তিন বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বন্ধ ২৩ ট্রেন

  • মো. আব্দুল হাকিম, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, রাজশাহী
  • |
  • Font increase
  • Font Decrease

তিন বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বন্ধ ২৩ ট্রেন

তিন বছরে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ের বন্ধ ২৩ ট্রেন

গত তিন বছরে নানান সংকটের মুখে পড়ে ২৩টি ট্রেন বন্ধ ঘোষণা করেছে পশ্চিমাঞ্চল রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। যাত্রী পরিবহনে লোকসান, ক্রু, গার্ড ও ইঞ্জিনের অভাবসহ বিভিন্ন সমস্যার কথা উল্লেখ করে ট্রেনগুলো বন্ধ রাখা হয়েছে। তবে যাত্রীদের দাবি, রেল সেবা নির্বিঘ্ন ও কার্যকর রাখতে প্রতিটি ট্রেন পুনরায় চালু করা অত্যন্ত জরুরি।

গত ২৮ সেপ্টেম্বর রেল পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল আওয়াল স্বাক্ষরিত এক অফিস আদেশে ট্রেন বন্ধের বিষয়টি নিশ্চিত করা হয়।

বিজ্ঞাপন

বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, সিরাজগঞ্জ বাজার স্টেশন ভাংচুর ও অগ্নিকাণ্ডে ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ায় কারণে গত ১৫ আগস্ট থেকে সিরাজগঞ্জ এক্সপ্রেস ট্রেন বন্ধ রাখা হয়েছে। এছাড়াও যাত্রীখাতে আয় কম হওয়ার কারণে চন্দনা/ভাঙ্গা কমিউটার ও উত্তরা এক্সপ্রেস ট্রেন এবং নাশকতা এড়াতে ঈশ্বরদী-ঢাকা রুটের লোকাল-৫৬৩/৫৬৪ বন্ধ রাখা হয়।

এদিকে ট্রেনের কোচ, ইঞ্জিন ও ক্রু এর অভাবে লোকাল-৫১৫, লোকাল-৫১১/৫১২, লোকাল-৫৪১/৫৪২, লোকাল-৫৯১/৫৯২, লোকাল-৪১১/৪১২, লোকাল-৪৫৩/৪৫৪, লোকাল-৪৩১/৪৩৪, লোকাল-৪৮১/৪৮২, লোকাল-৪১৫/৪১৬/৪২১/৪২২, মিশ্র-৪৫১/৪৫২, মিশ্র-৪৩২/৪৩৩, মিশ্র-৪১৩/৪১৪, উত্তরবঙ্গ মেইল ও পার্বতীপুর কমিউটার বন্ধ রাখা হয়। এছাড়া আন্ডার রিপিয়ার থাকার কারণে রংপুর কমিউটার ও পঞ্চগড় কমিউটার বন্ধ রাখা হয়।

তবে এসব ট্রেন বন্ধ থাকায় চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন শ্রমজীবী ও স্বল্প আয়ের মানুষ। যাত্রীর চাপ বেড়েছে অন্য লোকাল ও কমিউটার ট্রেনে। আবার অনেককে যাত্রা করতে হচ্ছে দাঁড়িয়ে। আন্তঃনগর ট্রেনগুলোতেও বাড়ছে যাত্রীর ভিড়।

