কোটা আন্দোলনকারীদের বিরুদ্ধে জাতীয় পতাকা অবমাননার অভিযোগ

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, যশোর
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: যশোরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংবাদ সম্মেলন

ছবি: যশোরে জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সংবাদ সম্মেলন

সরকারী চাকরি নিয়োগে কোটা বিরোধী আন্দোলনকারী কতৃক জাতীয় পতাকার অবমাননা ও সুপ্রিম কোর্টের আদেশ লঙ্ঘনের প্রতিবাদে সংবাদ সম্মেলন করেছে যশোর জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ।

শনিবার (১৩ জুলাই) বেলা ১২টায় জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদ ভবনে এ সংবাদ সম্মেলন অনুষ্ঠিত হয়।

বিজ্ঞাপন

এ সময় মুজিব বাহিনীর যশোর জেলার ডেপুটি কমান্ডার রবিউল ইসলাম লিখিত বক্তব্যে বলেন, সম্প্রতি কিছুদিন ধরে লক্ষ্য করছি, সরকারী দপ্তর, স্বায়ত্বশাসিত বা আধা স্বায়ত্বশাসিত প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেশনে চাকরিতে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে ৯ম থেকে ১৩ তম গ্রেডে (১ম ও ২য় শ্রেণি) কোটা পদ্ধতি বাতিলের দাবীতে রাজধানী ঢাকাসহ দেশের প্রধান প্রধান বিশ্ববিদ্যালয়সহ উচ্চতর শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীবৃন্দ আন্দোলন করছে।

এই আন্দোলনের ফলে রাজধানী ঢাকার সড়কগুলির বিভিন্ন পয়েন্টসহ সারাদেশের গুরুত্বপূর্ণ সড়কগুলিতে শিক্ষার্থীরা অবরোধ সৃষ্টি করে রোগী বহনকারী অ্যাম্বুলেন্স, বিভিন্ন প্রকার যানবাহন এমনকি পায়ে হাটা জনতার পথরোধ করে ঘন্টার পর ঘন্টা জনদূর্ভোগ সৃষ্টি করে চলেছে। তারা সমগ্র দিবস "বাংলা ব্লকেড” নামে অবরোধ আরোপ করছে, রেলপথ অবরোধ করছে এমনকি সর্বাত্মক হরতালের কর্মসূচী দেবে বলে ঘোষণা দিচ্ছে।

সংবাদ সম্মেলনে তিনি বলেন, সরকারি চাকরিতে নিয়োগের ক্ষেত্রে ২০১৮ সালের পূর্ব পর্যন্ত এদেশে বিভিন্ন ক্ষেত্রে মোট কোটার পরিমাণ ছিল ৫৬ শতাংশ। এর মধ্যে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ, নারী কোটা ১০ শতাংশ, জেলা কোটা ১০ শতাংশ, ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠী কোটা ৫ শতাংশ এবং প্রতিবন্ধী কোটা ১ শতাংশ। স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই (সংবিধান প্রণনয়নের পূর্বেই) বঙ্গবন্ধু সরকার সরকারী চাকরীতে মুক্তিযোদ্ধদের জন্য ৩০ শতাংশ কোটা বহাল করেছিলেন। প্রায় ৫৩ বছর ধরে সরকারী চাকরিতে নিয়োগের এই কোটা বিভিন্ন ক্ষেত্রে হ্রাস বৃদ্ধি হয়েছে।

সংবাদ সম্মেলনে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন,শুধু বঙ্গবন্ধুর সরকার নয়, ১৯৭৫ সালের পর যতগুলি সরকার এসেছে সকল সরকারের আমলেই ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বহাল থেকেছে, কোন সময়ই এই কোটা বাতিল নিয়ে কোন কথা ওঠেনি। কোন আন্দোলনও হয়নি। আজ কোটা বিরোধী আন্দোলনের ফলে স্বাধীন বাংলাদেশের এই সামাজিক পরিবেশে এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে মুক্তিযোদ্ধা কোটা নিয়ে যে সকল অতিকথন বা অপপ্রচার চলছে তা মুক্তিযোদ্ধাদের জন্য সত্যিই হতাশাব্যঞ্জক এবং অসম্মানজনক। আমরা এ জাতীয় কর্মকান্ড ও অপতৎপরতার তীব্র প্রতিবাদ করছি। ২০১৩ সালে মাননীয় হাইকোর্টের এক রায়ে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটার সংরক্ষণ এবং যথাযথভাবে অনুসরণ করতে সরকারকে নির্দেশ দেওয়া হয়। কিন্তু ২০১৮ সালে সরকার কর্তৃক ৯ম থেকে ১৩ম গ্রেড পর্যন্ত কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত ছিল ২০১৩ সালে মহামান্য হাইকোর্টের উক্ত বিষয়ে প্রদত্ত রায়ের সাথে সাংঘর্ষিক।

