মৃত্যুর আগেই চল্লিশা, ৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে খাওয়ালেন মারফত আলী



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম, ময়মনসিংহ
বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০)/ছবি: সংগৃহীত

বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০)/ছবি: সংগৃহীত

  • Font increase
  • Font Decrease

গ্রাম-বাংলার রীতি অনুযায়ী কেউ মারা গেলে চল্লিশ দিন পরে চল্লিশা মেজবানীর আয়োজন করে জানাজায় শরীক হওয়া মুসল্লি, দরিদ্র অসহায় ও আত্মীয়-স্বজনদের দাওয়াত করে খাওয়ার ব্যবস্থা করে। এতে মৃত ব্যক্তির আত্মা শান্তি পায় বলে জনশ্রুতি আছে। কিন্তু এর ব্যতিক্রম ঘটেছে ময়মনসিংহের ঈশ্বরগঞ্জ উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর ইউনিয়নে। ওই গ্রামের বৃদ্ধ মারফত আলী (৭০) জীবিত অবস্থাতেই গ্রামবাসী ও আত্মীয় স্বজনদের দাওয়াত করে চল্লিশার আয়োজন করেন। এমন ঘটনায় এলাকায় ব্যাপক চাঞ্চল্যের সৃষ্টি হয়েছে।

বৃহস্পতিবার (৩ জুলাই) বিকেলে বড়হিত ইউনিয়ন পরিষদের ৮নং ওয়ার্ডের ইউপি সদস্য আব্দুস সালাম বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন। মারফত আলী ওই এলাকার মৃত উসন আলীর ছেলে।

এর আগে গত সোমবার (১ জুলাই) উপজেলার বড়হিত ইউনিয়নের রাজেন্দ্রপুর গ্রামে বৃদ্ধ মারফত আলী মারা যাওয়ার আগেই অগ্রিম চল্লিশার আয়োজন করে প্রায় ৫ শতাধিক গ্রামবাসীকে গরু-খাসি ছাড়াও পায়েশ খাইয়েছেন।

স্থানীয়রা জানায়, মারফত আলী দুই বিয়ে করে বেশ সুখেই দিন কাটাচ্ছেন। দুই সংসারে রয়েছে ৩ মেয়ে ও ৬ ছেলে। এলাকায় বিত্তশালী কৃষক হিসাবে ব্যাপক পরিচিত তিনি। মেয়েদের বিয়ে দিয়েছেন। ছেলেরা কেউ বিয়ে করে আলাদা আবার কেউবা লেখাপড়া করছেন।

যার যার মতোই ব্যস্ত থাকে। এ অবস্থায় মারফত আলী চিন্তাভাবনা করছেন নিজের জমিজমা ভাগ বাটোয়ারা করে দিয়ে দেবেন। এরপর অপেক্ষা পরপারে চলে যাওয়ার। এর মধ্যে মাথায় আসে তিনি মারা গেলে সন্তানরা যদি চল্লিশা না করে। এই জন্য তিনি নিজ সিদ্ধান্ত নিজের চল্লিশা জীবিত অবস্থাতেই করে যেতে মনস্থির করেন।

 মারফত আলীর দাওয়াতে এসেছেন গ্রামবাসী।

পরে ঘটনাটি নিয়ে পরিবারের সঙ্গে কথা বললে তাদের সম্মতিতেই আয়োজন করেন মেজবানি বা চল্লিশার। এই জন্য তিনি বেশ কয়েকদিন সময় নিয়ে গত এক সপ্তাহ ধরে লোকজনকে দাওয়াত দেন। গত সোমবার দুপুরের পর থেকেই বাড়ির ভেতরে ডেকোরেটর দিয়ে ত্রিফল টানিয়ে বাবুর্চি দিয়ে রান্না-বান্না করে খাওয়ানো হয় কমপক্ষে ৫ শতাধিক নারী-পুরুষকে।

মারফত আলী জানান, বর্তমানে শারীরিকভাবে দুর্বল হয়ে পড়ছেন। নামাজ ছাড়া এখন তেমন কোনো কাজকর্ম করেন না। চল্লিশার জন্য এক লাখ ২০ হাজার টাকা মূল্যের একটি গরু, ২০ হাজার টাকার খাসি, মুরগি ছাড়াও রয়েছে পায়েশ। পায়ে হেঁটে গ্রামের সব বাড়িতে গিয়ে দাওয়াত দিয়েছি। আমার আমন্ত্রণে সাড়া দিয়ে সবাই চল্লিশায় অংশগ্রহণ করেছে। এখন আমি মরেও শান্তি পাব।

