তেঁতুলিয়ায় আটক ‘ভারতীয় তরুণীর’ পরিচয় শনাক্ত

  • ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, পঞ্চগড়
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভারতীয় তরুণীর পরিচয় শনাক্ত

ভারতীয় তরুণীর পরিচয় শনাক্ত

গত ৩০ জুলাই (মঙ্গলবার) পঞ্চগড়ের তেঁতুলিয়া উপজেলায় ভারতীয় এক তরুণী আটক হওয়ার পর বিভিন্ন গণমাধ্যমে সংবাদ প্রকাশের পর তার পরিচয় শনাক্ত হয়েছে।

আটক হওয়া সানজিদা রুনা (২৩) নামে সেই তরুণী বাংলাদেশি। তার গ্রামের বাড়ি বরগুনা জেলায়। বাবা ঠিকাদার হওয়ায় দীর্ঘদিন যাবৎ ঢাকার দক্ষিণখান গাওয়াইর এলাকায় বসবাস করছেন। দুই বোন ও দুই ভাইয়ের মধ্যে তিনি বড়।

বিজ্ঞাপন

এর আগে, মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) আটকের পর নিজেকে ভারতীয় নাগরিক পরিচয় দেয় সানজিদা রুনা। একই সাথে হিন্দি ভাষায় কথা বলতে শুরু করে। তবে পরিচয় শনাক্তের পর তাকে নিজ জিম্মায় নিয়ে ঢাকায় ফেরেন ওই তরুণীর বাবা আলমগীর হোসেন হাওলাদার।

বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) রাতে নিয়ে যাওয়ার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন পঞ্চগড় আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন।

বাবা আলমগীরের দাবি দীর্ঘদিন ধরে মানসিকভাবে ভারসাম্য হারিয়ে রোগে ভুগছেন তার মেয়ে। এর আগে বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়োজনীয় কাগজপত্র ও ছবিসহ প্রমাণাদি নিয়ে ঢাকা থেকে পঞ্চগড় আদালতে ছুটে আসেন বাবা আলমগীর হোসেন হাওলাদার।

সরেজমিনে দেখা গেছে, মেয়েকে ছাড়িয়ে নিতে দিনভর আদালতের বারান্দায় ছুটোছুটি করেন। মেয়েকে নিজ জিম্মায় জামিন দেওয়ার আবেদন করে প্রমাণ ও তথ্য পেশ করেন। পরে কাগজপত্র ও প্রমাণাদি বিচার বিশ্লেষণ করে বৃহস্পতিবার বিকেলে মামলার বিচারক সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আশরাফুজ্জামান রুনাকে ১০ হাজার টাকা বন্ডে আইনজীবী ও তার বাবার জিম্মায় জামিন দেন। একই সাথে ১০ সেপ্টেম্বর তদন্ত প্রতিবেদন প্রাপ্তিসহ আসামি হাজিরের জন্য দিন ধার্য করেন। পরে সন্ধ্যার পরে মেয়েকে সাথে নিয়ে আদালত চত্বর ছাড়েন বাবা।

বাবা আলমগীর হোসেন হাওলাদার গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, তাদের বাড়ি ঢাকার দক্ষিণখান এলাকার গাওয়াইর এলাকায়। ভালোবেসে লালমনিরহাট এলাকার এক তরুণকে তার মেয়ে বিয়ে করেন ২০১৬ সালে। বিয়ের ৫ বছর পরে ২০২১ সালে তাদের সংসারে আসে একটি কন্যা সন্তান। নাম রাখা হয় সিনথিয়া স্মৃতি। ওই সন্তান প্রসবের পরই তার মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। তাকে মানসিক হাসপাতালেও রাখা হয়। চলে চিকিৎসা সেবা। তবে বারবার পালিয়ে যাওয়ায় পূর্ণ চিকিৎসা করাতে পারেনি। সামাজিক যোগাযোগের মাধ্যমে হিন্দি সিনেমা সিরিয়াল দেখার পাশাপাশি ভারতীয় বন্ধুদের সাথেও কথা বলেন এই তরুণী। তাদের কাছ থেকেই হিন্দি আয়ত্ব করেন। গত সোমবার (২৯ জুলাই) রাতে বাড়ি থেকে পালিয়ে কালো বোরখা পরে মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) সকালে পঞ্চগড়ে আসেন রুনা। খোঁজাখুঁজি করেও তাকে পাওয়া যাচ্ছিল না। এদিকে গণমাধ্যমে আত্মীয় স্বজনেরা খবর দেখে আমাকে অবগত করলে আমিও তা দেখে নিশ্চিত হই। পঞ্চগড়ে এসে সকল ডকুমেন্ট জমা করে আমার মেয়েকে ঢাকায় নিয়ে যাচ্ছি।

পঞ্চগড় আদালত পুলিশের পরিদর্শক জামাল হোসেন বলেন, বুধবার আদালতে ওই তরুণী বারবার হিন্দিতে কথা বলে এবং নিজেকে ভারতীয় পরিচয় দিয়ে আসে। এর আগে মঙ্গলবার ভারতীয় সীমান্ত অতিক্রম করে অবৈধভাবে বাংলাদেশে প্রবেশের দায়ে মেয়েটির বিরুদ্ধে মামাল হয় তেঁতুলিয়া মডেল থানায়। বৃহস্পতিবার আদালতে বাংলাদেশি হিসেবে তার বাবা সব তথ্য প্রমাণ উপস্থাপন করলে আদালত তাকে তার বাবার জিম্মায় জামিন দেন।

গত মঙ্গলবার (৩০ জুলাই) দুপুরে জেলার তেঁতুলিয়া উপজেলার ভজনপুর ইউনিয়নের বামন পাড়া এলাকায় সন্দেহভাজন ভাবে চলাফেরা করতে গিয়ে স্থানীয়দের হাতে আটক হয় ওই তরুণী। আটক হওয়ার পর হিন্দি ভাষার কথার পাশাপাশি নিজেকে ভারতীয় পরিচয় দেয়। ওই দিন তাকে ভজনপুর ইউনিয়ন পরিষদে নেওয়া হলে ভারতের তথ্য দেয়ায় বিজিবির সহায়তায় তাকে তেঁতুলিয়া মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়। পরে অবৈধ অনুপ্রবেশের দায়ে তার বিরুদ্ধে মামলা হয়। তবে বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) আদালতে বাবার সাথে অর্নগল বাংলা ও ঢাকার আঞ্চলিক ভাষায় কথা বলেন রুনা।