নোয়াখালী পৌরসভার ৮নম্বর ওয়ার্ডের সাবেক কাউন্সিলর ও ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নাসিম উদ্দিন সুনামকে গ্রেফতার করেছে র্যাব-১১।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) বিকেল ৪টার দিকে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ। এর আগে, গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে তাকে নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর এলাকা থেকে গ্রেফতার করা হয়।
বিজ্ঞাপন
র্যাব জানায়, আসন্ন দুর্গাপূজা ও সার্বিক আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিবেচনায় র্যাব সারাদেশে অভিযান পরিচালনা করছে। এরই ধারাবাহিকতায় র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালীর একটি আভিযানিক দল নিয়মিত অভিযানের অংশ হিসেবে গতকাল বৃহস্পতিবার রাত ১১টার দিকে নোয়াখালী পৌরসভার সোনাপুর এলাকা অভিযান চালায়। অভিযানে সুধারাম থানার চাঞ্চল্যকর হত্যা মামলার পলাতক এজাহার নামীয় ৭নং আসামি সুনামকে গ্রেফতার করা হয়।
র্যাব-১১, সিপিসি-৩, নোয়াখালী কোম্পানি কমান্ডার সহকারী পুলিশ সুপার মো. গোলাম মোর্শেদ আরও বলেন, গ্রেফতারকৃত আসামিকে সুধারাম মডেল থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।
প্রত্যক্ষদর্শীরা মো. মাকছুদ হোসাইন জানান, মাসুদ দীর্ঘদিন ধরে রাজমিস্ত্রী কাজ করেন। সকালে কাজে গেলে বিদ্যুতের তারের সাথে শরীরের অংশ স্পর্শ হয়। তখনই বিদ্যুতায়িত হয়ে যান তিনি।
এরপর সেখান থেকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন।
নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মূল্যবৃদ্ধির ধারাবাহিকতায় এবার নতুন করে আলোচনায় এসেছে কাঁচা মরিচ। রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, মাত্র এক মাসের ব্যবধানে কাঁচা মরিচের দাম প্রায় দ্বিগুণের বেশি বেড়েছে।
ক্রেতারা বলছেন, সাধারণত এই সময়ে কাঁচা মরিচের দাম স্থিতিশীল থাকে, সেখানে এবার ক্রেতাদের পকেটের উপর চাপ বাড়ছে। বাজারে সিন্ডিকেটের কারণে এই অস্বাভাবিক দাম বাড়ানো হচ্ছে। তাদের মতে, সরবরাহ পর্যাপ্ত থাকলেও কৃত্রিম সংকট তৈরি করে ব্যবসায়ীরা মূল্য বাড়ানোর অপচেষ্টা করছেন।
অন্যদিকে, বিক্রেতারা এ ধরনের অভিযোগ প্রত্যাখ্যান করে বলছেন, প্রকৃতির প্রতিকূলতার কারণেই সরবরাহ কমে গেছে, যার প্রভাব বাজারে পড়েছে।
চাষিরা জানিয়েছেন, টানা দুই মাসের খরা এবং পরবর্তীতে অতিরিক্ত বৃষ্টিপাতের কারণে মরিচের ফলন ব্যাপকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। অনেক স্থানে ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ার কারণে সরবরাহে ব্যাপক ঘাটতি দেখা দিয়েছে। ফলে বাজারে চাহিদার তুলনায় মরিচের সরবরাহ অনেক কম, যা মূল্যবৃদ্ধির মূল কারণ হিসেবে ব্যবসায়ীরা দাবি করছেন। তাছাড়া, পরিবহন খরচ বৃদ্ধির প্রভাবও দাম বৃদ্ধিতে যুক্ত হয়েছে বলে জানান ব্যবসায়ীরা।
