নগর বিশেষজ্ঞদের মতামত

খাল ও নদী দখলের নগরী ঢাকায় আজকের ‘জলাবদ্ধতা’ পাপের ফসল!

  • জাহিদ রাকিব, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

নগরে সড়কে সড়কে পানি, ছবি: বার্তা২৪.কম

নগরে সড়কে সড়কে পানি, ছবি: বার্তা২৪.কম

ঢাকার দু'মেয়রের আকাশচুম্বী প্রতিশ্রুতি দিয়েও জলাবদ্ধতা নিরসন করতে পারছে না সিটি করপোরেশন। মাত্র কয়েক ঘণ্টার বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন হয়ে পড়েছে ঢাকা। আর ভোগান্তিতে পড়ে লাখ লাখ নগরবাসী। থমকে গেছে স্বাভাবিক জীবন। বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে নাগরিক সকল সুযোগ-সুবিধা।

আর এই জলাবদ্ধতার জন্য রাজধানীর নাগরিক ও নগর বিশেষজ্ঞরা দুষছেন নগর কর্তাদের। তাদের অভিযোগ, তারা কাজের চেয়েও বেশি প্রতিশ্রুতি দেন। তারা যা করেন সব মিডিয়া কাভারেজ পাওয়ার আশায়। প্রতি বর্ষার শুরুতে নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে শত রকম প্রতিশ্রুতি দিয়েও বাস্তবায়নের কোন পদক্ষেপ নেই তাদের।

বিজ্ঞাপন

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, নগর উন্নয়নের যে সংস্থাগুলো আছে তাদের দীর্ঘদিনের পাপের ফসল আজকের জলাবদ্ধতা। যে নগরে একটি ইট গাঁথার জায়গা নেই সেই নগরে প্রতিদিনি খাল ও নদী জায়গা দখল করে গড়ে উঠছে বড় বড় কংক্রিটের দালান। তাহলে এই শহরে কিভাবে দূর হবে জলাবদ্ধতা- প্রশ্ন তাদের।

জলাবদ্ধতা নিরসনে ২০১৯ সালে ঢাকা ওয়াসা থেকে খালগুলো হস্তান্তর হয় সিটি করপোরেশনের হাতে। এরপর থেকে হাঁকডাক দিয়ে খাল উদ্ধারে অভিযান চালালেও কার্যত সফলতা পায়নি করপোরেশন। প্রতিদিন কোনো না কোনো এলাকায় খাল দখল করে নির্মিত হচ্ছে নতুন ভবন। 

এদিকে শুক্রবার সকাল থেকে রাজধানী ঢাকায় মুষলধারে বৃষ্টি হওয়ায় বিভিন্ন সড়ক ও অলিগলিতে সৃষ্টি হয়েছে জলাবদ্ধতা। সৃষ্ট জলাবদ্ধতায় ভোগান্তি পড়েছেন নগরবাসী। বেশি ভোগান্তিতে পড়েছেন উত্তর সিটির মানুষ। বিশেষ করে মিরপুরের বাসিন্দারা। অন্যদিকে দক্ষিণ সিটির আওতাধীন মতিঝিলের সড়কগুলোতে প্রায় কোমরের ওপরে পানি।

আবহাওয়াবিদ তরিকুল নাওয়াজ কবির বার্তা২৪. কমকে বলেন, রাজধানীতে ভোর ৬টা থেকে দুপুর ১২টা পর্যন্ত ১৩০ মিলিমিটারে মুষলধারে বৃষ্টিপাত হয়েছে। এই বৃষ্টিপাত ও আকাশ মেঘলা অব্যাহত থাকবে সারাদিন। শনিবার রাজধানীতে বৃষ্টিপাত কমে আবহাওয়া স্বাভাবিক হতে শুরু করবে।

এই আবহাওয়াবিদ আরও বলেন, মৌসুমি বায়ু শক্তিশালী হওয়ায় দেশের বিভিন্ন জেলায় বৃষ্টি হয়েছে। তবে সবচেয়ে বেশি হয়েছে রাজধানী ঢাকায়। এছাড়া রংপুর, ময়মনসিংহ, চট্টগ্রাম, সিলেট ও রাজশাহী মাঝারি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে।

কয়েক বছর থেকে মিরপুরে সামান্য বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হওয়া যেন স্বাভাবিক ঘটনা হয়ে দাঁড়িয়েছে। কয়েক মিলিমিটার বৃষ্টি হলেই জলাবদ্ধতায় আটকে যায় মানুষের জীবনযাত্রা। এমন অভিযোগ করেছে মিরপুরের শেওড়াপাড়া, কাজিপাড়ার বাসিন্দারা।

জলাবদ্ধতা নিয়ে উত্তর সিটি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা মীর খায়রুল আলম বার্তা২৪. কমকে বলেন, জলাবদ্ধতা নিরসনে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছি আমরা। দীর্ঘমেয়াদি সমাধানের জন্য সাময়িক অসুবিধা মেনে নেওয়ার আহবান জানান তিনি।

উত্তরের মতো দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে বৃষ্টিতে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয় পল্টন, মতিঝিল, ফকিরাপুল, শান্তিনগর, রাজারবাগ, মালিবাগ, যাত্রাবাড়ি ও শনির আখড়ায়।

দক্ষিণ সিটির প্রায় এলাকা যখন জলাবদ্ধতায় নিমগ্ন; তখন বিষয়টি নজরে আনতে কয়েকদফা যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও পাওয়া যায়নি প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তাকে।

দীর্ঘদিন নগর পরিকল্পনা নিয়ে গণমাধ্যমে ও সেমিনারে কথা বলছেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ও বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব প্ল্যানার্সের (বিআইপি) সভাপতি ড. আদিল মুহাম্মদ খান।

নগরীর জলাবদ্ধতা নিয়ে একরাশ হতাশা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।  

ড. আদিল মুহাম্মদ খান বার্তা২৪.কমকে বলেন, দীর্ঘদিনের পাপে আমরা নগরকে ধ্বংস করেছি। খালকে বানিয়েছি সড়ক ও ব্রিজ কালভার্ট। মোহাম্মদপুরের রামচন্দ্র খালের ওপর সাদেক এগ্রোর খামার ও সুরের ভবন নির্মিত হয়েছে। এ যদি পাপ হয় তাহলে জলাবদ্ধতা হবে না তো কী হবে?

খাল দখল নিয়ন্ত্রণের দায়িত্ব কার এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, রামচন্দ্র খাল উদ্ধার করে সেখানে খেলার মাঠ বানানো হবে ঘোষণা দিয়েছে সিটি করপোরেশন। যেখানে সবুজ সেখান করা হচ্ছে দালান- এগুলো পাপ। মেয়রদের কি কোনো ক্ষমতা নেই দু'একটা খাল উদ্ধার করে জলাবদ্ধতা দূর করার, প্রশ্ন তোলেন এই নগরবিদ।

এই নগর পরিকল্পনাবিদের মতে, আজকের জলাবদ্ধতার জন্য রাজউক, ওয়াসা ও সিটি করপোরেশনের পাপ দায়ী।