নির্বাচিত ২২৭ উপজেলা চেয়ারম্যানের কোটি টাকার বেশি সম্পদ: সুজন



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

সুশাসনের জন্য নাগরিক আয়োজিত সংবাদ সম্মেলন

  • Font increase
  • Font Decrease

ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী ৪৭০ জন চেয়ারম্যানের মধ্যে ২২৭ জনের কোটি টাকার বেশি সম্পদ রয়েছে। শতকরা হিসাবে যা ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) জাতীয় প্রেসক্লাবের জহুর হোসেন হলে আয়োজিত ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে বিজয়ী প্রার্থীদের তথ্যের বিশ্লেষণ উপস্থাপন এবং নির্বাচন মূল্যায়ন শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য তুলে ধরে সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন)।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্যে সুজনের কেন্দ্রীয় সমন্বয়কারী দিলীপ কুমার সরকার বলেন, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫টি ধাপে মোট ৪৭০ জন প্রার্থী উপজেলা চেয়ারম্যান হিসেবে নির্বাচিত হন। তাদের মধ্যে ১৫ জনের (৩.১৫ শতাংশ) সম্পদ ৫ লাখ টাকার কম, ৯৭ জনের (২০.৬৪ শতাংশ) সম্পদ ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা, ৫৮ জনের (১২.৩৪ শতাংশ) সম্পদ ২৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা, ৭২ জনের (১৫.৩২ শতাংশ) সম্পদ ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা, ১৫৮ জনের (৩৩.৬২ শতাংশ) সম্পদ ১ কোটি ১ টাকা থেকে ৫ কোটি টাকা এবং ৬৯ জনের (১৪.৬৮ শতাংশ) সম্পদ ৫ কোটি টাকার অধিক। এছাড়া নির্বাচিত ১ জন চেয়ারম্যান (০.২১ শতাংশ) তার সম্পদের ঘর পূরণ করেননি।

তিনি আরও বলেন, স্বল্প সম্পদের মালিক (২৫ লাখ টাকার কম) ৩৮ দশমিক ৫৩ শতাংশ প্রার্থী নির্বাচনে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ২৪ দশমিক ০৪ শতাংশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। এছাড়া অধিক সম্পদের মালিক (২৫ লাখ টাকার বেশি) ৩২ দশমিক ৬০ শতাংশ প্রার্থী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। তাদের মধ্যে ৪৮ দশমিক ৩০ শতাংশ চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন। ভোটের তথ্য বিশ্লেষণ করে দেখা যায়, ভোটাররা স্বল্প সম্পদের মালিকদের তুলনায় অধিক সম্পদের মালিকদের চেয়ারম্যান হিসেবে বেছে নিয়েছেন। পাশাপাশি স্বল্প সম্পদের মালিকদের কিছুটা হলেও বর্জন করেছেন। নির্বাচন বিশ্লেষকরা মনে করেন বাংলাদেশে নির্বাচন দিন দিন টাকার খেলায় পরিণত হচ্ছে।

বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মধ্যে শীর্ষ দশ সম্পদশালীর নামও প্রকাশ করেছে সুজন। এর মধ্যে প্রথম স্থানে রয়েছেন নরসিংদীর শিবপুর উপজেলা চেয়ারম্যান ফেরদৌসী ইসলাম। তার সম্পদের পরিমাণ ১৮৬ কোটি ৭০ লাখ টাকার বেশি। এরপরে যথাক্রমে রয়েছেন পিরোজপুরের ভান্ডারিয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিরাজুল ইসলাম (৮১ কোটি ৯৬ লাখ), কুমিল্লার হোমনা উপজেলার চেয়ারম্যান রেহানা বেগম (৭৩ কোটি ৩৩ লাখ), হবিগঞ্জের মাধবপুর উপজেলার চেয়ারম্যান এস. এফ. এ. এম. শাহজাহান (৪২ কোটি ৫৩ লাখ), চট্টগ্রামের বোয়ালখালী উপজেলা চেয়ারম্যান মো. জাহেদুল হক (৩৭ কোটি ৭০ লাখ), নোয়াখালীর সুবর্ণচর উপজেলা চেয়ারম্যান আতাহার ইসরাক শাবাব চৌধুরী (৩৫ কোটি ৯০ লাখ), ফেনীর ছাগলনাইয়া উপজেলা চেয়ারম্যান মো. মিজানুর রহমান মজুমদার (৩৪ কোটি ৮২ লাখ), শরীয়তপুরের জাজিরা উপজেলার চেয়ারম্যান মো. ইদ্রিস ফিরোজ (৩৩ কোটি ১৬ লাখ), ঝালকাঠির সদর উপজেলার চেয়ারম্যান খান আরিফুর রহমান (২৮ কোটি ৪৪ লাখ), নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জ উপজেলা চেয়ারম্যান মো. হাবিবুর রহমান (২৮ কোটি ৮ লাখ)।

