সিলেটে দুই মন্ত্রী পাচ্ছেন ফাঁকা মাঠ, চারটিতে হবে ভোটের লড়াই

  ভোট এলো, এলো ভোট
  • মশাহিদ আলী,ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম,সিলেট
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

সিলেটে দুই মন্ত্রী পাচ্ছেন ফাঁকা মাঠ, চারটিতে হবে ভোটের লড়াই

সিলেটে দুই মন্ত্রী পাচ্ছেন ফাঁকা মাঠ, চারটিতে হবে ভোটের লড়াই

রাত পোহালেই অনুষ্ঠিত হবে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন। ইতিমধ্যে শেষ হয়েছে নির্বাচনী সকল প্রস্তুতি। কেন্দ্রে কেন্দ্রে পাঠানো হয়েছে সরঞ্জাম। সকাল ৮টা থেকে শুরু হবে ভোট উৎসব।চলবে বিকেল ৪টা পর্যন্ত টানা ভোট গ্রহণ।কৌশলে শেষ মুহূর্তে প্রচারণায় ভোট প্রার্থনা করেছেন সব প্রার্থী। তবে সব কষ্টের অবসান ঘটবে রোববার ভোট গণনা শেষে। সিলেটের ৬টি আসনে ৩৫জন প্রার্থীর নাম থাকলেও শেষ সময়ে এসে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন ১ ও আরেকজন দিয়েছেন অন্য প্রার্থীকে সমর্থন। ফলে ৩৩জন প্রার্থী রয়েছেন ভোটের মাঠে। দিনভর ভোটাররা পছন্দের প্রার্থীদের ভোট দিয়ে নির্বাচিত করবেন। তারাই হবেন আগামী ৫ বছরের জন্য জনপ্রতিনিধি।

সিলেটের ৬টি আসনের মধ্যে সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আসন হচ্ছে সিলেট-১ আসন।এই আসনের একটি খ্যাতিও রয়েছে।বলা হয় সিলেট-১ আসনে যার সরকার গঠন হয় সেই দলের।

বিজ্ঞাপন

এবারের নির্বাচনে সিলেট-১ আসন ও সিলেট-৪ আসনেও রয়েছেন আওয়ামী লীগের মনোনীত দুই মন্ত্রী। তারা হলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড.একে আব্দুল মোমেন ও প্রবাসী ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রী ইমরান আহমদ। দুইটি আসনেই শক্ত কোনো প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় তারা অনেকটাই বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে। তবে, অন্য চারটি আসনে হবে ভোটের লড়াই।

সিলেট-১ আসন: পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. একে আব্দুল মোমেন ছাড়াও রয়েছেন ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) ফয়জুল হক (মিনার), ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) ইউসুফ আহমদ (আম), বাংলাদেশ কংগ্রেসের মোহাম্মদ সোহেল আহমদ চৌধুরী (ডাব) এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের আবদুল বাছিত (ছড়ি)।

বিজ্ঞাপন

রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও সাধারণ ভোটার বলছেন, আসনটিতে বিজয় মিছিলের অপেক্ষায় রয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ও আওয়ামীলীগ মনোনীত নৌকার প্রার্থী ড. আবুল কালাম আব্দুল মোমেন। এই আসনে ৫জন প্রার্থী থাকলেও শক্ত প্রতিদ্বন্দ্বী না থাকায় জয়ের পথে রয়েছেন ড. মোমেন।

সিলেট-২ আসন: এখানে প্রার্থী হলেন-সিলেট-২ আসনে বর্তমান সংসদ সদস্য মোকাব্বির খান, আওয়ামী লীগের প্রার্থী শফিকুর রহমান চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী ইয়াহইয়া চৌধুরী, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) মো. মনোয়ার হোসাইন, তৃণমূল বিএনপির মোহাম্মদ আব্দুর রব, বাংলাদেশ কংগ্রেসের মো. জহির এবং বিশ্বনাথ পৌর মেয়র মুহিবুর রহমান।

