সিলেটে পানিবন্দি মানুষ  প্রায় পৌনে সাত লাখ  



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিলেট
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

টানা বৃষ্টি ও ভারত থেকে নেমে আসা উজানের ঢলে সিলেটে বন্যা ভয়াবহ রূপ ধারণ করছে। সীমান্তবর্তী ছয় উপজেলাসহ সব উপজেলায় প্রায় পৌনে সাত লাখ মানুষ পানিবন্দি রয়েছেন। এর মধ্যে প্রতিনিয়ত প্লাবিত হচ্ছে নতুন নতুন এলাকা।

এদিকে টানা বৃষ্টির ফলে সুরমা নদীর পানি ছড়া ও নালা উপচে প্রবেশ করেছে মহানগরীর বিভিন্ন এলাকায়। তৈরি হয়েছে জলাবদ্ধতা। ঘর থেকে বাইরে বের হতে গিয়ে পড়তে হচ্ছে নানা সমস্যায়। সিলেট মহানগরীতে ৫০ হাজার মানুষ রয়েছেন পানিবন্দি অবস্থায়। এ ছাড়া সিলেটের ১৩টি উপজেলায় পানিবন্দি রয়েছেন ৬ লাখ ২৫ হাজার ৯৩৭ জন। সিলেট জেলা প্রশাসন বিষয়টি নিশ্চিত করেছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের (পাউবো) তথ্যমতে, মঙ্গলবার (১৮ জুন) সন্ধ্যা ৬টা পর্যন্ত সুরমা নদীর পানি কানাইঘাট পয়েন্টে বিপৎসীমার ১২২ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে। এ ছাড়া সুরমার পানি সিলেট পয়েন্টে ২৭ সেন্টিমিটার, অমলসীদ পয়েন্টে কুশিয়ারার পানি ৪৭ সেন্টিমিটার ও একই নদীর ফেঞ্চুগঞ্জে ৮৮ সেন্টিমিটার বিপৎসীমার ওপরে। আর সারি গোয়াইনের পানি ৩০ সেন্টিমিটার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।

সুরমা নদীর পানি বৃদ্ধি পাওয়ায় সিলেট নগরীর শাহজালাল উপশহর, বরইকান্দি, যতরপুর, মেন্দিবাগ, শিবগঞ্জ, রায়নগর, সোবহানীঘাট, কালিঘাট, কামালগড়, মাছিমপুর, তালতলা, জামতলা, কাজিরবাজার, মাদিনা মার্কেট, আখালিয়া ও মেজরটিলাসহ অধিকাংশ এলাকা বন্যাকবলিত। এ ছাড়া জেলার গোয়াইনঘাট ও কোম্পানীগঞ্জসহ কয়েকটি উপজেলার আঞ্চলিক সড়কগুলো বন্যার পানিতে তলিয়ে গিয়ে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ঘরবাড়ি ডুবে যাওয়ার পাশাপাশি অনেক কৃষিজমির ফসল তলিয়ে গেছে, ভেসে গেছে পুকুরের মাছ।

এদিকে ৬২৭টি আশ্রয়কেন্দ্রে আশ্রয় নিয়েছেন ১৭ হাজার ২৮৫ জন। ১৩টি উপজেলায় ১৩২৩টি গ্রাম বন্যার পানিতে প্লাবিত হয়েছে। এর মধ্যে সবচেয়ে বেশি গোয়াইনঘাট, জৈন্তাপুর, গোলাপগঞ্জ, কোম্পানীগঞ্জ, কানাইঘাট ,জকিগঞ্জ, বিশ্বনাথ ও ওসমানীনগর উপজেলা।

সিলেটের অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (সার্বিক) মোবারক হোসেন জানান, বন্যাকবলিত উপজেলায় আশ্রয়কেন্দ্র খোলা হয়েছে। বন্যা পরিস্থিতি মোকাবিলায় জেলা প্রশাসন সার্বিক প্রস্তুতি নিয়েছে। জেলা ও উপজেলা দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা কমিটির বৈঠক হয়েছে। উপজেলা ও জেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে। বন্যাকবলিত মানুষকে আশ্রয়কেন্দ্রে নিয়ে আসা হচ্ছে। দ্রুততম সময়ের মধ্যে সবার কাছে ত্রাণ পৌঁছে দেওয়া হবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছরের ২৭ মে ভারী বৃষ্টি ও উজান থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের কারণে সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দিয়েছিল। এতে জেলার অন্তত সাড়ে ৭ লাখ মানুষ আক্রান্ত হন। ৮ জুনের পর থেকে বন্যা পরিস্থিতি অনেকটাই স্বাভাবিক হয়ে আসে। তবে ঈদের আগের দিন রোববার (১৬ মে) মধ্যরাত থেকে শুরু হওয়া টানা ভারী বৃষ্টিতে আবারও সিলেটে বন্যা পরিস্থিতি দেখা দেয়।

চট্টগ্রাম বন্দরে বেড়েছে কন্টেইনার-কার্গো হ্যান্ডলিং



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম চট্টগ্রাম
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চট্টগ্রাম সমুদ্র বন্দরে গত এক বছরে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এর মধ্যে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ আর কার্গো হ্যান্ডলিং ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে। তবে একই সময়ে দেশের প্রধান এই সমুদ্রবন্দর কমেছে জাহাজ আগমনের সংখ্যা।

সোমবার (১ জুলাই) চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সদ্য বিদায়ী ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে কন্টেইনার, কার্গো ও জাহাজ হ্যান্ডলিং নিয়ে প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এমন তথ্য উঠে এসেছে।

বন্দর থেকে প্রাপ্ত তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কন্টেইনার হ্যান্ডলিং করেছে ৩০ লাখ ৭ হাজার ৩৭৫ টিইইউস (২০ ফুট দৈর্ঘ্যের একক)। সদ্য সমাপ্ত অর্থবছরে হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩১ লাখ ৬৮ হাজার ৬৯০ টিইইউস। এ হিসাবে বন্দরে কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে ১ লাখ ৬১ হাজার ৩১৫ টিইইউস যা শতকরা হিসাবে আগের বছরের চেয়ে ৫ দশমিক ৩৬ শতাংশ বেড়েছে।

এছাড়া ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে চট্টগ্রাম বন্দর কার্গো হ্যান্ডলিং করেছে ১১ কোটি ৮২ লাখ ৯৭ হাজার ৬৪৩ মেট্রিক টন। ২০২৩-২০২৪ অর্থবছরে হ্যান্ডলিং করেছে ১২ কোটি ৩২ লাখ ৪২ হাজার ৭৪৮ মেট্রিক টন। এ হিসেবে বন্দরে কার্গো হ্যান্ডলিং বেড়েছে ৪৯ লাখ ৪৫ হাজার ১০৫ মেট্রিক টন, যা শতকরা হিসেবে আগের বছরের চেয়ে ৪ দশমিক ১৮ শতাংশ বেড়েছে।

এদিকে গত এক বছরে (২০২৩-২০২৪ অর্থবছর) বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে ৩ হাজার ৯৭১টি। এর আগে অর্থাৎ ২০২২-২০২৩ অর্থবছর বন্দরে জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছিল ৪ হাজার ২৫৩টি। আগের অর্থবছরের চেয়ে এবার বন্দরে মোট ২৮২টি কম জাহাজ হ্যান্ডলিং করা হয়েছে।

জাহাজের আগমন কম হলেও কার্গো ও কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বৃদ্ধিকে অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক বলছেন চট্টগ্রাম বন্দর কর্তৃপক্ষের সচিব মো. ওমর ফারুক।

তিনি বলেন, ‘বন্দরের আধুনিক হ্যান্ডলিং ইক্যুইপমেন্ট সংযোজন, অটোমেশন, অভিজ্ঞতা, দক্ষ ব্যবস্থাপনা ও নতুন নতুন উন্নয়ন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কারণে ২০২৩-২৪ অর্থবছরে কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিংয়ে প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব হয়েছে। জাহাজ আগমন কোনো বিষয় না। বড় জাহাজ বেশি আসছে এজন্য। কিন্তু, আমাদের কার্গো এবং কন্টেইনার হ্যান্ডলিং বেড়েছে। এটি অর্থনীতির জন্য ইতিবাচক। আমরা চাই বড় জাহাজে বেশি পণ্য পরিবহনের সুযোগ সৃষ্টি করতে। এতে জাহাজ ভাড়া কম পড়বে, আমদানি ও রপ্তানিকারকরা তথা দেশ অর্থনৈতিকভাবে লাভবান হবে।’