দিলীপ কুমার সরকার বলেন, প্রার্থীদের সম্পদের হিসাবের যে চিত্র উঠে এসেছে, তাকে কোনোভাবেই সম্পদের প্রকৃত চিত্র বলা যাবে না। কেননা, প্রার্থীদের মধ্যে অধিকাংশই প্রতিটি সম্পদের মূল্য উল্লেখ করেন না, বিশেষ করে স্থাবর সম্পদের। আবার উল্লেখিত মূল্য বর্তমান বাজার মূল্য নয়, এটি অর্জনকালীন মূল্য।

নির্বাচিত চেয়ারম্যান ও নির্ভরশীলদের বাৎসরিক আয়ের তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, বিজয়ী সর্বমোট ৪৭০ জন প্রার্থীর মধ্যে ৮ জনের (১.৭০ শতাংশ) প্রার্থীর বার্ষিক আয় ২ লাখ টাকার কম, ১২৪ জনের (২৬.৩৮ শতাংশ) ২ লাখ ১ টাকা থেকে ৫ লাখ টাকা, ২০৪ জনের (৪৩.৪০ শতাংশ) ৫ লাখ ১ টাকা থেকে ২৫ লাখ টাকা, ৫১ জনের (১০.৮৫ শতাংশ) ২৫ লাখ ১ টাকা থেকে ৫০ লাখ টাকা, ৩৬ জনের (৭.৬৬ শতাংশ) ৫০ লাখ ১ টাকা থেকে ১ কোটি টাকা এবং ৪২ জনের (৮.৯৪ শতাংশ) ১ কোটি টাকার অধিক।

সংবাদ সম্মেলনে বিজয়ী প্রার্থীদের দায়-দেনা ও ঋণ সংক্রান্ত তথ্য সম্পর্কে বলা হয়, ৪৭০ জন বিজয়ী প্রার্থীর মধ্যে ১৫৭ জন (৩৩.৪৪ শতাংশ) ঋণ গ্রহীতা। এর মধ্যে কোটি টাকার অধিক ঋণ গ্রহণ করেছেন ৫৭ জন চেয়ারম্যান (৩৬.৩১ শতাংশ)। ঋণ গ্রহীতাদের নির্বাচিত হওয়ার হার প্রতিদন্দ্বিতার তুলনায় বেশি।

নির্বাচিতদের আয়কর প্রদান সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, নির্বাচিত চেয়ারম্যানদের মধ্যে ৩৭৪ জন (৭৯.৫৭ শতাংশ) আয়কর প্রদান করেন। এর মধ্যে ৮৩ জন (১৭.৬৬ শতাংশ) প্রার্থী ৫ হাজার টাকার নিচে কর দেন। লক্ষাধিক টাকার বেশি আয়কর দেন ১৫৮ জন (৩৩.৬২ শতাংশ) চেয়ারম্যান। প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় নির্বাচিতদের মধ্যে আয়কর প্রদানকারীদের হার বেশি।

বিজয়ী চেয়ারম্যানদের মামলা সংক্রান্ত তথ্যে বলা হয়, নির্বাচিত সর্বমোট ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ১১৪ জনের (২৪.২৬%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ১৮২ জনের (৩৮.৭২%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৭৫ জনের (১৫.৯৬%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে। ৩০২ ধারার মামলার ক্ষেত্রে ২৫ জনের (৫.৩২%) বিরুদ্ধে বর্তমানে, ৩৬ জনের (৭.৬৬%) বিরুদ্ধে অতীতে এবং ৪ জনের (০.৮৫%) অতীতে মামলা ছিল এবং বর্তমানেও আছে।

