শঙ্কা-প্রতীক্ষায় দিন কাটছে নোয়াখালীর দুই নাবিক পরিবারের
ভারত মহাসাগরে সোমালিয়ার জলদস্যুদের হাতে এমভি আব্দুল্লাহ জাহাজে জিম্মি নোয়াখালীর নাবিক আনোয়ারুল হক রাজু (২৭) ও ছালেহ আহমদ (৪৩)। তাদের শোকে পরিবারে নেই কোনো ঈদের আমেজ। ঈদকে ঘিরে তাদের পরিবারে নেই কোনো পরিকল্পনা, কোনো ধরনের কেনাকাটা বা রান্নার প্রস্তুতি।
মঙ্গলবার (২ এপ্রিল) বিকেলে সরেজমিনে গিয়ে কথা হয় দুই অপহৃত নাবিকদের স্বজনদের সঙ্গে। অন্যান্য বারের ঈদগুলো খুশির থাকলেও এবারের ঈদ তাদের কাছে নীরব কান্নার। একই সঙ্গে বয়ে বেড়াচ্ছে শঙ্কা, প্রতীক্ষায় প্রহর গুনছে তারা।
পরিবারের উপার্জনশীল প্রিয় ব্যক্তিদের বন্দিদশায় মহাসাগরে তলিয়ে গেছে তাদের ঈদ আনন্দ। প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঈদুল ফিতরের আগে ২৩ নাবিকের মুক্তির আকুতি জানান স্বজনরা।
জলদস্যুদের হাতে জিম্মি রাজু নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার রামপুর ইউনিয়নের ৮ নম্বর ওয়ার্ডের রামপুর গ্রামের আজিজুল হক মাস্টারের ছেলে। অপর জিম্মি ছালেহ আহমদ চাটখিল উপজেলার সিংবাহুড়া গ্রামের মৃত সাখায়াত উল্যার ছেলে। তিনি জাহাজটিতে ফাইটার পদে কর্মরত।
রাজুর বাবা আজিজুল হক মাস্টার বলেন, রাজুর বাড়িতে এসে ঈদ করার কথা ছিল। দুই ভাই এক বোনের মধ্যে রাজু সবার ছোট। গত নভেম্বরের শেষ দিকে রাজু সিঙ্গাপুর থেকে জাহাজে ওঠে। এরপর থেকে ছেলের বন্দিদশায় আমরা চিন্তিত। ঈদের আগেই যেন আমার সন্তানসহ সব নাবিকের মুক্তির ব্যবস্থা করে সরকার।
রাজুর মা দৌলত আরা বেগম বলেন, আমরা খুবই কষ্টে দিন অতিবাহিত করছি। প্রধানমন্ত্রী ঈদের আগেই যেন আমার ছেলেসহ জিম্মি সবাইকে ছাড়িয়ে আনে। ছেলে ছাড়া আমাদের কোনো ঈদ আনন্দ নেই।
রাজুর বড় বোন কামরুন নাহার রুমি বলেন, রাজুর বিয়ে উপলক্ষে বাড়িতে নতুন ঘরে কাজ চলছে। ছেলের স্মৃতি চারণ করে এখন বাবা-মা শোকে মুহ্যমান। পরিবারের সদস্যদের মধ্যে পালা করে চলছে শোকের মাতম।
অপরদিকে, স্ত্রী ও তিন মেয়েকে নিয়ে ছালেহ আহমদের ছোট পরিবার। তিনিই পরিবারের একমাত্র উপার্জনক্ষম ব্যক্তি। ছালেহ আহমদ গত বছর ঈদ করেছেন কর্মস্থলে। স্ত্রী ও তিন কন্যার আশা ছিল এবার তাদের সঙ্গে ঈদ করবে। কিন্তু স্বামী জলদস্যুদের হাতে জিম্মি হওয়ার খবরে এলামেলো হয়ে যায় তাদের স্বাভাবিক জীবন। তিন মেয়েকে নিয়ে অনেকটা বাকরুদ্ধ ছালেহর স্ত্রী তানিয়া আক্তার। যেন তারা বেঁচে থেকেও মৃত। তানিয়া ছোট ছোট তিন মেয়েকে নিয়ে অপেক্ষার প্রহর গুনছে স্বামীর। একেবারে নিকট আত্মীয় ছাড়া কারো সঙ্গে কথা বলছে না তানিয়া।
স্থানীয়রা বলেন, অপহৃত নাবিকদের ভাগ্যে কি ঘটেছে সেই শঙ্কায় ঈদের আনন্দ নেই জিম্মি নাবিকদের পরিবারে। তবে সবার প্রত্যাশা এমন উৎকণ্ঠার সময় পেরিয়ে ফিরে আসুক তাদের স্বজন।
ছালেহ আহমদের স্ত্রী তানিয়া আক্তার বলেন, নিজেরা নিজেদের সান্ত্বনা দিতে চেষ্টা করছি, এখনও সময় আছে স্বামী ফিরবে। সরকার ২৩ জন নাবিককে ঈদের আগে ফিরিয়ে আনবে এমন প্রত্যাশা করেন তিনি।
উল্লেখ্য, গত ১২ মার্চ বাংলাদেশি বাণিজ্য জাহাজ এমভি আবদুল্লাহকে ২৩ জন নাবিকসহ অপহরণ করে সোমালিয়ার জলদস্যুরা। ২৩ নাবিকের মধ্যে আছেন নোয়াখালীর এই দুই যুবক।