ভিজে যাওয়া স্বপ্ন শুকাচ্ছে মরিয়ম

  বন্যা পরিস্থিতি
  • রাজু আহম্মেদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ভিজে যাওয়া বই রোদে শুকানো হচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

ভিজে যাওয়া বই রোদে শুকানো হচ্ছে, ছবি: বার্তা২৪.কম

ফেনী থেকে: চারিদিকে ছড়িয়ে ছিটিয়ে দেওয়া বইয়ের পাতা। পরনে ফুলতোলা কামিজ আর মাথায় লাল ওড়না দিয়ে পাটির ওপর বসে আছে অষ্টম শ্রেণীর শিক্ষার্থী বিবি মরিয়ম। দূর থেকে দেখে মনে হচ্ছে উঠানে বাড়ির কাজে ব্যস্ত ছোট মেয়েটি। তবে কাজ নয় নিজের ভিজে যাওয়া স্বপ্ন শুকাচ্ছে মরিয়ম।
বন্যার পানিতে ডুবে যাওয়া ঘরবাড়ির জন্য হতাশা থাকলেও, স্বপ্ন জয়ের জেদে মনের গভীরে এক সংকল্প গেঁথে আছে মরিয়মের বুকে। ফলে ভেজা বইয়ের পাতায় হাত বুলিয়েই যেন সে সংকল্পকে আরও মজবুত করছে সে। পড়াশুনো যেখানে অনিশ্চিত সেখানে জরাজীর্ণ বইয়ের পাতাতেই স্বপ্ন বুনছেন মরিয়ম।

গত ২২ আগস্ট থেকে চলমান বন্যায় তলিয়ে ছিল মরিয়মদের ঘরবাড়ি। পানিতে ডুবে মারা গেছে তাদের প্রিয় গাভীটা । বাড়ির অন্যান্য জিনিসের সাথে ডুবে গেছে খাতা কলম ও বই। পানি যখন গলা সমান, তখন বই নিয়ে বের হতে চেয়েছিলো সে। তবে সে সুযোগ হয়নি মরিয়মের। অসুস্থ বাবাকে নিয়ে মায়ের সাথে চলে যান নিরাপদ আশ্রয়ে। ৭ দিন পর বাড়িতে ফিরে বই পেলেও নষ্ট হয়েছে অধিকাংশই।

বিজ্ঞাপন

বাড়িতে সব কিছু শেষ হয়ে গেছে জানিয়ে শিক্ষার্থী মরিয়ম বলেন, আমি বড় হয়ে আর্টিস্ট ম্যান হবো। সেজন্য আমাকে পড়তে হবে। আমার স্বপ্ন পূরণ করতে হবে। তাই স্বপ্ন শুকাচ্ছি। ছেড়া বই গুলো জোড়া লাগিয়ে পড়ব।

বন্যার পানিতে ভিজে যাওয়া বইগুলো রোদে শুকাচ্ছে অষ্টম শ্রেণির মরিয়ম

ফেনী ছাগলনাইয়া উপজেলার নাঙ্গলমোরা ইউনিয়নে বাড়ি মরিয়মদের। পরিবারের বাবা মা ছোট দুই ভাই বোন আছে তার।

বিজ্ঞাপন

মরিয়মের মা জানান, ছোট বেলা থেকে পড়াশুনার প্রতি গভীর আগ্রহ ছিল মরিয়মের। বন্যার পানিতে তার স্বপ্ন গুলো ভেসে গেছে। এতে অনেক কষ্ট পেয়েছে সে। সাথে ছোট মেয়েও কষ্ট পেয়েছে।

এদিকে মরিয়মের মত অন্তত লক্ষাধিক শিক্ষার্থীর বই ভেসে গেছে বন্যার পানিতে। স্রোতে সাথে যুদ্ধ করেও কেউ কেউ বাঁচাতে পারেনি স্বপ্ন। এখন চরম সংকটে এসব শিক্ষার্থীরা। অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে পড়াশুনা৷

এ বিষয়ে ফেনী জেলা প্রশাসক মুছাম্মাদ শাহীনা আক্তার জানিয়েছেন স্কুল ও ক্ষতিগ্রস্ত শিক্ষার্থীদের তালিকা করার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া হবে।