বিজয়ী প্রার্থীদের পেশা সংক্রান্ত তথ্য তুলে ধরে বলা হয়, ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৫টি ধাপে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচিত সর্বমোট ৪৭০ জন বিজয়ী উপজেলা চেয়ারম্যানের মধ্যে ৩৬০ জন (৭৬.৬০%) ব্যবসায়ী, ৪৮ জন (১০.২১%) কৃষিজীবী, ৭ জন (১.৪৯%) চাকরিজীবী এবং ১৯ জন (৪.০৪%) আইনজীবী। এছাড়াও ১ জন (০.২১%) গৃহিনী এবং ২৮ জন (৫.৯৬%) অন্যান্য পেশার সাথে জড়িত। ৭ জন (১.৪৯%) পেশার ঘর পূরণ করেননি। অন্যান্য পেশাজীবীদের মধ্যে ১৫ জন (৩.১৯%) রয়েছেন শিক্ষক।

এ বিষয়ে দিলীপ কুমার সরকার বলেন, বিশ্লেষণে দেখা যায় যে, প্রতিদ্বন্দ্বিতার তুলনায় ব্যবসায়ীদের নির্বাচিত হওয়ার হার বেশি। ষষ্ঠ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে ৬৭.৬৬% ব্যবসায়ী প্রতিদ্বন্দ্বিতা করেছিলেন। নির্বাচিতদের মধ্যে এই হার ৭৬.৬০%। এর অর্থ অন্যান্য পেশার তুলনায় ভোটাররা ব্যবসায়ীদের বেছে নিয়েছেন বেশি। অন্যান্য নির্বাচনের মতো উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতার দৌড়েও ব্যবসায়ীরা এগিয়ে রয়েছেন। এই প্রবণতা ব্যবসায়ীদের সরাসরি নির্বাচনী রাজনীতিতে অধিক হারে সম্পৃক্ত হওয়ার লক্ষণ।

দেশের গণতন্ত্রের প্রাতিষ্ঠানিকীকরণে নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণের কোনো বিকল্প নেই বলে মনে করেন সুজন। এজন্য বেশ কিছু সুপারিশও করে সংস্থাটি।

তাদের সুপারিশগুলো হলো- নির্বাচন ব্যবস্থাকে পরিশুদ্ধকরণ এবং স্থানীয় সরকার ব্যবস্থাকে শক্তিশালীকরণের জন্য প্রয়োজন বড় ধরনের রাজনৈতিক সংস্কার। রাজনৈতিক সংস্কারের জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যমত্য ও সমঝোতা। আর এই সমঝোতার জন্য প্রয়োজন রাজনৈতিক দলসমূহের মধ্যে পারস্পরিক আলোচনা ও সংলাপ। নির্বাচনি ব্যবস্থার সংস্কারের লক্ষ্যে নির্বাচনকালীন সরকারের ভূমিকা নির্ধারণের বিষয়ে ঐক্যমতে আসতে হবে। আনুপাতিক প্রতিনিধিত্বভিত্তিক নির্বাচন ব্যবস্থা প্রবর্তনের বিষয়টি সংস্কারের ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হতে পারে। সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান, সংবিধিবদ্ধ প্রতিষ্ঠান, জনপ্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে দলীয়করণমুক্ত করতে হবে। এই প্রতিষ্ঠানসমূহকে এমনভাবে গড়ে তুলতে হবে যাতে তাঁরা মনে করে, "রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান হিসাবে আমরা জনগণের কাছে দায়বদ্ধ”। সাংবিধানিক আকাঙ্ক্ষার আলোকে আমাদের দেশের স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের আইনসমূহ সংশোধন করতে হবে এবং প্রতিষ্ঠানসমূহকে স্বশাসিত প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তুলতে হবে। একইসাথে স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানসমূহের নির্বাচনগুলো নির্দলীয় ভিত্তিতে সংসদীয় পদ্ধতিতে করতে হবে। উপজেলা পরিষদকে দ্বৈতশাসনমুক্ত করতে হবে এবং উপজেলা পরিষদের নির্বাহী ক্ষমতা চেয়ারম্যানের হাতে ন্যস্ত করতে হবে। উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাগনকে সদস্য সচিব হিসেবে পরিষদের সার্বিক কর্মকাণ্ডের সমন্বয় করবেন। সংসদ সদস্যদের উপজেলা পরিষদের উপদেষ্টার পদ থেকে অব্যাহতি দিতে হবে এবং স্থানীয় সরকারের কর্মকাণ্ডে তাদের হস্তক্ষেপ নিষিদ্ধ করতে হবে। উপজেলা চেয়ারম্যান ও ভাইস চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনে অংশগ্রহণের জন্য জামানতের টাকা আগের মতো দশ হাজার ও পাঁচ হাজার টাকা করতে হবে। জেলা পরিষদ নির্বাচন মৌলিক গণতন্ত্রের আদলে না করে সাধারণ ভোটারদের প্রত্যক্ষ ভোটে আয়োজন করতে হবে। সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের জন্য একটি একীভূত আইন (আমব্রেলা এ্যাক্ট) করতে হবে এবং ব্যয় সংকোচনসহ অনেক ধরনের জটিলতা পরিহারের জন্য একইসাথে সকল স্থানীয় সরকার প্রতিষ্ঠানের নির্বাচনের আয়োজন করতে হবে।

