লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে, প্রশ্ন প্রধানমন্ত্রীর
কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে সহিংস পরিস্থিতি সৃষ্টির পেছনে অনেক বড় ষড়যন্ত্র ছিল উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘এটা যে একটা বিরাট চক্রান্ত বোঝাই যাচ্ছিল। আমরা কিন্তু আগে থেকে খবর পেয়েছি লোক ঢুকবে। গোয়েন্দা দিয়ে সমস্ত হোটেল, যেখানে তারা থাকতে পারে সেগুলো কিন্তু নজরদারিতে আনা হয়েছে। ওরা সেখানে ছিল না, এরা চলে এসেছে ঢাকার ঠিক বাইরের পেরিফেরিতে (ঢাকার কাছাকাছি এলাকায়)।’
আন্দোলনে লাশ ফেলার নির্দেশনা কার এমন প্রশ্ন তুলে প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন, তখনও কিন্তু লাশ পড়েনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের (যুক্তরাষ্ট্রের) বক্তব্যে এসে গেলো যে লাশ পড়েছে। লাশের খবর তাদের কে দিলো? তাহলে লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে? এটাও খবর নেওয়া দরকার। এবং তারপরে কিন্তু লাশ পড়তে শুরু করলো।’
বুধবার (২৪ জুলাই) বিকালে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটরস গিল্ডসের উদ্যোগে বিভিন্ন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও হেড অব নিউজ এবং সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে তিনি এসব কথা বলেন।
সরকার প্রধান বলেন, ‘আমি জানতাম যে নির্বাচন করতে দেবে না। তারপরও নির্বাচন করে ফেলেছি। নির্বাচন করার পর গ্রহণযোগ্য হবে না, সেটাও গ্রহণযোগ্য আমরা করতে পেরেছি, সরকার গঠন করতে পেরেছি। আমার একটা ধারণা ছিল এই ধরনের একটা আঘাত আবার আসবে।’
শেখ হাসিনা বলেন, ‘তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এইভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিলো সেই জবাবটাও জাতির কাছে তাদের দিতে হবে। আমরা তো বারবার তাদের সঙ্গে বসলাম। প্রজ্ঞাপনও করা হলো। তাদের কোনও দাবি পূরণ করা ছাড়া রাখিনি।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘যে দাবি তারা করেছিল কোটা সংস্কারে, যতটুকু চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো, তারপরও তারা এই জঙ্গিদের সুযোগ করে দিলো কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে একদিন এই জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে করে দিলো? আমরা সবসময় তাদের সঙ্গে সহানুভূতি দেখিয়েছি। তাদেরকে সব সময় নিরাপদ রাখার চেষ্টা করেছি। কিন্তু যে সমস্ত ঘটনা ঘটেছে এটা কখনও ক্ষমা করা যায় না।’
প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘সারা দেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা এসেছে। সঙ্গে ছিল ছাত্রদলের ক্যাডাররাও। যত ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) সক্রিয় ছিল।’
দেশবাসীকে সব ধরনের সন্ত্রাস-জঙ্গিবাদ ও সহিংসতার বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘যেভাবে ধ্বংসযজ্ঞ, কালো প্যান্ট-সাদা শার্টের পোশাক, ভুয়া আইডি কার্ড, তাদের পেছনের ব্যাগের মধ্যে কি ছিল? পাথর আর অস্ত্র ধারালো। মসজিদে অস্ত্র নিয়ে ইমামকে মাইকিং করতে বাধ্য করা, এই যে জঙ্গিবাদের একটা বীভৎস চেহারা আজকে সকলের সামনে চলে এলো, এটার বিরুদ্ধে জাতিকে, সবাইকে রুখে দাঁড়াতে হবে।’
সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাংলাদেশ টেলিভিশন, দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ অফিস, ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী।
তিনি বলেন, ‘যারা দেশের এই সর্বনাশটা করলো, যারা আজকে গণমানুষের আর্থসামাজিক উন্নতির জন্য, তাদের আয় বৃদ্ধি, তাদের চলাচলের সুবিধার জন্য, জীবনমান উন্নত করবার জন্য যত স্থাপনা তৈরি করেছি সবগুলোতেই তারা আঘাত করেছে, ভেঙে দিয়েছে। এতে ক্ষতিটা কার হলো? নিশ্চয়ই জনগণের। এখানে তো জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গিবাদের বিরুদ্ধে, জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। কারণ এরা তো কোনোদিনই কোনও দেশে ভালো কিছু করতে পারেনি।’
সাম্প্রতিক পরিস্থিতিতে কারফিউ দেওয়া ছাড়া আর কোনও উপায় ছিল না জানিয়ে সরকারপ্রধান বলেন, ‘আমি চাইনি আমাদের গণতান্ত্রিক ধারায় এই ধরনের কোনও ঘটনা ঘটুক, কারফিউ জারি হোক। একটা গণতান্ত্রিক পরিবেশে এটা আসুক আমাদের কাম্য ছিল না। কিন্তু না দিয়ে কোনও উপায় ছিল না। না দিলে আরও যে কত লাশ পড়তো তার হিসেব নেই।’
গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের আহ্বান জানিয়ে শেখ হাসিনা বলেন, ‘এটা ঠিক অনেকে গুজবে কান দেয়। কান নিয়ে গেছে চিলে, ওটার পেছনে ছোটে, কানে হাত দিয়ে দেখে না—কান আছে কিনা। মিথ্যাচারের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেন, মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে পারে সেভাবে সংবাদগুলো পরিবেশন করুন।’
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান। স্বাগত বক্তব্য দেন এডিটরস গিল্ডসের প্রেসিডেন্ট মোজাম্মেল হক বাবু। এরপর বক্তব্য রাখেন গণমাধ্যমের সম্পাদক ও সাংবাদিক নেতারা বক্তব্য রাখেন।