কুড়িগ্রামে পানিবন্দি ২৫৫ শিক্ষা প্রতিষ্ঠান



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুড়িগ্রাম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে কুড়িগ্রামে ২৫৫টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠান পানিবন্দি হয়ে পড়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ১৪০টিতে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রেখেছে কর্তৃপক্ষ। জেলা প্রশাসনের দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা শাখা ও জেলা শিক্ষা অফিস সূত্রে এ তথ্য জানা গেছে

প্রাথমিক শিক্ষা অফিস সূত্রে জানা যায়, চলমান বন্যা পরিস্থিতিতে ১৪৬টি প্রাথমিক বিদ্যালয় পানিবন্দি হয়েছে। এর মধ্যে ৩৭টিতে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। দুটি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে।

জেলা শিক্ষা অফিস সূত্র জানায়, মাধ্যমিক র্পায়ের ১০৩টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা হয়েছে। এর মধ্যে বেসরকারি মাধ্যমিক স্কুল ৭১টি এবং মাদ্রাসা ৩২টি। চিলমারী ও রাজিবপুরে তিনটি বিদ্যালয় আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত হচ্ছে। এছাড়াও রৌমারী ও রাজিবপুর এলাকায় ৬টি কলেজ পানিবন্দী হওয়ায় সেগুলোতে শ্রেণি পাঠদান কার্যক্রম বন্ধ রয়েছে।

এদিকে দেশজুড়ে একযোগে শুরু হওয়া মাধ্যমিক শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ষান্মাসিক পরীক্ষা বন্যা কবলিত মাধ্যমিক স্কুলে বন্ধ রাখার সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। এছাড়ও আশ্রয়কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহৃত মাধ্যমিক বিদ্যালয়েও পরীক্ষা স্থগিত থাকবে বলে শিক্ষা বিভাগ সূত্রে জানা গেছে।

জেলা শিক্ষা অফিসার শামসুল আলম বলেন, ‘বন্যা এবং আশ্রয়কেন্দ্র খোলার কারণে শ্রেণি পাঠদান বন্ধ রাখা মাধ্যমিক পর্যায়ের বিদ্যালয়গুলোতে ষান্মাসিক পরীক্ষা বন্ধ রাখা হয়েছে। ওইসব বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের মূল্যায়ন পদ্ধতি পরবর্তীতে জানানো হবে।’

সড়ক থেকে সরে গেলেন শিক্ষার্থীরা, ভোগান্তিতে শহরবাসী



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা
ছবি: বার্তা২৪, রাতে সড়ক থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে গেলে শুরু হয় গন্তব্যে ফেরা মানুষদের চরম ভোগান্তি

ছবি: বার্তা২৪, রাতে সড়ক থেকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা সরে গেলে শুরু হয় গন্তব্যে ফেরা মানুষদের চরম ভোগান্তি

  • Font increase
  • Font Decrease

অফিস শেষে এমনিতেই যানজটে ডুবে থাকে রাজধানী ঢাকার মূল মূল সড়কগুলো। তার সঙ্গে সরকারি চাকরিতে কোটা প্রত্যাহারের দাবিতে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচিতে নগরীর সড়কে ভোগান্তি বেড়েছে কয়েকগুণ।

নতুন কর্মসূচি ঘোষণার মাধ্যমে শাহবাগসহ সড়কগুলো থেকে সরে গেছেন আন্দোলত শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (৮ জুলাই) বিকেল সাড়ে তিনটা থেকে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত শাহবাগসহ বিভিন্ন সড়ক অবরোধ শেষে সরে যান কোটাবিরোধী আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা। তবে ভোগান্তি বেড়েছে ঢাকা নগরবাসীর। যানজটে আটকা থেকে চরম ভোগান্তিতে পড়েন তারা। শিক্ষার্থীরা সড়ক থেকে সরে গেলে সে ভোগান্তি যেন আরো কয়েক গুণ বেড়ে যায় বিভিন্ন সড়কে আটকা পড়ে থাকা যানগুলো চলাচল শুরু করলে।

এর আগে সোমবার বিকেল থেকেই শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্থবির হয়ে যায় পুরো রাজধানী। এসময় অফিস শেষে ভোগান্তিতে পড়ে নগরবাসী। অনেকে অফিস শেষ করে পায়ে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশে রওয়ানা হন।