সংবাদ সম্মেলনে সুজনের সম্পাদক বদিউল আলম মজুমদার বলেন, আপনারাও জানেন আমরাও জানি নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যানদের মধ্যে ব্যবসায়ীর মূল সংখ্যাটা আরও বেশি। ব্যবসায়ী হতে পারে তাতে সমস্যা নেই। তবে এখানে টাকার খেলা থাকলে সমস্যা। যদি টাকা দিয়ে মনোনয়ন কিনে ভোট কিনে।

ভোটার উপস্থিতির হার নিয়ে প্রশ্ন তুলে তিনি বলেন, যা দেখানো হয়েছে তা নিয়ে সন্দেহ আছে, প্রশ্ন আছে? তাও সন্তোষজনক না। ৫০ শতাংশ পার হয়নি।

নির্বাচনে ভোটার উপস্থিতি যা বলা হয়েছে তা ছিলো কি না বলে সংশয় প্রকাশ করে তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে ভোটারদের অনীহা ছিল। রাজনৈতিক দলগুলো ভোট বর্জন করছে। এটা একই সুতোয় গাথা। মূল কারণ হলো আস্থাহীনতা। জনগণের আস্থাহীনতা নির্বাচন কমিশনের ওপর।

পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালক ও সুজনের জাতীয় নির্বাহী কমিটির সদস্য অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, কৌশলগত দিক ছিল আওয়ামী লীগের। সেখানে তারা কিছুটা হলেও সাকসেসফুল।

বিরোধীদলের স্থানীয় সরকারের ভোটে অংশ নেওয়া উচিত বলেও মনে করেন তিনি। তার মতে, নির্দলীয় ব্যক্তি হিসেবে এসে তারা নিজের জনপ্রিয়তা যাচাই করে নিতে পারতেন।

এ সময় সুজনের জাতীয় কমিটির সদস্য একরাম হোসেন উপস্থিত ছিলেন।

যুবককে টেনে হিঁচড়ে ১০০ মিটার নিয়ে গেল ট্রাক, প্রতিবাদে সড়ক অবরোধ



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট,বার্তা২৪.কম,লক্ষ্মীপুর
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

লক্ষ্মীপরে বেপরোয়া গতির একটি ট্রাক এক যুবককে অন্তত ১০০ মিটার রাস্তা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে। পরে জনতার ধাওয়ার মুখে ট্রাক রেখে পালিয়ে গেছে চালক। তবে ঘটনার শিকার যুবক আবুল কাশেম প্রাণে বাঁচলেও তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে জানিয়েছেন চিকিৎসক।

এদিকে ঘটনার পর উত্তেজিত জনতা সড়কে গাছের গুড়ি ফেলে, রাস্তায় আগুন জ্বালিয়ে ঘণ্টাব্যাপী বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করে। পরে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনে।

