জেলে সেজে সাড়ে ১২ লাখ ইয়াবার চালান জব্দ করল পুলিশ
পুলিশের নির্দিষ্ট পোশাক পরিবর্তন করে লুঙ্গি ও গামছা পরে মাছ ধরার জেলে সেজে রাতভর সমুদ্র মোহনায় ওৎ পেতে ছিল পুলিশ। উদ্দেশ্য ইয়াবার চালান কবজা করা। অবশেষে রাত পেরিয়ে ভোরের আলো ফোটার সাথে সাথে আসে ইয়াবার সর্ববৃহৎ সেই চালান। চকরিয়া থানার ওসি শেখ মোহাম্মদ আলী এমনই এক চৌকস পরিকল্পনা এঁকে অপেক্ষা করেছিলেন রাতভর। জব্দও করেন চকরিয়ার ইতিহাসের সর্ববৃহৎ ইয়াবার চালান।
রোববার (২৮ এপ্রিল) রাত ১০টা থেকে সোমবার (২৯ এপ্রিল) সকাল ১০টা পর্যন্ত গত একসপ্তাহ ধরে চালানো তৎপরতার পর সর্ববৃহৎ এই ইয়াবার চালান জব্দ করতে উপজেলার খুটাখালীস্থ নদীতে এ অভিযান চালানো হয়।
সোমবার বিকেলে কক্সবাজার পুলিশ সুপার কার্যালয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ সুপার মাহফুজুল ইসলাম জানান, ‘বিপুল ইয়াবা পাচার হচ্ছে- এমন খবর পেয়ে চকরিয়া থানার ওসি মুহাম্মদ আলীর নেতৃত্বে পুলিশের একাধিক টিম নিয়ে জেলের ছদ্মবেশে অভিযান চালায়। অভিযানে মাদক পাচারকারীদের ট্রলারটি ধাওয়া করলে পাচারকারীরা নদীতে ঝাঁপ দিয়ে পালিয়ে যায়।
তিনি বলেন, ‘মাদক পাচারকারীদের রেখে যাওয়া ট্রলার জব্দ করা হয়। ট্রলারে তল্লাশি করে ইয়াবা ভর্তি মাঝারি সাইজের ৫টি ড্রাম উদ্ধার হয়। যেখান থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা উদ্ধার করা হয়। যার আনুমানিক মূল্য ৩৭ কোটি ৫০ লাখ টাকা।’ এটি ছিল কক্সবাজারের দ্বিতীয় বৃহৎ ইয়াবা উদ্ধারের অভিযান।
পুলিশ জানায়- কক্সবাজারের টেকনাফ থেকে সমুদ্রপথে পাচারের সময় এক চালানেই জব্দ করা হয় ১২ লক্ষ ৫০ হাজার পিস ইয়াবা। প্রতি পিস ইয়াবা ৩০০ টাকা হারে জব্দকৃত এই ইয়াবার বর্তমান বাজারমূল্য ৩ কোটি ৭৫ লক্ষ টাকা। থানার ইতিহাসে এত বড় ইয়াবার চালান আগে কখনো উদ্ধার বা জব্দ করা হয়নি বলে পুলিশ জানিয়েছে।
রোববার দিবাগত রাত থেকে আজ সোমবার ভোর পর্যন্ত কক্সবাজার উপকূলের চকরিয়া উপজেলার খুটাখালী ইউনিয়নের পশ্চিমাংশের চকরিয়া-মহেশখালী সমুদ্র চ্যানেলের বহলতলী চিংড়িজোন এলাকায় ইয়াবা উদ্ধারের দুঃসাহসিক এই অভিযান চালায় পুলিশ।
অভিযানে ওসি শেখ মোহাম্মদ আলীর সাথে ছিলেন থানার অপারেশন অফিসার রাজীব কুমার সরকার, এসআই যথাক্রমে জামাল চৌধুরী, কামরুল ইসলাম, এএসআই পারভেজ মাহমুদসহ সঙ্গীয় বিপুল সংখ্যক পুলিশ।
পুলিশ জানায়- চকরিয়া থানার ইতিহাসে এত বড় ইয়াবার চালান জব্দ করা হয়নি। এবারই প্রথম এই ইয়াবার চালান জব্দ করতে সক্ষম হয়েছে পুলিশ। ইয়াবাভর্তি প্লাস্টিকের পাঁচটি ড্রাম কেটে একে একে বের করা হয় অত্যাধুনিক মোড়কের ১২৫টি কার্ড বা পোটলা। এসব পটলার প্রতিটিতে ১০ হাজার পিস করে সর্বমোট ১২ লক্ষ ৫০ হাজার পিস ইয়াবার চালান জব্দ করা হলো।
এত বড় ইয়াবার চালান জব্দের একমাত্র কারিগর চকরিয়া থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) শেখ মোহাম্মদ আলী বলেন, ‘গত একসপ্তাহ ধরে ইয়াবার এই চালান জব্দ করার জন্য পুলিশের চোখে ঘুম ছিল না। গোপন সোর্সের দেওয়া তথ্য শতভাগ নিশ্চিত হওয়ার পর রোববার দিবাগত রাত থেকে পুলিশের বিপুল সংখ্যক সদস্য মাছ ধরার জেলে সেজে সমুদ্র উপকূলের চকরিয়া অংশের খুটাখালীর বহলতলী চিংড়িজোন এলাকায় ওৎ পেতে থাকে। এতে পরদিন সোমবার ভোরে আসে ইয়াবার সেই চালান।