খুলনার পথে প্রান্তরে রসালো, টক-মিষ্টি স্বাদের লটকন

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, খুলনা
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

লটকন

লটকন

খুলনার পথে প্রান্তরে এখন এক বিশেষ ধরনের ফল পাওয়া যাচ্ছে। যা স্থানীয়দের মাঝে বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠেছে। এই ফলটির নাম লটকন। টক-মিষ্টি স্বাদের এই ফলটি শুধু স্বাদেই নয়, পুষ্টিগুণেও ভরপুর। ফলে লটকন ফলের প্রতি মানুষের আগ্রহ দিন দিন বেড়েই চলেছে।

জানা যায়, লটকন একটি গ্রীষ্মকালীন ফল, যা সাধারণত জুন থেকে সেপ্টেম্বর মাসের মধ্যে পাওয়া যায়। এর বৈজ্ঞানিক নাম Baccaurea ramiflora। ফলটি আকারে ছোট, গোলাকার এবং এর বাইরের খোসা পাতলা ও হলুদ রঙের। ভিতরের অংশটি সাদা, রসালো এবং খেতে টক-মিষ্টি।

বিজ্ঞাপন

লটকন ফল ভিটামিন সি, আয়রন, ক্যালসিয়াম ও অ্যান্টি-অক্সিডেন্টে ভরপুর। এর ফলে এটি শরীরের রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে, হাড় মজবুত করে এবং ত্বকের উজ্জ্বলতা বাড়ায়। এছাড়া লটকন হজমে সহায়ক এবং রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে সহায়ক।
খুলনা মহানগরীর ময়লাপোতা মোড় এলাকায় লটকন বিক্রি করছিলেন মোঃ তানিম। তিনি জানান, লটকন বেশ জনপ্রিয়। প্রথম প্রথম মনে হইতো এ ফল তেমন বিক্রি হবে না। তবে এখন দেখছি বেশ বিক্রি হচ্ছে। আমরা ২০০ টাকা থেকে ২২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি।

ময়লাপোতা এলাকায় ভ্যানে করে বিক্রি হচ্ছে লটকন। সেখান থেকে লটকন কিনছিলেন একটি বেসরকারি হাসপাতালে কর্মরত শারমিন আক্তার। তিনি জানান, খুলনার স্থানীয় বাজারগুলোতে লটকন এখন সহজলভ্য। প্রতিদিনই অনেক মানুষকে দেখছি লটকন কিনতে ভিড় জমাচ্ছে। এর স্বাদ এবং পুষ্টিগুণের কারণে এটি দ্রুত জনপ্রিয়তা পাচ্ছে। শুধু খুলনাই নয়, দেশের অন্যান্য স্থানেও লটকন ফলের চাহিদা বাড়ছে।

বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সরেজমিন গবেষণা বিভাগ খুলনার মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মোঃ হারুনর রশিদ জানান, খুলনায় লটকনের চাষাবাদ তেমনভাবে শুরু হয়নি। যদিও এই ফলের জন্য বিশেষ কোনো মাটির প্রয়োজন নেই, তবে বেলে দো-আঁশ মাটিতে এটি ভালো জন্মে। লটকনের গাছ সাধারণত ৩-৫ বছর পর ফল দেওয়া শুরু করে এবং গাছটি অনেক বছর ধরে ফল উৎপাদন করে।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরে অতিরিক্ত উপপরিচালক ও পার্টনার প্রকল্পের মনিটরিং অফিসার মোঃ মোসাদ্দেক হোসেন জানান, লটকন ফলকে টাটকা খাওয়া হয়। তবে এটি সংরক্ষণ করেও খাওয়া যায়। লটকনের খোসা ছাড়িয়ে সংরক্ষণ করা সম্ভব এবং এটি এক সপ্তাহ পর্যন্ত ভালো থাকে। এছাড়া লটকনের জুস ও আচার তৈরি করে খাওয়াও জনপ্রিয়।

খুলনা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক কাজী মোঃ জাহাঙ্গীর হোসেন জানান, লটকন একটি সুস্বাদু ও পুষ্টিকর ফল। যা মানুষের জন্য একটি বিশেষ উপহার। এর চাষাবাদ ও সরবরাহের মাধ্যমে কৃষকরা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন এবং মানুষের পুষ্টির চাহিদা মেটাচ্ছেন। লটকনের স্বাদ ও গুণাগুণের কারণে এটি খুলনার পথে প্রান্তরে এক অনন্য ফল হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যদিও খুলনায় এর চাষাবাদ তেমন একটা হয়না। তবে এ ফলটি খুলনার সকলস্থানে পাওয়া যাচ্ছে। দামও মানুষের হাতের নাগালে।