শনিবার (৬ জুলাই) রাত ৯টার দিকে লক্ষ্মীপুর-ভোলা মজু চৌধুরীর হাট সড়কের হাজির হাট এলাকায় এ ঘটনাটি ঘটেছে।

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানায়, গেলো ১ সপ্তাহে লক্ষ্মীপুর-ভোলা মজু চৌধুরীর হাট মহা-সড়কে বেপরোয়া গতির ড্রাম ট্রাকসহ পন্যবাহী ট্রাক চলাচল করে ৫টি দুর্ঘটনা ঘটিয়েছে। সবশেষ শনিবার রাতে ওই সড়কের হাজির হাট এলাকায় রাস্তার পাশে দাঁড়িয়ে ছিল ওই যুবক। হঠাৎ একটি ট্রাক তার গায়ে গেঁসে যাওয়ার সময় গাড়ির চাকায় তার পরনের লুঙ্গী আটকে যায়। এ সময় তাকে অন্তত ১০০ মিটার রাস্তা টেনে হিঁচড়ে নিয়ে গেছে ট্রাকটি। পরে স্থানীয়রা ট্রাকটিকে ধাওয়া দিলে চালক পালিয়ে যায়। এসময় রক্তাক্ত অবস্থায় তাকে মুমুর্ষ অবস্থায় সদর হাসপাতালে নিয়ে যায় স্থানীয়রা। হাসপাতালের কর্তব্যরত চিকিৎসক তার অবস্থা আশঙ্কাজনক বলে ঢাকায় প্রেরণ করে।

এদিকে ওই যুবকের মৃত্যু হয়েছে এমন খবর ছড়িয়ে পড়ে এলাকায়। মুহুর্তেই আন্দোলনে নামেন এলাকাবাসী। তাদের দাবি শুক্রবার মা হোসনেয়ারা বেগম ও ছেলে (শিশু)আশিককে চাপা দেয় একটি ট্রাক। ঘটনাস্থলেই মা মারা গেলেও শিশুটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। এর আগে অপর একটি ট্রাক মোটরসাইকেলকে চাপা দিলে দুই যুবক পঙ্গু হয়ে এখনো হাসপাতালে চিকিৎসাধীন। বেপরোয়া গতি ও হেলপাররা গাড়ি চালানোয় প্রতিনিয়ত একের পর এক দুর্ঘটনা ঘটেই চলেছে। এ প্রতিকারে বিক্ষুব্দ এলাকাবাসী আন্দোলন করেন বলে জানান। পরে সদর থানা পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রনে আনে।

এসময় থানার ওসি সাইফুদ্দিন আনোয়ার ট্রাক চালকদের সঙ্গে বসে বিষয়টি সমাধানের আশ্বাসের প্রেক্ষিতে অবরোধ তুলে নেন বিক্ষুব্ধরা।

সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইফুদ্দিন আনোয়ার বলেন, স্থানীয়দের ৪টি দাবি নিয়ে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের সাথে কথা বলা হবে। তাদের দাবি পূরণের আশ্বাসে অবরোধ তুলে নেয় তারা।

;

প্রসূতিকে হাসপাতালে নেওয়ার পথে ভাঙা সেতুতে সন্তান প্রসব



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
ভাঙা সেতুতে সন্তান প্রসব/ছবি: সংগৃহীত

ভাঙা সেতুতে সন্তান প্রসব/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলায় হাসপাতালে যাওয়ার পথে ভাঙা একটি সেতুর উপর এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন। শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১১টার দিকে উপজেলার শৌলমারী ইউনিয়নের বোয়ালমারী বেড়িবাঁধের রৌমারী-খাটিয়ামারী সড়কের সবুজপাড়া স্লুইসগেট সংলগ্ন বাঁশ ও কাঠের তৈরি একটি ভাঙা সেতুর উপর সন্তান জন্ম দেন ওই নারী।

প্রসূতি মায়ের নাম বিলকিস বেগম। তিনি যাদুরচর ইউনিয়নের যাদুরচর গ্রামের সাইজউদ্দিনের স্ত্রী। তবে তিনি রৌমারী সদর ইউনিয়নের সুতিরপাড় গ্রামে তার বাবার বাড়ি থেকে হাসপাতালে যাচ্ছিলেন।

