হঠাৎ একটি টেলিফোন আমার জীবন বদলে দিয়েছে: স্বাস্থ্যমন্ত্রী

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা ২৪.কম, সাভার (ঢাকা)
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন

ছবি: স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন

মন্ত্রীত্ব পাবেন এমনটি কখনও ভাবেননি জানিয়ে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের মন্ত্রী ডা. সামন্ত লাল সেন বলেছেন, আমি মন্ত্রী হবো, স্বপ্নেও ভাবিনি। হঠাৎ করে একটা টেলিফোন আমার জীবন বদলে দিয়েছে।

রবিবার (৭ জুলাই) বিকেল ৫টার দিকে ঢাকা জেলার ধামরাইয়ের ঐতিহ্যবাহী রথযাত্রা উৎসবে যোগ দিয়ে উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন তিনি।

বিজ্ঞাপন

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, আমি মন্ত্রী হওয়ার পর থেকে আমার একটাই দাবি, আমি সব জায়গায় বলি, আমি স্বাস্থ্য সেবাকে তৃণমূল পর্যায়ে পৌঁছে দিতে চাই। গতকাল আমি চট্টগ্রামে গিয়েছিলাম, হাটহাজারী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ঘুরতে গিয়েছিলাম। এরপর একটি কমিউনিটি মেডিকেল পরিদর্শন করেছি। আমার একটাই বক্তব্য আমি যদি উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, থানা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স, ইউনিয়ন হেল্প সেন্টার, কমিউনিটি মেডিকেল এসব যদি আমি স্বাবলম্বী করতে পারি, ধামরাইয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স ও ট্রমা সেন্টার যদি স্বাবলম্বী করতে পারি, তাহলে এই লোকগুলো কিন্তু ঢাকায় যাবে না।

তিনি বলেন, ঢাকায় পঙ্গু হাসপাতালে ভর্তি হওয়া যায় না, ঢাকা মেডিকেলে ভর্তি হওয়া যায় না। মাটিতে রোগী ভর্তি থাকে।

তিনি আরও বলেন, এখানে আসার পর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের হাসপাতালের চিকিৎসকদের সঙ্গে কথা বলেছি।

মন্ত্রী বলেন, এখানে প্রসবের আগে যে চিকিৎসা দেওয়া প্রয়োজন, তা যদি যথাযথ ব্যবস্থা নেওয়া যায়, তাহলে প্রসবকালীন যেসব দুর্ঘটনা ঘটে তা রোধ করা যাবে। এখানে মানুষের উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়বেটিসের চিকিৎসার ব্যবস্থা করতে পারি, তবে ঢাকায় হাসপাতালে চাপ কমবে।

তিনি বলেন, আমি সে লক্ষ্যেই কাজ করছি। সবসময় বলেছি, আমি সেভাবে কাজ করছি। আমি গতকাল চট্টগ্রাম থেকে এসেছি, সামনে উত্তরবঙ্গ যাবো, আমি দেখব মানুষের কি কি দরকার। তবে আমি একা পারবো না। আমাদের সঙ্গে যারা আছে সবার সহযোগিতা আমার প্রয়োজন হবে। তাহলেই মানুষের চিকিৎসা ব্যবস্থা আমি একটা পর্যায়ে নিতে পারবো বলে আশা করি।

তিনি আরও বলেন, আজকে অনেকক্ষণ ধরে মানুষেরা কষ্ট করে দাড়িয়ে আছে। মা-বোন ভাইয়েরা দাঁড়িয়ে আছেন। এই রথ দেখতে দূর দূরান্ত থেকে লোক আসে। শুনেছি, ভারত থেকেও অনেকে আসেন৷ এ অনুষ্ঠানে আসায়, ভারতের রাষ্ট্রদূতকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।

এ সময় ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, বাংলাদেশ যদি স্বাধীন না হতো, তাহলে এভাবে রথযাত্রায় কথা বলার সুযোগ পেতাম না। বঙ্গবন্ধুর কারণে স্বাধীনতা পাওয়ায় এমন উদযাপন করতে পারছি।

তিনি বলেন, আমি বক্তা না। এত বড় জনসভায় বক্তৃতা দেওয়ার অভ্যাস আমার কখনও ছিল না। এই প্রথম বোধহয় এত বড় জনসভায় বক্তব্য দিচ্ছি। বাংলাদেশ এমন একটি দেশ, অসাম্প্রদায়িক দেশ। এই দেশে যখন মুসলমানদের ঈদ উদযাপন হয়, তখন হিন্দুরা পাহারা দেয়, সনাতন ধর্মাবলম্বীরা হাসপাতালে দায়িত্ব পালন করে, রাস্তায় পুলিশ ভাইরা পাহারা দেয়৷ আবার হিন্দুদের যখন পূজা হয়, তখন মুসলমান ভাইরা সেখানে পাহারা দেয়। এটাই বাংলাদেশ। বঙ্গবন্ধুর বাংলাদেশ।