দাওয়াত খেতে আসা আব্দুল কদ্দুস বলেন, এই রকম দাওয়াতে তারা অনেক দিন পর গেছেন। তবে, জীবিত ব্যক্তি নিজের চল্লিশার আয়োজন করেছেন তা ব্যতিক্রম ঘটনা। তৃপ্তি সহকারে আমরা খেয়েছি।

রশীদ মিয়া নামে একজন বলেন, আগত সবার জন্য তৃপ্তি সহকারে খাওয়ার ব্যবস্থা করেছেন মারফত আলী। আল্লাহ তার মনভাসনা পুর্ণ করুক।

মারফত আলীর ছেলে সুজন বলেন, বাবার ইচ্ছা তিনি জীবিত থেকেই এই মেজবানী বা চল্লিশা করবেন। তাই আমাদেরও সম্মতি ছিল।

মেয়ে রেনুয়ারা বলেন, বাবার একটা সন্দেহ দূর করতেই এই আয়োজনে সবার সম্মতি ছিল। এতে তাদেরও ভালো লাগছে।

মারফত আলী জানান, মহান আল্লাহ তাআলা আমাকে অনেক সুখে শান্তিতে রেখেছেন। মালিক আমাকে যে পরিমাণ ধনসম্পদ দিয়েছেন তাতে আমি সন্তুষ্ট। আমার দুই সংসারে ছয় সন্তান রয়েছে। কিন্তু আমার মৃত্যুর পর সন্তানেরা যে গ্রামের মানুষকে দাওয়াত দিয়ে খাওয়াবে তার কোনো নিশ্চয়তা আছে? তাই আমি জীবিত থাকতে এই আয়োজন করেছি।

স্থানীয় মসজিদের ইমাম মওলানা আবুল কাশেম জানান, মারা যাওয়ার পর চল্লিশার আয়োজন এভাবে করার কোনো নিয়ম নেই। গরিব ও অসহায়দের আপ্যায়ন করা যেতে পারে। কিন্তু জীবিত থেকে ব্যাপক দাওয়াত দিয়ে যে কাণ্ড মারফত আলী করেছেন তা সম্পূর্ণ ইসলাম পরিপন্থী।

ভাড়া দিতে না পারায় অসহায় দম্পতির আশ্রয় শশ্মানঘাটে!



ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, মেহেরপুর
ভিটেমাটিহীন সিরাজুল ইসলাম চা বিক্রি করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন।  ছবি: বার্তা ২৪

ভিটেমাটিহীন সিরাজুল ইসলাম চা বিক্রি করে কোনমতে জীবিকা নির্বাহ করছেন। ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

সময়মত ঘর ভাড়া দিতে না পারায় বাড়ি থেকে বের করে দেয়ায় অবশেষে শশ্মানঘাটে আশ্রয় নিয়েছেন এক দম্পতি। মেহেরপুর সদর উপজেলার জুগিন্দা গ্রামের বাসিন্দা সিরাজুল ইসলাম ও তার স্ত্রী গাংনীর ছেউটিয়া নদীর পাশে শশ্মানঘাটে তালের পাতা আর পাটকাঠি দিয়ে ঘর তৈরি করে বসত করছেন। তবে চলমান প্রক্রিয়ায় এ দম্পতিকে ঘর দেয়ার আশ্বাস দিয়েছেন উপজেলা প্রশাসন। 

জানা গেছে, সিরাজুল ইসলামের ভিটেমাটি বা অন্য কোন সহায় সম্পদ নেই। কখনও ভাঙ্গারির ব্যবসা আবার কখনও ফেরি করে মালামাল বিক্রি জীবিকা নির্বাহ করেন। বসত করতেন গ্রামের একজনের ভাড়া বাড়িতে। ফেরি করে যা আয় করতেন তা দিয়ে সংসার চালানোর পাশাপাশি ঘর ভাড়া দেওয়া ছিল বেশ কষ্টসাধ্য। সময়মত পরিশোধ করতে পারতেন না ভাড়ার টাকা। ভাড়া পরিশোধ না করায় চলতি মাসে তাদেরকে নামিয়ে দেয় বাড়ি থেকে। কোথাও কোন আশ্রয় না পেয়ে শেষ পর্যন্ত শশ্মানঘাটের পাশে আশ্রয় নেয় এই অসহায় এ দম্পতি।