বিলকিসের ভাই সাফি উদ্দিন ও ভাবি আমিনা বেগম বলেন, সকালে প্রসব বেদনা উঠলে বিলকিসকে নিয়ে ব্যাটরিচালিত ভ্যানযোগে হাসপাতালের উদ্দেশ্যে রওয়ানা হই। কিন্তু ভাঙা সেতুর কাছে গেলে সেখানে ভ্যান পারাপারের উপায় ছিল না। হেঁটে পার হওয়াই ঝুঁকি। বাধ্য হয়ে বেদনায় কাতর বিলকিসকে নিয়ে হেঁটে সেতু পার হতে থাকি। কিন্তু সেতুর মাঝামাঝি স্থানে পৌঁছালে প্রসব বেদনায় আরও অসুস্থ হয়ে শুয়ে পড়ে। সেতুর ওপরেই মেয়ে সন্তানের জন্ম হয়। পরে সন্তান ও মাকে নিয়ে বাড়ি ফিরি। তারা বর্তমানে ভালো আছে।

স্থানীয়রা জানান, বোয়ালমারী বেড়িবাঁধের রৌমারী-খাটিয়ামারী সড়কের সবুজপাড়া স্লুইসগেট সংলগ্ন অংশটি ২০১৪ সালের বন্যায় ভেঙে যায়। উপজেলা হতে মাত্র দেড় কিলোমিটার দূরত্বের এই স্থানটি ভেঙে যাওয়ায় তখন থেকে ১৪ গ্রামের মানুষ নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ থেকে বঞ্চিত। স্থানীয়দের প্রচেষ্টায় নির্মাণ বাঁশ ও কাঠ দিয়ে সেতুটি নির্মাণ করা হয়। পরবর্তীতে সেতুর বিভিন্ন স্থানের কাঠ ভেঙে গেলেও অযত্ন আর কর্তৃপক্ষের অবহেলায় সেতুটি ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়ে। এ অবস্থায় অসুস্থ মানুষ ও শিশুদের জন্য চলাচলের অযোগ্য হয়ে পড়েছে। দীর্ঘদিন ধরে সেতুটি মেরামত ও স্থায়ী ব্রিজ নির্মাণের দাবি জানালেও তা আমলে নেননি কেউ।

;

কুষ্টিয়ায় প্রধান শিক্ষককে মারধর করার অভিযোগ সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কুষ্টিয়ার খোকসায় বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষককে কিল-ঘুষি মেরে আহত করার অভিযোগ উঠেছে সহকারী শিক্ষকের বিরুদ্ধে।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে খোকসা উপজেলার ওসমানপুর মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ঘটনা ঘটে।

আহত প্রধান শিক্ষকের নাম মতিয়ার রহমান। তিনি দেবীনগর গ্রামের মৃত আব্দুল মোতালেবের ছেলে। তিনি বর্তমানে খোকসা উপজেলা হাসপাতালের পুরুষ ওয়ার্ডের ১৩ নং বেডে চিকিৎসা নিচ্ছেন।

মতিয়ার বলেন, স্কুলের ষান্মাসিক পরীক্ষা শেষে মোটরসাইকেল নিয়ে বের হচ্ছিলাম। এ সময় সহকারী শিক্ষক আনোয়ার হোসেন লিটন বলেন, বেতন না দিয়ে যেতে পারবেন না। সে সময় তিনি কিল-ঘুষি মেরে আহত করে।

প্রধান শিক্ষক মতিয়ার আরো বলেন, নাশকতার মামলায় শিক্ষক আনোয়ার হোসেন লিটন গত নভেম্বরের ৭ তারিখ থেকে আড়াই মাস কারাগারে ছিলেন। স্কুল পরিচালনা কমিটি তার চাকরি পুনর্বহাল করলেও ওই আড়াই মাসের বেতন আটকে রাখতে বলেছেন। বলা হয়েছে মামলায় নির্দোষ প্রমাণ হলেই তিনি ওই বেতন পাবেন।

এ ব্যাপারে অভিযুক্ত শিক্ষক আনোয়ার হোসেন লিটন হামলার ঘটনার কথা অস্বীকার করেন।

কুষ্টিয়ার অতিরিক্ত পুলিশ সুপার পলাশ কান্তি নাথ বলেন, বেতন নিয়ে শিক্ষকদের মধ্যে হাতাহাতির ঘটনা শুনেছি। পুলিশ তদন্ত করছে, আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে।

