৪ দফা দাবিতে হরিজন সম্প্রদায়ের বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন
রাজধানী ঢাকার বংশাল থানার ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডের মিরনজিল্লা হরিজন কলোনিবাসীদের উচ্ছেদ করে কলোনির জমিতে বহুতল বাণিজ্যিক ভবন নির্মাণের পরিকল্পনা করেছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন (ডিএনসিসি)।
কলোনিবাসী অনেকদিন ধরেই এমনই গুঞ্জন থেকেই শুনে এসেছেন। এরই পরিপ্রেক্ষিতে পরিকল্পনা অনুযায়ী ১০ জুলাই বিনা নোটিশে ডিএনসিসি কর্তৃপক্ষ উচ্ছেদ অভিযান পরিচালনা করে। এতে করে কলোনির ৫০টি পরিবার বাস্তুহারা হয়ে যায়।
এ উচ্ছেদ অভিযানের সময় স্থানীয় কাউন্সিল আউয়াল হোসেনের নেতৃত্বে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজনের ওপর হামলা চালানো হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। এ ঘটনার পর এলাকার মানুষদের মধ্যে চরম আতঙ্ক ও নিরাপত্তাহীনতা বিরাজ করছে। এরই প্রতিবাদে ৪ দফা দাবি নিয়ে বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন করেছেন হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন।
শনিবার (১৩ জুলাই) বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে আয়োজিত এক বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনের আয়োজন করেন তারা।
বিক্ষোভ সমাবেশে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করেন, মিরনজিল্লার ইতিহাস প্রায় ৪শ বছরেরও বেশি পুরনো। যে মানুষগুলির অমানবিক পরিশ্রমে ফলে এই নগর তৈরি হয়ে আজকের ‘তিলোত্তমা’ ঢাকায় পরিণত হয়েছে, তারাই আজ এই নগরে বহিরাগত-অস্থায়ী বাসিন্দার তকমা পাচ্ছেন।
তারা জানান, তাদের এই দুর্যোগের সময় জনস্বার্থে উচ্চ আদালতে মামলা করে পাশে দাঁড়িয়েছেন কিছু সুহৃদ আইনজীবী। এর ফলে উচ্চ আদালত প্রথম দফায় গত ১০ জুন এই উচ্ছেদ কার্যক্রমে এক মাসের স্থিতিবস্থার আদেশ প্রদান করেন।
হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন অভিযোগ করে বলেন, এই এক মাসের স্থিতি আদেশ পূর্ণ না হতেই ৯ জুলাই ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশন কর্তৃপক্ষ আবার উচ্ছেদ, অভিযানের নোটিশ দেয়। আর ১০ জুলাই কর্পোরেশনের সম্পত্তি বিভাগের নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মনিরুজ্জামান উচ্ছেদ পরিচালনার লক্ষ্যে স্থানীয় কাউন্সিলরের নেতৃত্বে দুইশতাধিক ক্যাডার বাহিনী কলোনিতে ঢুকে এক চরম আতঙ্ক ছড়ায়। কলোনির মানুষদের কিছু বুঝে ওঠার আগেই কাউন্সিলরের ক্যাডার বাহিনী কলোনির মানুষদের ওপর দেশীয় অস্ত্র ইট, লোহার রড, চাপাতি ইত্যাদি নিয়ে হামলা চালায়।
কলোনিবাসীর অভিযোগ, এর আগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র এক টিভি সাক্ষাৎকারে বলেছেন, ‘কলোনিতে মাদক ব্যবসা চলে। এরা আমার কর্মচারীদের জিম্মি করে রেখেছে। এরা বহিরাগত’ ইত্যাদি ইত্যাদি। সেইসঙ্গে কলোনির ছাত্র-যুবককে ‘সন্ত্রাসী’ ও ‘কিশোর গ্যাং’ আখ্যায়িত করে অকথ্য ভাষায় আক্রমণ করেন।
তারা বলেন, এই সন্ত্রাসী হামলা ও মেয়রের ষড়যন্ত্র এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্যের প্রতিবাদে মিরনজিল্লা ছাত্র-যুব ঐক্য আজ রাজপথে নেমেছি।
এদিকে, বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধন থেকে হরিজন সম্প্রদায়ের লোকজন ৪ দফা দাবি জানিয়েছেন। সেগুলি হচ্ছে-
১. হামলার সঙ্গে জড়িত সব সন্ত্রাসীকে আইনের আওতায় নিয়ে এসে দৃষ্টান্তমূলক বিচার করতে হবে। হরিজনদের বিরুদ্ধে ৩৩ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিল আউয়াল হোসেনের দায়ের করা মিথ্যা ও হয়রানিমূলক মামলা তুলে নিতে হবে।
২. ঢাকা দক্ষিণ সিটি কর্পোরেশনের (ডিএনসিসি) মেয়রের এই ষড়যন্ত্র এবং বিদ্বেষমূলক বক্তব্য প্রত্যাহার করতে হবে।
৩. ৪শ বছরের পুরনো বসতি কোনোক্রমেই অবৈধ নয়। সে কারণে সব ধরনের উচ্ছেদ পরিকল্পনা স্থায়ীভাবে বন্ধ করতে হবে।
এবং
৪. মিরনাজল্লার ভূমি মিরনজিল্লা বাসিদেরই। এই জমির মালিকানা মিরনজিল্লার বাসিন্দাদের নামে দলিল তুলে দিতে হবে।
বিক্ষোভ সমাবেশ ও মানববন্ধনে হরিজন সম্প্রদায়ের প্রায় দুই শতাধিক লোক উপস্থিত ছিলেন।