বন্যায় বিলীন জব্বারের বসতঘর, পুকুরের মাছ হারিয়ে নিঃস্ব সালাম

  • সোহানুর রহমান সোহান, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সুনামগঞ্জ
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ভেসে গেছে মো. আব্দুল সালামের পুকুর পাড়। ছবি: বার্তা ২৪

পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ভেসে গেছে মো. আব্দুল সালামের পুকুর পাড়। ছবি: বার্তা ২৪

জুন মাসের মাঝামাঝি সময়ে সুনামগঞ্জে নেমে আসে বন্যা নামক প্রাকৃতিক দুর্যোগ। এ দুর্যোগে সবচেয়ে বেশী আক্রান্ত হয়েছে দোয়ারাবাজার উপজেলা। আক্রান্তদের একজন উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের টেংরা বাজারের আজবপুর গ্রামের বাসিন্দা আব্দুল জব্বার। দুই ছেলে, স্ত্রী আর মা'কে নিয়ে ক্ষুদে ব্যবসায়ী জব্বারের সংসার। খাসিয়া নদীর পাড়ে রাবার ড্যামের কাছে ছিল তার ঘর। ১৬ জুনের বিভীষিকাময় দিনটি মূহুর্তের মধ্যে কেড়ে নেয় জব্বারের বসতঘর। ভারতের মেঘালয় রাজ্য থেকে নেমে আসা পাহাড়ি ঢলের পানির স্রোতে দুমড়ে-মুচড়ে পানিতে ভেসে বিলীন হয়ে গেছে তার বসতঘর। পাহাড়ি ঢলের তাণ্ডবের শিকার হয়ে খোলা আকাশের নিচে এখন জব্বার ও তার পরিবার।

জব্বার বলেন, 'যখন বন্যা আসে তখন আমি ঘরেই ছিলাম। যখন দেখলাম খাসিয়ামারা নদীর পানি বাড়তেছে সড়কে আসলাম। হুট করে মুহুর্তের মধ্যেই ৫ মিনিটেই আমার ঘরটা নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় । ঘরের কাছে গাছপালা যা ছিল সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায়। স্রোতের এমন বিকট শব্দ ছিল যে যখন ঘরের সবকিছু ভাসিয়ে নিয়ে যায় ভয়ে তখন ঘরের কাছাকাছিও যেতে পারিনি। ঘর বাঁচানোর চেয়ে জীবন বাঁচানো বড় ছিল। স্ত্রী সন্তানদের নিয়ে কোনমতে জীবনটা বাঁচাইছি। চোখের সামনে আমার ঘর বিলীন হয়েছে আমি কিছু করতে পারিনি। এখন নিরুপায় হয়ে আমার ভাইয়ের বাড়িতে আছি। আমার ঘরটি নতুন করেছি। এই ঘরের কারণে আমি এখনো ঋণগ্রস্ত। আমি সরকারের সহযোগিতা চাই।'

বিজ্ঞাপন

একই উপজেলার সুরমা ইউনিয়নের গিরিশনগর গ্রামের বাসিন্দা মো. আব্দুল সালাম। তার দু'টি পুকুরে ২-৩শ' গ্রাম ওজনের মাঝারি সাইজের প্রায় ৫ টন মাছ ছিল বলে জানান তিনি। যার আনুমানিক মূল্য প্রায় ৭ লাখ টাকা। মাছ চাষের শুরুর দিকেই বন্যায় তলিয়ে যায় তার ২টি পুকুর। এক রাতেই পাহাড়ি ঢলের পানির তোড়ে ভেসে যায় পুকুর পাড়। নদী আর পুকুরের পানি মিলে মিশে হয় একাকার। ঢলের জলে দুটি পুকুরের মাছ হারিয়ে এখন নিঃস্ব সালাম।

ব্যাংক ঋণ নিয়ে চাষ করা মাছ হারিয়ে ঋণ কিভাবে শোধ করবেন সেই চিন্তার ভাঁজ পড়েছে সালামের কপালে। শুধু ব্যাংকেই নয় দেনা আছে মাছের খাদ্যের দোকানেও। সরকারি সহযোগিতা না পেলে এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারবেন না বলে জানান তিনি।

আব্দুল সালাম বলেন, 'আমার পুকুরে রুই, মিরকা, কার্প জাতীয় ২-৩শ' গ্রামের মাছ ছিল। সরকারি লোন নিয়ে মাত্র চাষ করছিলাম মাছগুলো। পূবের পানি এসে সব ভাসিয়ে নিয়ে গেছে। নেটিংসহ অনেক কিছু করেছি মাছ আটকানোর জন্য। অনেক মানুষও ছিল কিন্তু কিছুতেই কাজ হয়নি। পানির তোড় এতো বেশি ছিল সবকিছু ছিড়ে গেছে।'

উপজেলা প্রশাসনের মাধ্যমে ক্ষয়ক্ষতির তালিকা করে সরকারের বরাদ্দ পেলে ক্ষতিগ্রস্তদের সহযোগীতার আশ্বাস জেলা প্রশাসনের।