তিনি আরও বলেন, আজকে আমি অত্যন্ত সৌভাগ্যবান এত প্রাচীন একটি উদযাপনে আসতে পেরেছি। এমন একটি অনুষ্ঠানে আসতে পেরে নিজেকে ধন্য মনে করছি। আমি অনেক শুনেছি এটা সম্পর্কে কিন্তু কখনও আসিনি। আমি কৃতজ্ঞ চিত্তে স্মরণ করছি রণদা প্রাসাদ সাহাকে যিনি ওই সময় এই রথযাত্রাকে ধরে রেখেছিলেন।

ডা. সামন্ত লাল সেন বলেন, উনার কারণেই এই রথযাত্রা এখনও চলমান। আজকের এই বড় আকারে রুপ নিয়েছে। আমি এখানে এতো লোকজন দেখতে পাচ্ছি, অনেকেই রথটানের জন্য অপেক্ষা করছেন।

তিনি বলেন, আমার কাছে এখানে বেশ কিছু দাবি উত্থাপন করা হয়েছে। আজ থেকে ২৫ বছর আগে আমার একটা টিম নিয়ে ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে একটি অপারেশন করতে এসেছিলাম। ধামরাই উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সকে এতো ভালো লেগেছে, কিন্তু এখানে উন্নতি কেন এত দিন হয়নি, তা আমার জানা নেই। অনেক আগেই এটা ১০০ শয্যায় দেওয়া উচিৎ ছিল। এখানে ট্রমা সেন্টার, এখানে কৃষ্ণনগর হাসপাতালের কথা বলা হয়েছে। এসব বিষয় দেখা হবে।

উদ্বোধনী সভায় বাংলাদেশে নিযুক্ত ভারতের রাষ্ট্রদূত প্রণয় কুমার ভার্মা বলেন, প্রতিবেশী দুই দেশ ভারত ও বাংলাদেশ তাদের নানা ক্ষেত্রে ঐতিহাসিক সম্পর্ক রয়েছে। ভৌগোলিক সম্পর্ক রয়েছে। ঐতিহাসিক বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক রয়েছে। সাম্প্রতিক বছরে উভয় দেশের সম্পর্ক অনন্য উচ্চতায় পৌঁছেছে। আমরা উন্নয়নের মাইলফলক স্পর্শ করেছি। জনগণের মধ্যেকার সম্পর্ক বৃদ্ধি পেয়েছে। জগন্নাথ দেবতা আমাদের দয়ালু, সহানুভূতিশীল ও সম্প্রীতির বার্তা দেন। আমরা তার উৎসব পালনের মধ্য দিয়ে সম্প্রীতি ও উন্নতির পথে এগিয়ে যাব। এই আয়োজনের জন্য মন্দির সংশ্লিষ্ট সবাইকে ও ধামরাইয়ের সব জনগণকে শুভেচ্ছা ও কৃতজ্ঞতা জানাই।

এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন ঢাকা-২০ আসনের সংসদ সদস্য ও স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সভাপতি বেনজির আহমদ, ঢাকা-২০ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এমএ মালো, ধামরাই পৌরসভার মেয়র গোলাম কবির, ঢাকা জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মো. আসাদুজ্জামান, ধামরাই উপজেলা নির্বাহী অফিসার (ইউএনও) খান মো. আব্দুল্লা আল মামুন।

শ্রী শ্রী যশোমাধব মন্দির পরিচালনা কমিটির যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক নন্দ গোপাল সেনের সঞ্চালনায় এ উৎসবের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন পরিচালনা কমিটির সভাপতি অবসরপ্রাপ্ত মেজর জেনারেল জীবন কানাই দাস।

শুক্লপক্ষের দ্বিতীয় তিথিতে প্রতি বছর এ রথটান অনুষ্ঠিত হয়। রথটান শুরুর মধ্য দিয়ে এটির আনুষ্ঠানিকতা শুরু হয়। সাত দিন পর আগামী ১৫ জুলাই উল্টো রথের মধ্য দিয়ে এর আনুষ্ঠানিকতা শেষ হবে। আর এ উপলক্ষে মাসব্যাপী মেলা চলবে।