ফিশিং বোটে ডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩০ জলদস্যু গ্রেফতার

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

দক্ষিণ বঙ্গোপসাগরে ফিশিং বোটে দুর্র্ধষ গণডাকাতির প্রস্তুতিকালে ৩০ জন জলদস্যুকে গ্রেফতার করেছে র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব)। এসময় বিপুল পরিমাণ আগ্নেয়াস্ত্র ও গোলাবারুদ উদ্ধারের পাশাপাশি দুটি ট্রলার জব্দ করা হয়।

রোববার (১১ ফেব্রুয়ারি) ও সোমবার (১২ ফেব্রুয়ারি) দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে টানা ৪৮ ঘণ্টার অভিযানে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

বিজ্ঞাপন

গ্রেফতারকৃতরা হলেন- করিম (৩৩), মো. রুবেল (৩৩) মো. জফুর (৩৫), শফি আলম (৪০), আব্দর রহিম (২৫), মো. শামীম (২১), মো. ইউসুফ (২৯), শাজাহান বেগম (৩৭), মো. সাহাব উদ্দিন (৩৫), মো. শওকত (৩৭), মো. ইসমাইল (২৬), দেলোয়ার ইসলাম (৪২), নুর মোহাম্মদ (১৭), আব্দুর রহিম সিকদার (৩৪), মফিজুর রহমান (৩০), ফজল হক (৪০), মো. গিয়াস উদ্দিন (২৬), মো., কাছেদ (১৯), মো. আকিদ খান (৩৭), দিদারুল ইসলাম (৩৩), পিতা-মৃত জমির উদ্দিন, মো. নাইম (১৯), মো. হারুন (৪৪), মোঃ ইয়াছিন(২৯), খলিলুর রহমান (২৫), ইকবাল হোসেন (২৪), মো. শাহেদ (২২), হোসেন (২৭), মো. আলী হোসেন (২৪), আব্দুল মান্নান (৪০) ও সোলায়মান (৩৮)।

র‌্যাব জানায়, আমরা অভিযোগ পাই যে চট্টগ্রাম, কক্সবাজারের, ভোলা ও বরিশাল উপকূলীয় অঞ্চলের জলদস্যু বাহিনী কিছু দিন গা ঢাকা দিয়ে থাকার পর সম্প্রতি তারা আবারও আগের মত সাগরে জেলেদের উপর অত্যাচার, জুলুম, চাঁদাবাজি এবং অপহরণসহ সকল প্রকার অন্যায় কাজ পরিচালনা করছে। ভুক্তভোগীদের এরুপ অভিযোগের বিষয়টি চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিয়ে ব্যাপক গোয়েন্দা নজরদারি অব্যাহত শুরু করে র‌্যাব। এরই প্রেক্ষিতে গত ১১ ও ১২ ফেব্রুয়ারি দক্ষিণ বঙ্গোপসাগর অঞ্চলের স্থল ও সাগর পথে দীর্ঘ ৪৮ ঘণ্টার রুদ্ধশ্বাস অভিযান পরিচালনা ৩০ জলদস্যুকে গ্রেফতার করা হয়েছে।

বিজ্ঞাপন

পরে আসামিদের হেফাজতে থাকা ২ টি ট্রলার থেকে ৮ টি দেশীয় আগ্নেয়াস্ত্র  ৫টি কার্তুজসহ ডাকাতির কাজে ব্যবহৃত বিপুল পরিমাণ সরাঞ্জাম উদ্ধারসহ আসামিদের গ্রেফতার করা হয়।

আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে জানা যায়, তারা পুরো এক-দুই সপ্তাহ বঙ্গোপসাগরে ডাকাতি করে দাপিয়ে বেড়ায়। গডফাদারদের কাজ হলো অস্ত্র, গুলি এবং ট্রলারের যোগান দেয়া। বিভিন্ন নৌ/লঞ্চ/স্টীমার ঘাটে সোর্সের মাধ্যমে আইন শৃংখলা বাহিনী সাগরে অভিযানে যাচ্ছে কিনা তা তদারকি করে জলদস্যুরা উপকূলে আসার সময় তা অবগত করাসহ বোট মালিক এবং মাছ ব্যবসায়ী হিসেবে ডাকাতির মাছ ও মালামাল বিক্রি করে। এছাড়াও জলদস্যুরা সাগরে গিয়ে ডাকাতি করে মাছ এবং মালামাল বিক্রয়ের টাকা ৪০% কথিত গডফাদারের, ২০% তেল খরচ এবং বাকি ৪০% ডাকাতি সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত সদস্যদের মাঝে বণ্টন করতো।

গোয়েন্দা তথ্যের মাধ্যমে আরও জানা যায়, প্রায় ৩৫ থেকে ৪০ জনের ৩ টি সশস্ত্র ডাকাত চক্র (ভোলা, বরিশাল, কুতুবদিয়া এবং আনোয়ারা এলাকায়) একত্রিত হয়ে সাগরে বড় পরিসরে দস্যুতার পরিকল্পনা করছে। উল্লেখিত চক্রটির পরবর্তী ১০-১২ দিনের মধ্যে প্রায় ১৫-২০ টি ট্রলারে ডাকাতি করার পরিকল্পনা ছিল। ডাকাতি শেষে লুটপাটকৃত মাছ ও অন্যান্য সরঞ্জামাদি ভোলা ও বরিশাল অঞ্চলের দিকে নিয়ে বিক্রয় করা হতো।

পরবর্তীতে লভ্যাংশ আনোয়ারা-কুতুবদিয়া এলাকার জলদস্যুদের নিকট মোবাইল ব্যাংকিং এর মাধ্যমে পৌঁছে দেয়া হত। অভিযানের পরিকল্পনা অনুযায়ী র‌্যাবের একটি চৌকস আভিযানিক দল পতেঙ্গা হতে দক্ষিণ-পশ্চিমে গহীন সমুদ্রে তাদের গতিরোধের চেষ্টা করলে তারা র‌্যাবকে প্রতিহত করে এবং তাদের দিক পরিবর্তন করে চট্টগ্রামের পতেঙ্গা নৌ-বন্দর এলাকার ১৫ নম্বর ঘাটের দিকে আসতে থাকে। এ সময় র‌্যাব সদস্যরা তাদের ২ টি ট্রলারের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে ট্রলার থেকে অস্ত্র ও ডাকাতির মাছ এবং মালামালসহ ৩০ জনকে আটক করে।

বিষয়টি নিশ্চিত করে র‌্যাব-৭ এর জ্যেষ্ঠ সহকারি পরিচালক (গণমাধ্যম) মো. নূরুল আবছার বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামি এবং উদ্ধারকৃত আগ্নেয়াস্ত্র, গোলাবারুদ এবং সরঞ্জামাদি সংক্রান্তে পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নিমিত্তে সংশ্লিষ্ট থানায় হস্তান্তরের কার্যক্রম প্রক্রিয়াধীন।