স্থানীয় ভোটাররা জানান, এ আসনে মূল আলোচনায় রয়েছে নৌকার প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি শফিকুর রহমান ও বিশ্বনাথ পৌরসভার মেয়র মুহিবুর রহমান। শুরু থেকে প্রায় ফাঁকা মাঠ ছিল শফিক চৌধুরী।
নানা আন্দোলন সংগ্রামের পর গত ২৮ ডিসেম্বর প্রতীক বরাদ্দ পান মুহিবুর রহমান। প্রতীক পাওয়ার পরই পাল্টে যায় চিত্র। পাল্টে গেছে হিসেব নিকেশ। তবে শেষ মূহুর্তে সাবেক সাংসদে আস্থা রাখতে পারেন ভোটাররা। কারণ আসনটিতে ১০ বছর পর নৌকার কোনো প্রার্থী দেয়া হয়েছে। এ আসনটিতে বর্তমান সাংসদ গণফোরামের প্রার্থী মোকাব্বির খান, লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে মো.ইয়াহইয়া চৌধুরীসহ ৭জন প্রার্থী রয়েছেন।

সিলেট-৩ আসন: এই আসনটিতে রয়েছেন ৭জন প্রার্থী। তারা হলেন- সিলেট-৩ আসনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী ও বর্তমান এমপি হাবিবুর রহমান হাবিব, জাতীয় পার্টির প্রার্থী মোহাম্মদ আতিকুর রহমান আতিক, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা ডা. মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী দুলাল, ন্যাশনাল পিপলস পার্টির (এনপিপি) প্রার্থী আনোয়ার হোসেন আফরোজ, বাংলাদেশ ইসলামী ঐক্যফ্রন্টের প্রার্থী শেখ জাহেদুর রহমান (মাসুম) ও ঈগল প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মো. ফখরুল ইসলাম। ইসলামী ঐক্যজোটের (আইওজে) প্রার্থী মো. মইনুল ইসলাম জাতীয় পার্টির প্রার্থীকে সমর্থন দিয়েছেন।

এ আসনে মূল প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন নৌকার প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিব, স্বতন্ত্র প্রার্থী মো.ইহতেশামুল হক চৌধুরী ও জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক। ভোটাররা বলছেন, হাবিবুর রহমান হাবিব উপনির্বাচনে বিজয়ী হওয়ার পর নির্বাচনী এলাকায় সার্বক্ষণিক তৎপর ছিলেন। সেক্ষেত্রে কাজের মূল্যায়ণ হিসেবে সাংসদ হিসেবেই পুনরায় বহাল থাকতে পারেন তিনি। পক্ষান্তরে মো. ইহতেশামুল হক চৌধুরী নির্বাচনী মাঠে নতুন হলেও রয়েছে তাঁর বিশাল ভোট ব্যাংক। ভোটের মাঠে দেখাতে পারেন নতুন চমক। এমনটাই মনে করছেন ভোটাররা। সাথে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন লাঙ্গল প্রতীক নিয়ে আতিকুর রহমান আতিক।

সিলেট-৪ আসন: আওয়ামী লীগের মনোনীত ও ৬ বারের সংসদ সদস্য ইমরান আহমদ প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন ইসলামি ঐক্যজোটের প্রার্থী মো. নাজিম উদ্দিন (কামরান) এবং তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো. আবুল হোসেন। এ আসনে আরও ২ জন প্রার্থী থাকলেও ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ ও সাধারণ মানুষের মন জয় করে আবারও বিজয়ের মালা পড়ার অপেক্ষায় ইমরান আহমদ। তবে প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকতে পরেন তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী মো.আবুল হোসেন।