সচিব মো. ওমর ফারুক বলেন, সদ্য বিদায়ী অর্থবছর থেকে চট্টগ্রাম বন্দরের পতেঙ্গা কন্টেইনার টার্মিনাল বিদেশি অপারেটরদের মাধ্যমে পরিচালিত হচ্ছে। এতে বন্দরের আয় বাড়ছে। বে টার্মিনালে বিনিয়োগ বাড়ছে। মাতারবাড়ী গভীর সমুদ্রবন্দরের কার্যক্রম এগিয়ে নেওয়া হচ্ছে। দেশের অর্থনীতির সঙ্গে চট্টগ্রাম বন্দরকে এগিয়ে নিতে কাজ করছে কর্তৃপক্ষ।

চট্টগ্রাম বন্দর ব্যবহারকারী ফোরাম এবং ব্যবসায়ীদের শীর্ষ সংগঠন এফবিসিসিআইয়ের সভাপতি মাহবুবুল আলম বলেন, ‘দেশের অর্থনীতি বড় হচ্ছে। জাতীয় বাজেট বাড়ছে। বাড়ছে আমদানি ও রপ্তানি। তারই প্রতিচ্ছবি চট্টগ্রাম বন্দরের কন্টেইনার ও কার্গো হ্যান্ডলিং প্রবৃদ্ধি। আমরা আশাকরি, দেশের উন্নয়ন অগ্রযাত্রায় শামিল থাকতে চট্টগ্রাম বন্দর সক্ষমতার পরিচয় দেবে। বন্দর নতুন নতুন প্রকল্প ও পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করে দেশের ক্রমবর্ধমান অর্থনীতির চাপ গ্রহণে প্রস্তুত থাকবে।’

;

চুয়াডাঙ্গায় পুকুরে মিলল ইটভাটা শ্রমিকের লাশ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম চুয়াডাঙ্গা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

চুয়াডাঙ্গায় পুকুর থেকে ইটভাটা শ্রমিক শান্ত (১৫) নামের এক কিশোরের মরদেহ উদ্বার করেছে পুলিশ। সোমবার (১ জুলাই) রাত ১০টার দিকে চুয়াডাঙ্গা সদর উপজেলার জালশুকায় গ্রাম থেকে লাশটি উদ্ধার করা হয়।

পরে সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করে লাশ চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতাল মর্গে প্রেরণ করে পুলিশ। নিহত শান্ত শংকরচন্দ্র ইউনিয়নের জালশুকা গ্রামের আজিজুল হকের ছেলে। তার মৃত্যু নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে রহস্য।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, এটি হত্যাকাণ্ড হতে পারে। তবে এ বিষয়ে নিহতর পরিবারের কারো বক্তব্য পাওয়া যায়নি।

পুলিশ জানিয়েছে, সোমবার সন্ধ্যা সাতটার দিকে স্থানীয়রা জালশুকা গ্রামের হিমালয় ইটভাটা সংলগ্ন পুকুরে শান্তর লাশ ভাসতে দেখেন। খবর পেয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে পৌঁছে লাশ উদ্ধার করে।

পুলিশ প্রাথমিকভাবে জানতে পেরেছে, শান্ত অন্যান্য দিনের মতো সোমবার ইটভাটায় কাজ করতে আসে। কাজ শেষে অন্য শ্রমিকেরা বাড়ি চলে গেলেও সে ভাটায় থেকে যায়।

ইটভাটা শ্রমিক শান্তর মৃত্যুর বিষয়ে শংকরচন্দ্র ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মহিউল আলম বলেন, ‘শান্ত ইটভাটা শ্রমিক ছিল। তার সঙ্গে ভাটার অন্য কয়েকজন শ্রমিকের কোনো একটি বিষয় নিয়ে দ্বন্দ্ব ছিল বলে জেনেছি। তবে কার সঙ্গে দ্বন্দ্ব ছিল, পরিবারের সদস্যরা কেউ বলতে পারেনি। পুলিশ সদস্যরা ঘটনাস্থল পরিদর্শনের পর লাশ উদ্ধার করে মর্গে পাঠিয়েছেন। সকালে (মঙ্গলবার) লাশের ময়নাতদন্ত হবে। আশা করছি, পুলিশ সদস্যরা মৃত্যুর রহস্য উদ্ঘাটন করবেন।’

