চাপে পড়ে প্রধান শিক্ষকের বিরুদ্ধে মামলার বাদী সহকারী শিক্ষক!
রংপুরের পীরগাছায় বস্তাভর্তি ১১ মণ বই উদ্ধারের ঘটনায় প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলাম ও ক্রেতা সাইফুল ইসলামের বিরুদ্ধে মামলা হয়েছে। মামলায় ওই ক্লাস্টারের দায়িত্বে থাকা সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস ছালাম বাদী হওয়ার কথা থাকলেও শেষ পর্যন্ত অজ্ঞাত কারণে এক সহকারী শিক্ষককে বাদী করা হয়েছে। তবে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের চাপে পড়ে সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দুলাল মামলার বাদী হলেও বই উদ্ধারের বিষয়ে তিনি কিছু জানেন না বলে সাংবাদিকদের কাছে দাবি করেছেন।
শুক্রবার (৮ মার্চ) বিকালে মামলা দায়েরের বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পীরগাছা থানার ওসি সুশান্ত কুমার সরকার। এর আগে গত বৃহস্পতিবার দুপুরে উপজেলার ছাওলা ইউনিয়নের পাওটানা হাট সংলগ্ন এলাকা থেকে বইগুলো উদ্ধার করা হয়।
প্রত্যক্ষদর্শী ও পুলিশ জানায়, বৃহস্পতিবার দুপুরে বাড়ি থেকে ২০২৩ ও ২০২৪ শিক্ষাবর্ষের ৪৪০ কেজি প্রাথমিকের নতুন বই বিক্রি করেন দক্ষিণ ছাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলাম। এতে ১ হাজার ৯৬৪টি বই ছিল।
২০ টাকা কেজি দরে আট হাজার ৮০০ টাকায় বইগুলো কেনেন একই ইউনিয়নের দামুশ্বর গ্রামের ইদ্রিস আলীর ছেলে ভাঙরি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম। পরে বস্তায় ভরিয়ে বইগুলো ভ্যানে করে নিয়ে যাওয়ায় সময় পাওটানাহাট সংলগ্ন এলাকায় আটক করে ইউনিয়ন পরিষদে দেয় স্থানীয়রা। খবর পেয়ে উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেন, সংশ্লিষ্ট কুটিপাড়া ক্লাস্টারের দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা আব্দুস সালাম ও বিট পুলিশের এসআই সামীউল ইসলাম ইউনিয়ন পরিষদে উপস্থিত হন। পরে বইসহ ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলামকে থানায় নেয় পুলিশ।
এ সময় ভাঙরি ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম বলেন, আমাকে বাড়িতে ডেকে নিয়ে মাইদুল মাস্টার ও তার স্ত্রী দৌলত খাঁ সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক আছিয়া বেগম ৪৪০ কেজি বই ২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করেন।
স্থানীয়দের অভিযোগ, ক্রেতা সাইফুলের স্বীকারোক্তি থাকা স্বত্তেও প্রধান শিক্ষকের স্ত্রী আছিয়া বেগমকে মামলার আসামি করা হয়নি। এছাড়া ঘটনাস্থলে উপস্থিত না থাকলেও দক্ষিণ ছাওলা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রফিকুল ইসলাম দুলালকে বাদী করা হয়েছে। বিষয়টি ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা হিসেবে প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামের বিদ্যালয়েরই একজন সহকারী শিক্ষককে বাদী করার ঘটনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন স্থানীয় লোকজন।
বাদী রফিকুল ইসলাম দুলাল বলেন, এটিও স্যার আমাদের বস, তিনি যখন যা বলেন, তাই শুনতে হয়। না শুনলে আমাদের বিপদ। আমি বই বিক্রির বিষয়ে কিছুই জানি না। আমাকে ডেকে নিয়ে একটি এজাহারে স্বাক্ষর নেয়া হয়েছে। আমাকে এজাহারটি পড়ে দেখার সুযোগ দেয়া হয়নি। আমাকে যখন যেখানে যে কেউ জিজ্ঞাসা করলে আমি বলব, বই কে বিক্রি করেছে, কার কাছে বিক্রি করেছে আমি কিছুই জানি না। সব কিছুই এটিও আব্দুস সালাম স্যার জানেন।
স্থানীয় শিক্ষাবিদ শামসুল হক বলেন, অতিরিক্তি ৪৪০ কেজি সরকারি বই কিভাবে একজন শিক্ষক পেতে পারেন। শুধু তাই নয়, ঊর্ধ্বতন শিক্ষা অফিসার অথবা পুলিশকে বাদ দিয়ে বিক্রেতার অধীনস্ত সহকারী শিক্ষককে বাদী করার ঘটনাটি সন্দেহজনক। বিষয়টি খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেওয়া উচিৎ।
দায়িত্বপ্রাপ্ত সহকারী শিক্ষা কর্মকর্তা (এটিও) আব্দুস সালাম বলেন, রফিকুল ইসলাম নিজের সেফটির জন্য মামলা করেছেন।
পীরগাছা উপজেলা প্রাথমিক শিক্ষা কর্মকর্তা আবুল হোসেনের মুঠোফোনে একাধিকবার কল করা হলেও, তিনি ফোন না ধরায় তার মন্তব্য নেয়া সম্ভব হয়নি।
এ বিষয়ে রংপুরের বিভাগীয় উপ-পরিচালক মুজাহিদুল ইসলাম বলেন, মহাপরিচালক স্যারের সাথে কথা বলে আমার মন্তব্য জানানো হবে।
এ ব্যাপারে পীরগাছা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সুশান্ত কুমার সরকার বলেন, এ ঘটনায় ক্রেতা সাইফুল ইসলাম ও প্রধান শিক্ষক মাইদুল ইসলামকে আসামি করে মামলা হয়েছে। প্রধান শিক্ষক পলাতক থাকায় গ্রেপ্তার করা সম্ভব হয়নি।