কোটা ব্যবস্থা বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠনে বাধাগ্রস্থ করছে: জিএম কাদের
মুক্তিযুদ্ধের চেতনার নামে চাকরিতে কোটা ব্যবস্থার মাধ্যমে বৈষম্যমুক্ত সমাজ গঠন বাধাগ্রস্থ করা হচ্ছে বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় সংসদের বিরোধী দলীয় নেতা ও জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান গোলাম মোহাম্মদ কাদের। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের পরবর্তী প্রজন্মের জন্য চাকরি লাভে বিশেষ বড় অংকের কোটায় চিরস্থায়ী বন্ধবস্ত করা হয়েছে। যা স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্য বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচার ভিক্তিক সমাজ গঠন বাধাগ্রস্থ করে বলে মনে করি।
বুধবার (৩ জুলাই) দ্বাদশ জাতীয় সংসদের প্রথম বাজেট অধিবেশনের সমাপনী বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি। অধিবেশনে সভাপতিত্ব করেন স্পিকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী।
জিএম কাদের বলেন, একথা যেন আমরা ভূুলে না যাই যে, এ দেশের মানুষ বৈষম্যের বিরুদ্ধে সংগ্রাম আন্দোলনে জয়লাভের জন্য যে কোনো ত্যাগ স্বীকার করতে ও যে কোনো পর্যায় যেতে প্রস্তুত থাকে। স্বাধীনতা যুদ্ধে আমাদের মূল অর্জন সংবিধান, সেখানে সুযোগ সুবিধাদির ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। আমাদের শহীদ মিনার বৈষম্য থেকে মুক্তি সংগ্রামের আত্মত্যাগের প্রতীক। আমাদের জাতীয় স্মৃতিশৌধ বৈষম্যহীন ন্যায় বিচারভিক্তিক নিজস্ব দেশে গঠনে অঙ্গীকারের প্রতীক।
কোটা পদ্ধতি নিয়ে বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে প্রথম শ্রেণি, দ্বিতীয় শ্রেণি, তৃতীয় শ্রেণি এবং চতুর্থ শ্রেণিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটি ছিল। এরমধ্যে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা, ১০ শতাংশ নারী, ১০ শতাংশ অনগ্রসর জেলার বাসিন্দাদের জন্য, ৫ শতাংশ ক্ষুদ্র জাতী গোষ্ঠির মানুষদের জন্য এবং এক শতাংশ প্রতিবন্ধিদের জন্য সংরক্ষিত কোটা। বাকি ৪৪ শতাংশ মেধায় নিয়োগ দেওয়া হতো। ২০১৮ সালে ছাত্রদের দাবি ছিল সরকারি চাকরিতে ১ম, ২য়, ৩য় ও ৪র্থ শ্রেণি থেকে শুধু মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের। আন্দোলনের প্রেক্ষিতে ১ম ও ২য় শ্রেণির নিয়োগের ক্ষেত্রে সকল কোটা পদ্ধতি বাতিল করে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় পরিপত্র জারি করে। কিন্তু তৃতীয় ও চতুর্থ শ্রেণিতে পূর্বের ন্যায় কোটা পদ্ধতি বহাল থাকে।
বিরোধী দলীয় নেতা জিএম কাদের বলেন, ২০২১ সালে সেই পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের অংশটিকে চ্যালেঞ্জ করে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান উচ্চ আদালতে রিট করে। গত ৫ জুন রিটের রায় প্রকাশ করে আদালত। সেখানে জনপ্রশাসন কর্তৃক পরিপত্রের মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সংরক্ষিত অংশটির বাতিলকে অবৈধ ঘোষণা করেন। ফলে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে চকরি প্রত্যাশি ও সাধারণ শক্ষার্থীরা সরকারের জারি করা সেই পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে পূনরায় মাঠে নামছে। যা নতুন সংকট সৃষ্টি করছে।
পুরান ঢাকার ৩৩নং ওয়ার্ডে মিরনজিল্লাহ হরিজন সুইপার কলোনী উচ্ছেদ প্রচেষ্টার কঠোর সমালোচনা করে জিএম কাদের বলেন, হরিজনদের উচ্ছেদ করতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন থেকে কিছু ঘর-বাড়ি ভেঙে দেওয়া হয়েছে। অন্য বাড়িগুলো ভাঙার সময় বাচ্চারা রাস্তায় শুয়ে পড়েছিল। তখনই তাদের হুমকি দেওয়া হয় পরবর্তীতে আরো ঘর-বাড়ি ভেঙে দেওয়ার হবে। সিটি কর্পোরেশনে যারা চাকরি করে তাদের চাকুরিচ্যুত করা হবে।
তিনি বলেন, এই উচ্ছেদের উদ্দেশ্য হলো, সেখানে মার্কেট করা। বৃটিশ আমল থেকে বসবাসরত এই পরিবার গুলোকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ খুবই অমানবিক। এ মুহুর্তে মার্কেট তৈরির উদ্দেশ্যে অবহেলিত, অসহায়, অস্পৃশ্য পরিবারগুলোকে তাদের বসতবাড়ি থেকে উচ্ছেদ করলে তা শুধু সরকারকে নয়, জাতিকে কলংকিত করবে। তাদেরকে পুনর্বাসন ছাড়া উচ্ছেদ বন্ধ এবং তাদের জীবনমান উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন তিনি।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘রিপোর্ট অন ইন্টারন্যাশনাল রিলিজিয়াস ফ্রিডম’ এর ২০২৩ সালের প্রতিবেদনের তথ্য তুলে ধরে জাপা চেয়ারম্যান বলেন, এখনও সংখ্যালঘুদের উপর নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধ হয়নি। ওই প্রতিবেদনে বাংলাদেশে ধর্মীয় সংখ্যালঘুদের নিপিড়নে ডিজিটাল নিরাপত্তা আইন ব্যবহারে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয়েছে। মুসলিম জনগোষ্ঠির ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাতের অভিযোগে সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠির সদস্যদের ব্যবহার করে হয়রানি করা হচ্ছে। নির্যাতন ও হয়রানি বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের সরকারের প্রতি আহ্বান জানান তিনি।