এই ঝুপড়ি ঘরেই দিন পার করছেন অসহায় দম্পতি। ছবি: বার্তা ২৪

আশেপাশের মানুষের কাছ থেকে বাঁশ, তালের পাতা, পাটকাঠি চেয়ে নিয়ে তৈরি করেন ঝুপড়ি ঘর। সেখানে বসবাস করছেন তারা। স্থানীয়দের সহায়তায় চায়ের দোকান দিয়ে কোনমতে দুবেলা মুঠো ভাতের জোগাড়ে যুদ্ধ করছেন এই অসহায় দম্পতি।

সিরাজুল ইসলাম জানান, তিনি ভূমিহীন সেই সাথে শারিরীক প্রতিবন্ধী। তারপরও জীবিকার তাগিদে বিভিন্ন স্থান থেকে বোতল কুড়িয়ে ও ভাঙ্গারির ব্যবসা করে কোনমতে দুমুঠো ভাতের ব্যবস্থা করতেন। স্ত্রীকে নিয়ে বসবাসের জন্য গ্রামের একজনের বাড়িতে ভাড়া থাকতেন। বাড়ি ভাড়া পরিশোধ না করায় তাদেরকে তাড়িয়ে দেয়া হয়। তাই বসবাসের জন্য সরকারি শশ্মানঘাট বেছে নিয়েছেন তিনি।

আশেপাশের লোকজন সিরাজুল দম্পতিকে আপন করে নিয়েছেন। অর্থনৈতিক বিপ্লবের এই যুগে মানুষের আর্থিক সক্ষমতা বৃদ্ধি পাচ্ছে নানাভাবে। এর মধ্যেও সিরাজুল ইসলামের মত অসহায় দম্পতি এখনও রয়েছেন। সরকারি কিংবা ব্যক্তি পর্যায়ের সহযোগিতাই পারে এসব পরিবারের মুখে হাসি ফোটাতে। তাই শশ্মানঘাটের পাশের এই সরকারি জায়গায় সিরাজুল দম্পত্তির জন্য ঘর তৈরি করে দেওয়ার আবেদন স্থানীয়দের।

পর্যায়ক্রমে সব ভূমিহীন পরিবারই পাবে সরকারি আশ্রয়ণ প্রকল্পের জায়গাসহ পাকাবাড়ি। আবেদন করে থাকলে চলমান প্রকল্পের মাধ্যমেও সিরাজুল ইসলামকে ঘর দেওয়া হবে বলে জানালেন সদর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা কাজী নাজিব হাসান।

;

ভয়ংকর ভাড়াটিয়া, বাসা ছাড়তে বলায় ধর্ষণ মামলায় কারাগারে বাড়ির মালিক



আল-আমিন রাজু ও রাকিব হাসান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
গ্রাফিক্স, বার্তা২৪.কম

গ্রাফিক্স, বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

ইট পাথরের রাজধানীতে জীবিকার প্রয়োজনে দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে সাময়িক বসতি গড়েন কর্মজীবীরা। অস্থায়ী বসবাসে সবারই ভরসা ভাড়া বাসা। সাধারণত বাড়ির মালিকদের বিভিন্ন অজুহাতে ভাড়া বৃদ্ধিসহ নানা অনিয়মের জালে আটকে যান ভাড়াটিয়ারা। তবু কর্মের কারণে মুখ বুজে সহ্য করে যান তারা। কিন্তু এবার উল্টো ঘটনা ঘটেছে রাজধানীর পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকায়। কয়েক মাস ধরে ভাড়া না পেয়ে বাসা ছেড়ে দিতে বলায় ধর্ষণ মামলা ঠুকে দিলেন ভাড়াটিয়া। সেই মামলায় গ্রেফতার হয়ে দুই মাস ধরে জেল খাটছেন ভবন মালিক।

