার ৮৭৬ জন।
মাঠে সশস্ত্রবাহিনী: পাশাপাশি ভোটের মাঠে ‘ইন এইড টু দি সিভিল পাওয়ার’এর আওতায় বেসামরিক প্রশাসনকে সহযোগিতা দিতে মাঠে নামেন সশস্ত্রবাহিনীর সদস্যরা। গত ৩ই জানুয়ারি থেকে বুধবার থেকে আগামী ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত মাঠে থাকবেন তারা। সশস্ত্র বাহিনী বিভাগে বিভিন্ন মন্ত্রণালয়/বিভাগ ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে যৌথ সমন্বয় সেল স্থাপন করা হয়েছে, যা ১০ জানুয়ারি পর্যন্ত কার্যকর থাকবে। আন্তঃবাহিনী জনসংযোগ পরিদপ্তর-আইএসপিআরের বিজ্ঞপ্তিতে জানা যায়, সশস্ত্র বাহিনীর সদস্যরা প্রতিটি জেলা/উপজেলা/মেট্রোপলিটন এলাকার ‘নোডাল পয়েন্ট’ ও অন্যান্য সুবিধাজনক স্থানে অবস্থান করবে। সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের অনুরোধক্রমে ও সমন্বয়ের মাধ্যমে বাহিনীসমূহ এলাকাভিত্তিক মোতায়েন সম্পন্ন করবে। উপকূলীয় দুটি জেলাসহ (ভোলা ও বরগুনা) ১৯টি উপজেলায় দায়িত্ব পালন করবে নৌবাহিনী। সমতলে সীমান্তবর্তী ৪৫টি উপজেলায় বিজিবি এককভাবে দায়িত্ব পালন করবে। এছাড়া সীমান্তবর্তী ৪৭টি উপজেলায় সেনাবাহিনী বিজিবির সঙ্গে এবং উপকূলীয় চারটি উপজেলায় কোস্ট গার্ডের সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে যৌথভাবে দায়িত্ব পালন করবে। অপরদিকে বাংলাদেশ বিমান বাহিনী পার্বত্য অঞ্চলের ভোটকেন্দ্রগুলোতে প্রয়োজনীয় হেলিকপ্টার সহায়তা দেবে। জরুরি প্রয়োজনে বিমান বাহিনীর প্রয়োজনীয় সংখ্যক হেলিকপ্টার প্রস্তুত রাখা হয়েছে।
ভোটে যেসব বিধিনিষেধ: গণপ্রতিনিধিত্ব আদেশ অনুযায়ী, ২৮ ডিসেম্বর সকাল ৮টা থেকে মঙ্গলবার বিকাল ৪টা পর্যন্ত কোনো ধরনের সভা, সমাবেশ, মিছিল বা শোভাযাত্রা করা যাবে না। ভোটের দিন ২৪ ঘণ্টা নির্বাচনী এলাকায় ট্যাক্সি ক্যাব, বেবিট্যাক্সি/অটোরিকশা, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো, লঞ্চ, ইজিবাইক, ইঞ্জিনবোট ও স্পিডবোট চলাচলের নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। মোটরসাইকেলের ক্ষেত্রে নিষেধাজ্ঞা থাকবে শনি থেকে সোম তিন দিন। তবে আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাবাহিনী, সরকারি গাড়ি, সেবা সংস্থা যেমন- ফায়ার সার্ভিস, অ্যাম্বুলেন্স, সংবাদপত্রবাহী গাড়ি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে। ভোটারদের যাতায়ের সুবিধার জন্য চলাচল করবে গণপরিবহন।
ভোট পর্যবেক্ষণ: দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পর্যবেক্ষণ করার জন্য ২৩৪ জন বিদেশি পর্যবেক্ষক ও সাংবাদিককে অনুমোদন দেয়া হয়েছে। বিদেশিদের মধ্যে ১৫৮ জন পর্যবেক্ষক আর ৭৬ জন বিভিন্ন গণমাধ্যমের সংবাদকর্মী। নির্বাচন দেখতে দেশি ২০ হাজার ৭৭৩ জন পর্যবেক্ষককে অনুমোদন দিয়েছে ইসি। কেন্দ্রীয়ভাবে ৪০টি পর্যবেক্ষক সংস্থার ৫১৭ জন এবং স্থানীয়ভাবে ৮৪টি পর্যবেক্ষণ সংস্থার ২০ হাজার ২৫৬ জন ভোট পর্যবেক্ষণ করবেন।
নির্বাচনে অর্থ বাজেট: এবারের সংসদ নির্বাচনের ব্যয় শুরুতে দেড় হাজার কোটি টাকা ধরা হয়েছিলো। ধীরে ধীরে এই ব্যয় বেড়ে দুই হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাচ্ছে। ইসি সুত্রে জানা যায়, নির্বাচন পরিচালনা ও আইনশৃঙ্খলা খাত মিলিয়ে প্রায় দেড় হাজার কোটি টাকা বরাদ্দের প্রস্তাব করা হয়েছিল। পরে বরাদ্দের চাহিদা বেড়ে সব মিলিয়ে ব্যয় ২০০০ থেকে ২২০০ কোটি টাকায় দাঁড়াতে পারে। এর মধ্যে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চাহিদা অনুযায়ী সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ২২৫ কোটি ৬২ লাখ টাকা। নির্বাচন পরিচালনা খাতে সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ১ হাজার ৫০ কোটি ৬০ লাখ টাকা।
একনজরে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন: ভোটকেন্দ্র: ৪২ হাজার ২৪টি, ভোটকক্ষ: ২ লাখ ৬০ হাজারের বেশি, মোট ভোটার: ১১ কোটি ৯৬ লাখ ৯১ হাজার ৬৩৩ জন। পুরুষ ভোটার: ৬ কোটি ৭ লাখ ৭১ হাজার ৫৭৯ জন নারী ভোটার: ৫ কোটি ৮৯ লাখ ১৯ হাজার ২০২ জন অংশগ্রহণকারী দলের সংখ্যা: ২৮ মোট প্রার্থী: ১ হাজার ৯৬৯ রাজনৈতিক দলের প্রার্থী: ১ হাজার ৫৩৩ স্বতন্ত্র প্রার্থী: ৪৩৭ ভোট গ্রহণ কর্মকর্তা; প্রায় ১০ লাখ।