সাংবাদিককে 'হাড্ডি' ভেঙে ফেলার হুমকি, সাবেক এমপির বিরুদ্ধে মামলা

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম,চট্টগ্রাম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: সংগৃহীত

ছবি: সংগৃহীত

চট্টগ্রামের সাবেক সাংসদ ও বাঁশখালী উপজেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বিরুদ্ধে হাড্ডি ভেঙে ফেলার হুমকির অভিযোগে মামলা দায়ের করেছেন স্থানীয় এক সাংবাদিক।

বৃহস্পতিবার (৪ জুলাই) বাঁশখালীর জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আবদুল হামিদের আদালতে মামলাটি করেন বাঁশখালী প্রেসক্লাবের সভাপতি শফকত হোসাইন চাটগামী। তিনি স্থানীয় দৈনিক বীর চট্টগ্রাম মঞ্চের বাঁশখালী উপজেলা প্রতিনিধি।

বিজ্ঞাপন

আদালত অভিযোগ আমলে নিয়ে বাঁশখালী থানার ওসি তোফায়েল আহমদকে মামলাটি তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন।

মামলার অভিযোগে উল্লেখ করা হয়, গেল দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে ইসলামী ঐক্যজোটের প্রার্থী ছিলেন সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী। বাদী শফকত চাটগামীর জনশক্তি কম থাকার সুযোগ নিয়ে আসামি মোস্তাফিজের স্বার্থে কাজ করার জন্য এজেন্ট নিয়োগের প্রস্তাব দেয়। অপরদিকে শফকত হোসাইন চাটগামীসহ সবাই নির্বাচনের ফলাফল মেনে নিলেও মোস্তাফিজ অজানা কারণে ফলাফল প্রত্যাখ্যান করেন। পরবর্তীতে শফকত হোসাইন চাটগামীকে সাথে নিয়ে মোস্তাফিজ হাইকোর্টে মামলা করার প্রস্তাব দিলে তিনি সেই প্রস্তাব মেনে নেননি। শফকত হোসাইন চাটগামী ওই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করায় মোস্তাফিজ তাকে তখন থেকে শত্রু ভাবতে শুরু করেন।

গত ২৯ জুন আওয়ামী লীগের ৭৫তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে বাঁশখালী উপজেলা সদরে আলোচনা সভা অনুষ্ঠিত সভায় উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আব্দুল গফুর বলেন, ‘সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর মাননীয় প্রধানমন্ত্রী ও দলীয় সভানেত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে বুঝাতে চেষ্টা করেছেন নিজের বাড়ি না করে সাবেক এমপি মোস্তাফিজুর রহমান দলীয় কার্যালয় নির্মাণ করেছেন। অথচ এটি সম্পূর্ণ মিথ্যা ও ভণ্ডামি। দলীয় কার্যালয় নির্মাণে সাবেক এমপি ব্যাপক চাঁদাবাজি করেছেন। খানখানাবাদের চেয়ারম্যান জসিম উদ্দিন হায়দার ৭ লাখ টাকা, সাবেক চেয়ারম্যান বদরুদ্দীন চৌধুরী ৮ লাখ টাকা, চেয়ারম্যান ইবনে আমিন ৫ লাখ টাকা, পুকুরিয়ার আওয়ামী লীগ নেতা মাহবু্ব আলী ১১ লাখ টাকা এবং সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান চৌধুরী মোহাম্মদ গালিব সাদলী ৩৪ লাখ টাকা দিয়ে অফিস সংলগ্ন ছড়ায় গাইড ওয়াল নির্মাণ করে দেন। এভাবে আরও বহু মানুষের কাছ থেকে টাকা নিয়েছেন সাবেক এমপি মোস্তাফিজ।’

এই বক্তব্যের সূত্র ধরে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করেন। এরই জের ধরে গত ৩০ জুন ব্যক্তিগত মোবাইল নম্বর থেকে ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করাসহ প্রাণে মেরে ফেলার হুমকি প্রদান করেন মোস্তাফিজ। এসময় মোস্তাফিজ ফোন করে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামীকে বলেন, ‘এগুলো কী লিখছস?’ জবাবে সাংবাদিক শফকত হোসাইন চাটগামী বলেন, ‘আমি তো নিজ থেকে কিছু বানিয়ে লিখি নাই। গফুর সাহেব মিটিংয়ে যা বলছে, তা লিখছি আর কি।’ এরপর মোস্তাফিজ বলেন, ‘তোর মায়ের... লিখছস খাং...পোলা। আমি আসতেছি। সু..নির পোলা... আমি ঢাকা থেকে আসলে তোর হাড্ডি-মাংস ভেঙে ফেলবো।’

বাদীর আইনজীবী মোশাররফ হোসাইন খাঁন বলেন, শুনানি শেষে বিজ্ঞ আদালত মামলাটি গ্রহণ করে বাঁশখালী থানার ওসিকে তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন।

তবে এবিষয়ে সাবেক সংসদ সদস্য মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরীর বক্তব্য জানতে পারেনি প্রতিবেদক।

মোস্তাফিজুর রহমান চৌধুরী চট্টগ্রাম-১৬ (বাঁশখালী) আসন থেকে ২০১৪ সাল থেকে টানা দুবারের সংসদ সদস্য ছিলেন। গত ৭ জানুয়ারি অনুষ্ঠিত দ্বাদশ সংসদ নির্বাচনে তিনি আওয়ামী লীগের স্বতন্ত্র প্রার্থী মুজিবুর রহমানের কাছে পরাজিত হন। অবশ্য ভোট গ্রহণ শেষ হওয়ার আধা ঘণ্টা আগে নির্বাচন কমিশন মোস্তাফিজুর রহমানের প্রার্থিতা বাতিল করে। এর আগে বাঁশখালী থানা কার্যালয়ে হাজির হয়ে মোস্তাফিজুর ওসি তোফায়েল আহমদের দিকে তেড়ে যান। এ কারণে প্রার্থিতা বাতিল করা হয়েছিল। তবে নির্বাচনে মুজিবুর রহমান ৫৭ হাজারের বেশি ভোটে জিতেছিলেন।

মোস্তাফিজুর রহমানের কটূক্তি এবার প্রথম নয়। এর আগে মোস্তাফিজুর রহমান সংসদ সদস্য থাকার সময় দলের কেন্দ্রীয় সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরকে নিয়েও কটূক্তি করেন। তখনো গাড়িতে বসে করা কটূক্তির ভিডিও ভাইরাল হয়। এ ছাড়া প্রকাশ্যে পিস্তল হাতে মিছিল করেও সমালোচিত হন তিনি।