ভুক্তভোগী ভবন মালিকের নাম মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। তিনি পুরান ঢাকার চকবাজার থানার পোস্তা এলাকার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের আ. সালামের ছেলে।

ভুক্তভোগীর পরিবারের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, চকবাজার থানার পোস্তার ওয়াটার ওয়ার্কস রোডের ৭৬/২ নম্বর বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব। সাত তলা ভবনের ছয় তলার একটি ফ্ল্যাটে ১২ হাজার টাকা ভাড়ায় বসবাসের চুক্তি করেন জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি নামের এক নারী। দুই বছর বসবাসের পর ২০২৩ সালের জানুয়ারি মাসে তিনি বাড়ির মালিকের সঙ্গে ১২ হাজার টাকা ভাড়ার নতুন একটি চুক্তিপত্র স্বাক্ষর করেন। নতুন চুক্তির পর প্রতি মাসে ১১ হাজার ২০০ টাকা করে প্রথম সাত মাস ভাড়া পরিশোধ করেন। পরবর্তী সাত মাস কখনো ১০ হাজার আবার কখনো ১১ হাজার করে অনিয়মিত ভাবে ভাড়া পরিশোধ করেন। কিন্তু চলতি বছরের মার্চ মাস থেকে ভাড়া দেওয়া বন্ধ করে দেন।

ভাড়া না পেয়ে একাধিকবার বাড়ির মালিক মোস্তফা নাজমুল হাসান সজিব ভাড়া পরিশোধ ও বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দেন। পাওনা টাকা পরিশোধ করে বাসা ছাড়ার জন্য ২ মাস সময় চান ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানি। এই সময় পেরিয়ে গেলে বাসা না ছেড়ে উল্টো বাড়ির মালিককে নানাভাবে হুমকি দিতে থাকেন। যার সর্বশেষ শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলার করে বসেন এ্যানি। যদিও এখন মোটা অংকের টাকার বিনিময়ে আপস করতে নিজেই ভুক্তভোগীদের চাপ প্রয়োগ করে চলছেন মামলার বাদী।

ছেলেকে নির্দোষ দাবি করে ভবন মালিক সজিবের মা আসগড়ি বেগম বার্তা২৪.কমকে বলেন, ভাড়াটিয়া কয়েক মাস ধরে ভাড়া দেয় না। চুক্তি অনুযায়ী আমরা তাকে বাসা ছেড়ে দেওয়ার নোটিশ দিয়েছি। এখন সে উল্টো আমার ছেলের নামে মিথ্যা শিশু নির্যাতন ও ধর্ষণ মামলা করেছে। এমনকি এই ধর্ষণ মামলায় আমার ছেলের দুই বউ ও বাসার নিরাপত্তাকর্মীকেও আসামি করেছে। এই মামলা কীভাবে পুলিশ নিলো, তারা কি কিছুই বোঝে না?

তিনি আরও বলেন, আমার ছেলে পেশায় ব্যবসায়ী। তার দুই স্ত্রী। তারা এক সঙ্গে একই বাসায় আমার কাছে থাকে। দুই বউকে নিয়ে আমরা অত্যন্ত সুখী পরিবার। আসল সমস্যা হলো আমার ছেলের কোনো সন্তান নেই। সে (বাদী) ভেবেছে ওই ভবন দখল করে মিথ্যা মামলা দিয়ে হাতিয়ে নেবে। কিন্তু সে তো জানে না, এই ভবনের আসল মালিক আমার ছেলে না। ভবনের মালিকানা আমার দুই ছেলে বউ ও আমার। আপসের নামে ২০ লাখ টাকা দাবি করছে। আমার বাসা এসেও হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমার ছেলেকে বাঁচান, আমার ছেলেটা অসুস্থ।

গত ৫ জুলাই বিকেলে নিজ বাসায় কথা হয় জেলে থাকা সজিবের দুই স্ত্রী সাদিয়া আফরিন মুক্তা ও শায়লার সঙ্গে। তারা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমার স্বামীকে ফাঁসিয়ে বাড়ি দখলের পায়তারা করছে। বাড়ি শাশুড়ি ও আমাদের দুজনের নামে। এটা জানার পরে প্রতিদিন নানা ধরনের হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। আমরা নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। এমনকি ওই মহিলা কারাগারে গিয়েও আমার স্বামীকে হত্যার হুমকি দিয়ে আসছে।