দ্রুত এই সমস্যার সমাধান করা প্রয়োজন, অন্যথায় সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রা আরও কঠিন হয়ে পড়বে বলে মনে করছেন সচেতন নাগরিকরা।
শুক্রবার (৪ অক্টোবর) রাজশাহীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে দেখা গেছে, কাঁচা মরিচের দাম ক্রেতাদের জন্য অত্যন্ত চাপ সৃষ্টি করছে। এক কেজি কাঁচা মরিচ বিক্রি হচ্ছে ৩৬০ থেকে ৩৭০ টাকার মধ্যে, যা এক মাস আগের তুলনায় দ্বিগুণ।
বিক্রেতারা বলছেন, চাহিদার তুলনার বাজারে সরবরাহ কমে যাওয়ায় দাম বাড়ছে। বৃষ্টির কারণে উৎপাদন ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় বাজারে কাঁচা মরিচের সরবরাহে ঘাটতি তৈরি হয়েছে। পাশাপাশি মরিচের আমদানিও কম হচ্ছে।
ক্রেতাদের অভিযোগ, বেশি দাম দিয়ে মরিচ কিনলে ও তেমন ঝাল নেই। ফলে রান্নায় পরিমাণেও বেশি মরিচ দিতে হচ্ছে।
সাহেব বাজারে সবজি কিনতে আসা একজনের সঙ্গে কথা হয়। তিনি বলেন, গত মাসে ১৫০ টাকা কেজি দরে কাঁচা মরিচ কিনেছি। আজ এসে দেখি তা ৩৭০ টাকা হয়ে গেছে। বাসায় কাঁচা মরিচ ছাড়া রান্না-বান্না করা যায় না।
কাঁকন দাস নামে রাজশাহীর একজন সবজি বিক্রেতা জানান, বাজারে কাঁচা মরিচের দাম এতটাই বেড়ে গেছে যে, বেশি দামে এক পাল্লা (৫ কেজি) মরিচ কিনে এনে ছোট আকারে বিক্রি করলে তার লাভ হচ্ছে না। তিনি ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ১০ থেকে ২০ টাকার মরিচ বিক্রি করলে খরচই উঠে আসে না। এই অবস্থায় থাকলে আমাদের জন্য মরিচ বিক্রি করা বন্ধ করে দেওয়াই ভালো।
তিনি আরও বলেন, বৃষ্টির কারণে সড়কগুলো তলিয়ে গেছে, যার ফলে পরিবহন ব্যবস্থা ভীষণভাবে ব্যাহত হয়েছে। এই কারণে বাজারে গাড়ি ঠিকমতো পৌঁছাতে পারছে না, ফলে পাইকারদের কাছেও মরিচের সরবরাহ সীমিত।
সাহেব বাজারের আরেক সবজি বিক্রেতা মিন্টু মিয়া জানান, কয়েকদিন ধরে চলমান বৃষ্টির কারণে শুধু কাঁচা মরিচ নয়, অন্যান্য সবজির দামও বেড়ে গেছে। আমরা বেশি দামে কিনতে বাধ্য হচ্ছি, তাই বেশি দামে বিক্রি করা ছাড়া আমাদের আর উপায় নেই। ক্রেতারা শুধুমাত্র বিক্রেতাদের দোষারোপ করছেন, কিন্তু বাজারের প্রকৃত অবস্থা আলাদা।
মিন্টু মিয়া আরও বলেন, এ সপ্তাহে কাঁচা মরিচের দাম সবচেয়ে বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে। আজ ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি করছি। গত কয়েকদিনের টানা বৃষ্টির কারণে সরবরাহ কমে যাওয়ায় এই দাম বৃদ্ধি পেয়েছে।
কাঁচা মরিচের দাম এক ধাক্কায় এতোটা বেড়ে যাওয়ায় বাজারে বিক্রি তলানিতে ঠেকেছে বলে দাবি খুচরা বিক্রেতাদের।
ভ্যানে বিভিন্ন সবজিসহ কাঁচা মরিচ বিক্রি করেন মাহাদি হাসান। তিনি জানান, মরিচের এতো দাম, আজকে আর নতুন করে মরিচ নিয়ে আসা হয়নি। গতদিনেরগুলোই বিক্রি হচ্ছে না। সবাই ৫০ গ্রাম, ১০০ গ্রাম করে নিচ্ছে। কাঁচা মরিচের দাম বাড়ায় আমাদের তো কোন লাভ নাই। আমরা যে দামে কিনবো, ওই হিসাবেই বিক্রি করবো।