প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটাব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে চলমান আন্দোলনের অংশ হিসেবে ‘বাংলা ব্লকেড’ কর্মসূচি ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা।

পূর্বঘোষিত ঘোষণা অনুযায়ী, সোমবার (৮ জুলাই) বিকেলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হাজারও শিক্ষার্থী মিছিল নিয়ে শাহবাগে এসে অবস্থান নেন।

তাদের অবস্থানের কারণে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ সড়ক সায়েন্সল্যাব, মিরপুর সড়ক, মিন্টুরোড, ফার্মগেট, বাংলামোটর, কারওয়ান বাজার, মতিঝিলের দিকে যাওয়ার রাস্তা বন্ধ হয়ে যায়। এতে করে অফিস শেষ করে নগরবাসী যখন গন্তব্যে ফিরবেন তখনই ব্যাপক জনদুর্ভোগ দেখা দেয়।

;

আন্দোলনের অজুহাতে বাড়তি ভাড়া বাসে



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কোটা আন্দোলনে জ্যামে থাকার অজুহাতে যাত্রীদের থেকে বাড়তি ভাড়া নিচ্ছে রাজধানীর বাসগুলো। বাসের টিকেট বিক্রেতারা বলছেন, কয়েক ঘণ্টা জ্যামে বসেছিলাম, যাত্রী সব নেমে গেছে তাই আজকের জন্য একটু বাড়িয়ে নিচ্ছি।

সোমবার (৮ জুলাই) সন্ধ্যায় কোটা বিরোধী আন্দোলন স্থগিত করে শিক্ষার্থীরা রাস্তা ছেড়ে চলে যাবার পর বাস চলাচল শুরু হলে এমন পরিস্থিতি দেখা যায়।

সরেজমিনে দেখা যায়, এদিন বাংলামোটর মোড় থেকে মিরপুরের উদ্দেশ্যে ছেড়ে আসা বিহঙ্গ পরিবহনের একটা বাস বোঝায় করে যাত্রী নিলেও নিচ্ছে বাড়তি ভাড়া। এ নিয়ে যত্রীদের সঙ্গে বাসের হেলপারের তর্কাতর্কি করতে দেখা যায়।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক পরিবহনটির বাস সহকারী বার্তা২৪.কম কে বলেন, বিকেল থেকে বসে আছি। যাত্রী সব নেমে গেছে। এখন কিছুটা বাড়তি ভাড়া না নিলে কিভাবে হবে! তাহলে মহাজনকে জমা দিবো কি বা আমরাই পাবো কি?

তবে এনিয়ে যাত্রীরা ছিলেন বিরক্ত। মিঠুন নামের এক যাত্রী তার থেকে ১০ টাকা বাড়তি ভাড়া নেয়া হয়েছে জানিয়ে বার্তা২৪.কম-কে বলেন, আমরা দিচ্ছি বলেই নিতে পারছে। আমরা সবাই মিলে যদি না দিতাম, বা শক্ত হয়ে কথা বলতাম তাহলে আর তারা নিতে পারতো না। এখন আন্দোলন হয়েছে সে দায়ও কি আমাদের?

প্রসঙ্গত, গতকাল রোববার (৭ জুলাই) বাংলা ব্লকেড কর্মসূচির প্রথম দিনে বিকেল সোয়া ৫টায় শাহবাগের দিক থেকে খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে বাংলামোটর মোড় অবরোধ করেছিল শিক্ষার্থীরা। মিছিল শ্লোগানে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত সড়ক অবরোধ করে রাখেন তারা। ওই দিন বাংলামোটর এলাকায় বাড়তি পুলিশ মোতায়েন করা থাকলেও তারা কোনো রকম বাঁধা দেওয়ার চেষ্টা করেনি। এতে করে নির্বিঘ্নে তারা বাংলামোটর মোড়ে কর্মসূচি চালিয়ে যায়।

আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের মুখপাত্র নাহিদ ইসলাম গত ৬ জুলাই এই 'বাংলা ব্লকেড' কর্মসূচি ঘোষণা দেন। তিনি বলেছিলেন শুধু শাহবাগ মোড় নয় ঢাকা শহরের সায়েন্সল্যাব, চানখারপুল, নীলক্ষেত, মতিঝিল প্রতিটি পয়েন্টে কলেজ এবং বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা নেমে আসবেন। ঢাকার বাইরের শিক্ষার্থীরা জেলায়–জেলায়, বিশ্ববিদ্যালয়গুলো মহাসড়কগুলো অবরোধ করবেন।