মামলা ও হুমকির বিষয়ে জানতে চকবাজার থানার পোস্তা এলাকায় ওয়াটার রোডের সজিবের ভবনের ভাড়াটিয়া জান্নাতুল ফেরদৌস এ্যানির বাসায় যান এই প্রতিবেদক। সাংবাদিকের উপস্থিতি টের পেয়ে দরজা বন্ধ করে বাসার ভেতরে অবস্থান নেন এ্যানি। তার মেজো ছেলে সানাফ দরজার ভেতর থেকে জানান, তার মা বলেছে গেট খোলা যাবে না। তার মা কথা বলতে রাজি না। পরবর্তীতে মোবাইল ফোনে একাধিকবার যোগাযোগের চেষ্টা করা হলে এ্যানির দুটি মোবাইল নম্বর বন্ধ পাওয়া যায়।

ভুক্তভোগী পরিবারের দাবি মিথ্যা মামলা ও ভাড়াটিয়া উচ্ছেদের বিষয়ে জানতে চাইলে চকবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী শাহিদুজ্জামান বলেন, মামলার তদন্ত চলমান। সত্য না মিথ্যা সেটি তদন্তে প্রমাণ হবে। মামলাটি এখন আমরা তদন্ত করছি না। এটি ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টার তদন্ত করছে। আর ভাড়াটিয়া আমরা নামাতে পারি না।

মামলা তদন্তের অগ্রগতির বিষয়ে জানতে চাইলে ভিক্টিম সাপোর্ট সেন্টারের উপ-পরিদর্শক (এসআই) খোদেজা খানম বার্তা২৪.কমকে বলেন, মামলার তদন্ত চলমান, এখন কিছু বলতে চাচ্ছি না।

মামলায় বাদীর অভিযোগের সত্যতার বিষয়ে জানতে চাইলে, আমরা আলামত সংগ্রহ করেছি। ফরেনসিক করতে দেওয়া হয়েছে। রিপোর্ট হাতে পাইনি। আমরা এখনো কোনো সিদ্ধান্তে পৌঁছাতে পারিনি।

;

রংপুরে সাড়া ফেলেছে ২ টাকা ভাড়ায় স্কুটি



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
রংপুরে সাড়া ফেলেছে ২ টাকা ভাড়ায় স্কুটি

রংপুরে সাড়া ফেলেছে ২ টাকা ভাড়ায় স্কুটি

  • Font increase
  • Font Decrease

রংপুরে এই প্রথম নতুন চমকে ব্যতিক্রম উদ্যোগে ২ টাকা মিনিটে মিলছে স্কুটি ভাড়া। ব্যাটারিচালিত যাতায়াতের ব্যতিক্রম মাধ্যম এটি। রংপুর নগরীতে রিকশা ও ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাই মানুষের দৈনন্দিন জীবনযাত্রার একমাত্র আস্থা। তবে এবার যান্ত্রিক শহরে যোগাযোগ ব্যবস্থাকে আরও সহজ করতে চালু হয়েছে বাইক শেয়ারিং সার্ভিস স্কুটি।

নগরীর বীকন মোড়ে ছোট্ট একটি দোকানে ৮টি স্কুটি নিয়ে যাত্রা শুরু হয়েছে স্কুটি লিমিটেডের। এতে নিরাপদে জরুরি কাজে যেতে বেশি উপকৃত হচ্ছেন শিক্ষার্থীরা।

লায়ন্স স্কুল এন্ড কলেজের সামিউল আলম সামি নামের এক শিক্ষার্থী বলেন, 'প্রতিদিন রিকশাভাড়ায় অনেক টাকা খরচ হয়ে যায়। ২ টাকা মিনিটে স্কুটি চালিয়ে এখন খুব সুবিধা, টাকা সাশ্রয় হচ্ছে। তবে স্কুটি কম থাকায় ঘুরে যেতে হয় মাঝে মাঝে। আরও স্কুটি থাকলে আমাদের জন্য খুব উপকার হতো।'