কাঁচা মরিচ ছাড়াও বাজারের অন্যান্য সবজির দামও বেড়েছে। কাকরোল, মুলা, ঝিঙ্গা ৬০ থেকে ৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে, যা গত সপ্তাহে ছিল ৫০ থেকে ৬০ টাকার মধ্যে। তবে করলা ও বেগুন বিক্রি হচ্ছে ১৩০ ও ১০০ টাকায়, যা গত কয়েক সপ্তাহের ব্যবধানে বেড়েছে ৩০-৬০ টাকা। ৫০ থেকে ৫৫ টাকার মধ্যে ঘুরপাক খাচ্ছে আলুর দাম। পেঁয়াজ, আদর দাম স্থিতিশীল থাকলেও বেড়েছে রসুনের দাম, বিক্রি হচ্ছে প্রতিকেজি ২৮০ টাকায়।
একই চিত্র চাল ও মাছের বাজারেও। প্রকারভেদে প্রতিকেজি মোটা চাল ৫৫ থেকে ৫৮ টাকা ও মাঝারি চাল (আটাশ) বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৬৫ টাকায়। সপ্তাহের ব্যবধানে ইলিশের দাম না বাড়লেও কেজিপ্রতি ১০ থেকে ৩০ টাকা বেড়েছে সব প্রকার নদী ও সামুদ্রিক মাছের দাম। বাড়েনি পুকুরে চাষ করা মাছসহ গরু ও খাসির মাংসের দাম।
ক্রেতা মাহবুবুল আলম জানান, বাজারের নিত্যপণ্যের দাম মধ্যবিত্তদের সাধ্যের বাইরে চলে গেছে। কাচাঁবাজারসহ দিন দিন সব পণ্যের দাম বাড়ছে, ক্রয় করতে আমাদের কষ্ট হচ্ছে।
তিনি আরও জানান, নিত্যপণ্যের বাজারে অসাধু ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণে বাজারে অস্থিতিশীল পরিস্থিতি বিরাজ করছে। যদি প্রশাসন নিয়মিত মনিটরিং করতো তাহলে বাজার নিয়ন্ত্রণে আসতো বলেও জানান ক্রেতারা।
রাজশাহী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উতিরিক্ত উপ পরিচালক শারমিন সুলতানা জানিয়েছেন, সাধারণত বর্ষার মৌসুম, বিশেষ করে বৃষ্টিপাতের পরিমাণ যখন বেশি থাকে তখন মরিচ গাছের ফুল পড়ে যায়, গাছও ক্ষতিগ্রস্ত হয়। বৃষ্টিপাতের কারণে কৃষকরা সেভাবে গাছের পরিচর্যা করতে পারেন না, মরিচ সংগ্রহ কমে যায়। সব মিলিয়ে সার্বিক উৎপাদন ব্যহত হওয়ার কারণেই বর্ষা মৌসুমে বাজারে কাঁচা মরিচের দাম বেড়ে যেতে পারে।
রাজশাহী জেলা ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক মাসুম আলী বলেন, আমাদের কাজ হচ্ছে কোথাও কোনো ব্যবসায়ী পণ্য মুজুদ করে কোনো সিন্ডিকেট করছে কিনা সে বিষয়ে তদারকী করা। কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠান যদি এই রকম অনৈতিক কার্যকলাপের সাথে জড়িত থাকার প্রমাণ থাকে তাহলে আমাদের নিয়মিত অভিযানে তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
তিনি বলেন, বাজারের পণ্যের মূল্য নির্ধারণ করার দায়িত্ব ভোক্তা অধিকার অধিদপ্তরের না। মুক্তবাজারে কোনো পণ্যের দামে ব্যবসায়ীরা কারসাজি করলে সেটার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
জেলার ৭ উপজেলায় এ বছর ১০৬টি মণ্ডপে শারদীয় দুর্গাউৎসব পালিত হবে। তাই শেষ সময়ে মণ্ডপগুলোতে প্রতিমা তৈরিতে ব্যস্ত কারিগররা। একই সঙ্গে ডেকোরেটর, লাইটিংসহ চলছে সাজ সজ্জার কাজ। সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিতে সিসি ক্যামেরার আওতায় আনা হচ্ছে প্রত্যেকটি মণ্ডপ। ইতোমধ্যে মণ্ডপগুলোতে সরকারি ভাবে বিতরণ করা হচ্ছে ৫০০ কেজি করে চাল।