সিলেট-৫ আসন: কানাইঘাট ও জকিগঞ্জ আসনে আওয়ামী লীগের মনোনীত নৌকা প্রতীকের প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা মাসুক উদ্দিন আহমদ, কেটলি প্রতীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী মাওলানা মোহাম্মদ হুছামুদ্দীন চৌধুরী, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা আহমদ আল কবির, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী কুতুব উদ্দীন আহমদ শিকদার, বাংলাদেশ কংগ্রেসের প্রার্থী মো. বদরুল আলম এবং বাংলাদেশ মুসলিম লীগের (বিএমএল) প্রার্থী মো.খায়রুল ইসলাম প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। এছাড়া জাতীয় পার্টির প্রার্থী শাব্বীর আহমদ ঘোষণা দিয়ে নির্বাচন থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন।

আসনটি ত্রিমুখী লড়াইয়ের আভাস রয়েছে। স্বতন্ত্র প্রার্থী হুছাম উদ্দিন আহমদ, সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী সিলেট জেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি ড. আহমদ আল কবিরের মধ্যে প্রতিদ্বন্দ্বিতার আভাস রয়েছে।

রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা ও সাধারণ ভোটারদের মতে, নৌকার প্রার্থী মাসুক উদ্দিন আহমদ ও স্বতন্ত্র প্রার্থী ড. আহমদ আল কবির প্রতিদ্বন্দ্বিতায় থাকলেও শক্ত অবস্থানে রয়েছেন হুছাম উদ্দিন আহমদ। আওয়ামীলীগ, ছাত্রলীগসহ সাধারণ মানুষ তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন। বাকি হেভিওয়েট দুই প্রার্থীকে টপকিয়ে চমক দেখাতে পারেন তিনি। এমনটাই মনে করছেন তারা।

সিলেট-৬ আসন: এই আসনে প্রাথীরা হলে- আওয়ামী লীগের মনোনীত বর্তমান এমপি ও সাবেক শিক্ষামন্ত্রী নুরুল ইসলাম নাহিদ, স্বতন্ত্র প্রার্থী আওয়ামী লীগ নেতা সরওয়ার হোসেন, তৃণমূল বিএনপির প্রার্থী শমসের মুবিন চৌধুরী, জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিন, ইসলামি ঐক্যাজোটের প্রার্থী সাদিকুর রহমান এবং বাংলাদেশ সাংস্কৃতিক মুক্তিজোটের প্রার্থী আতাউর রহমান প্রতিদ্বন্দ্বিতায় আছেন।

আসনটিতে বর্তমান এমপি নুরুল ইসলাম নাহিদ, তৃণমুল বিএনপির চেয়ারপার্সন সমশের মবিন চৌধুরী ও কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেন প্রার্থী থাকায় রয়েছে আলোচনার কেন্দ্র বিন্দুতে। এছাড়াও জাতীয় পার্টির প্রার্থী সেলিম উদ্দিনসহ আরও ২জন প্রার্থী রয়েছেন এ আসনে।

তবে শেষ মুহুর্তে আসনটিতে নানা গুঞ্জন রয়েছে। নৌকার প্রার্থীর সঙ্গে ভোটে টক্কর দিতে পারেন তৃণমূল বিএনপির সোনালী আঁশের প্রার্থী সমশের মবিন চৌধুরী। তাঁর পক্ষে মাঠে কাজ করছেন গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি চৌধুরী এলিমসহ আওয়ামী লীগের একটি অংশ। যদিও প্রথমদিকে কোনঠাসা থাকলেও শেষ মুহুর্তে ঘুরে দাঁড়িয়েছেন নৌকার প্রার্থী নাহিদ। ত্রিমুখী প্রতিদ্বন্দ্বিতায় রয়েছেন কানাডা আওয়ামী লীগের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি সরওয়ার হোসেনও। তার রয়েছে বিশাল ভোট ব্যাংক। সাথে রয়েছেন আওয়ামী লীগের একটি অংশ।

৬টি আসনে রোববার কারা পড়বেন বিজয়ের মালা তা নির্ধারণ করে দেবে ভোটারদের ভোটেই।