;

গাড়িচালক আবেদ আলী অঢেল সম্পদের মালিক



স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
ছবি: পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন

ছবি: পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন

  • Font increase
  • Font Decrease

বিসিএস পরীক্ষাসহ পিএসসির পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে পিএসসির চেয়ারম্যানের সাবেক গাড়িচালক সৈয়দ আবেদ আলী জীবন ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামকে গ্রেফতার করেছে সিআইডি।

এছাড়াও বিসিএস পরীক্ষাসহ গত ১২ বছরে বাংলাদেশ সিভিল সার্ভিসের (বিসিএস) ৩০টি নিয়োগ পরীক্ষার প্রশ্নফাঁসের অভিযোগে বাংলাদেশ সরকারি কর্ম কমিশনের (বিপিএসসি) তিন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাসহ ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছে পুলিশের অপরাধ তদন্ত বিভাগ (সিআইডি)।

রোববার (৭ জুলাই) বেসরকারি একটি টেলিভিশন চ্যানেলে এ সংক্রান্ত অনুসন্ধানী প্রতিবেদন প্রকাশের পর সাঁড়াশি অভিযানে নেমে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়।

তবে পিএসসির প্রশ্নফাঁসের খবর ছড়িয়ে পড়ার পর সবচেয়ে যে নামটি আলোচনায় এসেছে তিনি হচ্ছেন পিএসসির গাড়ি চালক আবেদ আলী। পিএসসির এই গাড়ি চালকের নাম আসার পরপরই সমালোচনার ঝড় ওঠে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সন্ধান মেলে আবেদ আলীর অঢেল সম্পদের।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে আবেদ আলী ও তার ছেলে

সোমবার (৮ জুলাই) সকাল থেকে আবেদ আলী ও তার ছেলে সৈয়দ সোহানুর রহমান সিয়ামের নানান কর্মকাণ্ডের ছবি ফেসবুকে ভাইরাল হয়।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সৈয়দ আবেদ আলীর ব্যক্তিগত প্রোফাইল ঘেটে দেখা যায়, রাজনৈতিক, সামাজিক কর্মকাণ্ড, দান খয়রাত ও পরহেজগারির নানা খবর।

আরও পড়ুন পিএসসির আবেদ আলীসহ আটক ১৭

সৈয়দ আবেদ আলীর গ্রামের বাড়ি মাদারীপুর জেলার ডাসার উপজেলায়। সাধারণ মানুষের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে তার বিপুল বিত্তবৈভবের খবর। ঢাকায় ও গ্রামে একাধিক বাড়ি, গরুর খামার ও সম্পদের তথ্য মিলেছে তারই ব্যক্তিগত সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। যদিও ব্যবসা-বাণিজ্যের মাধ্যমে বিত্তবৈভব বানিয়েছেন বলে দাবি করেছেন তিনি।

সবশেষ উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে চেয়ারম্যান পদে নির্বাচনের জন্য প্রচারণা চালিয়েছিলেন আবেদ আলী। আবেদ আলী সমাজের বিত্তবান ও প্রভাবশালীদের সঙ্গে নিয়মিত চলাফেরা করতেন। প্রশাসনের কর্তা ব্যক্তিদের সঙ্গেও উঠবস করতেন তিনি সেসব ছবিও ভাইরাল হয়েছে সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে।

ফেসবুকে ভাইরাল হওয়া ছবিতে আবেদ আলী

প্রশ্নফাঁসের সঙ্গে জড়িত থাকার তথ্য সামনে আসার পরই সোশ্যাল মিডিয়ায় তার বিপুল সম্পদের তথ্য তুলে ধরছেন নেটিজেনরা। ছেলে ছাত্রলীগ নেতা, পড়েছেন বিদেশে, এরপর দেশের একটি ব্যয়বহুল বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে। ঢাকার ভেতর তার দুটি বহুতল ভবন, মাদারীপুরে আলিশান বাড়ি রয়েছে এমন তথ্যও সামনে আসছে।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, মাত্র আট বছর বয়সে জীবিকার তাগিদে রাজধানীতে পাড়ি জমিয়েছিলেন সৈয়দ আবেদ আলী জীবন। প্রথমে সেখানেই কুলির কাজ করতেন। এক সময় ফুটপাতে ঘুমিয়ে কষ্ট করেছেন তিনি। এরপর গাড়ি চালানো শিখে চাকরি নেন পিএসসিতে। তারপরই আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি তাকে। অর্জন করেছেন বিপুল সম্পদ। সঙ্গে ক্ষমতাও।