;

গৃহবধুর গোসলের ভিডিও ধারণের অভিযোগে পুলিশ কনস্টেবলকে গণধোলাই



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, গাইবান্ধা
ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গাইবান্ধায় মোবাইলে গৃহবধূর গোসলের ভিডিও ধারণের অভিযোগে মো. শাহ আলম (পুলিশ আইডি নম্বর-বিপি ৮৩০২০৮২৫৭১) নামের এক পুলিশ কনস্টেবলকে গণধোলাই দিয়েছে স্থানীয় জনতা। ছাদ খোলা একটি বাথরুমে ওপর দিয়ে গৃহবধূর গোসলের ভিডিও ধারণ করছিলেন এই পুলিশ সদস্য।

শনিবার (৬ জুলাই) বিকেলে গাইবান্ধা পৌর শহরের দক্ষিণ ধানগড়া এলাকায় এই ঘটনা ঘটে। অভিযুক্ত ওই পুলিশ সদস্য গাইবান্ধা পুলিশ লাইনসে কর্মরত আছেন। প্রাথমিকভাবে তার বাড়ি লালমনিরহিট জেলার বানভাসা গ্রামে বলে জানা গেছে।

স্থানীয়রা জানান, শনিবার বিকেলের দিকে দক্ষিণ ধানগড়া এলাকায় ছাদ খোলা একটি বাথরুমে গোসল করছিলেন এক গৃহবধূ। এ সময় ছাদের উপর দিয়ে মোবাইলে ভিডিও করছিলেন ওই ব্যক্তি। এ সময় স্থানীয় এক লোক বিষয়টি দেখতে পেয়ে চিৎকার করলে এলাকার লোকজন তাকে আটক করে। তিনি পালানোর চেষ্টা করলে স্থানীয়রা তাকে গণধোলাই দেয়। এর এক পর্যায়ে ওই লোক নিজে পুলিশ দাবি করে পরিচয় দেয় এবং থানায় ফোন করলে সদর থানা পুলিশ এসে তাকে উদ্ধার করে নিয়ে যায়।

এদিকে এই ঘটনার পর বিষয়টি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমের একাধিক আইডি থেকে পোস্ট হয়। ফেসবুকে ওইসব পোস্টে দেখা হয়, গণধোলাইয়ের পর খালি শরীরে মাটিতে বসে আছেন অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য শাহ আলম। তার চারপাশের ক্ষিপ্ত জনতা তাকে ঘিরে ধরে রয়েছেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে গাইবান্ধা সদর থানার এক এসআই বলেন, সিভিল পোশাকে ওই পুলিশ সদস্য এই ঘটনা ঘটায়। এ সময় স্থানীয়রা হাতে-নাতে আটক করে তাকে গণধোলাই দেয়। পরে সে নিজেকে পুলিশ বলে পরিচয় দিলে স্থানীয়রা আরো ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। পরে ওই পুলিশ সদস্য নিজেই অসুস্থ্য জানিয়ে থানায় ফোন দিলে সদর থানা পুলিশ তাকে উদ্ধার করে থানায় নিয়ে আসে।

এ বিষয়ে সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি তদন্ত) সেরাজুল ইসলাম মোবাইল ফোনে বার্তা২৪ বলেন, 'পুলিশ পরিচয়ে নিজেকে অসুস্থ্য জানিয়ে ফোন করলে আমরা তাকে ওই এলাকা থানায় নিয়ে আসি। তিনি পুলিশ কনস্টেবল নিশ্চিত হওয়া গেছে। ওই ঘটনায় তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হচ্ছে।

এ ব্যাপারে গাইবান্ধার সহকারী পুলিশ সুপার (বি সার্কেল) আব্দুল্লাহ আল মামুন মোবাইল ফোনে বার্তা২৪.কমকে বলেন, ঘটনাটি শুনেছি। অভিযোগ পেলে তদন্ত করা হবে। তদন্তে সত্যতা পাওয়া গেলে তার বিরুদ্ধে শক্ত ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

;