রাজশাহী স্টেশনে ঈশ্বরদী যাওয়ার অপেক্ষায় রয়েছেন লোকমান হোসেন। তিনি জানান, আগে রাজশাহী থেকে ঈশ্বরদী যাওয়ার জন্য বেশ কিছু লোকাল ট্রেন ছিল, যেগুলোতে সহজেই আমরা বসে আরামে যাতায়াত করতে পারতাম। ট্রেনগুলো চালু থাকলে আমাদের জন্য অনেক সুবিধা হতো। কিন্তু এখন বেশিরভাগ ট্রেন বন্ধ হয়ে গেছে। বাধ্য হয়ে আমাদের আন্তঃনগর ট্রেনে যেতে হয়, কিন্তু সেখানে সিট সংখ্যা খুবই সীমিত। আমরা টিকিট কেটেও দাঁড়িয়ে যেতে বাধ্য হচ্ছি, যা খুবই কষ্টের। রেল সেবা যদি আমাদের জন্য থাকে, তাহলে সব ট্রেন চালু করাটাই উচিত, বিশেষ করে যেগুলো আমাদের মতো সাধারণ যাত্রীদের জন্য সবচেয়ে প্রয়োজনীয়।

একই সমস্যার মুখোমুখি হয়েছেন আব্দুলপুরগামী যাত্রী নিরঞ্জন। তার ভাষ্যমতে, পূর্বে তিনি প্রতিদিন অফিসে যেত লোকাল ট্রেনে চড়ে। কম খরচে এবং স্বাচ্ছন্দ্যে অফিস করতেন, কিন্তু সেই ট্রেন এখন বন্ধ। তাই প্রতিদিন তাকে অনেক সময় অপেক্ষা করে আন্তঃনগর ট্রেনে যাতায়াত করতে হচ্ছে।

তিনি বলেন, আন্তঃনগর ট্রেনে ভীষণ ভিড়, এবং সিট না পেয়ে দাঁড়িয়ে যেতে হচ্ছে, যা দীর্ঘ যাত্রায় খুবই কষ্টদায়ক। দ্রুত যেন এসব বন্ধ ট্রেনগুলো আবার চালু করা হয়, যাতে সাধারণ যাত্রীরা স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করতে পারেন।

রেল পশ্চিমাঞ্চলের সহকারী চীফ অপারেটিং সুপারিনটেনডেন্ট আব্দুল আওয়াল বিষয়টি নিশ্চিত করে জানান, অনেক দিন ধরেই এসব ট্রেন বন্ধ রয়েছে। মূলত ইঞ্জিন এবং লোকোমোটিভ (ট্রেন চালকের) সংকটের কারণে ট্রেনগুলো চালু রাখা সম্ভব হয়নি। রেলওয়ের প্রধান কার্যালয় থেকে এসব ট্রেনের পরিসংখ্যান চাওয়া হয়েছে, এবং সেই উদ্দেশ্যে আমরা ট্রেনগুলোর তালিকা পাঠিয়েছি। আমরাও চাই যে, যাত্রী সেবার উন্নতি এবং চাহিদা মেটানোর জন্য দ্রুত এসব বন্ধ ট্রেনগুলো পুনরায় চালু করা হোক। যাত্রীদের সুবিধার কথা বিবেচনা করেই এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।

রাজশাহী রক্ষা সংগ্রাম পরিষদের সাধারণ সম্পাদক জামাত খান ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, ‘আইনকানুন আর সমস্যার সব ধকলই যেন গরিব মানুষের উপর এসে পড়ে। সবার চাপ পড়ে গরিব-শ্রমজীবী মানুষের উপর, যারা এদেশের প্রকৃত কর্মশক্তি। অবাক করার বিষয় হলো, যে কারণগুলোর কারণে লোকাল ট্রেনগুলো বন্ধ করা হয়েছে, সেই একই কারণে কোনো আন্তঃনগর ট্রেন বন্ধ করা হয়নি। বরং তাদের সেবার মান আরও বাড়ানো হয়েছে। অথচ সাধারণ মানুষের, বিশেষ করে শ্রমজীবীদের প্রধান ভরসা এসব লোকাল ট্রেন। তাই আমরা জোর দাবি জানাই, দ্রুত সকল বন্ধ ট্রেন চালু করে যাত্রীদের ভোগান্তি দূর করা হোক। এতে রেলওয়ের প্রতি সাধারণ মানুষের আস্থা বাড়বে এবং যাতায়াত ব্যবস্থা আরও সহজ হবে।