সিআইডির এক ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা বলেন, সাঁড়াশি অভিযান চলছে। যাদের বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্টতার তথ্য পাওয়া যাবে কাউকে ছাড় দেওয়া হবে না। আমরা এখন পর্যন্ত ১৭ জনকে গ্রেফতার করেছি।

তিনি জানান, গ্রেফতারদের মধ্যে রয়েছেন পিএসসির উপ-পরিচালক মো. আবু জাফর ও মো. জাহাঙ্গীর আলম, সহকারী পরিচালক মো. আলমগীর কবির, অফিস সহায়ক খলিলুর রহমান ও অফিস সহায়ক (ডিসপাস) সাজেদুল ইসলাম।

এ ছাড়াও রয়েছেন সাবেক সেনাসদস্য নোমান সিদ্দিকী, ঢাবির সাবেক শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের রাজনীতি করা এবং বর্তমানে মিরপুরের ব্যবসায়ী আবু সোলায়মান মো. সোহেল, অডিটর প্রিয়নাথ রায়, ব্যবসায়ী মো. জাহিদুল ইসলাম, নারায়ণগঞ্জ পাসপোর্ট অফিসের নিরাপত্তা প্রহরী শাহাদাত হোসেন, ঢাকার ইমিগ্রেশন ও পাসপোর্ট অফিসে কর্মরত মো. মামুনুর রশীদ, শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালের মেডিক্যাল টেকনিশিয়ান মো. নিয়ামুন হাসান, ব্যবসায়ী সহোদর সাখাওয়াত হোসেন ও সায়েম হোসেন ও বেকার যুবক লিটন সরকার।

;

কালের সাক্ষী ঐতিহ্যবাহী ‘ডিমলা কালী মন্দির’



বর্ণালী জামান, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রংপুর
ডিমলা কালী মন্দির, ছবি: বার্তা২৪.কম

ডিমলা কালী মন্দির, ছবি: বার্তা২৪.কম

  • Font increase
  • Font Decrease

কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে ১১৬ বছর আগের নির্মিত ঐতিহ্যবাহী ‘ডিমলা কালী মন্দির’। সনাতন ধর্মাবলম্বীদের পূজা অর্চনায় তৎকালীন সময়ে এই মন্দিরটির বেশ খ্যাতি ছিল।

যা বর্তমানে ঐতিহ্যের স্মারক হিসেবে সাক্ষ্য বহন করছে মন্দিরটি। এটি রংপুর সদর উপজেলার রেলওয়ে স্টেশন থেকে পূর্বদিকে এবং মাহিগঞ্জ বাজারের প্রায় ১ কিলোমিটার দক্ষিণে বড় রঙ্গপুরে অবস্থিত।

কালী মন্দিরের কারুকাজ, আকৃতি ও গম্বুজসহ নকশা মনে করিয়ে দেয় তৎকালীন রাজাদের সৌখিনতার ছোঁয়ায় এটি নির্মাণ করা। ১৯০৮ সালে রাজা জানকি বল্লভ সেন এটি নির্মাণ কাজ শুরু করেন। নির্মাণের কাজ শুরু হবার দু'বছর পর রাজা জানকি বল্লভ সেন মারা গেলে স্ত্রী বৃন্দারানী চৌধুরানী ডিমলা রাজদেবোত্তর এস্টেট পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন।

অসংখ্য চিত্রকলা শিল্পীদের নিপুণ ছোঁয়ায় ১৯১৬ সালে শেষ হয় সুবৃহৎ এই মন্দিরের নির্মাণকাজ। রাজা জানকি বল্লভ সেনের বিভিন্ন সেবামূলক কাজের অংশ হিসেবে এই মন্দিরটি অন্যতম। তিনি ছিলেন ডিমলার জমিদার নীল কমল সেনের বিধবা স্ত্রী শ্যামা সুন্দরীর দত্তক পুত্র।

