টানা বৃষ্টি ও পাহাড়ি ঢলে দেশের বিভিন্ন জেলায় বন্যা দেখা দিয়েছে। জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়েছে নিম্নাঞ্চলগুলোতে। গতকালও ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায় ভারী বৃষ্টিপাত হয়েছে। এর মধ্যে দেশের সব বিভাগেই দমকা হওয়াসহ মাঝারি ধরনের বৃষ্টির আভাস দিয়েছে আবহাওয়া অফিস।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) সন্ধ্যায় আবহাওয়ার পরবর্তী ২৪ ঘণ্টার পূর্বাভাসে তথ্য জানানো হয়েছে।

পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা, খুলনা, বরিশাল ও চট্টগ্রাম বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি ও বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও মাঝারি ভারী বর্ষণ হতে পারে।

এ সময় সারা দেশে দিন এবং রাতের তাপমাত্রা প্রায় অপরিবর্তিত থাকতে পারে।

বর্ধিত ৫ দিনের আবহাওয়ার অবস্থায় বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পশ্চিম মৌসুমি বায়ু সারা দেশ থেকে বিদায় নিতে পারে।

লক্ষ্মীপুরের রায়পুরে সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে মাদকদ্রব্যসহ দু’জনকে আটক করা হয়েছে। তারা হলেন পরান হোসেন ও তার মা মোছা. ফতেজা।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বিকেলে রায়পুর পৌরসভার নর্দমা বাজার এলাকা থেকে তাদের আটক করা হয়।

আটক পরান ও ফতেজা নর্দমা বাজার এলাকার বাসিন্দা।

সেনাবাহিনী সূত্র জানায়, নর্দমা বাজার এলাকায় সেনাবাহিনীর নেতৃত্বে যৌথ অভিযান চালিয়ে পরান ও ফতেজাকে আটক করা হয়। তাদের কাছ থেকে ৫৫ পিস ইয়াবা, ৫০০ গ্রাম গাঁজা, একটি চাইনিজ কুড়াল, একটি ফিঙ্গার ব্লেড ও দেশীয় ছুরা জব্দ করা হয়। জব্দকৃত সরঞ্জামাদিসহ আটকদের রায়পুর থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, আটককৃতদের বিরুদ্ধে পুলিশ বাদি হয়ে মাদকদ্রব্য আইনে মামলা করেছে। মামলায় তাদেরকে গ্রেফতার দেখিয়ে লক্ষ্মীপুর আদালতে সোপর্দ করা হয়।

বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে ছাত্র-জনতার ওপর হামলার অভিযোগে সুনামগঞ্জ-৫ আসনের সাবেক এমপি মুহিবুর রহমান মানিক ওরফে বোমা মানিককে গ্রেফতার করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) রাতে ঢাকার ভাটারা থানাধীন একটি আবাসিক এলাকা থেকে তাকে গ্রেফতার করা হয়।

সুনামগঞ্জ শহরে গত ৪ আগস্ট ছাত্র-জনতার আন্দোলনের সময় শিক্ষার্থীদের ওপর হামলার ঘটনায় ২ সেপ্টেম্বর সদর মডেল থানায় একটি মামলা হয়। এই মামলায় মুহিবুর রহমান মানিক সহ ৯৯ জনকে আসামি করা হয়। জেলার দোয়ারাবাজার উপজেলার জহুর আহমদ হামলার ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হয়ে আহত হলে তার বড় ভাই হাফিজ আহমদ বাদী হয়ে দ্রুত বিচার আইনে মামলা করেন।

চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসক (ডিসি) ও জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ফরিদা খানম বলেছেন, ‘সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি বজায় রেখে আসন্ন শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুষ্ঠু, শান্তিপূর্ণ ও উৎসবমুখর পরিবেশে সম্পন্ন করা হবে। বর্তমান অন্তর্বর্তী সরকার এ বিষয়টিকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিচ্ছে। এজন্য আমরা এ পূজাকে চ্যালেঞ্জ মনে করছি না, আমরা একটি ফেস্টিভ মুডে আছি। জেলা প্রশাসন ও উপজেলা প্রশাসনসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে আমরা যারা কোর কমিটিতে সদস্যরা আছি, আমরা চাই আপনাদের সাথে সমান তালে আনন্দ উপভোগের মাধ্যমে শারদীয় দুর্গাপূজা সার্বজনীন উৎসবে পরিণত হোক। শারদীয় দুর্গাপূজা অত্যন্ত সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে প্রশাসনের উপর অনেক দায়িত্ব রয়েছে।’

শারদীয় দুর্গাপূজা উপলক্ষে মঙ্গলবার (৮ অক্টোবর) বেলা ১১টায় চট্টগ্রাম জেলা প্রশাসনের উদ্যোগে সার্কিট হাউজের সম্মেলন কক্ষে আয়োজিত আইন-শৃঙ্খলা রক্ষা সংক্রান্ত বিশেষ সভায় সভাপতির বক্তব্যে ডিসি এসব কথা বলেন।

সাবধানে থাকবো, সতর্ক থাকবো উল্লেখ করে ডিসি আরও বলেন, ‘আমাদের একটি চমৎকার টিম রয়েছে। দুর্গাপূজা ঘিরে কোথাও ছোট ছোট বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটলে বা ফেসবুক ও অন্যান্য সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে গুজব ছড়ালে তা আমাদেরকে জানালে তাৎক্ষণিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে আজকের মধ্যেই সিসি ক্যামেরা স্থাপন নিশ্চিত করতে হবে। পূজা সংক্রান্ত যে কোনো বিষয়ে অবহিত করতে জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে কন্ট্রোল রুম থাকবে।’

ডিসি আরও বলেন, সরকারের নির্দেশনা অনুযায়ী পূজায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী কঠোর অবস্থানে থাকবে। পূজার ষষ্ঠী থেকে বিজয়া দশমী পর্যন্ত সময়ে সার্বিক নিরাপত্তায় আইন-শৃঙ্খলা বাহিনী নিয়োজিত থাকবে। সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতি রক্ষায় পূজা চলাকালীন শুধু আজান ও নামাজের সময় উচ্চস্বরে বাদ্যযন্ত্র বাজানো থেকে বিরত থাকতে হবে। প্রত্যেক পূজা মণ্ডপে স্ট্রাইকিং ফোর্স হিসেবে আনসার সদস্য নিয়োজিত থাকবে। সেনাবাহিনী, পুলিশ ও বিজিবি পূজা মণ্ডপের নিরাপত্তায় টহল দেবে। পূজায় বিদ্যুতের বিকল্প হিসেবে জেনারেটর প্রস্তুত রাখতে হবে। নারী-পুরুষ যাতে সুশৃঙ্খলভাবে পূজা মণ্ডপে যাতায়াত করতে পারে সে বিষয়টি নিশ্চিত করা হবে। সকলের মাঝে ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় থাকুক এটাই আমাদের সকলের প্রত্যাশা।