এদিকে জেলা পুলিশের পক্ষ থেকে মণ্ডপগুলোর সব ধরনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে নেয়া হয়েছে চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা। প্রতিটি মণ্ডপ নিয়ে আসা হয়েছে পুলিশের নজরদারির মধ্যে। জোরদার করা হয়েছে সাইবার পেট্রোলিং কার্যক্রম।
জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক অসীম কুমার সাহা বার্তা২৪.কমকে বলেন, এ বছর জেলায় ১০৬টি মণ্ডপের মধ্যে সদর উপজেলায় ২৭টি, বোরহানউদ্দিনের ২০টি, দৌলতখানে ৮টি, লালমোহন ১৬টি, তজুমদ্দিনের ১৫টি, চরফ্যাশনে ৯টি ও মনপুরায় ১১টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হবে। ইতোমধ্যে জেলা প্রশাসন ও জেলা পুলিশ প্রশাসনের সাথে আমাদের মতবিনিময় সভা হয়েছে। শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে পূজা উদযাপনে তারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন।
বিপুল উৎসাহ উদ্দীপনায় পূজা উদযাপনের প্রস্তুতির কথা উল্লেখ করে তিনি আরও বলেন, প্রত্যেকটি মণ্ডপে একাধিক সিসি ক্যামেরা থাকবে। এছাড়া নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের পাশাপাশি প্রত্যেক মণ্ডপে ১০ জন করে সেচ্ছাসেবক কাজ করবে। বর্তমানে মণ্ডপগুলোতে প্রতিমায় রং তুলির আঁচর, প্যান্ডেলের কাজ, ডেকোরেটর, লাইটিংসহ অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ চলছে।
সরেজমিনে শহরের ১ নং ওয়ার্ড এলাকার বাপ্তা শ্রী শ্রী শক্তি সংঘ দূর্গা মাতার মন্দিরে গিয়ে দেখা যায় আয়োজকদের ব্যস্ততা। প্রতিমায় রং তুলির কাজ শেষ হয়েছে। অন্যান্য কাজে ব্যস্ত সবাই। মন্দির কমিটির সাধারণ সম্পাদক বেনু পাল বলেন, এখানে প্রতিমা তৈরীর কাজ সম্পন্ন হয়েছে। এখন মণ্ডপে অন্যান্য সাজসজ্জার কাজ চলছে। নিরাপত্তার ব্যাপারে কোন সমস্যা নেই। মণ্ডপে পুলিশের টহল ডিউটি অব্যাহত রয়েছে।
জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) মোহাম্মদ শরীফুল হক বার্তা২৪.কমকে বলেন, ইতোমধ্যে মণ্ডপগুলোতে কাজ শুরু করেছে পুলিশ। আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গাপূজা উদযাপনে থাকছে জেলা পুলিশের স্টাইকিং ফোর্স, মোবাইল ফোর্স, রিজার্ভ ফোর্স ও গোয়েন্দা তৎপরতাসহ চার স্তরের নিরাপত্তা ব্যবস্থা।
তিনি বলেন, আমাদের গুরুত্বপূর্ণ মণ্ডপগুলোর জন্য চারজন পুলিশ ও ৮ জন আনসার সদস্য থাকবেন। অপেক্ষাকৃত কম গুরুত্বপূর্ণ মন্ডপের জন্য তিনজন পুলিশ, ৬ জন আনসার এবং সাধারণ মণ্ডপগুলোর জন্য দুইজন পুলিশ ও ৬ জন আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবেন। আমরা চাই উৎসব ও আনন্দঘন পরিবেশে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হোক। এ লক্ষ্যে সর্বোচ্চ তৎপর রয়েছে জেলা পুলিশ।