মন্দিরের প্রতিটি স্তরে রয়েছে শৈল্পিক সৌন্দর্যের পূজারী স্থপতি ও চিত্রকলা শিল্পীদের নিপুণ ছোঁয়ায় সৃষ্ট চমৎকার শিল্পকর্ম।


মন্দিরে প্রবেশ করতেই চোখে পড়ে ব্যাঘ্র মূর্তি। যেন পুরো মন্দিরটি বাঘের পাহাড়ায় রয়েছে। এটি প্রায় ৩ ফুট উঁচু অষ্টকোণাকার ভিত্তিবেদীর ওপরে দ্বিতল বিশিষ্ট পদ্ধতিতে নির্মিত। ৫০ ফুট উঁচু নকশাটি অষ্টকোণাকৃতি। প্রথম তলার প্রতিটি কোনায় সুশোভিত রয়েছে একেকটি করে অষ্টকোণাকৃতি কর্ণার স্তম্ভ, যা পত্রপল্লবের ভাস্কর্য দ্বারা খচিত৷ ৮টি স্তম্ভের মধ্যবর্তী খিলানে রয়েছে মহেশ্বরী, বারাহী, কৌমারী, নারসিংহী,ব্রাহ্মী, চামুন্ডা ও অপরাজিতা রূপে নির্মিত অষ্ট দেবীমূর্তি। দ্বিতীয় তলার অষ্টকোণে স্থাপিত লক্ষ্মী, সরস্বতী, ব্রহ্মা, বিষ্ণু, শিব, শীতলাকালী, বামন অবতার ও বরাহ অবতারের মূর্তি। দ্বিতীয় তলার নিম্নদেশে প্রতিটি কোণায়পাখির ডানাযুক্ত মানবাকৃতি ভাস্কর্য দ্বারা শোভাবর্ধক করা হয়েছে। এছাড়াও মন্দিরের শীর্ষে স্থাপিত হয়েছে পিতলের ৩টি কলস এবং ১টি ত্রিশুল।

বর্তমানে মন্দিরে নানা সমস্যা রয়েছে বলে জানান পুরোহিত, পরিচর্যাকারীসহ স্থানীয়রা।

মন্দিরের পুরোহিত রবিরঞ্জন চক্রবতী ও পরিচর্যাকারী অনাথ চন্দ্র বর্মন বলেন, মন্দিরের প্রাচীর কিছুটা ভঙ্গুর, মেঝের টাইলস, দেয়ালের প্লাস্টারও জরাজীর্ণ অবস্থায় রয়েছে। পানির সমস্যা, সেইসঙ্গে স্যানিটেশন ব্যবস্থাও তেমন নেই। আমরা চাই আমাদের এই ঐতিহ্যবাহী মন্দিরটি মডেল মন্দিরে রূপান্তর করবে সরকার। তাহলে আগামী প্রজন্মের কাছেও রংপুরের এই সুবৃহৎ মন্দিরটির প্রাধান্য থাকবে।

মন্দিরটিকে সংস্কার করে মডেল মন্দিরে রূপান্তর করার দাবি জানান স্থানীয়রা। স্থানীয়রা বলেন, দেশের বাইরে থেকে দর্শনার্থীরা এসে অবাক চোখে প্রসংশা করেন। চমৎকারভাবে, নিখুঁত নকশায় এই মন্দির সত্যি প্রশংসনীয়। এটি সংস্কার করে আবারও সৌন্দর্য ফিরিয়ে দিলে সবার কাছে এর সুনাম খ্যাতি অব্যাহত থাকবে।

কালের পরিক্রমায় অনেক কিছু বিলুপ্তি হয়ে গেলেও এখনো মানবসেবা ও জনকল্যাণমূলক এই নিদর্শনগুলো সমৃদ্ধ ইতিহাসকে বুকে ধারণ করেছে। ঠিক তেমনি শ্রদ্ধা, ভক্তি ও ভালবাসায় ভূমিকা পালন করছে ভক্তরা। বিভিন্ন পূজা অর্চনার পাশাপাশি উৎসব আয়োজনে ভক্তদের আগমনে ভরে ওঠে পুরো প্রাঙ্গণ। চোখের পলকেই দৃষ্টিনন্দন মন্দিরটির সৌন্দর্যে মন ছুঁয়ে যায় ভক্ত ও দর্শনার্থীদের।

;