সভায় জেলা পুলিশ সুপার (এসপি) রায়হান উদ্দিন খান বলেন, সার্বজনীন শারদীয় দুর্গাপূজা শান্তিপূর্ণ পরিবেশে সম্পন্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে ব্যাপক প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। পূজার সার্বিক নিরাপত্তায় প্রত্যেক মণ্ডপে সিসি ক্যামেরা স্থাপন বাধ্যতামূলক। এ ব্যাপারে নো কম্প্রোমাইজড। কারণ সিসি ক্যামেরা সচল থাকলে যেকোনো ধরনের অপরাধ শনাক্ত করা সম্ভব। প্রত্যেক মণ্ডপে রেজিস্ট্রার খাতা রাখতে হবে, যাতে পূজায় আগতরা তাদের নিজস্ব মতামত তুলে ধরতে পারে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোতে নজরদারি বৃদ্ধি করা হবে। সার্বজনীন এ উৎসব যাতে নির্ভয়ে ও নির্বিঘ্নে পালন করতে পারে সে ব্যাপারে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেয়া হয়েছে, কোনো ভয় নেই। উপকূলীয় এলাকাগুলোর পূজা মণ্ডপের সার্বিক নিরাপত্তায় পুলিশের পাশাপাশি কোস্টগার্ড নিয়োজিত থাকবে। শুরু থেকে পূজা মণ্ডপগুলোর সার্বিক অবস্থা কি তা জানাতে প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জদেরকে এলাকা পরিদর্শনের নির্দেশ দেন পুলিশ সুপার।

এসপি বলেন, পূজা মণ্ডপ ও পূজায় আসা দর্শনার্থীদের সার্বিক নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে প্রত্যেক থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি), পূজা কমিটির নেতৃবৃন্দ ও সংশ্লিষ্টদের নিয়ে সময়োপযোগী উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। অধিক ঝুঁকিপূর্ণ ও ঝুঁকিপূর্ণ পূজা মণ্ডপগুলোকে নিরাপত্তার চাদরে ঢেকে রাখা হবে। আশা করি পূজা উদযাপন নিয়ে কোনো সমস্যা হবে না।

অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) একেএম গোলাম মোর্শেদ খান জানান, চট্টগ্রাম মহানগর ও জেলায় এবার ২ হাজার ৪৫৮টি মণ্ডপে দুর্গাপূজা অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে মহানগরে ২৯৩টি ও জেলার ১৫ উপজেলায় ২ হাজার ১৬৫টি।

জেলা প্রশাসকের সভাপতিত্বে ও অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (এল.এ) এ.কে.এম গোলাম মোর্শেদের সঞ্চালনায় সভায় অন্যান্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক (শিক্ষা ও আইসিটি) মো. শরীফ উদ্দিন, ডিজিএফআইর উপ-পরিচারক কাজী রাজীব রুবায়েত, এনএসআইর যুগ্ম পরিচালক শাহ সুফি নুর নবী সরকার, এনএসআইর মেট্টোর উপ-পরিচালক নূর মোহাম্মদ, সেনাবাহিনীর ২৪ পদাতিক ডিভিশনের ক্যাপ্টেন গালিব, ১০ পদাতিক ডিভিশনের প্রতিনিধি মেজর ইখতিয়ার উদ্দীন, নৌ অঞ্চলের কমান্ডার এস.এম জাহিদ হোসেন, বিজিবির সহকারী পরিচালক মফিজুল ইসলাম, কোস্টগার্ড কমান্ডার মো. জাহিদ, আনসার ভিডিপির জেলা কমান্ড্যান্ট মো. আবু সোলায়মান, সিএমপির অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার (অপস্) বাবুল চন্দ্র বণিক, র‌্যাবের এএসপি মো. ইকবাল, শ্রীশী পুণ্ডরীক ধামের অধ্যক্ষ চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারী, চট্টগ্রাম মহানগর পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি লায়ন আশীষ কুমার ভট্টাচার্য্য, সাধারণ সম্পাদক হিল্লোল সেন উজ্জ্বল, চট্টগ্রাম জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি অ্যাডভোকেট নিতাই প্রসাদ ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক সুগ্রীব মজুমদার দোলন, চট্টগ্রাম উত্তর জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি নটু কুমার ঘোষ, সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট নিখিল কুমার নাথ, চট্টগ্রাম দক্ষিণ জেলা পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি সন্তোষ রঞ্জন দাশগুপ্ত, সাধারণ সম্পাদক রুবেল দে, বিভিন্ন উপজেলা নির্বাহী অফিসার ও থানার অফিসার ইনচার্জরা।