আন্দোলনের প্রতিবার জানিয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বলেন, প্রধান বিচারপতির নেতৃত্বে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ গত ১০ জুলাই দুপুরে সকল পক্ষকে স্থিতাবস্থা পালনের আদেশ দেওয়ার পরও ঐদিন ঢাকার শাহবাগ মোড় সহ অন্যান্য পয়েন্টে সন্ধ্যা ৭টা পর্যন্ত আন্দোলনকারীরা সড়ক অবরোধ করে যাবতীয় যানবাহনসহ সাধারণ পথচারীদের চরম দূর্বিপাকের সৃষ্টি করে এবং পরদিন ১১ জুলাই বৃহস্পতিবার সমান ভাবে অবরোধ পালিত হবে বলে ঘোষণা দেয়।

মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষে মুক্তিযো রবিউল ইসলাম আরও বলেন,স্বাধীন বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে আমরা সব সময় জেনে আসছি যে, কোন বিষয়ে এমনকি দেশের পবিত্র সংবিধান বিষয়ে কোন মতানৈক্য সৃষ্টি হলে সুপ্রিম কোর্টই হল সেই প্রতিষ্ঠান যার বা যাদের রায় বা আদেশ বা ব্যাখ্যা সকল নাগরিক এমনকি খোদ সরকারের জন্য অবশ্য পালনীয় হয়ে দাঁড়ায়।আজ সবচেয়ে দুঃখজনক হল কোটা নিয়ে আন্দোলনকারীরা সুপ্রিম কোর্টের আদেশকে অমান্য করে চলেছে। তারা ১১ ও ১২ জুলাই অবরোধ ও বিক্ষোভ সমাবেশ করে জনজীবন বিপর্যন্ত করে তুলেছে। শুধু তাই নয় টেলিভিশন এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরা দেখেছি আন্দোলনকারীদের কেউ কেউ অবরোধ চলাকালে রাস্তায় ফেলে দেওয়া জাতীয় পতাকার উপর দিয়ে অবলীলায় হেটে যাচ্ছে আবার কেউ কেউ জাতীয় পতাকা রাস্তায় বিছিয়ে তার উপরে বসে তাস খেলছে। তাদের মধ্যে অনেকে মহামান্য সুপ্রিম কোর্টকে কুঁয়া বলে কটুক্তি করছে। একই সাথে তারা মহান মুক্তিযুদ্ধ, মুক্তিযুদ্ধে শহীদ ও মুক্তিযোদ্ধাদের অবদান সম্পর্কে কটুক্তি করছে। আজ যারা ছাত্র, তারা আগামী দিনে দেশের কর্ণধার। তাদের নিকট থেকে এমন স্পর্কিত আচরণ আমরা আশা করি না এবং তা মেনে নেওয়া যায় না। যশোর জেলার সকল মুক্তিযোদ্ধাদের পক্ষ থেকে আমরা এই নৈরাজ্যজনক আচরণের জোড়ালো নিন্দা ও প্রতিবাদ করছি।

আজকের যারা ছাত্র-ছাত্রী, তারা আমাদেরই সন্তানতুল্য। তাদের অগ্রযাত্রা আমরা সর্বদাই কামনা করি। তবে আন্দোলনের নামে এমন কিছুই করা উচিত নয় যা দেশের মুক্তিযুদ্ধ, জাতীয় পতাকা, সংবিধান এবং মুক্তিযোদ্ধাদের বিপক্ষে চলে যায়। দেশের ভবিষ্যত হলো বর্তমান প্রজন্ম। তারা যদি বলে আমরা সর্বোচ্চ আদালত মানি না তাহলে জাতি কোথায় যেয়ে বিচার প্রার্থনা করবে?

আন্দোলনকারীরা স্লোগান দিচ্ছে, 'কোটা না মেধা' 'মেধা মেধা' আমাদের কথা হলো- এদেশের মানুষের অসম বিকাশের দিকে তাকালে এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে শুধু মেধাবীদের স্বার্থপরতার কথাই ফুটে ওঠে। প্রশ্ন হলো- এই স্লোগানের মধ্য দিয়ে সমাজের অনগ্রসর মানুষগুলোকে কী বঞ্চনার গহবরে ফেলে দেওয়া হচ্ছে না?

এ প্রসঙ্গে সকলের জানা থাকা দরকার দেশের প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণির চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটার আওতায় অমেধাবীদের চাকরির কোনও সুযোগ নেই। যেখানে মেধার সাথে মেধার প্রতিযোগিতার মাধ্যমেই চাকরি হয়। এমত পরিস্থিতিতে আমরা কোটা পদ্ধতি বহাল রাখার জোর দাবী জানাচ্ছি।

সংবাদ সম্মেলনে আরোও উপস্থিত ছিলেন, জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা শহিদুল ইসলাম মিলন, সহ-সভাপতি হায়দার গণি খান পলাশ, জেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক কমান্ডার এইএচএম মুযহারুল ইসলাম মন্টু, সাবেক ডেপুটি কমান্ডার আফজাল হোসেন দোদুল, আবুল হোসেন, সাবেক জেলা কমান্ডার শেখ আব্দুল রাজ্জাক, আব্দুস সাত্তার, নজরুল ইসলাম চাকলাদার, অধ্যক্ষ হারুন অর রশিদ, আমিরুল ইসলামসহ শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা।