আন্দোলনে থমকে গেছে জীবন-জীবিকা

  • রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: অবরোধ থাকায় বসেই দিন কাটছে/বার্তা২৪.কম

ছবি: অবরোধ থাকায় বসেই দিন কাটছে/বার্তা২৪.কম

ফরিদপুরের আব্দুর রাজ্জাক। চার মেয়ের পড়াশুনা ও সংসারের খরচ চালাতে রিকশা চালান ঢাকায়। প্রতিদিন আয়ের টাকা পাঠালেই আগুন চলে বাড়ির চুলোয়। মুখে ভাত ওঠে পরিবারের সদস্যদের।

তবে কোটা আন্দোলনে থমকে গেছে রাজ্জাকের আয়ের পথ। রাস্তা অবরোধ থাকায় বসেই দিন কেটেছে অসহায় এই বাবার। আন্দোলনের কারণে আয়ের সাথে থমকে গেছে পরিবারের জীবিকাও।

বিজ্ঞাপন

আব্দুর রাজ্জাকের মতো কিশোরগঞ্জের মোতাহার হোসেনের গল্পটা একই। ৩ ছেলেমেয়ের পড়াশোনার খরচ, ব্যাংকের কিস্তি ও সংসারের খরচ নিত্যদিনের সংগ্রাম। তবে সে সংগ্রাম হার মেনেছে শিক্ষার্থী ও সরকারের মধ্যকার অমীমাংসিত ইস্যুতে। নিজেও যেমন খাননি পঞ্চাশোর্ধ মোতাহার। তেমনি পরিবারও না খেয়ে দিন কাটাচ্ছে তার।

রাস্তা অবরোধ থাকায় বসেই দিন কেটেছে রিকশা চালকদের। ছবি: বার্তা২৪.কম

আব্দুর রাজ্জাক বলেন, বাড়িতে চার মেয়ে। প্রতিদিন আয় করে তাদের জন্য টাকা পাঠাই। আজ ১৫০০ টাকা ইনকাম হইতো। খরচ বাদ দিয়ে বাড়িতে দিতাম। কিন্তু নিজেই খাইনি সারাদিন। বাড়িতে মেয়ে-বউ-বাচ্চা সবাই না খাওয়া। কিছু তো করার নাই।

মোতাহার হোসেন বলেন, এভাবে দিন নষ্ট হলে আমার বাড়িতে টাকা কে পাঠাবে। চুকায় আজ আগুন জ্বলেনি। খাবে কী আমার বাচ্চারা। আয় রোজগার তো হয় নাই। খাবার নিজের জুটে নাই। সরকারের উচিত ছাত্রদের দাবি মেনে নেওয়া।

রাজ্জাক ও মোতাহারের মতো এমন হাজারো রিকশাচালকের অবস্থা একই। কোটা বাতিলের দাবিতে সারা বাংলা ব্লকের লক্ষ্যে পূর্ব ঘোষিত কর্মসূচি অনুযায়ী রাজপথে নামে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা কলেজসহ রাজধানীর বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানগুলোর শিক্ষার্থীরা। এতে বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার যান চলাচল। ঢাকা কলেজ শিক্ষার্থীরা প্রায় ৭ ঘণ্টা অবরোধ করে রাখে সায়েন্স ল্যাব এলাকা। গাবতলির সাথে যোগাযোগ বন্ধ হয় গুলিস্তানসহ দক্ষিণের। দুই দিকে লাখো যানবাহনের সারিতে ব্লক হয় ঢাকা।

একইভাবে ঢাবি শিক্ষার্থীরা বন্ধ করে দেয় শাহবাগ ও বাংলামোটর এলাকা। এতে বিপাকে পড়েন বিভিন্ন যানবাহনের যাত্রী ও শ্রমিকরা।

বন্ধ হয়ে যায় ঢাকার যান চলাচল। ছবি: বার্তা২৪.কম

ঘণ্টার পর ঘণ্টা বসে থেকে গন্তব্য ধরার জন্য হাঁটাই অবলম্বন হয় অনেকের। কিন্তু চালক ও বাস শ্রমিকরা থমকে থাকে সেখানেই। রিকশাচালকদের মত তাদেরও জীবিকার থমকে আছে আন্দোলন সংকটে।

শামসুন্নাহার নামের এক যাত্রী বলেন, আমি অসুস্থ কিন্তু কিছু করার নাই। ভ্যাপসা গরমে আমি মরে যাচ্ছি। কিন্তু সড়ক অবরোধ খুলছে না।

মেয়ের পরীক্ষা শেষে ভিকারুননিসা নূন স্কুল থেকে ফিরছিলেন রুমি বেগম। তবে রাস্তা ব্লক থাকায় শাহবাগ থেকে সায়েন্স ল্যাব হেঁটেই এসেছেন মেয়ে নিয়ে।

রুমি বেগম বলেন, মেয়ে পরীক্ষা শেষ, বাসায় যাওয়ার উপায় নেই। কী করব হেঁটেই যেতে হচ্ছে। এভাবে কোটা আন্দোলন চললে আমাদের জীবন আটকে যাবে। এর সমাধান অতি জরুরি।

এদিকে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি, কোটা প্রথা বাতিল করে ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের। সরকারের পক্ষ থেকে কোনো ধরনের আশ্বাস না আসায়, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মেয়াদ বাড়বে বলে আশঙ্কা অনেকের।