শহরের বুকে মিনিট হিসেব করে মনের আনন্দে ঘুড়ে বেড়াচ্ছেন যাত্রীরা। হেলমেট মাথায় দিয়ে যেন কালো ও হলুদ রংয়ে নজর কাড়ছে স্কুটিগুলো। শুধু একা নয়, ছোট্ট এই স্কুটিটে সঙ্গী নেয়ারও সিট রয়েছে। স্কুটি ভাড়া নিতে মানতে হচ্ছে নানাবিধ শর্তাবলী। তবেই সর্বনিম্ন ১ ঘণ্টা থেকে সর্বোচ্চ ২ ঘণ্টায় মিলছে স্কুটি। ভাড়ায় সাশ্রয় হচ্ছে যাত্রীদের।


বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ইসমাইল হোসেন বলেন, 'মিনিট প্রতি ২টাকায় স্কুটি সেবা চালু করে খুব ভালো হয়েছে। বিশেষ করে আমাদের জন্য। তবে সুবিধার পাশাপাশি অসুবিধা হচ্ছে। কারণ রংপুর এখন যানজটের শহর। তাই মিনিটের পর মিনিট যানজটে থেকে টাকা নষ্ট হচ্ছে। তাই মিনিট প্রতি ২ টাকা না করে যদি কিলো সিস্টেম করা হতো খুব উপকার হতো।'

প্রতিদিন সকাল ১০টা থেকে রাত ৮টা পর্যন্ত ভাড়ায় স্কুটি নিতে পাচ্ছেন আগ্রহীরা। প্রাথমিকভাবে এ স্কুটি চালানোর ভাড়া নির্ধারণ করা হয়েছে মিনিটে ২ টাকা। আর ইতিমধ্যেই এই স্কুটি সারা ফেলেছে সব বয়সীদের মাঝে।

ঘণ্টা চুক্তিতে স্কুটি ভাড়া নেওয়ার জন্য যাত্রীদের প্রথমেই নির্ধারিত ফরমে প্রয়োজনীয় তথ্য দিয়ে রেজিস্ট্রেশন করতে হচ্ছে ২০ টাকা মূল্যে। নতুন অবস্থায় বেশ সাড়া মিলছে। দৈনিক ২৫ জনের বেশি যাত্রী আসে। নতুন অবস্থায় অনেকেই ঘুরে যায়। আরও সাড়া পেলে স্কুটি বাড়িয়ে বেশ কয়েকটি পয়েন্ট চালুর করার প্রত্যাশা জানান কর্তৃপক্ষ।

শর্তাবলীর অন্যতম নিষেধাজ্ঞায় রয়েছে নগরীর বাহিরে যাওয়ার চেষ্টা করলে জরিমানা গুনতে হবে ১ হাজার টাকা ৷ বিশেষ করে অ্যাপসের মাধ্যমে এই স্কুটির অবস্থান জানা ও কন্ট্রোল করা যায় ।

আধুনিকতার ছোঁয়ায় এটি তৈরি করা হয়েছে অত্যাধুনিকভাবে। যা গতিতে প্রতি ঘণ্টায় ছুটতে পারে সর্বোচ্চ ৩৫-৪০ কিলোমিটার। একবার চার্জ দিলেই চলবে ৭০ কিলোমিটার। মিনিট প্রতি ২ টাকায় বেশ প্রসংশা কুড়াচ্ছে এই স্কুটি উদ্যোগটি।

;

ভাঙন রোধে নিজেদের অর্থেই বস্তা ফেলছেন স্থানীয়রা



সোহেল মিয়া, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজবাড়ী
নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নারী, পুরুষ, শিশু একসাথে নদীতে বস্তা ফেলার কাজ করছে। ছবি: বার্তা ২৪

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে নারী, পুরুষ, শিশু একসাথে নদীতে বস্তা ফেলার কাজ করছে। ছবি: বার্তা ২৪

  • Font increase
  • Font Decrease

নদী ভাঙন থেকে রক্ষা পেতে কোন উপায়ন্তর না পেয়ে নিজেদের অর্থ দিয়ে নিজেরাই বালু ভর্তি প্লাস্টিকের বস্তা ফেলছেন নদী ভাঙনের শিকার রাজবাড়ীর গোয়ালন্দের দৌলতদিয়া ৬নং ফেরি ঘাট সংলগ্ন সাত্তার মেম্বার পাড়ার বাসিন্দারা।