চুয়াডাঙ্গা জেলা পুলিশের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার (সদর সার্কেল) আনিছুজ্জামান লালন বলেন, ‘খবর পেয়ে আমরা ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেছি। প্রাথমিক দৃষ্টিতে লাশের শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। মরদেহ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য চুয়াডাঙ্গা সদর হাসপাতালের মর্গে পাঠানো হয়েছে। ময়নাতদন্ত রিপোর্ট পেলে মৃত্যুর সঠিক কারণ জানা যাবে। পরবর্তী আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।’

;

টিউবওয়েল বসাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে নিহত ১, আহত ৪



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম বরগুনা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

বরগুনার পাথরঘাটায় টিউবওয়েল বসাতে গিয়ে বিদ্যুৎস্পৃষ্ট হয়ে আরিফ (১৯) নামে এক যুবকের মৃত্যু হয়েছে।

সোমবার (১জুলাই) সন্ধ্যা সাতটার দিকে উপজেলার কাকচিড়া ইউনিয়নের এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় আহত হয়েছে আরও চারজন।

তাদেরকে প্রাথমিক চিকিৎসা শেষে উন্নত চিকিৎসার জন্য বরিশাল শেরে বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।

নিহত আরিফ কাকচিড়া ইউনিয়নের কামারহাট এলাকার ইউনুস মোল্লার ছেলে।

স্থানীয়রা জানান, মাগরিবের পূর্বে টিউবওয়েল বসানোর জন্য ২টি খুঁটির সঙ্গে আরেকটি খুঁটি যুক্ত করতে যে রশি ব্যবহার করা হয় সেই রশি দুর্বল থাকায় ছিড়ে গিয়ে বিদ্যুতের মূল লাইনের ওপর পড়ে দুর্ঘটনা ঘটে। এতে ঘটনাস্থলেই একজনের মৃত্যু হয়। আহত হয় আরও চারজন।

পরে তাদেরকে উদ্ধার করে পাথরঘাটা উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি করা হয়।

আহতরা হলেন, বেতাগী উপজেলার হোসনাবাদ এলাকার মো. মিলন হাওলাদার (৪২), বরগুনার গরিচন্না এলাকার মো. কাওসার (১৭), মির্জাগঞ্জের পশ্চিম সুবিদখালী এলাকার মো. হাসান হাওলাদার (২২) ও শামীম হাওলাদার (২৪)।

স্থানীয় ইউপি সদস্য আব্দুস সাত্তার মন্টু বলেন, মাগরিবের পূর্বে টিউবওয়েল বসাতে গিয়ে খুঁটি ছিড়ে বিদ্যুতের লাইনের ওপর পড়ে দুর্ঘটনা ঘটেছে।

পাথরঘাটা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আল মামুন বার্তা২৪.কম-কে বলেন, দুর্ঘটনার খবর পেয়ে ঘটনাস্থলে গিয়ে আহতদের উদ্ধার করা হয়েছে। উদ্ধার করা লাশটি ময়না তদন্তের জন্য মর্গে পাঠানো হয়েছে। অভিযোগ পেলে আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;

শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভে উত্তাল বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম ঢাকা
ছবি : সংগৃহীত

ছবি : সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ ৫৬ শতাংশ কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদ এবং কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবিতে লাগাতার আন্দোলনের সূচনা করেছেন দেশের বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (১ জুলাই) মানববন্ধন, সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলে উত্তাল ছিল ক্যাম্পাস। কোটা বাতিল করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে চার দফা দাবি জানান শিক্ষার্থীরা। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী।

তারা কোটা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবি জানান। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একদল শিক্ষার্থী সোমবার বিক্ষোভ দেখিয়ে ৩ দিনের কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন।

জাবিতে কোটা বাতিলের দাবিতে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীদের দাবিগুলো হলো-২০১৮ সালের পরিপত্র অনুযায়ী সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখা; কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দেওয়া (সংবিধান অনুযায়ী শুধু অনগ্রসর ও সুবিধাবঞ্চিত জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে)।

এছাড়া সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না। কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দেওয়া এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়া।

আন্দোলনের অন্যতম সংগঠক ঢাবির আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের ছাত্র রিফাত রশিদ বলেন, ‘আমরা মঙ্গলবার বেলা আড়াইটায় গণপদযাত্রা করব। সেখান থেকে পরবর্তী কর্মসূচি দেওয়া হবে।’

প্রসঙ্গত, প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটা পদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করেছেন হাইকোর্ট। এ বিষয়ে জারি করা রুল যথাযথ ঘোষণা করে গত ৫ জুন বিচারপতি কেএম কামরুল কাদের ও বিচারপতি খিজির হায়াতের হাইকোর্ট বেঞ্চ এ রায় ঘোষণা করেন।

