১০ টাকায় রোগী দেখেন নওগাঁর অমল কুমার
নওগাঁর বদলগাছী উপজেলার বিলাশবাড়ী ইউনিয়নের নদীবেষ্টিত প্রত্যন্ত কটকবাড়ী গ্রামের পল্লী চিকিৎসক অমল কুমার রায়।
ছোটবেলা থেকেই তার ইচ্ছে ছিল ডিগ্রিধারী বড় চিকিৎসক হয়ে মানুষের সেবা করবেন। কিন্ত পিতা-মাতা শিক্ষিত না হওয়ায় অর্থের অভাবে সেই স্বপ্ন তার পূরণ হয়নি। তবুও থেমে থাকেননি অমল কুমার রায়, নিজের চেষ্টায় বিএ পাশ করে একজন এমবিবিএস ডাক্তারের শরণাপন্ন হন। সেখানে ৫ বছর ডাক্তারের সহকারী হিসেবে কাজ করে চিকিৎসার প্রাথমিক ধারণা নেন। পরে ৬ মাসের আরএমপি কোর্স সম্পন্ন করে নিজ গ্রামে শুরু করেন চিকিৎসাসেবা।
সরেজমিনে দেখা যায়, সকল রোগের ফি মাত্র ১০ টাকা। নামমাত্র ফি নিচ্ছেন অমল কুমার। দীর্ঘ সময়ে দ্রব্যমূল্যের দাম ১০গুন বৃদ্ধি পেলেও পল্লী চিকিৎসক অমল কুমারের ফি ১০ টাকার বেশি বাড়েনি। নিজ মেধায় তার সেবার সঙ্গে যুক্ত করেছেন হাড়-ভাঙ্গা চিকিৎসা। এলোপ্যাথিক ও আর্য়ূবেদিক দুইয়ের সমন্বয়ে ভাল ফলাফলের কারনে দূর-দূরান্ত হতে রোগীরা প্রতিদিন বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা নিতে আসে ১০ টাকার ডাক্তার অমল কুমারের চেম্বারে। তবে অনেক ক্ষেত্রে গরিব রোগীদের ফি না নিয়ে বরং ফ্রী ঔষধসহ বাড়ি যাওয়ার ভাড়াও দেন তিনি। এসব কারণে অমল ডাক্তার এলাকায় ১০ টাকা গরীবের ডাক্তার হিসেবে এখন ব্যাপক পরিচিত।
অমল কুমার রায় বার্তা ২৪.কম কে জানান, আমার প্রথম উদ্দেশ্যে ছিল গরীব মানুষের সেবা করা। কিন্তু পারিবারিক অবস্থা খারাপ থাকায় নিজের বড় ডাক্তার হবার স্বপ্ন আর সামনে বাড়েনি। তবে আমি গ্রাম্য ডাক্তার হয়ে মানুষের সেবা করতে পারছি-এটাতেই আমি অনেক খুশি। আমি আগে কোনো ফি নিতাম নাঅ কিন্তু বর্তমানে দ্রব্যমূল্যের দাম বেড়ে যাওয়ায় নামমাত্র ফি নিচ্ছি। অনেক গরীব রোগী আছে যাদের ঔষধ কেনার টাকাও থাকেনা তাদের ঔষধ আমি ফ্রিতেই দিয়ে দিই, মাঝে-মধ্যে এমন ও হয় রোগীর আসা যাওয়ার ভাড়াও আমাকে দিতে হয়।
তিনি আরও বলেন, ‘আমি বর্তমানে জ্বর, সর্দি, কাশি, বাতব্যাথা, প্যারালাইসিস, আঘাত লাগা, শ্বাসকষ্ট, চুলকানিসহ ছোটখাটো প্রায় সব ধরনের চিকিৎসা করি। আমি সব সময় মানুষের পাশে থেকে নিজের জীবন বিলিয়ে দিতে চাই মানব সেবাই। এলাকার মানুষ আমাকে ১০ টাকার ডাক্তার বলেই চিনে৷ আবার গরীবের ডাক্তার বলেও চিনে। এতে আমার ভালোই লাগে কারণ এসব ডাকে বোঝা যায় একটু হলেও তাদের কাছে মানবিক মানুষ হতে পেরেছি। এ পেশায় থেকে মানবিক ডাক্তার হিসেবেই বাকি জীবন কাটাতে চাই।’
সেবা নিতে আসা হলুদবিহার এলাকার বাসিন্দা রফিকুল জানান, ‘কোনো সমস্যা হলে অমল কুমারের কাছে চলে আসি। অল্প টাকায় ভালো চিকিৎসা পাই। অনেক দূর থেকেও মানুষ আসে তার চিকিৎসা নিতে। শহরে গিয়ে বেশি টাকা দিয়ে ডাক্তার দেখাতে গিয়ে আমাদের অনেক হিমশিম খেতে হয়। তাই এখানে ছুটে আসি। এমন ডাক্তার থাকার জন্যেই আমরা খুব সহজেই চিকিৎসা করাতে পারি।’
পাশের গ্রামের বৃদ্ধা আলেয়া আঞ্চলিক ভাষায় বলেন, ‘হামি অতো টাকা দিয়ে বড় ডাক্তারের কাছে যাবার পারমুনা, অমল কুমারের কাছে আসিছি, ছুরাডা ভালোই চিকিৎসা করে।’
স্থানীয় দিপ্তী রানীর সাথে কথা হলে তিনি বলেন, ‘অমল কুমার রায় অনেক আন্তরিক একটা মানুষ এবং চিকিৎসাও ভালো। প্রতিদিনই দূরদূরান্ত থেকে অনেক মানুষ আসে তার চিকিৎসা নেয়ার জন্য। সবাইকে সুন্দরভাবেই চিকিৎসা দেন তিনি। কারো যাতায়াতের ভাড়া না থাকলেও তিনি সেটা দিয়ে দেন। এমন মানবিক ডাক্তার আমরা সবাই চাই।’