৬ নম্বর ঘাটে ভাঙন কবলিত ভুক্তভোগী নারী, পুরুষ ও শিশুরা বালু মাথায় করে নিয়ে নদীর পাশে প্লাষ্টিকের পাতলা বস্তায় ভরে তারা ভাঙনরোধে কাজ করছেন। এসময় তারা বিভিন্ন ক্ষোভ প্রকাশ করেন।

সাত্তার মেম্বার পাড়ায় ভাঙন স্থানে দাঁড়িয়ে ষাটোর্ধ্ব মো. ছিদ্দিক পাল ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'সরকারি লোকজন তো কোনো ব্যবস্থাই নিলোই না, এহন আমরা নিজেরাই বালু ও প্লাষ্টিকের বস্তা কিনে তাতে বালু ভরে ভাঙন স্থানে ফেলতেছি। মনের শান্তি মেটাতেই এ কাজ করছি। তাছাড়া তো আমাগেরে আর কোন উপায় নাই।'

তিনি আরও বলেন, 'ভাঙন ঠেকাতে আমরা বস্তা ফেলেতেছি না, খালি নদীর ঢেউ যেন একটু কম লাগে সেজন্য আমরা ভাঙন কবলিত স্থানে এলাকাবাসীরা মিলে আপাতত আড়াই'শ বস্থা ফেলছি। আমরা সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করছি।'

এসময় ৬ নম্বর ঘাটের মুদি দোকানদার বারেক মৃধা বলেন, 'গত এক সপ্তাহে প্রায় ৫০ মিটারের উপরে বসতভিটা নদীগর্ভে গেছে। সরকারি কর্মকর্তারা যদি আগেই কিছু জিও ব্যাগ ফেলতো তাহলে আজ আমার দোকানডা ভাঙনের কবলে পড়তো না। সব আমাদের কপাল, কি আর বলবো। এজন্য নিজেরাই টাকা দিয়ে পাতলা বস্তায় বালু ভরে ফেলতেছি।'

ভুক্তভোগী সরোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, 'চেয়ারম্যান, মেম্বারা শুধু ভোটের সময় এসে প্রতিশ্রুতি দেয়, আর কোন খবর থাহেনা। এবার ভাঙন দেহার জন সবাই আসতেছে কিন্তু কোন পদক্ষেপ নাই।'

ভুক্তভোগী আমেনা বেগম কান্নাজড়িত কণ্ঠে বলেন, 'পরিবারের পাঁচ সদস্য নিয়ে সুখেই ছিলাম। কিন্তু নদী আমার স্বপ্ন নিয়ে গেছে। সরকার শুকনো সময় কুনু বস্তা ফেলেনা, বন্যা আসলি সব ভেঙে গাঙ্গে নিয়ে যায়। আমার ঘর পর্যন্ত ভাঙ্গা চলি আইছে। এহন কই যাই, কি করমু চিন্তায় পড়ছি।'

বিআইডব্লিউটিএর নির্বাহী প্রকৌশলী নেপাল চন্দ্র দেবনাথ বলেন, 'দৌলতদিয়ায় যে ৭টি ঘাট রয়েছে তার আশেপাশে ভাঙন দেখা দিলে সেটা আমরা জিওব্যাগ দিয়ে রক্ষা করতে চেষ্টা করি। তাছাড়া প্রতিবছরে তীব্র ভাঙনে রক্ষা করতে পানি উন্নয়ন বোর্ড কাজ করে থাকে। ঘাট রক্ষায় যে কাজগুলো লাগবে সেটাই বিআইডব্লিউটিএ করে থাকে। আমরা ঘাট এলাকা পরিদর্শন করে এসেছি। ভাঙন কবলিত স্থান, ঘাট রক্ষার জন্য কিছু করতে হলে আমরা তা করব।'

গোয়ালন্দ উপজেলা নির্বাহী অফিসার জ্যোতি বিকাশ চন্দ্র বলেন, '৬ নম্বর ঘাটের সাত্তার মেম্বার পাড়া যে ভাঙন দেখা দিয়েছে সেটার ব্যাপারে আমি ইতিমধ্যে জেলা প্রশাসক মহোদয়কে জানিয়েছি। এ ব্যাপারে ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ দ্রুত ব্যবস্থা নেবে।’

;