এর প্রতিবাদে কোটা বাতিল করে বৈষম্যহীন সমাজ গড়তে ক্যাম্পাসে সোমবার বিক্ষোভ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকশ শিক্ষার্থী। দুপুরে কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগারের সামনে থেকে বিশাল বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়ে কলাভবন, মল চত্বর, ভিসি চত্বর ও টিএসসি হয়ে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে সন্ত্রাসবিরোধী রাজু ভাস্কর্যের পাদদেশে সমাবেশে মিলিত হয়। এ সময় শিক্ষার্থীরা ‘সংবিধানের/মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘১৮’র হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই বাতিল চাই’, ‘কোটা প্রথার বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাঁই নাই’ ইত্যাদি স্নোগান দিতে থাকেন।

অমর একুশে হলের শিক্ষার্থী সারজিস আলম বলেন, ‘বর্তমানে শুধু প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে কোটার পাশাপাশি তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণির চাকরিতেও গলাকাটা পোষ্য কোটা দেওয়া হয়েছে। এই পোষ্য কোটার ফলে কর্মচারী শ্রেণিকে সুবিধা দেওয়া হচ্ছে। একটি পরিবারের একজন যেখানে চাকরিতে রয়েছেন, সেখানে অন্যদেরও সেই সুবিধা দেওয়া হয়েছে। অথচ আমার, আপনার বাবা-মা যারা শ্রমজীবী, কৃষক, খেটে খাওয়া মানুষ তাদের এই সুযোগ থেকে বঞ্চিত করা হচ্ছে। এই বঙ্গবন্ধুর বাংলায়, স্বাধীন এই বাংলায় কোটা বৈষম্যের কোনো স্থান নেই। তিনি বলেন, ২০১৮ সালে এক রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে বৈষম্যমূলক, নিপীড়নমূলক, নির্যাতনমূলক কোটা ব্যবস্থার কবর দিয়েছিলাম। প্রধানমন্ত্রী যখন সংসদে দাঁড়িয়ে আপামর ছাত্র জনতার কথা বিবেচনা করে কোটা বাতিল করেছিলেন, সেখানে হাইকোর্ট থেকে কিভাবে সেই পরিপত্র আবার বাতিল করা হয়? আজকে সারা দেশের ছাত্রসমাজ একযোগে আন্দোলন শুরু করেছে। এই কোটা পুনর্বহালের সিদ্ধান্ত বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল করার আগ পর্যন্ত শিক্ষার্থীরা আন্দোলন চালিয়ে যাবে।’

সমাবেশে অংশ নেওয়া জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের (জবি) শিক্ষার্থী হিমু বলেন, ‘আমাদের বিরুদ্ধে অপপ্রচার চালানো হচ্ছে যে, আমরা নাকি মুক্তিযুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের বিরোধী। কিন্তু আমরা স্পষ্ট করে বলতে চাই, আমরা শুধু বৈষম্যমূলক কোটার বিরুদ্ধে, মুক্তিযুদ্ধের বিরুদ্ধে নয়। আজকে তারা বলছেন, তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী। বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরিবার মাসে ২০ হাজার টাকা ভাতা পায়। বছরে দুই ঈদ ও বিজয় দিবসে ভাতা পায়। অথচ দেশের অসংখ্য পরিবারের মাসিক আয় ২০ হাজার টাকার অনেক কম। যেখানে তারা বিনামূল্যে চিকিৎসাসেবা পাচ্ছেন, তাদের সন্তান-নাতি-নাতনিরা পাশ করতে পারলেই বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন। অথচ অনেক শিক্ষার্থী মেধাবী হয়েও ভর্তির সুযোগ পাচ্ছেন না। তাহলে কীভাবে তারা পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠী হলেন? বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল না করা হলে ছাত্রসমাজ আরও কঠোর কর্মসূচিতে যেতে বাধ্য হবে।’

বিক্ষোভ মিছিল ও ছাত্র সমাবেশ করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরাও। সমাবেশে ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়’ ব্যানারে ছাত্রছাত্রীরা চার দফা দাবি জানান।

সোমবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান ফটকের সামনে এ ছাত্র সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়। এর আগে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে জড়ো হয়ে মিছিল নিয়ে পুরো ক্যাম্পাস প্রদক্ষিণ করে। মিছিলটি রায়সাহেব বাজার মোড় হয়ে বাহাদুর শাহ পার্ক প্রদক্ষিণ করে ক্যাম্পাসে ফিরে আসে।

বিক্ষোভ-মিছিল ও ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেছেন জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে এগারোটায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনারের পাদদেশে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ-মিছিল নিয়ে ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা। এ সময় তারা ৪ দফা দাবি জানান।

সমাবেশে বোটানি বিভাগের শিক্ষার্থী জাহিদুল ইসলাম ইমন বলেন, ‘সংবিধানে স্পষ্ট লেখা আছে শুধু পিছিয়ে পড়া গোষ্ঠীর জন্যই কোটা থাকবে। আন্তর্জাতিক সম্পর্ক বিভাগের শিক্ষার্থী সিয়াম বলেন, আমরা যারা কোটা সংস্কার আন্দোলন করি আমরা নাকি জামায়াত-শিবির করি। কারণ হিসাবে দেখানো হয় আমরা রাষ্ট্রীয় আইনের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছি। তাহলে আমরা বলতে চাই, যে শিক্ষকরা আজকে প্রত্যয় পেনশন স্কিমের বিরুদ্ধে আন্দোলন করছেন তারাও কি জামায়াত-শিবির করেন? ঢাকা-আরিচা মহাসড়ক অবরোধের হুঁশিয়ারি দিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, আমাদের দাবি পূরণ না হলে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে লাগাতার অবরোধ কর্মসূচি দেওয়া হবে। একটা গাড়িও চলবে না ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে।’

অন্যদিকে, দ্বিতীয় দিনের মতো মানববন্ধন ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর সাড়ে ১২টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্যারিস রোডে এ কর্মসূচি পালন করা হয়। মানববন্ধন কর্মসূচিতে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন লেখা সংবলিত প্ল্যাকার্ড প্রদর্শন করেন। এর মধ্যে ছিল ‘মেধাবীদের কান্না আর না আর না’, ‘কোটা বৈষম্য নিপাত যাক, মেধাবীরা মুক্তি পাক’, ‘কোটা প্রথায় নিয়োগ পেলে দুর্নীতি বাড়ে প্রশাসনে’, ‘দেশটা নয় পাকিস্তান, কোটার হোক অবসান’ ইত্যাদি। মানববন্ধন শেষে শিক্ষার্থীরা বিভিন্ন স্লোগান দিয়ে বিক্ষোভ করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের দর্শন বিভাগের শিক্ষার্থী রাবেয়া মুহিবের সঞ্চালনায় কর্মসূচিতে বক্তব্য দেন রাকসু আন্দোলন মঞ্চের সদস্য সচিব আমানুল্লাহ আমান, স্টুডেন্টস রাইটস অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি মেহেদী সজীব ও পপুলেশন সায়েন্স অ্যান্ড হিউম্যান রিসোর্স ডেভেলপমেন্ট বিভাগের শিক্ষার্থী মেহেদী হাসান মারুফ।

সোমবার দুপুরে ঢাকা-বরিশাল মহাসড়কের পাশে ববির প্রধান গেটে বিক্ষোভ সমাবেশ করেছেন বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। পরে মহাসড়কে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়। এ সময় বক্তারা প্রতিবন্ধী ও অনগ্রসর জাতিগোষ্ঠীর কোটা বাদে সব কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবি জানান।

সমাবেশে বক্তৃতা করেন- ববি শিক্ষার্থী ভূমিকা সরকার, মাইনুল ইসলাম, মৃত্যুঞ্জয় রায়, সিরাজুল ইসলাম, সুজয় শুভ প্রমুখ। বক্তারা বলেন, কোটা পদ্ধতির কারণে সাধারণ শিক্ষার্থীদের মধ্যে চাকরি প্রাপ্তি নিয়ে হতাশা দেখা দিয়েছে। কোটা বাতিল করা না হলে কঠোর আন্দোলন গড়ে তোলা হবে।

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) বিক্ষোভ করেছেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা। সোমবার বেলা সাড়ে ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শহিদ মিনার প্রাঙ্গণে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা। বিভিন্ন স্লোগানে মুখরিত হয় শহিদ মিনার প্রাঙ্গণ। এ সময় তারা ৪টি দাবি উপস্থাপন করেন।

;