বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় ক্যাবস'র ১০ নির্দেশনা

  • স্টাফ করেস্পন্ডেন্ট, বার্তা ২৪. কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা ২৪

ছবি: বার্তা ২৪

দেশের উত্তর ও দক্ষিণ পূর্বাঞ্চলে দেশের স্মরণকালের ভয়াবহ বন্যায় কৃষি, মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ খাতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছে বন্যাকবলিত এলাকার মানুষ। এসব ক্ষয়ক্ষতি কাটিয়ে ওঠার জন্য ১০ নির্দেশনা দিয়েছে সেন্টার ফর এগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিজ - ক্যাবস।

শুক্রবার (৬ সেপ্টেম্বর) জাতীয় প্রেসক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে 'বন্যাত্তোর কৃষি ব্যবস্থাপনা' শীর্ষক এক গোলটেবিল বৈঠকের আয়োজন করে ক্যাবস। সেখানে বক্তারা এ নির্দেশনা তুলে ধরেন।

বিজ্ঞাপন

বৈঠকে প্রধান অতিথির বক্তব্য রাখেন, বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মহাপরিচালক ড. মোহাম্মদ শহীদুল ইসলাম। তিনি বলেন, দেশে যে বন্যা হয়েছে তা স্বাভাবিক বন্যা নয়। ত্রিপুরা রাজ্য থেকে পানি এসেছে বাংলাদেশের সাথে বৈরি ভাবের কারণে পরিকল্পিতভাবেই পানি ছেড়ে দেওয়া হয়েছে। ওই অঞ্চলের মানুষ কখনো এরকম বন্যা দেখেনি। গোমতী নদী পাহাড়ি নদী সেখান থেকে ঢলের পানি এসে বন্যা হলেও তা মেঘনা দিয়ে প্রবাহিত হয়ে যায় খুব বেশি ক্ষতি সাধন করতে পারেনা।

সাবেক এ মহাপরিচালক বলেন, ইন্ডিয়া আবারও এরকম করবে তার জন্য আমাদের লং টার্ম ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করতে হবে। ক্লাইমেট চেঞ্জ এর মেডিটেশন এন্ড এডাপটেশন এর দিকে নজর দিতে হবে হয়তো আবারও ওই এলাকায় বন্যা হতে পারে।

বিজ্ঞাপন

প্রযুক্তির সর্বোত্তম ব্যবহার করার নির্দেশনা দিয়ে তিনি বলেন, কৃষি খাতে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকেও নজর দিতে হবে। যারা ক্ষুদ্র কৃষক তাদের দিকে বিশেষ নজর দিয়ে সহায়তা ও স্বল্প সুদের ঋণ দেওয়ার আহ্বান জানান তিনি। তিনি বলেন, লাইভস্টক পোল্ট্রি ক্ষুদ্র খামারিদের স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে আবার কৃষি ক্ষেত্রকে দাঁড় করাতে হবে। এ সময় তিনি ফিশারিজ সেক্টরে ও প্রণোদনা দেওয়ার কথা বলেন।

এ প্রসঙ্গে সরকারের কাজ ইতিমধ্যে শুরু হয়ে গেছে জানিয়ে কার্যক্রম আরও জোরদার করার কথা বলেন তিনি। এছাড়া বন্যায় মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, দূষণ ধুয়ে যাওয়ার ফলে মাটির গুণাগুণ বৃদ্ধিকে কাজে লাগিয়ে রবি ফসল উৎপাদন বাড়ানোর দিকে নজর দিয়ে বন্যা পরবর্তী ডিসিস থেকে নিরাপদ থাকার আহ্বান জানান তিনি।

এসময় মূল প্রবন্ধে সেন্টার ফর এগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিস এর নির্বাহী পরিচালক ড. মুহাম্মদ রুহুল আমিন বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবেলায় ১০ নির্দেশনা তুলে ধরেন।

বন্যায় ক্ষয়ক্ষতি মোকাবিলায় করণীয়: 

১. বন্যাকবলিত এলাকার কৃষি ফসলের প্রকৃত ক্ষয়ক্ষতি বিশেষ করে বন্যার পানি নেমে যাওয়ার পরে রোপা আমনের বীজতলা, রোপিত আমন এবং দন্ডায়মান আউশ ধানসহ অন্যান্য ফসলের ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন কাজ শুরু করতে হবে।

২. আগাম শীতকালীন শাক-সবজি, ডাল ফসল, তেল ফসলসহ অঞ্চল উপযোগী ফসল চাষের পরিকল্পনা ও কার্যক্রম দ্রুত শুরু করতে হবে।

৩. বিভিন্ন দপ্তর, সংস্থা ও প্রতিষ্ঠানের আওতাভুক্ত নিজস্ব উচু জমিতে নাবী জাতের আমনের বীজতলা, পলি ব্যাগে অথবা বেডে বিভিন্ন সবজি, চারা উৎপাদনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৪. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর, বিএডিসি, বিভিন্ন গবেষণা প্রতিষ্ঠান ও সরকারী বেসরকারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বিভিন্ন ফসল উৎপাদনের উপকরণ মান সম্পন্ন বীজ, সার, বালাইনাশক ইত্যাদি সরবরাহ ও ব্যবহারের দিক নির্দেশনা সহ জরুরী পুনর্বাসন কাজে সম্পৃক্ত করতে হবে।

৫. মৎস্য ও প্রাণীসম্পদ অধিদপ্তরের মাধ্যমে মৎস্য ও প্রাণী সম্পদের ক্ষয় ক্ষতি নিরূণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসনের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৬. অসুস্থ্য গবাদিপশু ও হাস মুরগীর জরুরী চিকিৎসা সেবা এবং খাদ্য সরবরাহ স্থানীয় প্রাণীসম্পদ দপ্তর সমূহের মাধ্যমে নিশ্চিত করতে হবে।

৭. বন্যা দুর্গত এলাকায় রাস্তাঘাট, স্কুল-কলেজ, আবাসন তৈরি ও মেরামত সংক্রান্ত পুনর্বাসন কাজে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপণ পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও মেরামতের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৮. স্বাস্থ্য সেবা, জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ বিষয়ক কাজের জন্য সংশ্লিষ্ট বিভাগকে ক্ষয়-ক্ষতি নিরূপন পূর্বক দ্রুত পুনর্বাসন ও সেবা প্রদানের ব্যবস্থা নিতে হবে।

৯. কৃষকদের শস্যঋণের/ কৃষি ঋণের ব্যবস্থা করতে হবে। সেই সাথে ঋণগ্রস্থদের ঋণ মৌকুফ অথবা ঋণের কিস্তি মৌকুফ করতে হবে।

১০. খুব দ্রুত শস্য বীমা/ কৃষি বীমা চালু করতে হবে।

সেন্টার ফর এগ্রিকালচার পলিসি স্টাডিসের চেয়ারম্যান কৃষি অর্থনীতিবিদ ও কলামিস্ট ড.মুহাম্মদ মিজানুর রহমান এর সভাপতিত্বে গোলটেবিল বৈঠকে আরো উপস্থিত ছিলেন শেরে বাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. ফিরোজ মাহমুদ, বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের সাবেক মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. মো. মোশাররফ হোসেন, ডিএইর সাবেক মহাপরিচালক কৃষিবিদ মোহাম্মদ মহসীন, পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. মামুনুর রশিদ, পিকে এসএফ এর ডিএমডি ড. ফজলে রাব্বি সাদেক প্রমুখ।