জনগণকে দমন নয়, সাইবার নিরাপত্তায় আইন প্রণয়নের দাবি

  • স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

ছবি: বার্তা২৪.কম

ছবি: বার্তা২৪.কম

সাইবার নিরাপত্তা আইন-২০২৩ জনগণকে অপরাধ থেকে সুরক্ষা নয় বরং হয়রানি করার জন্য ব্যবহার করা হয়েছে। আইনটিতে এমন অনেক অসামঞ্জস্যতা আছে যার ব্যাখ্যা দেয়া কঠিন। ফলে এর মধ্য দিয়ে মানুষকে হয়রানির মধ্যে ফেলা হয়েছে। তাই জনগণকে দমন নয় বরং সাইবার নিরাপত্তায় আইন প্রণয়ন করতে হবে।

বৃহস্পতিবার (৩ অক্টোবর) বিকেলে বিচার প্রশাসন প্রশিক্ষণ ইন্সটিটিউটে 'সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩' সংশোধন বিষয়ক মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন বক্তারা।

বিজ্ঞাপন

মতবিনিময় সভায় সবার বক্তব্য শেষে আইন উপদেষ্টা ড. আসিফ নজরুল সাইবার নিরাপত্তা আইনটি শিগগিরই বাতিল করার কথা জানান। তিনি বলেন, পর্যায়ক্রমে দেশের সব কালাকানুন বাতিল হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিলের পূর্বে যে মামলাগুলো ছিলো সেগুলোও আমরা প্রত্যাহার করার সিদ্ধান্ত নিয়েছি।

এর আগে ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি এবং তথ্য ও সম্প্রচার উপদেষ্টা মো. নাহিদ ইসলাম বলেন, আইনটি রাজনৈতিক হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করা হয়েছে। এই আইন তৈরির মনস্তত্ব এখন আমাদের কাছে স্পষ্ট। ফলে আইনটি যত ভাবেই আমরা সংশোধন করি না কেন, আইনের পেছনের সে মনস্তত্বটা কিন্তু মানুষের কাছে থেকে যাবে। তাই সবার মতামতকে আমলে নিয়ে নতুনভাবেই আইনটাকে করা উচিৎ।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, আমাদের এতক্ষণের আলোচনায় সবাই বলেছেন আইনটি থাকা উচিৎ না। আমরা দীর্ঘদিন যাবত সেটা বলে আসছি। আইনটি সংশোধনের অযোগ্য, আইনটি বাতিল হওয়া উচিৎ। যে সব আইন কর্তৃত্ববাদী সরকারকে চিরস্থায়ী করণে হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার হয়েছে তার মধ্যে শীর্ষে ছিলো প্রথমে আইসিটি, পরে ডিজিটাল সিকিউরিটি আইন এবং পরবর্তী এই আইনটি। এব্যাপারে কোনো সন্দেহ নেই।

সাবেক জেলা ও দায়রা জজ ইকতেদার আহমেদ বলেন, আইন ত্রুটিপূর্ণ হবার কারণ হলো, আমাদের দেশে কোনো কিছু করা হয় না। বাংলাদেশেও আইন কমিশন আছে কিন্তু সেটা অবসরপ্রাপ্ত জাজদের পুনর্বাসন কেন্দ্র। ত্রুটিমুক্ত আইন করতে চাইলে অন্যান্য দেশের মতো আইন বিশেষজ্ঞদের যুক্ত করুন। তাহলে আইন ত্রুটিপূর্ণ হবে না।

নর্থসাউথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ড. নোভা আহমেদ বলেন, আমরা এমন একটি আইন করেছি যেখানে ডেটার সুরক্ষা নেই। আমাদের নতুন আইনে ডেটা সুরক্ষাটা আসতে হবে। আমাদের ডেটার সুরক্ষা আমাদেরই করতে হবে কারণ এসব ডেটা দিয়ে অনেক ম্যানুপুলেট হয়।

সাইবার নিরাপত্তা আইনে অধিকাংশ ডিজিটাল এভিডেন্স আদালতে আনা যাবে না উল্লেখ করে তিনি বলেন, সেজন্য আমাদের এভিডেন্স এর বি্‌য়টা এখানে আনতে হবে। তাই আমাদের অনেকক্ষেত্রেই সমস্যা হয়ে যায়, আদালতে ডিজিটাল এভিডেন্স আমরা কিভাবে উপস্থাপন করবো সে ব্যাপারটা নিয়ে। এই ক্ষেত্রে আমাদের পরিবর্তন আনতে হবে।

বাংলাদেশ ফেডারেল জার্নালিস্ট ইউনিয়নের সাধারণ সম্পাদক কাদের গণি চৌধুরী বলেন, সাইবার নিরাপত্তা আইন ২০২৩ বাতিল করে করে নতুন আইন চাই। আইনের মাধ্যমে মানুষ যেনো হয়রানি নয় সুরক্ষা পায়।

মানবাধিকার কর্মী সাইয়েদ আব্দুল্লাহ বলেন, আইনটি কোনো অবস্থাতেই থাকা উচিৎ না। নতুন কোনো আইন হলে সে ড্রাফট কতটা উম্মুক্ত রাখা যাবে সেটা ভাবতে হবে। গণমাধ্যমের জন্য আলাদা একটি আইন চাচ্ছি যেনো গণমাধ্যম স্বাধীনতা পায়। ইন্টারনেট সার্ভিস বন্ধ করার ক্ষেত্রে বিটিআরসির চেয়ারম্যান নয় বরং জুডিসিয়াল কোন বডির কাছে দেয়া যায় কি না সেটা ভেবে দেখতে হবে।